দুই ঘণ্টায় শেষ ট্রেনের টিকিট
আগাম
টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিনে দু’ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় কয়েকটি ট্রেনের
টিকিট। বেলা ১১টায় দিনাজপুরগামী দ্রুতযান ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শেষ
হয়ে যায়। কাউন্টারে থেকে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের বলা হয় টিকিট নেই। প্রতিদিনের
মতো গতকাল টিকিটি বিক্রি শুরু হয় সকাল নয়টায়। এই ট্রেনের টিকিটপ্রত্যাশী
বরকত তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট না পেয়ে হতাশা নিয়ে বাসায় ফেরেন।
বললেন, ঈদ তো বাড়িতে কোন না কোনভাবে যেতেই হবে। কালও (আজ) ট্রেনের টিকিট
নিতে আসতে পারেন তিনি। শুধু দ্রুতযান নয়, খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেসের
টিকিট শেষ হয় ১২টায়। দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তার টিকিট শেষ হয় সাড়ে ১১টায়। ১৩
নম্বর কাউন্টারের টিকিট বিক্রয় প্রতিনিধি বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। এসব
ট্রেনের যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়ে কাঙিক্ষত টিকিট না পেয়ে মন খারাপ করে পরে
চলে যান। এদিকে আজকের (শনিবারের) টিকিটের জন্য গতকাল শুক্রবার বেলা দু’টার
দিকেই কাউন্টারের সামনে সিরিয়াল দিয়েছেন তারা আট জন। শহিদুল ইসলাম যাবেন
রংপুর। বললেন, আগে এসে সিরিয়াল না দিলে টিকিট নাও পেতে পারেন। তাই আগে
এসেছেন। রাতে এখানেই ঘুমাবেন। তার মতোই হারুন, ফরহাদ, সুমন, সাব্বির,
রাসেল, খায়রুল ও আসদ একই রুটের ট্রেনের জন্য লাইন দিয়েছেন বলে তারা উল্লেখ
করেন। একইভাবে রেজাউল, মামুন ও মুমিন ঈদ উপলক্ষে ১৫ই জুলাইয়ের আগাম টিকিট
কিনার জন্য কাউন্টারের সামনে ঘুরাফেরা করছেন। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে
বৃহস্পতিবারের চেয়ে শুক্রবার ভিড় আরও বেশি ছিল। মানুষের লাইন প্ল্যাটফর্ম
ছেড়ে বাইরে চলে যায়। বৃষ্টিতে ভিজে ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের জন্য অপেক্ষা
করছেন ঈদে বাড়ি যেতে প্রত্যাশী শত শত মানুষ। কখন মিলবে সেই সোনার হরিণ
প্রত্যাশীর সেই টিকিট। গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৪ই জুলাইয়ের টিকিট। টিকিট পেতে
বৃহস্পতিবার রাতে অনেকে এসেছেন স্টেশনে। সারা রাত স্টেশনেই কাটিয়েছেন তারা।
বসে, লুডু, তাস খেলে সময় কাটিয়েছেন, কেউ আবার খুব ভোরে সেহরি খেয়ে চলে
এসেছেন স্টেশনে। লাইনের মাঝামাঝি বা পেছনে যারা দাঁড়িয়ে, তাদের আশঙ্কা
বেশি। টিকিট শেষ হয়ে যাবে না তো? লাইনের মাঝামাঝি চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে
হারুন। যাবেন পাবনা। বলেন, সকাল ছয়টার দিকে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছেন। লাইনের
মাঝখানে থাকায় টিকিট পাবেন কি না, এ নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন তিনি। একই অবস্থা
জিসানেরও। গতকাল রাত ১০টার দিকে তিনি এসেছেন। এখনো লাইনের মাঝখানে দাঁড়ানো।
টিকিট শেষ হয়ে যাবে কি না, তা নিয়ে তিনি চিন্তিত। যাত্রীদের অভিযোগ, খুবই
ধীর গতিতে টিকিট দেয়া হচ্ছে। এ কারণে সময় বেশি লাগছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা
লাইনে দাঁড়িয়েও কাঙিক্ষত টিকিটও মিলছে না অনেকের। যারা টিকিট পেয়েছেন তারা
আনন্দে ভাসছেন। টিকিট পেয়ে দারুণ খুশি সানজিদা আহমেদ। তিনি বলেন, বাড়ি
টাঙ্গাইল। টিকিট পেয়ে গেছেন। চোখেমুখে শুধু আনন্দ। বললেন, ঈদে বাড়ি যাওয়ার
আনন্দই আলাদা। মোস্তাফিজুর রহমান যাবেন ময়মনসিংহ। আড়াইটার দিকে ১৬০ টাকা
দিয়ে ১৪ই জুলাইয়ের টিকিট কাটেন। টিকিট হাতে পেয়ে দারুণ খুশি তিনি। টিকিট
বিক্রিতে কালোবাজারি হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন রেলওয়ের ডিআইজি রুহুল আমিন।
তিনি, বলেন, এখানে কোন কালোবাজারি হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ সিসিটিভিতে ফুটেজ
সংগ্রহ করছে। সেখান থেকে কেউ শনাক্ত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে আজ ১১ই
জুলাই বিক্রি হবে ১৫ই জুলাইয়ের টিকিট, ১২ই জুলাই ১৬ জুলাইয়ের এবং ১৩ই
জুলাই বিক্রি হবে ১৭ই জুলাইয়ের টিকিট। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকাল
পাঁচটা পর্যন্ত টিকিট বিক্রি চলবে। একজন সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে
পারবেন। কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, সকাল
নয়টা থেকে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। টিকিট থাকা সাপেক্ষে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত
অগ্রিম টিকিট দেয়া হবে। এতে প্রত্যাশী সবাই টিকিট পাবেন কি না জানতে চাইলে
তিনি বলেন, তাদের কাছে পর্যাপ্ত টিকিট আছে। আশা করছেন কেউ বঞ্চিত হবেন না।
অন্যদিকে গতকাল থেকে বিআরটিসি’র ঈদ উপলক্ষে আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে।
মতিঝিল বাস ডিপো থেকে বলা হয়েছে সকালের দিকে যাত্রীদের ভিড় ছিল। তবে, বেলা
গড়াতেই তা কমতে থাকে। গতকাল ১৬ই জুলাইয়ের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেছে
বিআরটিসি।
No comments