এরশাদ-রওশন দূরত্ব বাড়ছেই by সিরাজুস সালেকিন
স্ত্রী
রওশন এরশাদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েই চলেছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন
মুহম্মদ এরশাদের। নানা ইস্যুতে দ্বিমতের কারণে এই দূরত্ব দ্বন্দ্বে রূপ
নিচ্ছে। সম্প্রতি সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এরশাদ-রওশনের দূরত্বের
বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী এরশাদ ও রওশনকে এক গাড়িতে চড়ার
পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যানজটের পরিপ্রেক্ষিতে হলেও
বিষয়টি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে তার বিশেষ দূত এরশাদ ও বিরোধীদলীয়
নেত্রী রওশনকে। গত ৬ই জুন গণভবনে রাজনীতিবিদদের সম্মানে প্রধানমন্ত্রীর
ইফতারে যাননি রওশন এরশাদ। অবশ্য গণভবনে যানজটের কারণে ইফতারে অংশ নিতে
পারেননি বলে বুধবার সংসদে দেয়া এক ভাষণে উল্লেখ করেন রওশন। তার বক্তব্যের
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি খুবই দুঃখিত, যানজটের কারণে বিরোধীদলীয়
নেত্রী আমার ইফতার পার্টিতে আসেননি। এরশাদ সাহেব আসলেন, আপনি আসতে পারলেন
না। কিন্তু আপনারা দুজন যদি এক গাড়িতে আসতেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী আপনি নিজেই
বিবেচনা করে দেখুন যে, দুখানা গাড়ি মানে যানজট একটু বাড়লো। একটা গাড়িতে
এলে যানজটটা কমতো। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সময় এরশাদসহ সংসদের প্রায় সব
এমপি হেসে ওঠেন। তবে নির্বিকার থেকেছেন রওশন এরশাদ। অবশ্য এবারের রমজানে
দলের কোন ইফতারে দেখা হয়নি এরশাদ ও রওশনের। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের
ইফতারে রওশনকে দাওয়াত দেয়া হলেও তিনি যাননি। এমনকি ২১শে জুন গুলশানের হোটেল
ওয়েস্টিনে কূটনৈতিকদের সম্মানে আয়োজিত ইফতারেও তিনি যাননি। এরশাদ ও রওশন
এরশাদ দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকেন না। এরশাদ থাকেন বারিধারায়, রওশন থাকেন
গুলশান ২ নম্বরে। এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দ্বন্দ্বে
জড়িয়েছিলেন এরশাদ ও রওশন। এরপর দীর্ঘদিন তাদের মধ্যে কথাবার্তাও বন্ধ ছিল।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, সরকার তো
পরিকল্পিতভাবে স্যার ও ম্যাডামের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে রেখেছে। ওনারা ইচ্ছে
করলেই তো আর এক গাড়িতে উঠতে পারছেন না। নানা কৌশলে তাদের মধ্যে দূরত্ব
তৈরি করে রেখেছে। মন্ত্রিসভায় থাকা না থাকা নিয়ে রহস্যজনক আচরণ করছেন
এরশাদ। গত কয়েক মাস আগেও মন্ত্রিসভা থেকে জাতীয় পার্টি পদত্যাগ করবে- এমন
বক্তব্য দিয়েছেন এরশাদ। এসময় জাতীয় পার্টির মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা আগে
এরশাদকে বিশেষ দূতের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলেন। সম্প্রতি অবস্থান পরিবর্তন
করেছেন এরশাদ। মন্ত্রিসভায় জাপার আরও দুজনকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য
প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন বলে গুজব ওঠে। এরশাদ ওই চিঠিতে ছোট ভাই জিএম
কাদের ও মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মন্ত্রী করতে প্রধানমন্ত্রীকে
চিঠি দেন। এরপরই গত রোববার সংসদের ভবনে আওয়ামী লীগের দুজন সিনিয়র নেতার
সঙ্গে বৈঠক করে মন্ত্রিসভা জাতীয় পার্টিকে বের করে নিয়ে আসার ইচ্ছের কথা
জানান রওশন এরশাদ। দলের একটি সূত্র জানায়, চেয়ারম্যানকে না জানিয়ে এ ধরনের
বৈঠক করায় রওশনের ওপর অসন্তুষ্ট হন এরশাদ। সংসদ অধিবেশন চলাকালে
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও শিল্পমন্ত্রী আমুর সঙ্গে রওশনের ওই বৈঠকে
জাতীয় পার্টির বেশ কজন এমপিও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে রওশন জাতীয় পার্টিকে
মন্ত্রিসভা থেকে বের করে সত্যিকারের বিরোধী দলের ভূমিকা নেয়ার ইচ্ছে পোষণ
করেন। এতে উপস্থিত জাতীয় পার্টির অধিকাংশ এমপি সায় দিলেও কয়েকজন এমপি
রওশনকে আরও চিন্তাভাবনা করতে বলেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী নেতা
জানান, প্রধানমন্ত্রী চান না জাতীয় পার্টি এই মূহুর্তে মন্ত্রিসভা থেকে
পদত্যাগ করুক। এদিকে সম্প্রতি নারী এমপিদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে জাতীয়
সংসদে তোপের মুখে পড়েন এরশাদ। তিনি প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায়
অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদ
উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে ‘শোপিস’ হিসেবে
অভিহিত করেন। এ নিয়ে সংসদে হট্টগোল দেখা দেয়। সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে ও
দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। পরে এরশাদের বক্তব্য সংসদের কার্যবিবরণী থেকে বাদ
দেয়ার (এক্সপাঞ্জ) কথা জানান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর রওশন এরশাদ
বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রথমেই এরশাদের বক্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে
বলেন, হয়তো তার (এরশাদের) শব্দচয়নটি ঠিক ছিল না। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টিকে
সবাই হেসে উড়িয়ে দিলেও রওশনের ওপর প্রচণ্ডভাবে ক্ষুব্ধ হন এরশাদ। একই সঙ্গে
এরশাদের বক্তব্য সংসদে এক্সপাঞ্জ হলেও জাতীয় পার্টির কোন মন্ত্রী,
প্রতিমন্ত্রী বা এমপি এর প্রতিবাদ করেননি। উপরন্তু তারা টেবিল চাপড়িয়ে
রওশনের ক্ষমা প্রার্থনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। রওশনের এমন আচরণেও এরশাদ
অসন্তুষ্ট বলে তার ঘনিষ্টজনরা জানান।
No comments