সেই আসামিকে সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রত্যাহারকৃত আইনজীবী তুরিন আফরোজের সঙ্গে বৈঠক করা মানবতাবিরোধী অপরাধের সেই আসামি মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। গতকাল প্রসিকিউশনের আইনজীবীদের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে  বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা  সংস্থার (এনএসআই) সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে গত ২৪শে এপ্রিল গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওইদিন সকালে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল ট্রাইব্যুনাল। পরদিন ২৫শে এপ্রিল ওয়াহিদুল হককে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, একাত্তরে পাকিস্তান আর্মির ২৯ ক্যাভালরির সদস্য হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৮শে মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টের আশপাশ এলাকায় নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালি ও সাঁওতালদের ওপর হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে।
গতকাল ট্রাইব্যুনাল আদেশে জানান, আগামী ১৫ই মে তদন্ত সংস্থার ধানমন্ডিস্থ সেফহোমে সকাল দশটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত ওয়াহিদুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল, রেজিয়া সুলতানা চমন। পরে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, ‘আজ (গতকাল) নির্ধারিত দিনে আসামি ওয়াহিদুল হককে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তার বিরুদ্ধে যে মামলা এর ফলপ্রসূ তদন্তের প্রয়োজনে তাকে সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয়। ১৫ই মে ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার সেফহোমে সকাল ১০টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত আসামি ওয়াহিদুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১০ই জুলাই দিন ধার্য রাখা হয়েছে। ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর ট্রাইব্যুনালে এ মামলার দায়িত্বে ছিলেন তুরিন আফরোজ। তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ওয়াহিদুল হককে গ্রেপ্তারের আগে গত বছরের ১৭ ও ১৮ই নভেম্বর তিনি নিজেই ফোন দিয়ে ওই আসামির সঙ্গে কথা বলেন। পরে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯শে নভেম্বর গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় তুরিন আফরোজ তার একজন সহকারীকে নিয়ে সেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা অবস্থান করে ওই আসামির সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় আসামি ওয়াহিদুল হকের কাছে তুরিন আফরোজ মামলার তদন্তের কিছু নথিপত্র সরবরাহ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একপর্যায়ে ওই আসামির সঙ্গে বৈঠকের পুরো অডিও রেকর্ড তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে প্রসিকিউশন অফিসে আসে। এর ভিত্তিতে আসামি ওয়াহিদুল হকের মামলার দায়িত্ব থেকে তুরিন আফরোজকে গত ৭ই মে প্রত্যাহারের আদেশ দেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু। একই সঙ্গে ৮ই মে তাকে ট্রাইব্যুনালের সকল মামলা পরিচালনা থেকে প্রত্যাহারের আদেশ দেয়া হয়।  ওই আসামির সঙ্গে তুরিনের বৈঠকের অডিও রেকর্ডের সিডি ও তদন্ত সংস্থা থেকে পাওয়া প্রতিবেদন গত ৯ই মে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আর ওয়াহিদুলের মামলা পরিচালনার জন্য প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম গঠন করে দেন চিফ প্রসিকিউটর।

No comments

Powered by Blogger.