বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: যেভাবে স্পেসএক্স’র সর্বাধুনিক রকেট পেলো বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে মহাকাশে উড়বে ফ্যালকন ৯ রকেটের সর্বশেষ সংস্করণ ব্লক-৫
বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট ওড়ানোর তালিকায় নাম উঠানোর সব প্রস্তুতি শেষ বাংলাদেশের। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ১০ মে বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ১০ মে, দিনগত রাত ২টা ১৫ মিনিটে) ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোর কেপ কেনেডি সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে মহাকাশে উড়বে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। এটাকে মহাকাশে নিয়ে যাবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এর ফ্যালকন ৯ রকেটের সর্বশেষ সংস্করণ ব্লক-৫। কোম্পানিটির আশা, এর মধ্য দিয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।
স্পেসএক্স’র ফ্যালকন ৯ রকেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতা নাসা। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটির পাঠানো প্রথম রকেটের ক্রেতাও ছিল নাসা। এরপর টানা ৩টি মিশনে যায় ফ্যালকন ৯। লুক্সেমবার্গের এসইএস প্রথম স্পেসএক্সের  হয়ে অপারেট করা শুরু করে। ২০১৩ সালের সাফল্যের পর গত বছরও স্পেসএক্সকে সমর্থন দেয় এসইএস।
বৃহস্পতিবার স্পেসএক্স’র সবচেয়ে আধুনিক রকেট ফ্যালকন-৯ ব্লক-৫ ব্যবহার করে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। এই রকেটটি নাসা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতরের সবক’টি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হর্য়েছে। প্রথমবারের মতোই ১০টি ফ্লাইট করতে পারে রকেটটি। আগের রকেটগুলো মাত্র ২ থেকে ৩টি উড্ডয়নে সক্ষম ছিল।
কেনেডি স্পেস সেন্টার, ফ্লোরিডাকেনেডি স্পেস সেন্টার, ফ্লোরিডা
স্পেসএক্স-এর ওপর ভরসা রেখেছে নাসা ও এসইএস-এর মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও। বাংলাদেশের সাড়ে তিন হাজার কেজি ওজনে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে স্পেসএক্স নতুন কিছু শুরু করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ৫৪তম ফ্যালকন-৯ হলেও তাদের আশা নতুন অধ্যায়ের সূচনা এটি।
তবে বাংলাদেশ কীভাবে স্পেসএক্স-এর ক্রেতা হলো? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে, এটা যেন কীভাবে হয়ে গেল। মূলত এটা স্পেসএক্স-এরই পছন্দ ছিল। আর আমরা তাতে রাজি হয়ে যাই।’
কারখানায় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের টুইটার থেকে নেওয়াকারখানায় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের টুইটার থেকে নেওয়া
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে আরও বলেন, বিটিআরসি দরপত্র আহ্বান করেছিল। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের জন্য রকেট ও ব্যাকআপ দুটিই খুঁজছিল তারা। দরপত্র অনুযায়ী স্যাটেলাইট বহনের জন্য থেলস অ্যালেনিয়া স্পেস রকেট হিসেবে এয়ারলাইনস্পেসের আরিয়ানা ফাইভকে তালিকাভুক্ত করা হয়। দ্বিতীয় পছন্দে ছিল স্পেসএক্স’র ফ্যালকন-৯।
কিন্তু বাংলাদেশ নির্দিষ্ট সময়ে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করতে চেয়েছিল। এই সময়সীমাই স্পেসএক্সকে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে আসে। বিক্ষোভের মুখে পড়ে আরিয়ানস্পেস দুই মাসে তাদের তিনটি মিশন পিছিয়ে দেয়। বাংলাদেশ ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে চাইলেও আরিয়ানস্পেস এই বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারেনি।
কারখানায় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়াকারখানায় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
আরিয়ান-৫ রকেট মূলত দুটি স্যাটেলাইট বহন করতে পারে। একটি ওপরে এবং ছোট একটি নিচে।
সজীব ওয়াজেদ বলেন, আমাদের স্যাটেলাইটের আকারের কারণে তা আরিয়ান-৫ রকেটের নিচের অংশে শুধু বসানো যায় এবং তারা সময়ের ব্যাপারে আমাদের নিশ্চয়তা দিতে পারছিল না। ফলে আমরা বিকল্প খুঁজি। স্পেসএক্স আমাদের প্রস্তাব দেয় ফ্যালকন-৯ ব্লক-৫ ব্যবহার করার, আমরা তাতে রাজি হই।
অবশ্য স্পেসএক্সও বিটিআরসির দেওয়া সময়ে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে পারেনি। ২০১৭ সালে ১৮টি মিশনে সফল হলেও বাংলাদেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে পারেনি তারা। সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘বিজয় দিবসকে ঘিরে সবারই আশা ছিল। আমি বলেছিলাম সম্ভব হবে না। তারপরও চেষ্টা করে দেখি।’
উৎক্ষেপণের জন্য হ্যাঙ্গার থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটউৎক্ষেপণের জন্য হ্যাঙ্গার থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে ২৬টি ‍কু-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার ও ১৪টি সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার রয়েছ। এতে টেলিভিশন ও ব্রডব্যান্ড যোগাযোগে উন্নতি ঘটবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সময় ১০ মে বিকাল ৪টা ১২ মিনিট থেকে ৬টা ২২ মিনিটের মধ্যে যেকোনও সময় কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ হবে বলে সময় নির্ধারণ করা ছিল। জানা গেছে, উৎক্ষেপণের ৮ দিন পরে স্যাটেলাইট অরবিটাল স্লটে প্রতিস্থাপিত হয়ে সংকেত পাঠাতে শুরু করবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে। সূত্র: স্পেস নিউজ

No comments

Powered by Blogger.