স্বামীকে দিয়ে কিনে আনা বটিতেই হত্যা
‘নিজ
হাতেই বঁটি দিয়ে স্বামীকে খুন করেছি।’ রাজধানীর কদমতলীতে আবু জাফরকে
হত্যার পর এভাবেই স্বীকার করেছে তার স্ত্রী নূরজাহান। স্বামীকে হত্যার
পরিকল্পনা করেছিল প্রায় ১৫ দিন আগেই। পরিকল্পনা অনুসারে স্বামী আবু জাফরকে
দিয়েই বাজার থেকে নতুন বঁটি আনায় সে। সামনে ঈদ, সেই সঙ্গে একমাত্র কন্যার
জন্মদিন। অনেক রান্নার ব্যাপার বলেই বাজার থেকে বঁটি আনতে বলেছিল নূরজাহান।
সেই বঁটিতেই প্রাণহরণ করা হয়েছে আবু জাফরের। তার স্ত্রী নূরজাহান নিজ হাতে
তাকে হত্যা করেছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। আবু জাফরের দ্বিতীয়
বিয়ে এবং বিয়ের মাধ্যমে সম্পত্তি বিভক্তি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই এ হত্যাকাণ্ড
ঘটানো হয়েছে বলে তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। আদালতে নূরজাহান ১৬৪ ধারায়
হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে, সে নিজেই আবু জাফরকে হত্যা করেছে।
কিন্তু বিষয়টি মানতে নারাজ নিহতের স্বজনরা। তাদের ধারণা, এ হত্যাকাণ্ডে আরও
দুজন সম্পৃক্ত রয়েছে, যা সঠিকভাবে তদন্ত করলে বের হবে।
সরজমিনে কথা হয় নিহতের স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে। রাজধানীর কদমতলীর মেরাজনগরের বি-ব্লকের ১৩৬২ নম্বর বাড়িটি আবু জাফরের। ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় স্ত্রী, সন্তান নিয়ে থাকতেন তিনি। স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘটনার দিন ২৯শে জুন সন্ধ্যায় বাসার একটি কক্ষে বসে কথা বলছিলেন নূরজাহান ও তার বড় পুত্র সাইফুল ইসলাম (১৮) এবং ভাগিনা রেজাউল ইসলাম (২৪)। নূরজাহান তখন বলছিল, তাকে জানে মেরে ফেলতে হবে। এ কথা সমর্থন করে রেজাউল তখন বলছিল, মেরে ফেলে দেন। ওরে মারলে আর কী হবে। মেরে স্বীকার করবেন যে মেরেছেন। ওই কক্ষে কন্যা নুসরাত উপস্থিত হলে তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেয় নূরজাহান।
নিহত আবু জাফরের স্বজনরা মনে করেন, এ ঘটনায় রেজাউলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও তথ্য প্রকাশ পাবে।
ঘটনার পর বিকালে নূরজাহানকে গ্রেপ্তার করে কদমতলী থানা পুলিশ। পরদিন আদালতে ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তি দেয় সে। আদালতে নূরজাহান জানায়, ওই দিন রাত ১১টায় বাসায় যান আবু জাফর। বাসায় ঢুকতেই অগ্নমূর্তি ধারণ করে স্ত্রী নূরজাহান। এতক্ষণ কোথায় ছিলে জানতে চেয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠে সে। এভাবেই বাকবিতণ্ডা শুরু হয় দুজনের মধ্যে। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে নূরজাহানের গালে দুবার চড় দেন আবু জাফর। নূরজাহান তখন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ওই সময়ে সিদ্ধান্ত নেয় ওই রাতেই আবু জাফরকে হত্যা করবে নূরজাহান। রাত সাড়ে ৪টার পর সেহরি খাবার শেষে নামাজ পড়ে ঘুমান আবু জাফর। নূরজাহান জানিয়েছে, ওই সময়ে বঁটি দিয়ে ঘুমন্ত জাফরের ডান কানের নিচে আঘাত করে সে। প্রথমবার সজোরে বঁটি দিয়ে দুই হাতে কোপ দিলে তা প্রায় চার ইঞ্চি গভীরে পৌঁছে। পরে আরও দুবার একই কায়দায় আঘাত করে। ধারালো বঁটির প্রথম আঘাতেই আর ঘাড় সোজা করতে পারেনি জাফর। পরে দুই কোপের পর মারা যান তিনি। পরে তার লাশ টেনে বাথরুমে নিয়ে যায় নূরজাহান। সেখানে রক্ত পরিষ্কার করে। এমনকি রক্তাক্ত বিছানার চাদর, বালিশের কাভার বাথরুমের পানিতে ভিজিয়ে রাখে। নিজেও পরিষ্কার হয়। ৫টার পর দরজা খোলে লাশটি টেনে তৃতীয় তলার এ বাসার সিঁড়ির সামনে রাখে নূরজাহান। হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সে একাই সবকিছু করেছে বলে আদালতকে জানিয়েছে। ঘটনার সময় আবু জাফর ও নূরজাহান দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী নুসরাত ও চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র হুসাইনকে একটি কক্ষে বাইরে থেকে তালা দিয়ে রাখা হয়েছিল বলে নুসরাত জানিয়েছে। অন্যদিকে তাদের বড় ছেলে কলেজপড়ুয়া সাইফুল জানিয়েছে, সে ঘুমিয়ে ছিল। যে কারণে কী ঘটেছে কিছুই টের পায়নি সে। পঞ্চম তলার একজন বাসিন্দা নামাজ পড়ে বের হয়ে সিঁড়িতে লাশ দেখে তাদের দরজায় নক করেন। এ সময় দরজা খোলে পিতার লাশ দেখে চিৎকার করে সাইফুল। একই কথা জানায় বাসায় অবস্থানকারী নূরজাহানের ভাগিনা রেজাউল ইসলাম।
