শাবি ভিসির দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ
শাহজালাল
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আমিনুল হক ভুঁইয়ার
অনিয়ম ও দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। গতকাল
দুপুরে ভিসি ভবনের ফটকে শ্বেতপত্র পাঠ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়
উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক সৈয়দ সামশুল আলম। শ্বেতপত্রে
বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল হক ভুঁইয়ার যোগদানের পর থেকে বিগত দুই
বছরে সংগঠিত নানান অনিয়ম, অন্যায়, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিসহ আন্দোলনকারী
শিক্ষকদের নানান অভিযোগের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে। শ্বেতপত্র
প্রকাশকালে তিনি বলেন, ‘এমন একজন ভিসি আমরা পেয়েছি যিনি রক্তাক্ত ক্যাম্পাস
ফেলে বিদেশ ভ্রমণ করেন, নীতিমালা লঙ্ঘন-ভঙ্গ করে যথেচ্ছ নিয়োগ,
স্বজনপ্রীতি, আর্থিক অনিয়ম, সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ, সাধারণ
শিক্ষকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য, ছাত্রলীগের একটি পক্ষকে বিশেষ সুবিধা প্রদান এবং
বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের নানাবিধ সুবিধা দিয়ে গদি রক্ষা করেন।’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি হিসেবে ২০১৩ সালের জুলাই
মাসে অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল হক ভুঁইয়া যোগদান করেন।
স্বজনপ্রীতি ও আইন ভঙ্গ: ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভিসি প্রফেসর মো. আমিনুল হক ভুঁইয়ার শ্যালক হুমায়ুন কবীরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি চাকরির নিয়মানুযায়ী শূন্যপদে আবেদনের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩০ বছর থাকলেও, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটকে পাশ কাটিয়ে ৩০ ঊর্ধ্ব বয়সী এই শ্যালককে নিয়োগ দেয়া হয়।
স্বজনপ্রীতি ও আয়া আমদানি: প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে অনৈতিকভাবে একই কায়দায় ভিসি মো. আমিনুল হক ভুঁইয়া তার চাচাতো ভাই মঞ্জুরুল আলমকে ভিসি দপ্তরে এমএলএসএস পদে এবং সফিকুর রহমান চঞ্চলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের ডিন অফিসের এমএলএসএস পদে নিয়োগ দিয়েছেন। মামাতো ভাই মো. মারুফকে রেজিস্ট্রার অফিসের স্টোরকিপার পদে, ভাগনে সালাউদ্দিনকে মেডিক্যাল সেন্টারের স্টোরকিপার পদে এবং ভগ্নিপতির চাচাতো ভাই সালাউদ্দিনকে ঢাকা গেস্ট হাউজে এমএলএসএস পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মামাতো বোন সালমা খাতুনকে আয়া পদে নিয়োগের জন্য ভিসির বাংলোতে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানা গেছে, যদিও বাংলোতে মুন্নি ও মুনতাজ নামে দুইজন আয়া এবং রব্বানী নামে এক বাবুর্চি কর্মরত। এ ছাড়া শাবিপ্রবির অধীন রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজে একজন ও পার্কভিউ মেডিক্যাল কলেজে তিন জন নিকটাত্মীয়কে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সরকারি অর্থে অপচয়: সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জহির বিন আলমকে দিয়ে ৪ বার ভিসির কার্যালয় ও বাসভবনের পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এরপর থেকে গত এক বছর ধরে ভিসি মো. আমিনুল হক ভুঁইয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সাপ্লাই করা কোন পানি পান করতেন না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা অপচয় করে নিয়মিত মিনারেল ওয়াটার ও ডাবের পানি পান করতেন। ভিসি মহোদয় প্রতিদিন দুটি করে এলোভেরা পানীয় পান করতেন। এ ছাড়া প্রতি মাসে ২৮টি করে গুঁড়া দুধের প্যাকেট তার বাসার জন্য বরাদ্দ রয়েছে, যার পুরো অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে নেয়া হতো। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত ৮৪ হাজার টাকার একটি ভাউচার প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি প্রকল্পের ডিজেল চালিত মাইক্রোবাসটি গত প্রায় দুই বছর তার আত্মীয়-পরিজন ও বন্ধুবান্ধবের মনোরঞ্জনে সমগ্র বাংলাদেশ চষে বেড়িয়েছেন। ভিসির বাংলোতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকলেও বাংলো থেকে ১০০ মিটার দূরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজে সুরমা হাউজ নামের কক্ষটি ভিসির জন্য সংরক্ষিত কক্ষ হিসেবে বরাদ্দ নেয়া হয়েছে যাতে তার শ্যালক দিনের বেলায় আড্ডা দেন।
