শ্রম ও ইপিজেড আইনে ব্যাপক সংস্কার হচ্ছে -কূটনৈতিক ব্রিফিং

শ্রম ও ইপিজেড আইনে ব্যাপক সংস্কার ও সংশোধনী আনছে সরকার। শ্রম-সংশ্লিষ্ট পৃথক ওই দুুটি আইনের যেসব ধারার সংস্কার ও সংশোধনীর বিষয়ে সরকার যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার বিস্তারিত কূটনৈতিক সমপ্রদায় ও উন্নয়ন সহযোগীদের অবহিত করা হয়েছে গতকাল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের ডেকে এ   নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফ করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- শ্রমের আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড (মান)-এর সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রমমানের মূল্যায়ণে প্রতিবছর জুনে জেনেভায় একটি বৈশ্বিক পর্যালোচনা সভা হয়। সেখানে বিভিন্ন দেশের সরকারি, বেসরকারি প্রতিনিধি ছাড়াও মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের স্বাধীনভাবে মতামত দেয়ার সুযোগ থাকে। সেখানে শ্রমিকদের প্রতিনিধিরা একটি দেশের শ্রম পরিস্থিতি অভাব-অভিযোগ, পরামর্শ এবং প্রশ্ন তুলতে পারেন। আসন্ন বাৎসরিক আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনকে সামনে রেখে সরকার দেশের সার্বিক শ্রমমানের উন্নয়নে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিশ্ব সমপ্রদায়ের প্রতিনিধিদের কাছে তা তুলে ধরতেই এ কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ের আয়োজন।
পড়ন্ত বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনক্লজ সভাকক্ষের ওই ব্রিফিং ফ্রান্সের ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, আইএলও’র আফিসার ইনচার্জ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, বৃটেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, নেদারল্যান্ডস, জাপান এবং নরওয়ের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিরা অংশ নেন। কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে সরকারের তরফে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হক এবং পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক যৌথভাবে পরিস্থিতির বিস্তারিত তুলে ধরেন। সোয়া দুই ঘণ্টার ক্লোজডোর ওই সেশন শেষে লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হক বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। জানান, শ্রম ও ইপিজেড আইনে মোটা দাগে কয়েকটি সংশোধনী ও সংস্কার আনছে সরকার। এ নিয়ে বহুদিন ধরে উন্নয়ন সহযোগী বিদেশিদের পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ ছিল। শ্রম আইনে যে সংশোধনী বা সংস্কার আনার বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা হলো- এখন থেকে যে কারখানাগুলোতে ২০ শতাংশ শ্রমিকের মতামত নিয়েই ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে। বর্তমান আইনে ট্রেড ইউনিয়ন অনুমোদনের পূর্ব শর্ত হিসাবে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের মতামত গ্রহণ এবং তার সপক্ষে ডকুমেন্ট প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার সুপারিশ ছিল বিদেশিদের। এ বিষয়ে লেজিসলেটিভ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন- আমরা আমাদের বিদেশি বন্ধুদের সুপারিশ আমলে নিয়েছি। তবে একসঙ্গে ৩০ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা কঠিন। সরকার মাঝামাঝি অবস্থান নিয়েছে। এটি ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন আইনে সংশোধনী আনতে হবে। আমরা তাদের জানিয়েছি যত দ্রুত সম্ভব এই সংশোধনী আনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
দ্বিতীয়ত: এক্সপোর্ট প্রোসেসিং জোন বা বিশেষায়িত রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার কারখানাগুলোতেও শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে বার্গেনিং এজেন্ট বা ট্রেড ইউনিয়ন থাকার সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানেও সাধারণ কারখানাগুলোর মতো ২০ শতাংশ শ্রমিকের মতামত নিয়ে এটি করা যাবে। এ জন্য ইপিজেড আইনেও সংশোধনী আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সচিব বলেন- এতদিন ইপিজেডের বাইরের কারখানাগুলোর রুটিন বা নিয়মতান্ত্রিক পরিদর্শনের সুযোগ ছিল। ইপিজেড আইনের প্রস্তাবিত সংস্কার বা সংশোধনীর ফলে এখন সেখানকার কারখানাগুলোতে দেশি-বিদেশি পরিদর্শক সংস্থার পরিদর্শনের সুযোগ উন্মুক্ত হবে।
শ্রম আইনের অধিকতর সংশোধনী চাইলেন কূটনীতিকরা:
এদিকে রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছেÑ বিফিংয়ে উপস্থিত কূটনীতিকরা বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার ও মালিক সংগঠনগুলোর নেয়া পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তারা এ সকল বিষয়ে বিশেষত আইএলও কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ শ্রম আইনের অধিকতর সংশোধন, ইপিজেডগুলোতে শ্রমিক সংগঠন করার শর্তসমূহ শিথিল করাসহ বেশকিছু পদক্ষেপের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। শ্রমিক অধিকার সুরক্ষা ও তাদের কল্যাণে বাংলাদেশের সকল পদক্ষেপে তারা সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়টিও পুনর্ব্যক্ত করেন। আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিষয়ক সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজা খানসহ এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন ও বেপজার প্রতিনিধি, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এতে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার, শ্রমিক কল্যাণ এবং কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে কূটনীতিকদের বিস্তারিত অবহিত করা হয়েছে। সভায় বাংলাদেশ শ্রম আইন ও শ্রম বিধিতে শ্রমিক সংগঠন গঠনের জন্য নিম্নসীমা বর্তমানের ৩০ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং ইপিজেড শ্রম আইনের অধীন শ্রমিক সংগঠন ও স্থাপনা পরিদর্শনের দায়িত্ব কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে ন্যস্ত করার বিষয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করা হয়। সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বেপজা ও বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। শ্রমিক নেতৃবৃন্দের পক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব মো. তৌহিদুর রহমান বক্তব্য রাখেন।

No comments

Powered by Blogger.