অন্যদিকে, ঘটনার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিহতের প্রথম স্ত্রী নূরজাহান মানবজমিনকে জানিয়েছিলেন, ভোর ৫টায় পঞ্চম তলার এক বাসিন্দা জানান সিঁড়িতে কে পড়ে আছে। তাৎক্ষণিকভাবে দরজা খোলে সে। রক্তাক্ত অবস্থায় আবু জাফরের নিথর দেহ দেখতে পায় নূরজাহান। তার আগে একসঙ্গে সেহরির খাবার খেয়েছেন আবু জাফর। খাবার শেষে পাশের কক্ষে চলে যান। এর পরেই এ ঘটনা ঘটে। নূরজাহান ও সাইফুলের কথায় অসঙ্গতি থাকায় এ নিয়ে আরও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা।
ওই সময়ে নূরজাহান জানায়, হত্যাকাণ্ডের চার-পাঁচ দিন আগে আবু জাফর জানিয়েছেন তাকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী হালিমাকে নিয়েই সংসার করবেন তিনি। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কলহ হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে নূরজাহান বলেছিল, কোন কলহ হয়নি। তবে তাকে আমি বুঝিয়েছি। তিনটা বাচ্চা আছে আমাদের। তুমি আমাকে ডিভোর্স দিলে কী হবে তাদের।
হত্যাকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেছে, দীর্ঘ ১৭ বছর সিঙ্গাপুরে ছিলেন আবু জাফর। ওই সময়ে একই বাড়িতে ভাড়াটে ছিলেন রতন নামে এক যুবক। একই জেলার বাসিন্দা রতন। তার বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের ইসলামপুরে হওয়ায় রতনের সঙ্গে সহজেই সখ্য গড়ে ওঠে নূরজাহানের। দেশে আসার পর বিষয়টি জেনে যান আবু জাফর। এরপর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। প্রায় প্রতিদিনই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো। এমনকি নূরজাহান নিজে স্বামী আবু জাফরের গায়ে হাত েতোলেছেন বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন। একসময় আবু জাফরও অন্য নারীর প্রেমে জড়িয়ে যান।
সূত্রে জানা গেছে, ওই সময়ে রায়েরবাগের মিরাজনগরে নুসরাত জেনারেল স্টোর নামে মুদি দোকান দেন আবু জাফর। ওই দোকানে সওদা করতেন মালয়েশিয়া প্রবাসী আবদুল লতিফের স্ত্রী হালিমা। সেই সুবাধে হালিমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। বিষয়টি জানাজানি হলে লতিফের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে তিন সন্তানের জননী হালিমার। প্রায় দেড় বছর আগে গোপনে হালিমাকে বিয়ে করেন আবু জাফর। বিয়ের খবর জানাজানি হলে পারিবারিকভাবে প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েন। প্রথম স্ত্রী ও স্বজনদের চাপের মুখে চার মাস আগে হালিমাকে ডিভোর্স দেন আবু জাফর। তার পরও তাদের সম্পর্ক থেমে থাকেনি। এক মাস আগে আবার হালিমাকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর হালিমা রায়েরবাগেই অন্য একটি বাসায় থাকতেন। এ নিয়ে প্রথম স্ত্রী নূরজাহানের সঙ্গে প্রতিদিনই কলহ হতো আবু জাফরের।
