ঢাকায় নিখোঁজদের তালিকা দিল বিএনপি
বিশিষ্ট কলামিস্ট ও কবি ফরহাদ মজহার ‘অপহরণ’ হওয়ার ঘটনাকে নাটক বানাতে সরকার নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারের সর্বশেষ আক্রোশের শিকার হয়েছেন ফরহাদ মজহার। তিনি এখন এতটাই মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত যে, শোনা যাচ্ছে মানুষজন ও আত্মীয়স্বজনদের চিনতে তার কষ্ট হচ্ছে। অথচ তার অপহরণ ঘটনাকে এখন নাটক বানাতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সরকার। কিন্তু সরকারি কোনো চক্রান্ত ফরহাদ মজহারের অপহরণের ঘটনায় সাজানো নাটক মানুষকে বিশ্বাস করাতে পারবে না। মানুষ যা বোঝার তা ইতিমধ্যেই বুঝে গেছেন।’ সারা দেশের গুম-খুনের চিত্র তুলে ধরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বর্তমান সরকারের আমলে নিখোঁজ হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের একটি আংশিক তালিকা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির কাছে গুম ও নিখোঁজদের তালিকা চেয়েছেন। গুম হওয়া মানুষের স্বজনদের বেদনার্ত কান্নার আওয়াজ তাদের কানে প্রবেশ করে না। পিতার অপেক্ষায় তার সন্তান, স্বামীর অপেক্ষায় স্ত্রী, সন্তানের অপেক্ষায় মা-বাবা। এ অপেক্ষার যেন শেষ নেই। শুধু গুম আর অপহরণই নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনে লাখ লাখ মানুষ এখন কাঁদছে। কিন্তু আওয়ামী নেতারা এসব মানুষের কান্না নিয়ে উপহাস করছেন।’ রিজভী বলেন, ‘বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা ও তার সন্তানরা এখনও ইলিয়াস আলীর অপেক্ষায় আছেন। সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলম, সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হীরু, হুমায়ুন কবির পারভেজ, তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল সভাপতি আমিনুল ইসলাম জাকির, তেজগাঁও থানা বিএনপি নেতা সাজেদুল হক সুমন, সাজেদুলের খালাতো ভাই জাহিদুল করিম (তানভীর),পূর্ব নাখালপাড়ার আবদুল কাদের ভূঁইয়া (মাসুম), পশ্চিম নাখালপাড়ার মাজহারুল ইসলাম (রাসেল), মুগদাপাড়ার আসাদুজ্জামান (রানা), উত্তর বাড্ডার আল আমিন, বিমানবন্দর থানা ছাত্রদল নেতা এএম আদনান চৌধুরী ও কাওসার আহমেদ, সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহাবুব হাসান, খালিদ হাসান (সোহেল) ও সম্রাট মোল্লা, জহিরুল ইসলাম (হাবিবুর বাশার জহির), পারভেজ হোসেন, মো. সোহেল, নিজাম উদ্দিন (মুন্না) ও তরিকুল ইসলাম (ঝন্টু), কাজি ফরহাদ, সেলিম রেজাকে (পিন্টু), ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুমসহ অনেকের হতভাগ্য পরিবার তাদের স্বজনদের অপেক্ষায় আছে। বিমানবন্দর থানা ছাত্রদলের সভাপতি গুম হওয়া এমএ আদনান চৌধুরীর বাবা রুহুল আমিন ছেলের অপেক্ষায় চোখের পানি ফেলতে ফেলতে অসুস্থ হয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। এদের রোদনভরা অপেক্ষার খবরে তো ওবায়দুল কাদেরের চোখের পানি ঝরবে না।’ গুম হওয়া মানুষগুলোর বেশির ভাগই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত দাবি করে রিজভী বলেন, ‘২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কেবলমাত্র ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে কমপক্ষে ৫০ জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ৭০ দিন গুম করে রাখার পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ফেলে আসা হয়। মানবাধিকার সংস্থা এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৪৩৫ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন। এদের মধ্যে ২৫২ জনের এখন পর্যন্ত হদিস পাওয়া যায়নি। অথচ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গুম ও নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ পান না।’ কয়েক দিন আগে গ্রেফতার হবিগঞ্জ যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবর আলীকে আদালতে হাজির না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন রিজভী। তিনি বলেন, অবিলম্বে তাকে আদালতে হাজির করতে হবে। একই সঙ্গে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচিত কমিশনার ও বিএনপি নেতা হান্নান মিয়া হান্নু, ফয়সল সরকার, সফিউদ্দিন শফি, তানভীর আহম্মেদ, মো. শহীদ ও অলোককে মিথ্যা মামলায় কারাগারে প্রেরণের নিন্দা জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বিলকিস জাহান শিরিন, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আজিজুল বারী হেলাল, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, আবদুল আউয়াল খান, মাহবুবুল হক নান্নু, সেলিমুজ্জামান সেলিম, শাহিন শওকত, হারুনুর রশীদ হারুন, জালাল উদ্দিন মজুমদার গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
No comments