ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানিকেও আমি বিশ্বাস করি না: ইরানের সর্বোচ্চ নেতা

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী হাজার হাজার শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীর এক সমাবেশে পরমাণু সমঝোতা এবং আমেরিকার আচরণের ব্যাপারে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাল্কাবুদ্ধি ও বোকামিপূর্ণ বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, "ট্রাম্প তার বক্তব্যে দশটিরও বেশি মিথ্যা কথা বলা ছাড়াও ইরানের সরকার ও জনগণকে হুমকি দিয়েছেন। আমি ইরানি জাতির পক্ষ থেকে বলছি, মি. ট্রাম্প আপনি জঘন্য ভুল করছেন।"
আমেরিকার আচরণ ও বেআইনি কর্মকাণ্ডকে কোনোভাবেই হাল্কা করে দেখার সুযোগ নেই উল্লেখ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, আমেরিকার টার্গেট কোনো একটি দল বা ব্যক্তিকে উৎখাত করা নয় বরং ইরানের জনগণ ও দেশটির ইসলামি শাসন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়, ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠা এবং এদেশে আমেরিকার প্রভাব খর্ব হওয়ার কারণে ওয়াশিংটন ক্ষুব্ধ ও হতাশ এবং এ কারণেই তাদের শত্রুতা অব্যাহত রয়েছে।     আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী আরো বলেছেন, শত্রুরা চায় ইরানে ইসলামি শাসন ব্যবস্থাকে উৎখাত করে বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারী ও ভূ-কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ দেশটির ওপর ফের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে। আমেরিকা গত ৪০ বছর ধরে নানা উপায়ে ও ছলচাতুরীর মাধ্যমে ইরানের ইসলামি সরকার ব্যবস্থার পতন ঘটানোর চেষ্টা করে আসছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষ করে ইউরোপের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বোকামীপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়ে প্রমাণ করেছেন, ইরান ও আমেরিকার সম্পর্কের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ইরানের প্রতি বিদ্বেষ গোপন করে তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনার কথা বলতেন কিন্তু তখনও ইরান প্রভাবিত হয়নি বা আমেরিকার দিকে ঝুঁকে পড়েনি। আর এখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুমকিকেতো ইরান তোয়াক্কা করে না।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এ ব্যাপারে বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা তার চিঠিতে কিংবা বিভিন্ন বক্তব্যে ইরানের ইসলামি শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিতেন অথচ দাবি করতেন ইসলামি শাসন ব্যবস্থাকে উৎখাত করা তার লক্ষ্য নয়।
বাস্তবতা হচ্ছে, ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার ক্ষোভ ও হতাশার প্রধান কারণ হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের শক্তিশালী উপস্থিতি যা কিনা সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ শক্তিগুলোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে আমেরিকা, ইসরাইল ও সৌদি আরবের অশুভ লক্ষ্য বাস্তবায়নের সুযোগ ইরান দেবে না। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তার বক্তব্যে পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নের নানা দিক ও ইউরোপের নীতির ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানিকে আমি বিশ্বাস করি না।
যাইহোক, ইউরোপ যদি ইরানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মার্কিন অন্যায় দাবি মেনে নেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করে তাহলে বুঝতে হবে তারা আমেরিকার অনুগত হয়ে কাজ করছে। অবশ্য ইউরোপ এখন পর্যন্ত নিজেদেরকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ দেখানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে তাদের মুখের কথা যথেষ্ট নয়। ইউরোপকে কাজেকর্মে এটা প্রমাণ করতে হবে আমেরিকার ইরান বিরোধী নীতিতে তারা শামিল হবে না। একজন মার্কিন বিশ্লেষক গিরিস পোর্টার এ ব্যাপারে বলেছেন, ওয়াশিংটনের অন্যায় নীতির কাছে ইউরোপ মাথা নত করবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

No comments

Powered by Blogger.