কেসিসি নির্বাচন: উত্তাপ ছড়াচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি তৎপরতা by রোকনুজ্জামান পিয়াস

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি তৎপরতা উত্তাপ ছড়াচ্ছে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে তাদেরকেই প্রধান প্রতিপক্ষ মনে করছে বিএনপি। বিএনপি নেতারা বলছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে আওয়ামী লীগ নয়, লড়তে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করে তারা এ মন্তব্য করেছেন। অভিযোগ করছেন, প্রচারণায় অংশ নেয়া নেতাকর্মীদের নানাভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। অহেতুক জিজ্ঞাসাবাদ, গোয়েন্দা নজরদারি এমনকি নেতৃবৃন্দকে হোটেলে থাকতে না দিতেও বলে দেয়া হয়েছে। আর এসবই করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া অভিযোগ দিতে গেলেও তাদেরকে গ্রেপ্তারের শিকার হতে হচ্ছে। এসব কারণে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভীতিকর পরিস্থিতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। তবে পুলিশ বলছে, বাড়তি কিছুই করছে না তারা, বরং নির্বাচনের পরিবেশের স্বার্থে এটা তাদের রুটিন ওয়ার্ক। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের অভিযোগ রিটার্নিং অফিসারের দিকে। এক সময়ের ছাত্রদলের নেতা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
বিএনপি নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, হোটেলগুলো তাদের রুম ভাড়া দিতে চাচ্ছে না। জানা যায়, বিএনপি নেতাকর্মীরা কোনো হোটেল না পেয়ে ক্যাসাল সালামের কয়েকটি কক্ষ নেয়। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সব সময় ওই হোটেলটিতেই অবস্থান করেন। এখন আর হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো রুম দিচ্ছেন না। না দেয়ার পেছনে নানা যুক্তি দেখাচ্ছেন। এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, বোঝা যাচ্ছে তাদের ওপর চাপ রয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে অন্য কোনো হোটেল আমাদের রুম ভাড়া দিতে চায়নি, ক্যাসাল সালাম আমাদের কয়েকটি রুম দিয়েছিল। কিন্তু এখন তারাও দিচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, পুলিশ তাদেরকে নিষেধ করে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের নেতৃবৃন্দের গতিবিধি, তারা কোথা থেকে আসছেন, কি কাজে আসছেন সাদা পোশাকের লোকজন তা জিজ্ঞাসাবাদ করছে। অনেক সময় অশোভন আচরণ করছে। এর আগে কখনো এই ধরনের কোনো পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়নি বলেও তিনি জানান।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের একাধিক ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট গ্রেপ্তার আছে। সংরক্ষিত ওয়ার্ড-৭ কাউন্সিলর প্রার্থী শামসুন্নাহার লিপির প্রধান এজেন্ট তার স্বামী মহানগর যুবদলের সভাপতি মাহবুব হাসান পিয়ারুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সিইসি’র মতবিনিময় সভায় প্রার্থী বিষয়টি উত্থাপন করলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। একইভাবে ১৩ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমতিয়াজ হোসেন বাবুর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়টিও সিইসিকে সরাসরি বলেছেন প্রার্থী। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। তারিকুল ইসলাম আরো বলেন, মহানগর ও জেলা কমিটির একাধিক নেতাও গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত এক সপ্তাহে শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিন শতাধিক নেতাকর্মীর বাড়িতে পুলিশ অভিযানের নামে তাণ্ডব চালিয়েছে। এমনকি পুলিশের হাত থেকে বৃদ্ধ মাতা পিতাও রক্ষা পায়নি। তিনি আরো বলেন, আমি যেন প্রচারণা চালাতে না পারি সেজন্য গাড়ির ড্রাইভারকে গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে পুলিশকে আমাদের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে। বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ নয়, পুলিশই আমাদের প্রতিপক্ষ। তিনি বলেন, তালুকদার খালেককে সংসদ সদস্য থেকে এনে মেয়র নির্বাচন করানোই শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের দায় আছে বলে মনে হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন সংগঠন ও সমিতির কর্মকর্তাদের সরকারি দলের প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রী দিয়ে খালেকের পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় নামতে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই নির্দলীয় অনেক সমিতিকে তারা চাপের মুখে দলের অঙ্গ-সংগঠনের মতো ব্যবহার করেছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুচ আলীকে বিএনপির লোক বলে অবিহিত করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে তারা। এমনকি সিইসি’র উপস্থিতিতে আওয়ামী সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মিয়া শামসুজ্জামান স্বপন রিটার্নিং অফিসারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ছাত্রজীবনে রিটার্নিং অফিসার ইউনুচ আলী ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন বলে দাবি করা হয়। খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুচ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। যে কারণে তার কাছে নিরপেক্ষ আচরণ আশা করা যায় না। তাই আমরা তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। তিনি কতটুকু নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন এমন প্রশ্নের জবাবে এই নেতা বলেন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বে থাকেন রিটার্নিং অফিসার। এ ক্ষমতার বলে তিনি প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। সাইফুল ইসলাম আরো বলেন, এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে যথেষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, খুলনা মহানগরীতে তালুকদার খালেক একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বিগত দিনে মেয়র থাকা অবস্থায় খুলনায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যে কারণে খুলনার মানুষ তাকে মেয়র নির্বাচিত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তার এই বিজয়ের সম্ভাবনা দেখে একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
নির্বাচন কেন্দ্রিক বাড়তি তৎপরতার ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, যাদের নামে চাঁদাবাজি ও মাদক মামলা রয়েছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শুধু বিএনপির নয়, অভিযুক্ত যে কেউ-ই এই তালিকায় রয়েছে। বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢালাওভাবে রাজনৈতিক অভিযোগ দিলেই হবে না, গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল বিবেচ্য বিষয় নয়। মামলাকেই আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি।

No comments

Powered by Blogger.