ভিসির আগ্রহে প্রশাসনিক ভবনের পেছনের অসম্পূর্ণ খাল সম্পূর্ণ করার নামে লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করা হয়। যার কোন কাজ করা হয়নি। উত্তোলনকৃত অর্থেরও কোন হদিস নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা কারচুপির মাধ্যমে নিজ পকেট ভারি করতে ভিসি মহোদয়ের ছলের অভাব ছিল না। সিন্ডিকেট সভার বাজারের ভাউচারে উনি নিয়মিত নিজের বাংলোর বাজার করতেন। ভিসির নির্দেশে তার নিজের আয়ের উৎস হিসেবে বিভিন্ন সিন্ডিকেট সভার নামে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ভাউচার করা হয়। যা থেকে সিন্ডিকেট সদস্যের ভাতা ও আপ্যায়ন খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা বাংলোর জন্য বিভিন্ন সময় বাজার করার টাকা ভাউচারের ভেতরে যুক্ত করে দেয়া হয়। এমনকি একই দিনে দুইবার সিন্ডিকেট ডেকে তিনি দুইবার ভাতা গ্রহণ করেন যা কোন কোন সিন্ডিকেট সদস্য অনৈতিক ও হাস্যকর বলে গ্রহণ করেননি। এ ছাড়া নিজ স্বার্থ আদায়ে তিনি বিভিন্ন নিয়োগ ও বাছাই সভায় বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ অহেতুক ব্যয় করেছেন। সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মো. সালেহ উদ্দিনের সময় ভিসি মহোদয় এক ভাউচারে ৮শ টাকা খরচ করতে পারতেন। ভিসি হিসেবে মো. আমিনুল হক ভুঁইয়া দায়িত্ব নেয়ার পর পর্যায়ক্রমে তা বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করেছেন। সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মো. সালেহ উদ্দিনের সময় ভিসির অস্থায়ী একাউন্ট (কন্টেনজেন্সি একাউন্ট)-এর মাধ্যমে বছরের আপ্যায়ন বাবদ ১ লাখ টাকা টাকা বরাদ্দ থাকলেও ভিসি মো. আমিনুল হক ভুঁইয়া সেটি বাড়িয়ে দেড়লাখ টাকা করেছেন। এ ছাড়া প্রতি মাসে ভিসির কার্যালয় থেকে ২৫-৩০ হাজার টাকার আপ্যায়ন বাবদ ভাউচার করা হয়। এক্ষেত্রে ভিসি দপ্তর থেকে ৪ হাজার টাকা করে দুইটি ভাউচারে অস্থায়ী একাউন্ট (কন্টেনজেন্সি একাউন্ট) থেকে টাকা উত্তোলিত হয়। বাকি টাকা ভিসির স্থায়ী একাউন্ট থেকে তুলে পুনঃভরণ করা হয়ে থাকে।
বিদেশ ভ্রমণপ্রীতি: আইকিউএসি প্রকল্পের অধীনে প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত পরিচালকদের ট্রেনিংয়ের উদ্দেশ্যে ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডে ভ্রমণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও ইউজিসিতে অনুমোদনের সময় ওই পরিচালকবৃন্দের সঙ্গে ভিসি আমিনুল হক ভুঁইয়া নিজের নামটিও যোগ করেন। প্রকল্পের শর্তানুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা এই ভ্রমণ করতে পারবেন না বিধায় ইউজিসি থেকে ফাইলটি ফেরত আসে এবং ভিসির নামটি কাটার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
পরিদর্শন বাণিজ্য: নিয়ম-বহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শককে না জানিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো ভিসি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কলেজ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের মাধ্যমে কলেজগুলোর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিতে নিয়মিত পরিদর্শনের বাইরেও তিনি একাধিক পরিদর্শন করেন। প্রতি পরিদর্শন শেষে অ্যাফিলিয়েটেড কলেজগুলোর দেয়া বার্ষিক ফি থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে তিনি ভাতাও নিয়ে থাকেন। যখন তখন ভিসির অনির্ধারিত পরিদর্শনের কারণে অধিভুক্ত কলেজ-কর্তৃপক্ষ অতিষ্ঠ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেমন ব্যাপক সম্মানহানি হয়েছে তেমনি পরীক্ষার সময় প্রত্যেক মাসে অধিভুক্ত বাজেট থেকে ৪০-৫০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে।
