অসুস্থ হলে ৭০ জনকে সাগরে ছুড়ে ফেলা হয়
ট্রলারে ওঠার পর থেকে থাইল্যান্ডে পৌঁছানো পর্যন্ত দুই মাসে অসুস্থ হওয়ার কারণে সাগরে ফেলে দেওয়া হয় ৭০ জনকে। শুধু পানি খেতে চাওয়ার অপরাধে একজনকে চোখের নিমেষে গলা কেটে সাগরে ফেলে দেওয়া হয়। দিনে শুধু একবেলা শুকনো খাবার আর গাছের সেদ্ধ পাতা খেয়ে বেঁচে ছিলাম। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।
রোমহর্ষক এ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন টানা দুই মাস ট্রলারে অনিশ্চিতভাবে ভেসে মালয়েশিয়া পৌঁছানো সিরাজগঞ্জের আল-আমিন সরকার। তাঁর মতোই ভয়ংকর ট্রলারযাত্রার বর্ণনা দেন এ জেলার হায়দার আলী। মালয়েশিয়ায় চার মাস কারাভোগ শেষে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন তাঁরা।
আল-আমিন বেলকুচি উপজেলার ক্ষীদ্রমাটিয়া পূর্ব বানিয়াপাড়া গ্রামের মৃত ফিরোজ সরকারের ছেলে। আর হায়দার আলী পূর্বচালা গ্রামের শামসুল ইসলামের ছেলে। দালালদের চাকরির প্রলোভনে পা দিয়ে দুঃসহ সাগরযাত্রার পর মালয়েশিয়া গেলেও চাকরি তাঁদের মেলেনি। ঠাঁই হয় কারাগার।
আল-আমিন বলছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা, ‘মাসে ৩০ হাজার টাকা বেতন পাওয়া যাবে। কোনো টাকাপয়সা অগ্রিম দিতে হবে না। এ কথা বলে স্থানীয় দুই দালাল মতি ও বাবলু মিয়া আমাকে উদ্বুদ্ধ করেন। গত কোরবানির ঈদের আগে কাউকে না বলে বাড়ি থেকে তাঁদের কথামতো রওনা হই।’ তিনি বলেন, টেকনাফ থেকে ৪৭০ জনকে নিয়ে ট্রলার যাত্রা শুরু করে। পথে ৭০ জন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের সাগরেই ফেলে দেয় পাচারকারী ও দালালেরা। দুই মাস ট্রলারে থাকার পর থাইল্যান্ডে নামিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে মালয়েশিয়ার জঙ্গলে নিয়ে মুঠোফোনে পাচারকারীরা পরিবারের কাছে টাকা চেয়ে ফোন করায়। আল-আমিনের পরিবার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাঠালে তা পাচারকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
আল-আমিন জানান, মালয়েশিয়ার শহর অঞ্চলে পৌঁছার আগে তাঁরা সবাই পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। পরে তাঁকে চার মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাভোগের পর অন্য দালালের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বিমানে গত ১০ জুন দেশে ফিরতে সক্ষম হন তিনি।
পৃথকভাবে যাওয়া হায়দার আলী বলেন, অন্যদের সঙ্গে বেশ কিছুদিন মালয়েশিয়ার জঙ্গলে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল তাঁদের। সেখান থেকে একদিন শহরে পৌঁছানোর পর আলমগীর নামের এক দালালকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ পান তিনি। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
আল-আমিন ও হায়দারের মতো অনেকেই পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়া পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানান বেলকুচির জামতৈল আজুগড়া গ্রামের বেল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেসহ আমার বাড়ির আশপাশে ছয়জন বাড়ি থেকে চলে গেছে। এক মাস পর ফোন এসেছিল, তারা মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে। তাদের কথামতো ৬০ হাজার টাকা দালাল লতিফ ও রেজাউলকে দেওয়া হয়। দেড় বছর হয়ে গেলেও এই ছয়জনের কোনো খবর নেই। ছেলেকে পেতে মামলা করা হলে রেজাউল জামিনে বেরিয়ে এসে হুমকি দিচ্ছে।’
নিখোঁজ তিন শতাধিক: অভিবাসন নিয়ে জেলায় কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডেভেলপমেন্ট ফর ডিজঅ্যাডভান্টেজড পিপলের (ডিডিপি) জরিপ অনুযায়ী, এ জেলার তিন শতাধিক যুবক-কিশোর এখনো নিখোঁজ। অনেক পরিবার আবার দালালদের ভয়ে তথ্য গোপন রাখছে। এ বিষয়ে সেল গঠন করার নিয়ম থাকলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ বিভাগ থেকে তা করা হচ্ছে না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু ইউসুফ জানান, বিদেশে কারাগারে ১১৬ জন বন্দী রয়েছেন—এমন একটি তালিকা পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাঁদের কাছে পাঠানো হয়। এগুলো যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
