সরব নগর ভবন বদলায়নি নগরীর অবস্থা by আহমেদ জামাল
ঢাকা
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বভার গ্রহণের দুই
মাস পূর্ণ হয়েছে। সাড়ে তিন বছরের মাথায় নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরসহ ৭৬
জনপ্রতিনিধির আগমনে সরব হয়ে উঠেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়
নগর ভবন। রাতারাতি বদলে গেছে নগর ভবনের চেহারা। কিন্তু বদলায়নি নগরীর
অবস্থান। এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী
কর্মকর্তা আনছার আলী খান বলেন, নগরীর দৃশ্যমান সমস্যা সমাধান দুই মাসের
বিষয় নয়। এটা সমাধানে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। আমরা মেয়রসহ জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে
চেষ্টা করে যাচ্ছি। দৃশ্যমান কোন পরিবর্তন হলে সবাই দেখতে পাবেন।
তবে নির্বাচিত হয়ে ঢাকাবাসীর কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র সাইদ খোকন। ঝিমিয়ে পড়া সিটি করপোরেশনকে এক বছরের মধ্যে চাঙ্গা করে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। যদিও দায়িত্ব নেয়ার দুই মাসের মাথায় নগরীর দৃশ্যমান কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র কাউন্সিলরসহ দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন মেয়র সাঈদ খোকন। ৭ই মে প্রথম কর্ম দিবস শুরু করেই মেয়র নগরীরর ফুটপাথ হকারমুক্তকরণ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, যানজট নিরসন, পানি নিষ্কাশন, আবর্জনা পরিষ্কারসহ নানা কার্যক্রম শুরু করেন। তবে দু’মাসের মাথায় এসব কাজের আশানুরূপ সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। তেমন ধারাবাহিকতাও দেখা যাচ্ছে না বলে অনেকের অভিমত। ১৭ই মে নগরভবন মিলনায়তনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রথম সাধারণ সভায় সাঈদ খোকন বলেন, শুরুতেই আমি খানিকটা চিন্তিত থাকলেও এখন আমি আশাবাদী। যেখানেই যাচ্ছি সবখাবে আশ্বাস পাচ্ছি। আমার বিশ্বাস আমরা সফল হবই। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। আমরা কর্মের মাধ্যমে তা ইতিবাচকে ফিরিয়ে নিতে চাই। যদিও আমরা জানি শহরের সমস্যা অনেক আছে। নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র সাঈদ খোকন ১৪ই মে রাজধানী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন করেন। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অংশ হিসেবে প্রথম বারের মতো মেয়র নগরীর মৌলভীবাজার বেচারাম দেউড়ী এলাকার সড়ক ও নর্দমা পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেন। তিনি এটাকে চলমান কার্যক্রম হিসেবে মন্তব্য করে এ বিষয়ে নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। কিন্তু নগরীর বিভিন্ন অলিগলি রাস্তাঘাটে আবর্জনার স্তূপ আগের মতই দেখা যাচ্ছে বলে অনেকের অভিমত। ২৪শে মে নগর ভবনে সিটি করপোরেশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে মেয়র সাঈদ খোকন নগর উন্নয়নে যে কোন মূল্যে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, আপনারা ‘আই ওপেনার‘। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ লিখে আমাদের চোখ খুলে দিন। আমরা আপনাদের নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করতে চাই। তিনি সংবাদিকদের বিভিন্ন অভিযোগ ও পরামর্শ শুনেন এবং সেগুলো আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। সাঈদ খোকন বলেন, কিছু আলোচনা-সমালোচনা থাকবেই। এটাকে আমরা টলারেট করবো। তবে লেখার মধ্যে পক্ষপাত করবেন না। মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকরা সিটি করপোরেশনের দুর্নীতি, বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা, জনগণের দুর্ভোগ, করপোরেশনের জনসংযোগ বিভাগের দুর্বলতা, জনসংযোগ বিভাগকে আধুনিকীকরণ, মিডিয়া সেন্টার স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, নগরবাসীর সমস্যা সমাধানে আমি কাজ করে যাচ্ছি। