শিফার অপহরণ রহস্য সিলেটে তোলপাড় by ওয়েছ খছরু
প্রবাসী
বধূ ফারজানা আক্তার শিফার অপহরণ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অন্ত নেই সিলেটে।
সন্তানসহ বধূ অপহরণের ঘটনাকে ‘রহস্যময়’ বলে মনে করছে খালেদের সহকর্মীরা।
কারণ, শিফা ও খালেদ বিয়ে করেছে বলে পালিয়ে যাওয়ার আগে খালেদ তাদের
জানিয়েছিল। আর এ পথে পা না বাড়ানোর জন্য খালেদকে বারণ করেছিল তারা। কিন্তু
শিফার চাপাচাপির কারণেই শেষ মুহূর্তে পালিয়ে যায় খালেদ। এমন তথ্য খালেদের
সহকর্মীরা জানায়। কিন্তু ফারজানা আক্তার শিফা আদালতে যে বক্তব্য দিয়েছে
তাতে স্পষ্টই উঠে এসেছে- ‘খালেদ তাকে অপহরণ করে গাজীপুরে নিয়ে যায় এবং
সেখানে টানা এক সপ্তাহ খালেদ তার সঙ্গে সহবাস করেছে।’ আদালতে শিফা আরও
জানিয়েছে, ‘বাসস্ট্যান্ড থেকে রিজার্ভ সিএনজিতে গাজীপুর তার বাসায় নিয়ে
যায়। সেখানে এক সপ্তাহ ছিলাম। জোরপূর্বক সে আমার সঙ্গে সহবাস করেছে। আমার
মোবাইল, পাসপোর্ট নিয়ে যায়। ফলে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। সে
তাবিজ দেয়। জ্ঞান ফিরে আসার পরই ওই তাবিজ গলায় দেখি। তারপর থেকেই আমি তার
প্রতি দুর্বলতা অনুভব করতাম।’ শিফার এ বক্তব্য জানাজানি হওয়ার পর
মোগলাবাজার এলাকায় তোলপাড় চলছে। খালেদের সহকর্মী সিএনজিচালক ও তার পরিবারের
লোকজন জানিয়েছে, শিফা খালেদের প্রতি যে দুর্বল ছিল সেটি আদালতেই স্বীকার
করেছে শিফা। আর এ বিষয়টি তিন মাস থেকে তারা জানতো। আর পালিয়ে যাওয়ার জন্য
শিফা আগে থেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে রেখেছিল বলে জানায় তারা। এদিকে,
গাজীপুর থেকে শিফা উদ্ধার, মেডিক্যালে ভর্তি, ২২ ধারা জবানবন্দির পর সংবাদ
সম্মেলন করেছেন শিফার পিতা মো. আবদুল মান্নান। সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবে
সংবাদ সম্মেলনে মেয়ের সংসার রক্ষার্থে কুচক্রী মহলের সব ধরনের অপপ্রচার
থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। মেয়ে ফারজানা আক্তার শিফা ও নাতি শাহী আহমদ
শাফিকে টাকার লোভে সিএনজি অটোরিকশাচালক খালেদ ও তার সহযোগীরা অপহরণ করে।
পুলিশ তাদের উদ্ধার করে এ ঘটনায় মোগলাবাজার থানায় খালেদসহ অন্যদের আসামি
করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপহরণ মামলা করা হয়। এ ঘটনাকে ভিন্ন
খাতে প্রবাহিত করার জন্য মামলার আসামি খালেদ ও তার আশ্রয়দাতারা আমার ও আমার
মেয়ের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কাল্পনিক মিথ্যা
সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে, যা সমাজে আমার ও আমার মেয়ের মানসম্মান
নষ্ট করার গভীর চক্রান্ত। সংবাদ সম্মেলনে মো. আবদুল মান্নান লিখিত বক্তব্যে
বলেন, একটি কুচক্রী মহলের ইন্ধনে একই উপজেলার কন্দিয়ারচর গ্রামের মজুর
মিয়া ও তার ছেলে খালেদ এবং তাদের সঙ্গে থাকা দুষ্কৃতকারীদের কারণে তার
পরিবারের মানসম্মান হুমকির মুখে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে
অনলাইন গণমাধ্যমে তার মেয়েকে জড়িয়ে হীন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ঘটনার
বিবরণ তুলে ধরে আবদুল মান্নান জানান, ১১ বছর আগে মোগলাবাজার থানার
কান্দেবপুর গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে মো. মজির উদ্দিন তালুকদারের সঙ্গে
ফারজানা আক্তার শিফার পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে হয়। মেয়ের জামাই বিদেশ
যাওয়ার আগে বিবাদী খালেদ সিএনজিচালক হওয়ায় তাকে সরল বিশ্বাসে বাড়িঘরের
বাজার খরচসহ ছেলেকে স্কুলে আনা-নেয়ার জন্য দায়িত্ব যায়। চতুর খালেদ এ