রোমহর্ষক এ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন টানা দুই মাস ট্রলারে অনিশ্চিতভাবে ভেসে মালয়েশিয়া পৌঁছানো সিরাজগঞ্জের আল-আমিন সরকার। তাঁর মতোই ভয়ংকর ট্রলারযাত্রার বর্ণনা দেন এ জেলার হায়দার আলী। মালয়েশিয়ায় চার মাস কারাভোগ শেষে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন তাঁরা।
আল-আমিন বেলকুচি উপজেলার ক্ষীদ্রমাটিয়া পূর্ব বানিয়াপাড়া গ্রামের মৃত ফিরোজ সরকারের ছেলে। আর হায়দার আলী পূর্বচালা গ্রামের শামসুল ইসলামের ছেলে। দালালদের চাকরির প্রলোভনে পা দিয়ে দুঃসহ সাগরযাত্রার পর মালয়েশিয়া গেলেও চাকরি তাঁদের মেলেনি। ঠাঁই হয় কারাগার।
আল-আমিন বলছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা, ‘মাসে ৩০ হাজার টাকা বেতন পাওয়া যাবে। কোনো টাকাপয়সা অগ্রিম দিতে হবে না। এ কথা বলে স্থানীয় দুই দালাল মতি ও বাবলু মিয়া আমাকে উদ্বুদ্ধ করেন। গত কোরবানির ঈদের আগে কাউকে না বলে বাড়ি থেকে তাঁদের কথামতো রওনা হই।’ তিনি বলেন, টেকনাফ থেকে ৪৭০ জনকে নিয়ে ট্রলার যাত্রা শুরু করে। পথে ৭০ জন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের সাগরেই ফেলে দেয় পাচারকারী ও দালালেরা। দুই মাস ট্রলারে থাকার পর থাইল্যান্ডে নামিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে মালয়েশিয়ার জঙ্গলে নিয়ে মুঠোফোনে পাচারকারীরা পরিবারের কাছে টাকা চেয়ে ফোন করায়। আল-আমিনের পরিবার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাঠালে তা পাচারকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
আল-আমিন জানান, মালয়েশিয়ার শহর অঞ্চলে পৌঁছার আগে তাঁরা সবাই পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। পরে তাঁকে চার মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাভোগের পর অন্য দালালের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বিমানে গত ১০ জুন দেশে ফিরতে সক্ষম হন তিনি।
পৃথকভাবে যাওয়া হায়দার আলী বলেন, অন্যদের সঙ্গে বেশ কিছুদিন মালয়েশিয়ার জঙ্গলে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল তাঁদের। সেখান থেকে একদিন শহরে পৌঁছানোর পর আলমগীর নামের এক দালালকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ পান তিনি। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
আল-আমিন ও হায়দারের মতো অনেকেই পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়া পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানান বেলকুচির জামতৈল আজুগড়া গ্রামের বেল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেসহ আমার বাড়ির আশপাশে ছয়জন বাড়ি থেকে চলে গেছে। এক মাস পর ফোন এসেছিল, তারা মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে। তাদের কথামতো ৬০ হাজার টাকা দালাল লতিফ ও রেজাউলকে দেওয়া হয়। দেড় বছর হয়ে গেলেও এই ছয়জনের কোনো খবর নেই। ছেলেকে পেতে মামলা করা হলে রেজাউল জামিনে বেরিয়ে এসে হুমকি দিচ্ছে।’
নিখোঁজ তিন শতাধিক: অভিবাসন নিয়ে জেলায় কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডেভেলপমেন্ট ফর ডিজঅ্যাডভান্টেজড পিপলের (ডিডিপি) জরিপ অনুযায়ী, এ জেলার তিন শতাধিক যুবক-কিশোর এখনো নিখোঁজ। অনেক পরিবার আবার দালালদের ভয়ে তথ্য গোপন রাখছে। এ বিষয়ে সেল গঠন করার নিয়ম থাকলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ বিভাগ থেকে তা করা হচ্ছে না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু ইউসুফ জানান, বিদেশে কারাগারে ১১৬ জন বন্দী রয়েছেন—এমন একটি তালিকা পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাঁদের কাছে পাঠানো হয়। এগুলো যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
No comments