তদন্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে চট্টগ্রামের পারভেজ হত্যা মামলা

তদন্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে চট্টগ্রামের মিরসরাই জোরারগঞ্জের নিরীহ যুবক পারভেজ হত্যা মামলা। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করলেও পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না তাদের। ফলে এ মামলার তদন্তভার কাঁধে নেয় ‘পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কিন্তু দুর্গম এলাকা হওয়ায় আসামিদের ধরতে হিমশিম খাচ্ছে তদন্তকাজে পুলিশের বিশেষজ্ঞ এই ইউনিটও। পিবিআই এর চট্টগ্রামের পরিদর্শক ওমর ফারুক এ প্রসঙ্গে বলেন, মামলাটির তদন্তকাজ চলছে। মামলার আসামিদের ধরতে চট্টগ্রাম থেকে ৫ বার ওই এলাকায় গেছি। নিহতের বাড়িতেও তিনবার গেছি। তবে যেতে যেতে ইনফরমেশন পেয়ে আসামিরা পালিয়ে যায়। 
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে মিরসরাই জোরারগঞ্জ হয়ে এলাকায় পৌঁছতে ২ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। এরমধ্যে আসামিরা আমাদের আসার খবর পেয়ে যায়। ফলে তারা সটকে পড়ে। এ ব্যাপারে জোরারগঞ্জ থানায় আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য বলা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জোরারগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মো. আলমগীর বলেন, চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিদের ধরতে কখনো রাতে কখনো দিনে পুলিশ একের পর এক অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। 
এদিকে মামলার বাদী খুনের শিকার পারভেজের মা জাহেদা বেগমের দাবি, আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্য ঘোরাফেরা করছে। আমরা গরিব। আমার আরো এক সন্তান আছে। তাকেও মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে আসামিরা। ভয় হচ্ছে আমাদের। তিনি বলেন, আসামিরা প্রকাশ্য ঘুরছে। এদের গ্রেপ্তার না করে পুলিশ মাঝে মাঝে বাড়ি এসে আমাকে এটা-সেটা জিজ্ঞাসা করে সান্ত্বনা দেন।
তিনি বলেন, আমার পুত্র পারভেজকে গত বছরের ১লা আগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টায় আসামিরা প্রকাশ্যে বাড়ির পাশে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে আমার ডান হাতের কব্জিতে কিরিচের কোপ লেগে গুরুতর আহত হই। ঘটনার পরদিন ২রা আগস্ট বাদী হয়ে মামলাটি (নং-০৩/২২৮) দায়ের করি। মামলার আসামিরা হলেন, ওই এলাকার আবুল কালামের পুত্র রুমন (২৫), বাংলা বাজারের মৃত মীর হোসেনের পুত্র রানা (২৮), নাহারপুরের ইউছুপের পুত্র বেলাল (২৬), জসিমের উদ্দিনের পুত্র ফারুক (২৫), নুরুল হুদার পুত্র আরমান (২৬), বাংলাবাজারের শেখ জাহেদ (৩০), রাকিব (২৭), মো. ডিপটির পুত্র আরিফ, নাহেরপুরের নুরুচ্ছফার পুত্র আরিফ (২৬), মৃত নাজিম উদ্দিনের পুত্র নাজমুল (২৭), বাংলাবাজারের রাসেল (২৪), নাহেরপুরের মো. সেলিমের পুত্র নোমান (৩২), মো. কেরানীর পুত্র মো. মাসুক (২৬), মোবারক ঘোনার আমিনুল হকের পুত্র মো. সাইফুল (৩২), জোরারগঞ্জের মো. জিন্নাহের পুত্র রাহাত (২৫)সহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৫/২০ জন। তিনি জানান, ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে আমার ডান হাতের কব্জিতেও আসামিরা কুপিয়েছে। তাই মামলার কপিতে ডান হাতে স্বাক্ষর করতে না পেরে বাম হাতে টিপসই দিয়েছি। চিকিৎসক বলছেন হাতটা অপারেশন করতে হবে। টাকার অভাবে তা করাতে পারছি না। গ্রাম্য চিকিৎসক থেকে যে কয়দিন ওষুধ খাই ভালো থাকি। পরে হাতের ক্ষত আর ব্যথা আবার বেড়ে যায়। আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।
মামলার বিবরণে জানা যায়, মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানার আব্দুর রহিম ড্রাইভারের পুত্র পারভেজের সঙ্গে আসামিদের দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছিল। গত বছরের ৩১শে জুলাই নিহতের ভাই রিয়াদকে স্থানীয় ৪নং ধুম ইউনিয়ন অফিসে নিয়ে আসামিরা মারধর করে। বিষয়টি স্থানীয় ৪নং ধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ ইউপি সদস্য দিদার জানতেন। ওই বছরের ১লা আগস্ট বিকেল চারটায় জোরারগঞ্জ মরগাং গ্রামের হামিদ আলী মাঝি বাড়ির ঘাটার সামনে দিদার মেম্বারের কাছে ভাই রুমনকে মারার বিষয়টি জানতে চায় পারভেজ। এর আধঘণ্টা পর আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আসামিরা পারভেজকে লোহার রড, কিরিচ দিয়ে কোপাতে থাকে। পারভেজের চিৎকারে তার মা বাড়ি থেকে বের হয়ে ছেলেকে বাঁচাতে আসলে মায়ের ডান হাতের কব্জিতে কোপ লাগে।

No comments

Powered by Blogger.