সুযোগে আর্থিক লাভবান হওয়ার লোভ করে বসে। গত ৮ই জুন দুপুর ১টায় তার মেয়ে
চৌধুরীবাজারে অবস্থিত পূবালী ব্যাংক শাখা থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন
করে স্বামীর বাড়ি যায়। পরদিন ৯ই জুন সকালে আমার মেয়ে ওই ১ লাখ ৪০ হাজার
টাকা ও তার ছেলে শাহীকে নিয়ে শাহীর স্কুলগাড়িতে করে মোগলাবাজারের আল ইকমা
কিন্ডারগার্টেনে যায়। পরে নাতির স্কুলছুটির পর শিফা মোগলাবাজারের গ্রিল
ওয়ার্কশপ দোকানদার আনোয়ারকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেয়ার জন্য সেখানে যায়।
গ্রিল ওয়ার্কশপ বন্ধ থাকায় শিফা টাকাগুলো থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা
দেয়ার জন্য সিএনজিচালক খালেদকে ফোন দিয়ে আসার জন্য বলে। সিএনজিচালক খালেদসহ
অন্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে খালেদ ও তার সাথীরা শিফা ও তার ছেলেকে
জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়। সিএনজিচালক খালেদ তার ব্যবহৃত মোবাইল থেকে
শিফার স্বামী মো. মজির উদ্দিন তালুকদারের কাছে বলে ‘তোর স্ত্রী ও ছেলে আমার
কাছে আছে’- এ কথা বলে খালেদ ফোন কেটে দেয়। পরে মো. মজির উদ্দিন আমাকে
বিষয়টি জানালে তিনি দ্রুত তার ছেলে জুবেলসহ কয়েকজনকে নিয়ে আল ইকমা
কিন্ডারগার্টেনে এসে জানতে পারেন খালেদসহ অন্যরা শিফা ও তার ছেলেকে নিয়ে
গেছে। আবদুল মান্নান এ ঘটনায় মোগলাবাজার থানায় খালেদসহ অন্যদের আসামি করে
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করি। অপহরণ ঘটনার ৪ দিন পর মেয়ের
ভাসুরের ছেলে নাজিমের কাছে ফোন করে বলে তার কাছে কয়েকজন লোক ফোন করে
জানিয়েছে শিফা ও তার ছেলের অবস্থানের তথ্য। আর এ তথ্য পেতে হলে ৫০ হাজার
টাকা লাগবে বলে জানায়। পরে তিনি নাজিমকে ৫০ হাজার টাকা দেন। নাজিম টাকা
নিয়ে যাওয়ার পর শিফা ও তার ছেলে ঢাকার গাজীপুরের কোনাবাড়িতে অবস্থান করছে
বলে জানায়। পরে মোগলাবাজার থানা পুলিশ ১৭ই জুন ঢাকা থেকে শিফা ও তার ছেলে
এবং অপহরণকারী খালেদকে সিলেট নিয়ে আসে। এদিকে, খালেদের সহকর্মী ও পরিবারের
সদস্যরা জানায়, শিফা খালেদকে ভালবাসত সেটি তারা জানতো। খালেদ তাদের সঙ্গে
কথা বলেছে। বিয়েও হয়েছে বলে তারা জানতো এবং শিফার চাপাচাপির কারণেই এমনটি
হয়েছে বলে দাবি করে তারা।
আদালতে যা বললেন শিফা: শিফা অপহরণের পর তার বাবা বাদী হয়ে এসএমপির মোগলাবাজার থানায় মামলা করেন। যার নং-০৭ (০৬)১৫ইং। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ই জুন এসএমপির মোগলাবাজার থানার পুলিশ অপহৃতাকে উদ্ধার করে গাজীপুর থেকে। উদ্ধারের পর আদালতে শিফাকে হাজির করলে সে ভিকটিম হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেয়। তার জবানবন্দিটি হুবহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো: আমার স্বামী প্রবাসী। খালেদ একজন সিএনজিচালক। স্বামী দেশে এলে সব সময় খালেদের সিএনজি ব্যবহার করতেন। খালেদকে ভাই ডাকতেন। সেই সুবাদে খালেদ আমাকে ভাবি ডাকত। পারিবারিকভাবে তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক ছিল। সেই সুবাদে আমিও যাতায়াতের ক্ষেত্রে তার সিএনজি ব্যবহার করতাম। স্বামী বিদেশে থেকে ফোন করে বলেন গ্যারেজের আনোয়ার চাচাকে ১ লাখ টাকা দিতে হবে। আমি বাবার বাড়ি থেকে আসার সময় ০৮.০৬.