মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়ছে by দীন ইসলাম
টানা
দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের দেড় বছর পর মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়ছে। এ নিয়ে
দ্বিতীয় দফা কলেবর বাড়ছে মহাজোট সরকারের। কাল রোববার বা মঙ্গলবার দিনের কোন
একসময় নতুন মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানের জোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইফতারের
আগে সংক্ষিপ্ত এ শপথ অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রীদের নিয়ে ‘ইফতার
পার্টি’ হওয়ার জোর সম্ভাবনা বেশি বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। এবার
মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দুয়েক জন ছাড়া সবাই হবেন নতুন
মুখ। এদিকে গতকাল সিলেটে মন্ত্রিসভা রদবদল ও সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দিয়েছেন
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মন্ত্রিসভায় রদবদল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের
প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, নতুন করে পরিবর্তন হচ্ছে কিনা সেটা বলা
মুশকিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন হাত দিয়েছেন তখন দেখা যাক কি হয়।
একটু পুনর্গঠন হবে, তবে কিভাবে হবে বলা মুশকিল। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে
জানা গেছে, আপাতত মন্ত্রিসভার সমপ্রসারণ হতে যাচ্ছে। কেউ বাদ পড়ছেন না। এ
তালিকায় মন্ত্রী হিসেবে দুই জন ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিন জনের নাম রয়েছে।
এরই মধ্যে সম্ভাব্য মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীদের তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে
দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার বিকালে নতুন করে স্থান পাওয়া
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কাছে ফোন করা হবে। ওই ভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ কারণে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানের
প্রস্তুতি নিতে আজ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা খোলা রাখা হবে। ওই
ভাবেই সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়ছে কিনা এ
বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূইঞা
মানবজমিনকে কোন কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। উচ্চপর্যায় সূত্রে জানা গেছে,
সংরক্ষিত নারী আসনের এক সংসদ সদস্যকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।
ওই নারী এমপি সংস্কৃতি জগতের সঙ্গেও জড়িত। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য
প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী অপসারণ হওয়ায় টাঙ্গাইল
এলাকা থেকে কোন মন্ত্রী নেই। ওই এলাকা থেকে একজনকে মন্ত্রিত্ব দেয়া হতে
পারে। এ ছাড়া সিনিয়রদের মধ্যেও দুয়েক জনকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হতে
পারে। তবে আগের মেয়াদে ডাকসাইটের মন্ত্রী থেকে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন এমন
কাউকে নতুন করে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,
খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে নিয়েও উচ্চ মহলে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী
তাদের উপর বিরক্ত হলেও এখনই তাদের সরাতে চান না। এ দুই মন্ত্রী সম্পর্কে
বলা হয়েছে, সুখে দুঃখে তারা সব সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গেই আছেন। তাই তাদেরকে
সরানোর চিন্তা করা হচ্ছে না। অন্য বিতর্কিত মন্ত্রীদেরও আপাতত সরানো হচ্ছে
না। তবে বিতর্কিত মন্ত্রীদের মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী দেয়া হবে। এরপর
সুযোগ বুঝে মন্ত্রিসভা থেকে তাদের বাদ দেয়া হবে। এর আগে গত বছরের ৫ই
জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর ১২ই জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন
মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭
প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রী ছিলেন। এরপর একই বছরের ২৬শে ফেব্রুয়ারি
খালি থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান এ এইচ মাহমুদ আলী ও
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মো. নজরুল ইসলাম হিরু।
অপরদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে
সরিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর হজ নিয়ে
বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য গত বছরের ১২ই অক্টোবর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য
প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণ করা হয়।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের
মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে
অব্যাহতি দিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়েছে। নতুন এলজিআরডি মন্ত্রী করা
হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। পাশাপাশি তিনি প্রবাসীকল্যাণ
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও সামলাবেন। এখন মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীর সংখ্যা ২৯,
উপদেষ্টা ৫ ও প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যা ১৮ জন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া মন্ত্রিসভার
মোট সদস্য ৫৩ (উপদেষ্টাসহ) জন। বর্তমানে ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ
মন্ত্রণালয়ে কোন মন্ত্রী নেই। অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ দুটি
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকলেন। তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়েও কোন মন্ত্রী
নেই। তবে প্রতিমন্ত্রী আছেন। নতুন মন্ত্রীদের শপথের পর ঈদের আগের দপ্তর
বণ্টন করা হতে পারে। ওইভাবেই প্রস্তুতি রয়েছে।
No comments