ঘটনার দিন বিকালে নূরজাহান ও অজ্ঞাত কয়েকজনকে করে আসামি কদমতলী থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই সিদ্দিকুর রহমান। তিনি জানান, নূরজাহানের কর্মকাণ্ডেই দ্বিতীয় বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিল জাফর। কিন্তু তারা তা মেনে নেননি। জাফর তখন তাদের জানিয়েছিল, নূরজাহান তাকে যে কোন সময় মেরে ফেলবে। তার ঘর তার জন্য নিরাপদ না। মূলত দ্বিতীয় বিয়ে এবং এ বিয়ের কারণে সম্পত্তি ভবিষ্যতে বিভক্ত হয়ে যাবে এ আশঙ্কা থেকেই জাফরকে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সেদিন তার এসব কথা গুরুত্ব দেইনি। নতুবা আজকে হয়তো ভাইকে হারাতে হতো না। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আসলাম জানান, নূরজাহান স্বীকার করেছে সে একাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তবু আরও কেউ জড়িত আছে কি-না তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। নিহত আবু জাফরের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের রাজারগাঁওয়ে। তার পিতার নাম আবু হানিফ।
সরজমিনে কথা হয় নিহতের স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে। রাজধানীর কদমতলীর মেরাজনগরের বি-ব্লকের ১৩৬২ নম্বর বাড়িটি আবু জাফরের। ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় স্ত্রী, সন্তান নিয়ে থাকতেন তিনি। স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘটনার দিন ২৯শে জুন সন্ধ্যায় বাসার একটি কক্ষে বসে কথা বলছিলেন নূরজাহান ও তার বড় পুত্র সাইফুল ইসলাম (১৮) এবং ভাগিনা রেজাউল ইসলাম (২৪)। নূরজাহান তখন বলছিল, তাকে জানে মেরে ফেলতে হবে। এ কথা সমর্থন করে রেজাউল তখন বলছিল, মেরে ফেলে দেন। ওরে মারলে আর কী হবে। মেরে স্বীকার করবেন যে মেরেছেন। ওই কক্ষে কন্যা নুসরাত উপস্থিত হলে তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেয় নূরজাহান।
নিহত আবু জাফরের স্বজনরা মনে করেন, এ ঘটনায় রেজাউলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও তথ্য প্রকাশ পাবে।
ঘটনার পর বিকালে নূরজাহানকে গ্রেপ্তার করে কদমতলী থানা পুলিশ। পরদিন আদালতে ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তি দেয় সে। আদালতে নূরজাহান জানায়, ওই দিন রাত ১১টায় বাসায় যান আবু জাফর। বাসায় ঢুকতেই অগ্নমূর্তি ধারণ করে স্ত্রী নূরজাহান। এতক্ষণ কোথায় ছিলে জানতে চেয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠে সে। এভাবেই বাকবিতণ্ডা শুরু হয় দুজনের মধ্যে। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে নূরজাহানের গালে দুবার চড় দেন আবু জাফর। নূরজাহান তখন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ওই সময়ে সিদ্ধান্ত নেয় ওই রাতেই আবু জাফরকে হত্যা করবে নূরজাহান। রাত সাড়ে ৪টার পর সেহরি খাবার শেষে নামাজ পড়ে ঘুমান আবু জাফর। নূরজাহান জানিয়েছে, ওই সময়ে বঁটি দিয়ে ঘুমন্ত জাফরের ডান কানের নিচে আঘাত করে সে। প্রথমবার সজোরে বঁটি দিয়ে দুই হাতে কোপ দিলে তা প্রায় চার ইঞ্চি গভীরে পৌঁছে। পরে আরও দুবার একই কায়দায় আঘাত করে। ধারালো বঁটির প্রথম আঘাতেই আর ঘাড় সোজা করতে পারেনি জাফর। পরে দুই কোপের পর মারা যান তিনি। পরে তার লাশ টেনে বাথরুমে নিয়ে যায় নূরজাহান। সেখানে রক্ত পরিষ্কার করে। এমনকি রক্তাক্ত বিছানার চাদর, বালিশের কাভার বাথরুমের পানিতে ভিজিয়ে রাখে। নিজেও পরিষ্কার হয়। ৫টার পর দরজা খোলে লাশটি টেনে তৃতীয় তলার এ বাসার সিঁড়ির সামনে রাখে নূরজাহান। হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সে একাই সবকিছু করেছে বলে আদালতকে জানিয়েছে। ঘটনার সময় আবু জাফর ও নূরজাহান দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী নুসরাত ও চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র হুসাইনকে একটি কক্ষে বাইরে থেকে তালা দিয়ে রাখা হয়েছিল বলে নুসরাত জানিয়েছে। অন্যদিকে তাদের বড় ছেলে কলেজপড়ুয়া সাইফুল জানিয়েছে, সে ঘুমিয়ে ছিল। যে কারণে কী ঘটেছে কিছুই টের পায়নি সে। পঞ্চম তলার একজন বাসিন্দা নামাজ পড়ে বের হয়ে সিঁড়িতে লাশ দেখে তাদের দরজায় নক করেন। এ সময় দরজা খোলে পিতার লাশ দেখে চিৎকার করে সাইফুল। একই কথা জানায় বাসায় অবস্থানকারী নূরজাহানের ভাগিনা রেজাউল ইসলাম।