অযোগ্যতা ও অদক্ষতা: শাবিপ্রবিতে ভিসি মহোদয়ের নিয়োগের বিগত প্রায় দুই বছরের মধ্যে নতুন কোন বিভাগ খোলা হয়নি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় মাস থেকে এক বছরের সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়নমূলক কোন কাজের ছোঁয়াও লাগেনি। সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মো. সালেহ উদ্দিনের সময় সবুজ পাতায় উঠানো প্রায় ৬৫ কোটি টাকা পাস করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে বর্তমান ভিসি সেটার কোন খবরই নেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ ও শিক্ষক সমিতি বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও তিনি এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীনতা দেখান। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ নিয়মিত একাডেমিক কাউন্সিলের এজেন্ডায় না এনে জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে পাস করিয়ে নেয়া হয়। জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের ক্ষেত্রেও আগে থেকে কোন ধরনের চিঠি ইস্যু ছাড়াই একান্ত নিজের লোক দিয়ে কাউন্সিলের সভা করা হয়ে থাকে।
পক্ষপাতদুষ্টতা: ভিসি মহোদয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর কবির হোসেনকে অবৈধভাবে সিলেকশন গ্রেড প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। যা ফিন্যান্স আইনে বৈধ নয়। প্রফেসর কবির হোসেন লিয়েনের ইনক্রিমেন্ট নিয়েছেন এবং তা অ্যাকটিভ সার্ভিস হিসেবে গণনা করেছেন। ভিসি প্রফেসর কবির হোসেনের ভাই ড. ইমাম হোসেনকে পেনশন দিয়েছেন অবৈধভাবে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ৫ বছর সক্রিয় চাকরি করেছে। তার পেনশনের অনুমোদন প্রশ্নসাপেক্ষ। ভিসির সহায়তায় প্রফেসর কবির হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ‘এডহক’ নিয়োগ দিয়েছেন, বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ।
ছাত্রলীগের মৌন মিছিল: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিবিরোধী আন্দোলনে থাকা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করেছে ছাত্রলীগ। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর এলাকা থেকে ওই মিছিলটি বের করা হয়। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা আন্দোলনের সমালোচনা করে বলেন, তাদের আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিবেশ বিঘ্ন ঘটছে। সমাবেশে ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, শাবির ভিসি প্রফেসর ড. আমিনুল হক ভুঁইয়া জানিয়েছেন, আন্দোলনের কারণে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা হলে সেটির দায়ভার আন্দোলনকারীদের নিতে হবে। আর তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে অস্বীকার করে বলেন এতে অনেক কিছুই কাল্পনিক। যার কোন ভিত্তি নেই।
স্বজনপ্রীতি ও আইন ভঙ্গ: ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভিসি প্রফেসর মো. আমিনুল হক ভুঁইয়ার শ্যালক হুমায়ুন কবীরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি চাকরির নিয়মানুযায়ী শূন্যপদে আবেদনের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩০ বছর থাকলেও, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটকে পাশ কাটিয়ে ৩০ ঊর্ধ্ব বয়সী এই শ্যালককে নিয়োগ দেয়া হয়।
স্বজনপ্রীতি ও আয়া আমদানি: প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে অনৈতিকভাবে একই কায়দায় ভিসি মো. আমিনুল হক ভুঁইয়া তার চাচাতো ভাই মঞ্জুরুল আলমকে ভিসি দপ্তরে এমএলএসএস পদে এবং সফিকুর রহমান চঞ্চলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের ডিন অফিসের এমএলএসএস পদে নিয়োগ দিয়েছেন। মামাতো ভাই মো. মারুফকে রেজিস্ট্রার অফিসের স্টোরকিপার পদে, ভাগনে সালাউদ্দিনকে মেডিক্যাল সেন্টারের স্টোরকিপার পদে এবং ভগ্নিপতির চাচাতো ভাই সালাউদ্দিনকে ঢাকা গেস্ট হাউজে এমএলএসএস পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মামাতো বোন সালমা খাতুনকে আয়া পদে নিয়োগের জন্য ভিসির বাংলোতে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানা গেছে, যদিও বাংলোতে মুন্নি ও মুনতাজ নামে দুইজন আয়া এবং রব্বানী নামে এক বাবুর্চি কর্মরত। এ ছাড়া শাবিপ্রবির অধীন রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজে একজন ও পার্কভিউ মেডিক্যাল কলেজে তিন জন নিকটাত্মীয়কে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সরকারি অর্থে অপচয়: সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জহির বিন আলমকে দিয়ে ৪ বার ভিসির কার্যালয় ও বাসভবনের পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এরপর থেকে গত এক বছর ধরে ভিসি মো. আমিনুল হক ভুঁইয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সাপ্লাই করা কোন পানি পান করতেন না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা অপচয় করে নিয়মিত মিনারেল ওয়াটার ও ডাবের পানি পান করতেন। ভিসি মহোদয় প্রতিদিন দুটি করে এলোভেরা পানীয় পান করতেন। এ ছাড়া প্রতি মাসে ২৮টি করে গুঁড়া দুধের প্যাকেট তার বাসার জন্য বরাদ্দ রয়েছে, যার পুরো অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে নেয়া হতো। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত ৮৪ হাজার টাকার একটি ভাউচার প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি প্রকল্পের ডিজেল চালিত মাইক্রোবাসটি গত প্রায় দুই বছর তার আত্মীয়-পরিজন ও বন্ধুবান্ধবের মনোরঞ্জনে সমগ্র বাংলাদেশ চষে বেড়িয়েছেন। ভিসির বাংলোতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকলেও বাংলো থেকে ১০০ মিটার দূরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজে সুরমা হাউজ নামের কক্ষটি ভিসির জন্য সংরক্ষিত কক্ষ হিসেবে বরাদ্দ নেয়া হয়েছে যাতে তার শ্যালক দিনের বেলায় আড্ডা দেন।
ভিসির আগ্রহে প্রশাসনিক ভবনের পেছনের অসম্পূর্ণ খাল সম্পূর্ণ করার নামে লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করা হয়। যার কোন কাজ করা হয়নি। উত্তোলনকৃত অর্থেরও কোন হদিস নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা কারচুপির মাধ্যমে নিজ পকেট ভারি করতে ভিসি মহোদয়ের ছলের অভাব ছিল না। সিন্ডিকেট সভার বাজারের ভাউচারে উনি নিয়মিত নিজের বাংলোর বাজার করতেন। ভিসির নির্দেশে তার নিজের আয়ের উৎস হিসেবে বিভিন্ন সিন্ডিকেট সভার নামে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ভাউচার করা হয়। যা থেকে সিন্ডিকেট সদস্যের ভাতা ও আপ্যায়ন খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা বাংলোর জন্য বিভিন্ন সময় বাজার করার টাকা ভাউচারের ভেতরে যুক্ত করে দেয়া হয়। এমনকি একই দিনে দুইবার সিন্ডিকেট ডেকে তিনি দুইবার ভাতা গ্রহণ করেন যা কোন কোন সিন্ডিকেট সদস্য অনৈতিক ও হাস্যকর বলে গ্রহণ করেননি। এ ছাড়া নিজ স্বার্থ আদায়ে তিনি বিভিন্ন নিয়োগ ও বাছাই সভায় বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ অহেতুক ব্যয় করেছেন। সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মো. সালেহ উদ্দিনের সময় ভিসি মহোদয় এক ভাউচারে ৮শ টাকা খরচ করতে পারতেন। ভিসি হিসেবে মো. আমিনুল হক ভুঁইয়া দায়িত্ব নেয়ার পর পর্যায়ক্রমে তা বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করেছেন। সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মো. সালেহ উদ্দিনের সময় ভিসির অস্থায়ী একাউন্ট (কন্টেনজেন্সি একাউন্ট)-এর মাধ্যমে বছরের আপ্যায়ন বাবদ ১ লাখ টাকা টাকা বরাদ্দ থাকলেও ভিসি মো. আমিনুল হক ভুঁইয়া সেটি বাড়িয়ে দেড়লাখ টাকা করেছেন। এ ছাড়া প্রতি মাসে ভিসির কার্যালয় থেকে ২৫-৩০ হাজার টাকার আপ্যায়ন বাবদ ভাউচার করা হয়। এক্ষেত্রে ভিসি দপ্তর থেকে ৪ হাজার টাকা করে দুইটি ভাউচারে অস্থায়ী একাউন্ট (কন্টেনজেন্সি একাউন্ট) থেকে টাকা উত্তোলিত হয়। বাকি টাকা ভিসির স্থায়ী একাউন্ট থেকে তুলে পুনঃভরণ করা হয়ে থাকে।
বিদেশ ভ্রমণপ্রীতি: আইকিউএসি প্রকল্পের অধীনে প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত পরিচালকদের ট্রেনিংয়ের উদ্দেশ্যে ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডে ভ্রমণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও ইউজিসিতে অনুমোদনের সময় ওই পরিচালকবৃন্দের সঙ্গে ভিসি আমিনুল হক ভুঁইয়া নিজের নামটিও যোগ করেন। প্রকল্পের শর্তানুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা এই ভ্রমণ করতে পারবেন না বিধায় ইউজিসি থেকে ফাইলটি ফেরত আসে এবং ভিসির নামটি কাটার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
