পরাজয় জেনে অপপ্রচার চালাচ্ছে ১৪ দল -খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে মঞ্জু

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ও ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু সিইসি’র নিকট আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে, নিরাপদ করতে অবিলম্বে খুলনায় সেনাবাহিনী নিয়োগের সিদ্ধান্ত করুন। একজন যুগ্মসচিবকে নির্বাচনে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে; এটি নির্বাচনী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরীর কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অপরদিকে খুলনা প্রেস ক্লাবে এক মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি ও ১৪ দলের অন্যতম নেতা শরিফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, নিশ্চিত পরাজয় জেনে বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের পথ বেছে নিয়েছে। তবে খুলনার উন্নয়ন এবার মানুষ তালুকদার আবদুল খালেককে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করবে। এদিকে নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, প্রশ্নের ঊর্ধ্বে উঠে নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু, সুন্দর এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নির্বাচন পূর্ববর্তী রাতটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে।
কেসিসি নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো হয় নাই। বলেছিলাম ভীতিমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। চেয়েছিলাম সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হোক। নির্বাচনীয় কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলেছিলাম, সেটাও হয় নাই। গতরাতও আমাকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে। নেতাকর্মীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি ও সাঁড়াশী অভিযানের নামে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে এখনো গণগ্রেপ্তার করছে পুলিশ। বুধবার দিবাগত রাতেও শ’ শ’ নেতাকর্মীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আমাদের নির্বাচনী এজেন্ট, আমাদের ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক-সদস্য সচিব এমনকি সেন্ট্রাল কমিটির নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ গিয়েছে। আমাদের এক কর্মীর পিতার ইজিবাইকের গ্যারেজে তালা মেরে দিয়েছে, এককর্মীর  মোটরসাইকেল পুলিশ গাড়িতে করে তুলে নিয়ে গেছে। এভাবে নানাবিধ নিপীড়ন আমাদের উপরে চালানো হচ্ছে। আমি নির্বাচন করছি আর আমার কর্মীরা নির্বাচনী মাঠে থাকতে পারবে না; আমরা বক্তব্য দেবো আর পুলিশ বলবে- তারা সন্ত্রাসী অভিযান চালাচ্ছে। অথচ কর্মীদের কোনো মামলা নেই, ওয়ারেন্ট নাই; তাদের অপরাধ শুধু তারা বিএনপি কর্মী, ধানের শীষ’র কর্মী। আমরা বলেছিলাম সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে-কিন্তু পুলিশ একটি গাদা বন্দুকসহ একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর লোক ছাড়া পুলিশ কোনো সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করা হয়নি।
তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, গত ৩৫ বছরে খুলনা শহরে কোন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বিএনপি’র কোনো প্রার্থী নির্বাচনে হারে নাই। বিএনপি’র বিজয়ের ধারাকে ব্যাহত করার জন্যই সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার, নির্বাচনী মাঠ থেকে বাইরে রাখার জন্যই এই ষড়যন্ত্র চলছে। সিইসি’র নিকট আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে, নিরাপদ করতে অবিলম্বে খুলনায় সেনা বাহিনী নিয়োগের সিদ্ধান্ত করুন। গতকাল (বুধবার) একজন যুগ্ম-সচিবকে নির্বাচনে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে; এটি নির্বাচনী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আচরণবিধিমালায় কোথাও সমন্বয়কের দেয়ার অধিকার নির্বাচন কমিশনের নাই। আমরা দাবি করেছি- নির্বাচন কমিশনের একজন কমিশনারকে খুলনাতে রেখে নির্বাচন করা জন্য। নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন, গভীর রাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল মহড়া চলছে সেটাও পুলিশ বন্ধ করে নাই। প্রত্যেকটি বিষয় নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা কোনো পদক্ষেপ নেয় নাই। তারপরেও বিএনপি কোনো প্রকারেই নির্বাচনের বাইরে থাকবে না; মাঠ ছাড়বে না। ভোটাররা বার্তা দিয়েছে গতবারের চেয়ে অধিক ভোটে বিএনপি এখানে বিজয়লাভ করবে। ভোটারদের বলেছি- সাবধানের থাকুন, সময়মতো বেরিয়ে নিরাপদে ধানের শীষে ভোট দিন। জেলায় ৫৫, মহানগরী প্রথমে ২১, পরে চার ও গত রাতে দশজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আওয়াল মিন্টু. বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য জয়নাল আবেদীন ফারুক, মশিউর রহমান, হাবিবুর রহমান ও মেহেদী হাসান রুমী, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট বিলকিস জাহান শিরীন, শ্যামা ওবায়েদ, ক্রীড়া সম্পাদক মো. আমিনুল হক প্রমুখ।
নির্বাচনের আগের রাতে সতর্ক থাকতে কবিতা খানমের নির্দেশ: নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম বলেছেন, প্রশ্নের ঊর্ধ্বে উঠে নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু, সুন্দর এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নির্বাচন পূর্ববর্তী রাতটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে। গত বুধবার সন্ধ্যায় খুলনা সার্কিট হাউজে স্থানীয় প্রশাসন, রিটার্নিং অফিসার, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও সহায়ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে  ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এবং ভোটারদের মধ্যে আস্থা তৈরি হয় সে পরিবেশে অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। তিনি খুলনা ঘুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে যে সমন্বয় লক্ষ্য করেছেন তা যেন নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত অক্ষুণ্ন থাকে তার ওপর জোর দেন।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন। এ সময় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন)  সেলিম মিয়া, যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন, খুলনা জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান, পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্যাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর প্রতিনিধি এবং জুডিসিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচনী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের দপ্তর প্রধানরা কেসিসি নির্বাচন সুষ্ঠু করতে তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

No comments

Powered by Blogger.