‘নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন’ by রশিদ আল রুহানী

বৃহস্পতিবার (১০ মে) বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর শুক্রাবাদে বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিও থেকে বৈঠকি সরাসরি সম্প্রচার করে এটিএন নিউজ।
মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় বৈঠকিতে অংশ নেন সাবেক
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন (অব.),
হাইকোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ,আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন ও
বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ হারুন উর রশীদ।
এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা যখন ২০০৮ সালে
নির্বাচন করি, তখন অনেক সমস্যা ছিল। ওই নির্বাচনে ৫ থেকে ৬ দিন আগে অনেকেই
প্রার্থীতা থেকে মার্কা নিয়ে ফিরে আসতো। তখন নতুন করে অনেক ব্যালট পেপার
ছাপাতে হয়েছিল। তখন বেশ কিছু ঝামেলায় পড়েছিলাম। এরপর নির্বাচন কমিশন
নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিডিউল ঘোষণার পর তখন ৯ দিন আগে একটি রিট হলো।
নির্বাচন স্থগিত হলো।’
তিনি
আরও বলেন,‘যখন কোনও রিটের মাধ্যমে নির্বাচন স্থগিত হয়,তখন নির্বাচন কমিশন
একদম স্থির হয়ে পড়ে। তার পক্ষে আর কিছু করার থাকেনা। ফলে নির্বাচন কমিশনকে
আরও শক্তিশালী করা দরকার। জাতীয় সংসদ নির্বাচন তো সীমানার জন্য স্থগিত হবে
না,যদি তাই হয় তাহলে প্রতিটি স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন এভাবে বাধাগ্রস্থ
হবে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন
বলেন,‘সবক্ষেত্রে রাজনীতি করা যায় না। এখানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত
যা বলেছেন,তা যথার্থই বলেছেন। সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে দুই পার্ট। স্থানীয়
সরকার ও নির্বাচন কমিশন। স্থানীয় সরকার চাইলে সরকার পক্ষকে বলে সীমানা
নির্ধারণে কাজ করতে পারে এবং নির্বাচন কমিশন পাঁচ বছর পর পর সেটা নির্ধারণ
করতে পারে।’
অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন আরও বলেন,‘এখানে স্থানীয়
সরকার সীমানা নির্ধারণ যদি করতে চায়, তাহলে সরকার পক্ষ অর্থাৎ অ্যাটর্নি
জেনারেল অফিসকে জানাতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে— এমনটি নয়।
সম্প্রতি গাজীপুরের নির্বাচন স্থগিত নিয়ে যে আলোচনা চলছে,তাতে সবাই একটু
বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যিনি রিট পিটিশন করেছেন, তার করার
কোনও রাইট নেই। কারণ, তিনি একজন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। তিনি ওই এলাকার
ভোটারও নন। আদালত সবকিছু বিবেচনা করে আবার এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে
নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে বোঝা যাচ্ছে এখানে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে।’
তিনি
আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কোনও মতামত নেই, নিজের শক্তিতে সে চলে
না। তার অবস্থান শক্ত নয়, সকালে এক কথা বলে, বিকালে অন্য কথা বলে। গাজীপুর
সিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তার অবস্থান শক্ত ছিল না। শুধু তাই নয়, কমিশন
এখানে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।’
হাইকোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ বলেন,
‘নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর সুপ্রিম কোর্ট যদি নির্বাচন বিষয়ে কোনও
সিদ্ধান্ত জানাতে চায়, তাহলে আগে নির্বাচন কমিশনকে নোটিশ করতে হবে। এটা
সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান অন্য একটি
প্রতিষ্ঠানকে অতিক্রম করতে পারে না। সেটা যদি করা হয়, তাহলে সেটা সংবিধান
লঙ্ঘন হবে। সব নির্বাচনের ক্ষেত্রেই সীমানা নির্ধারণ করা হয়। জাতীয়
নির্বাচন হোক, আর সিটি নির্বাচন। সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি নির্বাচন
কমিশনের একক দায়িত্ব এবং সাংবিধানিকভাবে সেই ক্ষমতা তাকে দেওয়া হয়েছে। এই
দায়িত্ব অপর কেউ পালন করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে যে
সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই চূড়ান্ত। এখন নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক
প্রতিষ্ঠান এবং সুপ্রিম কোর্টও একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সুপ্রিম
কোর্টকে যতটুকু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে,তার বেশি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে না। ’
ইকতেদার
আহমেদ বলেন, ‘সংবিধানের ধারা ৭(ক) প্রত্যেক নাগরিক যদি মেনে না চলে এর
ব্যত্যয় ঘটায়, তখন তা হবে রাষ্ট্রদ্রোহীতার সমান। ফলে সংবিধান তাকে মেনে
চলতেই হবে। সংবিধানে বলা আছে— আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, জাতীয়
নির্বাচন, স্থানীয় নির্বাচনসহ সব ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবে নির্বাচন
কমিশন। নির্বাচন কমিশনকে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সংবিধান হলো আমাদের
সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানেই বলে দেওয়া হয়েছে— সংবিধান ও আইন মেনে চলা প্রত্যেক
নাগরিকের কর্তব্য।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী
বলেন,‘স্থানীয় নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচন কিন্তু এক না। সীমানা
নির্ধারণের কাজ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। এখানে কমিশনের কিছু করার নেই।
কিন্তু, এ যাবত সবসময়ই দোষ হয় এই কমিশনের এবং সঙ্গে আওয়ামী লীগের। মূল কথা
হলো এসব বিতর্ক নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি করে বিষয়টি আরও ঘোলাটে করা হচ্ছে।
আমাদের দৃষ্টির সীমানা হয়ত বেড়েছে, কিন্তু মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি।’
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘কিছুতে কিছু হলেই কমিশনের
দোষ দিয়ে বসি। কিন্তু, তার যে কাজ তাতে তো তাদেরকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত;
কিন্তু সেটাও তো কেউ করে না। আজ আমরা বলছি কমিশন খুব ভালো করছে, বিএনপি
বলছে কমিশন আওয়ামী লীগের; সরকারের। অন্যদলগুলো হয়তো অন্য কথা বলছে।’
তিনি
আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য সব রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে
আসতে হবে। কিন্তু, তা না করে নিজ নিজ মতামত দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত
করার চেষ্টা করা হয়। তা না করে, আসুন নির্বাচন কমিশনকে আরও সহযোগিতা করি।’
বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ হারুন উর রশীদ বলেন,
‘এই দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে। আর তা করেছে নির্বাচন
কমিশনই। যখন তারা তা করেছে,তখন তাদের সুবিধা আরও কম ছিল। আবার কখনো কোনও
নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারেনি। ফলে
কোনও না কোনও সিস্টেমেই তো এগুলো হয়। যে সিস্টেম নির্বাচনকে সুষ্ঠু হতে
দেয়, আবার যে সিস্টেম সুষ্ঠু হতে দেয় না সেটাই হলো পলিটিক্স।’
তিনি বলেন, ‘এখন যদি ঢাকা উত্তর সিটির ভোটারদের কথায়
আসি, সেখানে পারসেপশন একটু ভিন্ন। ওখানে যে দুই জন রিট করেছিলেন, তার একজন
ছিলেন আওয়ামী লীগ এবং অন্যজন ছিলেন বিএনপির। আর গাজীপুরের এই নির্বাচনের
বিষয়ে যেটা প্রথম থেকে ফোকাস্ড হয়েছে— সেটা হচ্ছে ওই রিটকারী সাভারের
শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। একইসঙ্গে তিনি সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের
শ্রমবিষয়ক সম্পাদক। বড় বিষয় সেটিও না। কিন্তু বড় বিষয় যেটি, সেটি হলো— তিনি
যে রিটটি করলেন তা আবার খুব গোপনীয়তার মধ্যে যেমন করা হয়েছে; তেমনি সেটি
খুব দ্রুততার সাথেই কাজ করেছে। দেশে পুলিশ বলি, প্রশাসন বলি এগুলো মাঝে
মাঝে এত দ্রুততার সঙ্গে অ্যাক্ট করে তা অনেক সময় বিস্ময়কর মনে হয়। তবে বোঝা
গেছে, কাজটি খুবই দ্রুততার সঙ্গে হয়েছে। কিন্তু আমি কি বলতে পারি
হাইকোর্টকে জোর দিয়ে কাজটি দ্রুততার সঙ্গে করতে বলা হয়েছে? তা তো আমি বলতে
পারিনা।’
হারুন
উর রশীদ আরও বলেন, ‘হঠাৎ জানা গেলো হাইকোর্ট ইলেকশনটি স্থগিত করেছে।
বিষয়গুলো মুহুর্তেই ঘটে গেলো। নোমানকে আটকে রাখা হলো। লিংকগুলো খুব
ইন্টারেস্টিং। খালিদ মাহমুদ বললেন,—আইনশৃঙ্খার জন্য আটকে রাখলো। তাহলে,
নোমান কি সেখানকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাবেন এমন কিছু? আমি তো এমনটি জানি
না।’
No comments