পরিদর্শন বাণিজ্য: নিয়ম-বহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শককে না জানিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো ভিসি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কলেজ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের মাধ্যমে কলেজগুলোর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিতে নিয়মিত পরিদর্শনের বাইরেও তিনি একাধিক পরিদর্শন করেন। প্রতি পরিদর্শন শেষে অ্যাফিলিয়েটেড কলেজগুলোর দেয়া বার্ষিক ফি থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে তিনি ভাতাও নিয়ে থাকেন। যখন তখন ভিসির অনির্ধারিত পরিদর্শনের কারণে অধিভুক্ত কলেজ-কর্তৃপক্ষ অতিষ্ঠ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেমন ব্যাপক সম্মানহানি হয়েছে তেমনি পরীক্ষার সময় প্রত্যেক মাসে অধিভুক্ত বাজেট থেকে ৪০-৫০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে।
অযোগ্যতা ও অদক্ষতা: শাবিপ্রবিতে ভিসি মহোদয়ের নিয়োগের বিগত প্রায় দুই বছরের মধ্যে নতুন কোন বিভাগ খোলা হয়নি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় মাস থেকে এক বছরের সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়নমূলক কোন কাজের ছোঁয়াও লাগেনি। সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মো. সালেহ উদ্দিনের সময় সবুজ পাতায় উঠানো প্রায় ৬৫ কোটি টাকা পাস করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে বর্তমান ভিসি সেটার কোন খবরই নেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ ও শিক্ষক সমিতি বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও তিনি এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীনতা দেখান। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ নিয়মিত একাডেমিক কাউন্সিলের এজেন্ডায় না এনে জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে পাস করিয়ে নেয়া হয়। জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের ক্ষেত্রেও আগে থেকে কোন ধরনের চিঠি ইস্যু ছাড়াই একান্ত নিজের লোক দিয়ে কাউন্সিলের সভা করা হয়ে থাকে।
পক্ষপাতদুষ্টতা: ভিসি মহোদয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর কবির হোসেনকে অবৈধভাবে সিলেকশন গ্রেড প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। যা ফিন্যান্স আইনে বৈধ নয়। প্রফেসর কবির হোসেন লিয়েনের ইনক্রিমেন্ট নিয়েছেন এবং তা অ্যাকটিভ সার্ভিস হিসেবে গণনা করেছেন। ভিসি প্রফেসর কবির হোসেনের ভাই ড. ইমাম হোসেনকে পেনশন দিয়েছেন অবৈধভাবে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ৫ বছর সক্রিয় চাকরি করেছে। তার পেনশনের অনুমোদন প্রশ্নসাপেক্ষ। ভিসির সহায়তায় প্রফেসর কবির হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ‘এডহক’ নিয়োগ দিয়েছেন, বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ।
ছাত্রলীগের মৌন মিছিল: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিবিরোধী আন্দোলনে থাকা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করেছে ছাত্রলীগ। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর এলাকা থেকে ওই মিছিলটি বের করা হয়। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা আন্দোলনের সমালোচনা করে বলেন, তাদের আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিবেশ বিঘ্ন ঘটছে। সমাবেশে ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, শাবির ভিসি প্রফেসর ড. আমিনুল হক ভুঁইয়া জানিয়েছেন, আন্দোলনের কারণে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা হলে সেটির দায়ভার আন্দোলনকারীদের নিতে হবে। আর তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে অস্বীকার করে বলেন এতে অনেক কিছুই কাল্পনিক। যার কোন ভিত্তি নেই।
No comments