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। ২৬শে মে নগরীর ট্্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে ঢাকা মেট্্েরাপলিটন পুলিশের এক মত বিনিময় সভা নগর ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কে দীর্ঘ যানজট সমস্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এ সড়কে যানবাহন চলাচলের মূল সমস্যা মাঠপর্যায়ে জরিপের মাধ্যমে চিহ্নিত করে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল। তবে নগরীর চলমান ট্রাফিক ব্যবস্থায় ওই কমিটির কোন কর্মতৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বরঞ্চ রমজান মাস শুরুর পর নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এদিকে রাজধানীকে একটি বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে মেয়রকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। প্রথম সাধারণ সভায় পরিচিতি পর্ব শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু আহম্মেদ মান্নাফী বলেন, সিটি করপোরেশনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজস্ব খাতে বড়-বড় দুর্নীতি হয়। কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আসে না। তবে গত দুই মাসে এসব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ কোন অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি।
শপথ নেয়ার পর গত ৭ই মে প্রথম অফিস করেন সাঈদ খোকন। তবে দায়িত্ব নিয়েই আর্থিক সংকট সামলাতে হচ্ছে তরুণ এই মেয়রকে। প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকার ঋণে ভারাক্রান্ত দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এমন শূন্য ভাণ্ডার নিয়ে দক্ষিণ সিটির দায়িত্ব নিলেন সাঈদ খোকন। বিশাল ঋণের বোঝা নিয়ে সিটি করপোরেশন কীভাবে চালাবেন জানতে চাইলে, মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবো, তার সহযোগিতা চাইব। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতা করবেন। ওদিকে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমেই রাজধানীর ফুটপাথ হকারমুক্ত করতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন মেয়র খোকন। সকালে হকার মুক্ত করলে বিকালে আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে হকাররা। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে অবৈধ উচ্ছেদের বেলায়ও। মেয়রের এই কর্মকাণ্ডের বিপরীতে আন্দোলনে নামে হকাররা। ফলে শেষ পর্যন্ত ফুটপাথ হকার মুক্ত রাখা যায়নি। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০০৪ সালে। মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও নির্বাচন না হওয়ায় তিনি ছিলেন আরও প্রায় তিন বছর। এরপর ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করা হয়। তারপর নানা অজুহাতে নির্বাচন না হওয়ায় দফায় দফায় প্রশাসক দিয়ে চলে সাড়ে তিনবছর। দীর্ঘ সময় নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া চলতে থাকা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। আর এই সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে নবনির্বাচিত মেয়র সাঈদ খোকনকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১২ সালে আর্থিক সংকট শুরু হয় এই করপোরেশনে। প্রতিদিন আয়ের চেয়ে ব্যয় বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে ঘাটতিও। বর্তমানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দেনার পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা। যার মধ্যে কেবল ঠিকাদারদের পাওনাই ২৫০ কোটি টাকা। তবে সম্প্রতি সরকারি অনুদানে পাওয়া তহবিল থেকে ঠিকাদারদের কমবেশি ৪০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ডিসিসি’র সিনিয়র ঠিকাদার আলতাফ হোসেন দুলাল বলেন, নির্বাচিত মেয়র আসার পর ঠিকাদারদের কিছু পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কমই বলা যায়। তিনি বলেন, ব্যাংক লোন নিয়ে কাজ করেছি। সে লোনের সুদ বেড়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। তবে নতুন মেয়রের প্রচেষ্টায় আমরা এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠার প্রত্যাশা করছি। এর বাইরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও অন্যান্য বিল বাবদ দেনা আছে শত কোটি টাকার উপরে। দেনার অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এপ্রিল