অন্যদিকে, ঘটনার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিহতের প্রথম স্ত্রী নূরজাহান মানবজমিনকে জানিয়েছিলেন, ভোর ৫টায় পঞ্চম তলার এক বাসিন্দা জানান সিঁড়িতে কে পড়ে আছে। তাৎক্ষণিকভাবে দরজা খোলে সে। রক্তাক্ত অবস্থায় আবু জাফরের নিথর দেহ দেখতে পায় নূরজাহান। তার আগে একসঙ্গে সেহরির খাবার খেয়েছেন আবু জাফর। খাবার শেষে পাশের কক্ষে চলে যান। এর পরেই এ ঘটনা ঘটে। নূরজাহান ও সাইফুলের কথায় অসঙ্গতি থাকায় এ নিয়ে আরও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা।
ওই সময়ে নূরজাহান জানায়, হত্যাকাণ্ডের চার-পাঁচ দিন আগে আবু জাফর জানিয়েছেন তাকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী হালিমাকে নিয়েই সংসার করবেন তিনি। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কলহ হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে নূরজাহান বলেছিল, কোন কলহ হয়নি। তবে তাকে আমি বুঝিয়েছি। তিনটা বাচ্চা আছে আমাদের। তুমি আমাকে ডিভোর্স দিলে কী হবে তাদের।
হত্যাকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেছে, দীর্ঘ ১৭ বছর সিঙ্গাপুরে ছিলেন আবু জাফর। ওই সময়ে একই বাড়িতে ভাড়াটে ছিলেন রতন নামে এক যুবক। একই জেলার বাসিন্দা রতন। তার বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের ইসলামপুরে হওয়ায় রতনের সঙ্গে সহজেই সখ্য গড়ে ওঠে নূরজাহানের। দেশে আসার পর বিষয়টি জেনে যান আবু জাফর। এরপর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। প্রায় প্রতিদিনই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো। এমনকি নূরজাহান নিজে স্বামী আবু জাফরের গায়ে হাত েতোলেছেন বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন। একসময় আবু জাফরও অন্য নারীর প্রেমে জড়িয়ে যান।
সূত্রে জানা গেছে, ওই সময়ে রায়েরবাগের মিরাজনগরে নুসরাত জেনারেল স্টোর নামে মুদি দোকান দেন আবু জাফর। ওই দোকানে সওদা করতেন মালয়েশিয়া প্রবাসী আবদুল লতিফের স্ত্রী হালিমা। সেই সুবাধে হালিমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। বিষয়টি জানাজানি হলে লতিফের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে তিন সন্তানের জননী হালিমার। প্রায় দেড় বছর আগে গোপনে হালিমাকে বিয়ে করেন আবু জাফর। বিয়ের খবর জানাজানি হলে পারিবারিকভাবে প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েন। প্রথম স্ত্রী ও স্বজনদের চাপের মুখে চার মাস আগে হালিমাকে ডিভোর্স দেন আবু জাফর। তার পরও তাদের সম্পর্ক থেমে থাকেনি। এক মাস আগে আবার হালিমাকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর হালিমা রায়েরবাগেই অন্য একটি বাসায় থাকতেন। এ নিয়ে প্রথম স্ত্রী নূরজাহানের সঙ্গে প্রতিদিনই কলহ হতো আবু জাফরের।
ঘটনার দিন বিকালে নূরজাহান ও অজ্ঞাত কয়েকজনকে করে আসামি কদমতলী থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই সিদ্দিকুর রহমান। তিনি জানান, নূরজাহানের কর্মকাণ্ডেই দ্বিতীয় বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিল জাফর। কিন্তু তারা তা মেনে নেননি। জাফর তখন তাদের জানিয়েছিল, নূরজাহান তাকে যে কোন সময় মেরে ফেলবে। তার ঘর তার জন্য নিরাপদ না। মূলত দ্বিতীয় বিয়ে এবং এ বিয়ের কারণে সম্পত্তি ভবিষ্যতে বিভক্ত হয়ে যাবে এ আশঙ্কা থেকেই জাফরকে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সেদিন তার এসব কথা গুরুত্ব দেইনি। নতুবা আজকে হয়তো ভাইকে হারাতে হতো না। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আসলাম জানান, নূরজাহান স্বীকার করেছে সে একাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তবু আরও কেউ জড়িত আছে কি-না তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। নিহত আবু জাফরের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের রাজারগাঁওয়ে। তার পিতার নাম আবু হানিফ।
No comments