নুরজাহানের কথা by প্রণীত রঞ্জন দেবনাথ
আজ ১০ জানুয়ারি মঙ্গলবার দেশ কাঁপানো নুরজাহান আত্মহননের ১৯তম বার্ষিকী। মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার পাহাড়-টিলাবেষ্টিত ছোট একটি গ্রাম ছাতকছড়া। সেই গ্রামের আশ্রব উল্লার মেয়ে নুরজাহান ছিল ভাইবোনদের মধ্যে চতুর্থর্। নুরজাহানের বিয়ে হয় শেরপুর এলাকার আবদুল মতিনের সঙ্গে। দীর্ঘদিন স্বামীর খোঁজখবর না থাকায় বাবা মেয়েকে নিয়ে আসেন নিজ বাড়িতে। স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল মান্নান তাকে বিয়ে করার
জন্য নুরজাহানের বাবার কাছে প্রস্তাব পাঠায়। নুরজাহানের বাবা এতে রাজি না হয়ে একই গ্রামের মোতালিব হোসেন মতলিব মিয়ার সঙ্গে মেয়ের দ্বিতীয় বিয়ে দিয়ে দেন। বিয়ে করতে না পেরে মাওলানা মান্নান প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং নানা ছলচাতুরী শুরু করে। সে নুরজাহান ও আবদুল মতলিবের দ্বিতীয় বিয়েকে অবৈধ বলে ফতোয়া জারি করে এবং গ্রাম্য সালিশের ডাক দেয়। ১৯৯৩ সালের ১০ জানুয়ারি গ্রাম্য সালিশ বসে। সালিশ বিচারে মাওলানা মান্নান গৃহবধূ নুরজাহানকে মাটিতে পুঁতে ১০১টি পাথর নিক্ষেপ করার রায় ঘোষণা করে। সালিশের রায় কার্যকর করার পর উপস্থিত গ্রাম্য সর্দার মনির মিয়া নুরজাহানের উদ্দেশে বলতে থাকে, 'তোর বিষ খেয়ে মরা উচিত।' গ্রাম্য সর্দারের এ কটাক্ষ সহ্য করতে না পেরে ক্ষোভে, দুঃখে নুরজাহান সেই দিনই বিষ পানে আত্মহনন করে।
পূর্ণাঙ্গ ফতোয়ায় ছিল, নুরজাহান ও তার স্বামী মতলিবকে গলা পর্যন্ত গর্তে দাঁড় করিয়ে প্রত্যেককে ১০১টি পাথর নিক্ষেপ করা এবং ১০১টি বেত্রাঘাত করা হবে। নুরজাহানের বাবা আশ্রব উল্লা ও মা সায়েরা বেগমসহ বিয়েতে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের কানে ধরে ওঠবস করতে হবে। নুরজাহানের শ্বশুর মতিউল্লা ফতোয়ার এ শাস্তি কমানোর আবেদন করলে এবং বিচারে উপস্থিত গ্রামবাসীর অনুরোধে গর্তের গভীরতা গলা থেকে কোমর পর্যন্ত কমে আসে এবং ১০১ ঘা বেত্রাঘাত কমে ৫১ ঘা করা হয়।
বাংলাদেশের বিবেকবান মানুষ এ ঘটনার প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ায়। প্রথমদিকে পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। আদালতে ফাইনাল চার্জশিট জমা দিতে সময় লাগে ৪ মাস। অতঃপর ১৯৯৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত ৯ জন আসামির প্রত্যেককে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন আদালত। সাজাপ্রাপ্ত ৯ জনের মধ্যে ৮ জন সাজা ভোগ করার পর এলাকায় ফিরে এসেছে। মামলার ১ নম্বর আসামি মনির সর্দার জেলহাজতে থাকাবস্থায়ই মারা যান।
যে টিলায় নুরজাহানকে কবর দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন জেলা প্রশাসক সেটির নামকরণ করেছিলেন 'নুরজাহান টিলা'। তখন অনেক আশার বাণী শোনানো হয়েছিল গ্রামবাসীকে। কিন্তু সেই আশার বাণী আশাতেই রয়ে গেছে। কিন্তু দীর্ঘ ১৭ বছর আগে যেমন ছিল তেমনি রয়ে গেছে গ্রামটি। গ্রামের কোনো পরিবর্তন হয়নি। নুরজাহান নামের সড়কটির কাজও হয়নি। তার কবরটি সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে খুঁজে পাওয়া যাবে কি-না সন্দেহ।
নুরজাহানের বাবা ২০০০ সালে মারা যান। আর মা অতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। নুরজাহান ট্র্যাজেডি দিবস এলে শুধু সাংবাদিকরাই তার খোঁজখবর রাখেন।
পূর্ণাঙ্গ ফতোয়ায় ছিল, নুরজাহান ও তার স্বামী মতলিবকে গলা পর্যন্ত গর্তে দাঁড় করিয়ে প্রত্যেককে ১০১টি পাথর নিক্ষেপ করা এবং ১০১টি বেত্রাঘাত করা হবে। নুরজাহানের বাবা আশ্রব উল্লা ও মা সায়েরা বেগমসহ বিয়েতে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের কানে ধরে ওঠবস করতে হবে। নুরজাহানের শ্বশুর মতিউল্লা ফতোয়ার এ শাস্তি কমানোর আবেদন করলে এবং বিচারে উপস্থিত গ্রামবাসীর অনুরোধে গর্তের গভীরতা গলা থেকে কোমর পর্যন্ত কমে আসে এবং ১০১ ঘা বেত্রাঘাত কমে ৫১ ঘা করা হয়।
বাংলাদেশের বিবেকবান মানুষ এ ঘটনার প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ায়। প্রথমদিকে পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। আদালতে ফাইনাল চার্জশিট জমা দিতে সময় লাগে ৪ মাস। অতঃপর ১৯৯৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত ৯ জন আসামির প্রত্যেককে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন আদালত। সাজাপ্রাপ্ত ৯ জনের মধ্যে ৮ জন সাজা ভোগ করার পর এলাকায় ফিরে এসেছে। মামলার ১ নম্বর আসামি মনির সর্দার জেলহাজতে থাকাবস্থায়ই মারা যান।
যে টিলায় নুরজাহানকে কবর দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন জেলা প্রশাসক সেটির নামকরণ করেছিলেন 'নুরজাহান টিলা'। তখন অনেক আশার বাণী শোনানো হয়েছিল গ্রামবাসীকে। কিন্তু সেই আশার বাণী আশাতেই রয়ে গেছে। কিন্তু দীর্ঘ ১৭ বছর আগে যেমন ছিল তেমনি রয়ে গেছে গ্রামটি। গ্রামের কোনো পরিবর্তন হয়নি। নুরজাহান নামের সড়কটির কাজও হয়নি। তার কবরটি সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে খুঁজে পাওয়া যাবে কি-না সন্দেহ।
নুরজাহানের বাবা ২০০০ সালে মারা যান। আর মা অতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। নুরজাহান ট্র্যাজেডি দিবস এলে শুধু সাংবাদিকরাই তার খোঁজখবর রাখেন।
No comments