মাস থেকে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রথম নির্বাচিত মেয়র নগরীরর যানজট, পয়ঃনিষ্কাশন, সুপেয় পানি, জলাবদ্ধতা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ, জনজীবনে নিরাপত্তা, বুড়িগঙ্গা দূষণ, বায়ু দূষণ, আধুনিক শিক্ষার সুযোগও খেলার মাঠসহ বিনোদনের অপ্রতুলতাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, মহানগরীর পরিকল্পিত ও সুষম উন্নয়ন না হওয়ায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধার দৃষ্টিকটু জনজীবনে নানা ভোগান্তির সৃষ্টি করছে। করপোরেশনের সেবা কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়েছে। কোন বিভাগই ঠিকমতো কাজ করছে না। তাই সবকিছুই নতুনভাবে ঠিক করতে হবে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের সকল বিভাগ সচল হলে ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ কমে আসবে। এ সিটি করপোরেশনকে সচল করতে আমার সার্বক্ষণিক উদ্যোগ থাকবে। ঢাকাবাসী অবশ্যই এক বছরের মধ্যে বর্তমানের চেয়ে ভাল সিটি করপোরেশন দেখতে পাবেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য শহরের একটি। আমি এ দুর্নাম ঘোচাতে চাই। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই ও সৃষ্টিশীল শহর নির্মাণে আমার উদ্যোগ থাকবে। দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ঠিক তো সব ঠিক। সিটি করপোরেশনে সব সিন্ডিকেট ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। কোন ধরনের দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি থাকবে না। সিটি করপোরেশনে পেশিশক্তি, মাস্তানি ও অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কথা অশুভ শক্তিকে ভুলে যেতে হবে। নতুন দিনের আলোয় পুরনো দিনের কোন জঞ্জালই থাকবে না। তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে নতুন ঢাকা বির্নিমাণ করতে চাই, এটাই আমার স্বপ্ন এবং সাধনা।
এদিকে গত দুই মাসে নগরীর রাস্তাঘাট আরও ভেঙেছে, খাওয়ার পানিতে আসছে ময়লা, বেড়েছে দুর্গন্ধ। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে নগরীর গলি থেকে রাজপথ। বিভিন্ন এলাকায় নর্দমার পানি উপচে পড়ছে। এলাকাবাসীর মতে গত দুই মাসে একটা বিষয়ে উন্নতি হয়েছে। নির্বাচিত হওয়ার পর ওয়ার্ড কাউন্সিলররা তাদের কার্যালয়গুলোকে অনেক টাকা ব্যয় করে সুসজ্জিত করছেন। সেখানে তারা বসে নানা ধরনের সনদ দিচ্ছেন। রিলাক্সমুডে নেতাকর্মী-সমর্থকদের নিয়ে খোশ গল্প করছেন।
তবে নির্বাচিত হয়ে ঢাকাবাসীর কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র সাইদ খোকন। ঝিমিয়ে পড়া সিটি করপোরেশনকে এক বছরের মধ্যে চাঙ্গা করে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। যদিও দায়িত্ব নেয়ার দুই মাসের মাথায় নগরীর দৃশ্যমান কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র কাউন্সিলরসহ দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন মেয়র সাঈদ খোকন। ৭ই মে প্রথম কর্ম দিবস শুরু করেই মেয়র নগরীরর ফুটপাথ হকারমুক্তকরণ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, যানজট নিরসন, পানি নিষ্কাশন, আবর্জনা পরিষ্কারসহ নানা কার্যক্রম শুরু করেন। তবে দু’মাসের মাথায় এসব কাজের আশানুরূপ সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। তেমন ধারাবাহিকতাও দেখা যাচ্ছে না বলে অনেকের অভিমত। ১৭ই মে নগরভবন মিলনায়তনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রথম সাধারণ সভায় সাঈদ খোকন বলেন, শুরুতেই আমি খানিকটা চিন্তিত থাকলেও এখন আমি আশাবাদী। যেখানেই যাচ্ছি সবখাবে আশ্বাস পাচ্ছি। আমার বিশ্বাস আমরা সফল হবই। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। আমরা কর্মের মাধ্যমে তা ইতিবাচকে ফিরিয়ে নিতে চাই। যদিও আমরা জানি শহরের সমস্যা অনেক আছে। নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র সাঈদ খোকন ১৪ই মে রাজধানী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন করেন। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অংশ হিসেবে প্রথম বারের মতো মেয়র নগরীর মৌলভীবাজার বেচারাম দেউড়ী এলাকার সড়ক ও নর্দমা পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেন। তিনি এটাকে চলমান কার্যক্রম হিসেবে মন্তব্য করে এ বিষয়ে নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। কিন্তু নগরীর বিভিন্ন অলিগলি রাস্তাঘাটে আবর্জনার স্তূপ আগের মতই দেখা যাচ্ছে বলে অনেকের অভিমত। ২৪শে মে নগর ভবনে সিটি করপোরেশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে মেয়র সাঈদ খোকন নগর উন্নয়নে যে কোন মূল্যে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, আপনারা ‘আই ওপেনার‘। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ লিখে আমাদের চোখ খুলে দিন। আমরা আপনাদের নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করতে চাই। তিনি সংবাদিকদের বিভিন্ন অভিযোগ ও পরামর্শ শুনেন এবং সেগুলো আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। সাঈদ খোকন বলেন, কিছু আলোচনা-সমালোচনা থাকবেই। এটাকে আমরা টলারেট করবো। তবে লেখার মধ্যে পক্ষপাত করবেন না। মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকরা সিটি করপোরেশনের দুর্নীতি, বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা, জনগণের দুর্ভোগ, করপোরেশনের জনসংযোগ বিভাগের দুর্বলতা, জনসংযোগ বিভাগকে আধুনিকীকরণ, মিডিয়া সেন্টার স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, নগরবাসীর সমস্যা সমাধানে আমি কাজ করে যাচ্ছি। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। ২৬শে মে নগরীর ট্্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে ঢাকা মেট্্েরাপলিটন পুলিশের এক মত বিনিময় সভা নগর ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কে দীর্ঘ যানজট সমস্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এ সড়কে যানবাহন চলাচলের মূল সমস্যা মাঠপর্যায়ে জরিপের মাধ্যমে চিহ্নিত করে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল। তবে নগরীর চলমান ট্রাফিক ব্যবস্থায় ওই কমিটির কোন কর্মতৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বরঞ্চ রমজান মাস শুরুর পর নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এদিকে রাজধানীকে একটি বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে মেয়রকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। প্রথম সাধারণ সভায় পরিচিতি পর্ব শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু আহম্মেদ মান্নাফী বলেন, সিটি করপোরেশনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজস্ব খাতে বড়-বড় দুর্নীতি হয়। কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আসে না। তবে গত দুই মাসে এসব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ কোন অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি।
শপথ নেয়ার পর গত ৭ই মে প্রথম অফিস করেন সাঈদ খোকন। তবে দায়িত্ব নিয়েই আর্থিক সংকট সামলাতে হচ্ছে তরুণ এই মেয়রকে। প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকার ঋণে ভারাক্রান্ত দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এমন শূন্য ভাণ্ডার নিয়ে দক্ষিণ সিটির দায়িত্ব নিলেন সাঈদ খোকন। বিশাল ঋণের বোঝা নিয়ে সিটি করপোরেশন কীভাবে চালাবেন জানতে চাইলে, মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবো, তার সহযোগিতা চাইব। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতা করবেন। ওদিকে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমেই রাজধানীর ফুটপাথ হকারমুক্ত করতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন মেয়র খোকন। সকালে হকার মুক্ত করলে বিকালে আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে হকাররা। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে অবৈধ উচ্ছেদের বেলায়ও। মেয়রের এই কর্মকাণ্ডের বিপরীতে আন্দোলনে নামে হকাররা। ফলে শেষ পর্যন্ত ফুটপাথ হকার মুক্ত রাখা যায়নি। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০০৪ সালে। মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও নির্বাচন না হওয়ায় তিনি ছিলেন আরও প্রায় তিন বছর। এরপর ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করা হয়। তারপর নানা অজুহাতে নির্বাচন না হওয়ায় দফায় দফায় প্রশাসক দিয়ে চলে সাড়ে তিনবছর। দীর্ঘ সময় নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া চলতে থাকা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। আর এই সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে নবনির্বাচিত মেয়র সাঈদ খোকনকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১২ সালে আর্থিক সংকট শুরু হয় এই করপোরেশনে। প্রতিদিন আয়ের চেয়ে ব্যয় বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে ঘাটতিও। বর্তমানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দেনার পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা। যার মধ্যে কেবল ঠিকাদারদের পাওনাই ২৫০ কোটি টাকা। তবে সম্প্রতি সরকারি অনুদানে পাওয়া তহবিল থেকে ঠিকাদারদের কমবেশি ৪০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ডিসিসি’র সিনিয়র ঠিকাদার আলতাফ হোসেন দুলাল বলেন, নির্বাচিত মেয়র আসার পর ঠিকাদারদের কিছু পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কমই বলা যায়। তিনি বলেন, ব্যাংক লোন নিয়ে কাজ করেছি। সে লোনের সুদ বেড়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। তবে নতুন মেয়রের প্রচেষ্টায় আমরা এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠার প্রত্যাশা করছি। এর বাইরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও অন্যান্য বিল বাবদ দেনা আছে শত কোটি টাকার উপরে। দেনার অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এপ্রিল মাস থেকে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রথম নির্বাচিত মেয়র নগরীরর যানজট, পয়ঃনিষ্কাশন, সুপেয় পানি, জলাবদ্ধতা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ, জনজীবনে নিরাপত্তা, বুড়িগঙ্গা দূষণ, বায়ু দূষণ, আধুনিক শিক্ষার সুযোগও খেলার মাঠসহ বিনোদনের অপ্রতুলতাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, মহানগরীর পরিকল্পিত ও সুষম উন্নয়ন না হওয়ায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধার দৃষ্টিকটু জনজীবনে নানা ভোগান্তির সৃষ্টি করছে। করপোরেশনের সেবা কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়েছে। কোন বিভাগই ঠিকমতো কাজ করছে না। তাই সবকিছুই নতুনভাবে ঠিক করতে হবে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের সকল বিভাগ সচল হলে ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ কমে আসবে। এ সিটি করপোরেশনকে সচল করতে আমার সার্বক্ষণিক উদ্যোগ থাকবে। ঢাকাবাসী অবশ্যই এক বছরের মধ্যে বর্তমানের চেয়ে ভাল সিটি করপোরেশন দেখতে পাবেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য শহরের একটি। আমি এ দুর্নাম ঘোচাতে চাই। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই ও সৃষ্টিশীল শহর নির্মাণে আমার উদ্যোগ থাকবে। দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ঠিক তো সব ঠিক। সিটি করপোরেশনে সব সিন্ডিকেট ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। কোন ধরনের দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি থাকবে না। সিটি করপোরেশনে পেশিশক্তি, মাস্তানি ও অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কথা অশুভ শক্তিকে ভুলে যেতে হবে। নতুন দিনের আলোয় পুরনো দিনের কোন জঞ্জালই থাকবে না। তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে নতুন ঢাকা বির্নিমাণ করতে চাই, এটাই আমার স্বপ্ন এবং সাধনা।
এদিকে গত দুই মাসে নগরীর রাস্তাঘাট আরও ভেঙেছে, খাওয়ার পানিতে আসছে ময়লা, বেড়েছে দুর্গন্ধ। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে নগরীর গলি থেকে রাজপথ। বিভিন্ন এলাকায় নর্দমার পানি উপচে পড়ছে। এলাকাবাসীর মতে গত দুই মাসে একটা বিষয়ে উন্নতি হয়েছে। নির্বাচিত হওয়ার পর ওয়ার্ড কাউন্সিলররা তাদের কার্যালয়গুলোকে অনেক টাকা ব্যয় করে সুসজ্জিত করছেন। সেখানে তারা বসে নানা ধরনের সনদ দিচ্ছেন। রিলাক্সমুডে নেতাকর্মী-সমর্থকদের নিয়ে খোশ গল্প করছেন।
No comments