রাজশাহীর গ্রামে গ্রামে গোখরা সাপ আতঙ্ক
রাজশাহীর গ্রামে গ্রামে সাপ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এক সপ্তাহে রাজশাহীর পবা, তানোর ও দুর্গাপুর উপজেলার তিনটি বাড়িতে মারা পড়েছে প্রায় দু’শ গোখরা। উদ্ধার করা হয়েছে শতাধিক সাপের ডিম। অল্প সময়ের ব্যবধানে এ ধরনের বিপুলসংখ্যক সাপ মারা পড়ায় এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাপের প্রজননকাল চলছে। ডিম পাড়ার সময়ও এখন। বিভিন্ন এলাকায় ঝোপঝাড় নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে ডিম পাড়ার নিরাপদ স্থান হিসেবে সাপ মাটির বাড়িকেই বেছে নিচ্ছে। তবে এতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। সর্বশেষ সোমবার দুপুরে জেলার দুর্গাপুর উপজেলার দুই বাড়িতে ৩১টি গোখরা সাপের দেখা মিলেছে। এই দুই বাড়িতে পাওয়া যায় ৯০টি সাপের ডিমও। তবে ৩০টি সাপ পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। ডিমগুলোও ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে একটি বড় আকারের সাপ ধরে নিয়ে গেছেন সাপুড়ে। মাড়িয়া ইউনিয়নের হোজা অনন্তকান্দি পশ্চিমপাড়া গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম তার বাড়িতে বড় আকারের একটি গোখরা সাপ দেখতে পান। সাপটি বাড়ির একটি গর্তে লুকিয়ে যায়। পরে গর্ত খুঁড়তে শুরু করলে একে একে বেরিয়ে আসে ৩০টি সাপ। আতঙ্কিত লোকজন এ সময় সব সাপকেই পিটিয়ে মেরে ফেলেন। ওই গর্তে ৪৫টি ডিমও পাওয়া যায়। সেগুলোকেও ভেঙে নষ্ট করা হয়। তবে বড় সাপটিকে আর সেখানে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পরই পাশের পানানগর ইউনিয়নের বেলঘরিয়া গ্রামের এক বাড়িতে পাওয়া যায় সাপের আরও ৪৫টি ডিম। বাড়ির মালিকের নাম সিদ্দিক আলী। পেশায় তিনি মুরগি ব্যবসায়ী।
সিদ্দিকের শোয়ার ঘরের দরজার পাশের একটি গর্ত থেকে ডিমগুলো উদ্ধার করা হয়। পাওয়া যায় মা সাপটিকেও। ব্যবসায়ী সিদ্দিক আলী জানান, বেশ কয়েক দিন থেকেই তিনি তার বাড়িতে একটি বড় গোখরা সাপ দেখতে পাচ্ছিলেন। কিন্তু মারতে গেলেই সাপটি পালিয়ে যায়। তাই বাড়িতে সাপের বাসা আছে ভেবে মঙ্গলবার বিকালে তিনি এক সাপুড়েকে ডেকে আনেন। সাপুড়ে গিয়ে বাড়ির ইঁদুরের গর্ত চিহ্নিত করে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেন। এ সময় সিদ্দিকের শোয়ার ঘরের দরজার সামনে গর্তের ভেতর পাওয়া যায় ৪৫টি গোখরা সাপের ডিম। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর সাপুড়ের হাতে ধরা পড়ে বড় গোখরা সাপটিও। এর আগে ৪ জুলাই রাজশাহী মহানগরীর বুধপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাজদার আলীর বাড়িতে ২৭টি গোখরা সাপ মারা হয়। এর পরদিন ওই বাড়িতে পাওয়া যায় আরও একটি সাপ। এর দু’দিন পর জেলার তানোর উপজেলার ভদ্রখণ্ড গ্রামের কৃষক আক্কাস আলীর বাড়িতে ১২৫টি গোখরা সাপের বাচ্চা ধরা পড়েছে। পাওয়া যায় ১৩টি ডিমও। সাপগুলোকে পিটিয়ে মারা হয়, ডিমগুলোও ধ্বংস করা হয়। অন্যদিকে বর্তমান সময়ে আকস্মিকভাবে সাপ বেরিয়ে আসা প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক এম খালেকুজ্জামান বলেন, শহর কিংবা গ্রাম বলে কোনো কথা না, কম-বেশি সবখানেই সাপ আছে। সাপ সাধারণত ঝোপঝাড়ের ভেতর ইঁদুরের গর্তে ডিম পাড়ে। কিন্তু প্রতিনিয়ত পঝাড় কমছে। ফলে সাপ বসতবাড়ির ইঁদুরের গর্তে গিয়ে ডিম পাড়ছে। তিনি আরও বলেন, তারা গবেষণা করে দেখেছেন, মিলনের পর পুরুষ সাপটি অন্য জায়গায় চলে যায়। আর মা সাপটি গর্তে গিয়ে ডিম পাড়ে।
No comments