১৫ইং তারিখ প্রবাসী ব্যাংক থেকে রমজানের খরচাসহ হিসাব করে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করি। পরের দিন শাহী সাবাবরকে স্কুল থেকে নিয়ে সোয়া ১২টায় আনোয়ার চাচার গ্যারেজে গিয়ে তাকে না পেয়ে ফোন করি। ফোনেও পাইনি। ৮ তারিখ রাতেই অতিরিক্ত ৪০ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিতে বলায় গ্যারেজ থেকে ব্যাংকে চলে যাই। বিদ্যুৎ না থাকায় টাকা জমা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তখন আনোয়ার চাচা ফোন করে গ্যারেজে যেতে বললে আমি খালেদকে গাড়ি নিয়ে আসতে বলি। তখন খালেদের গাড়িতে সামনে কয়েকজন বসা ছিল, তাদের আমি চিনি না। আমি পানি খেতে চাইলে পানির বোতল এগিয়ে দেয়। পানি খাওয়ার পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি এনা বাসে। বাস তখন ভৈরব ব্রিজ পার হচ্ছে। আমি এখানে কেন জিজ্ঞেস করাতে খালেদ জানায়, তার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে। আমি আমার পূর্বের স্বামীকে তালাক দিয়েছি। আমি অস্বীকার করলে আমার ছবিযুক্ত কাগজ দেখায়। সাড়ে তিন মাস আগে সে লোন নেয়ার জন্য আমার ছবি, আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছিল গ্যারান্টার হিসেবে। সেগুলো জাল করে এগুলো দেখায়। বাসের লোকজনকে আমি তার স্ত্রী বলে পরিচয় দেয়। গত ১৭ তারিখ পুলিশ গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে। আমার বাবার বাড়ি চলে যেতে চাই।
আদালতে যা বললেন শিফা: শিফা অপহরণের পর তার বাবা বাদী হয়ে এসএমপির মোগলাবাজার থানায় মামলা করেন। যার নং-০৭ (০৬)১৫ইং। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ই জুন এসএমপির মোগলাবাজার থানার পুলিশ অপহৃতাকে উদ্ধার করে গাজীপুর থেকে। উদ্ধারের পর আদালতে শিফাকে হাজির করলে সে ভিকটিম হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেয়। তার জবানবন্দিটি হুবহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো: আমার স্বামী প্রবাসী। খালেদ একজন সিএনজিচালক। স্বামী দেশে এলে সব সময় খালেদের সিএনজি ব্যবহার করতেন। খালেদকে ভাই ডাকতেন। সেই সুবাদে খালেদ আমাকে ভাবি ডাকত। পারিবারিকভাবে তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক ছিল। সেই সুবাদে আমিও যাতায়াতের ক্ষেত্রে তার সিএনজি ব্যবহার করতাম। স্বামী বিদেশে থেকে ফোন করে বলেন গ্যারেজের আনোয়ার চাচাকে ১ লাখ টাকা দিতে হবে। আমি বাবার বাড়ি থেকে আসার সময় ০৮.০৬.১৫ইং তারিখ প্রবাসী ব্যাংক থেকে রমজানের খরচাসহ হিসাব করে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করি। পরের দিন শাহী সাবাবরকে স্কুল থেকে নিয়ে সোয়া ১২টায় আনোয়ার চাচার গ্যারেজে গিয়ে তাকে না পেয়ে ফোন করি। ফোনেও পাইনি। ৮ তারিখ রাতেই অতিরিক্ত ৪০ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিতে বলায় গ্যারেজ থেকে ব্যাংকে চলে যাই। বিদ্যুৎ না থাকায় টাকা জমা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তখন আনোয়ার চাচা ফোন করে গ্যারেজে যেতে বললে আমি খালেদকে গাড়ি নিয়ে আসতে বলি। তখন খালেদের গাড়িতে সামনে কয়েকজন বসা ছিল, তাদের আমি চিনি না। আমি পানি খেতে চাইলে পানির বোতল এগিয়ে দেয়। পানি খাওয়ার পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি এনা বাসে। বাস তখন ভৈরব ব্রিজ পার হচ্ছে। আমি এখানে কেন জিজ্ঞেস করাতে খালেদ জানায়, তার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে। আমি আমার পূর্বের স্বামীকে তালাক দিয়েছি। আমি অস্বীকার করলে আমার ছবিযুক্ত কাগজ দেখায়। সাড়ে তিন মাস আগে সে লোন নেয়ার জন্য আমার ছবি, আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছিল গ্যারান্টার হিসেবে। সেগুলো জাল করে এগুলো দেখায়। বাসের লোকজনকে আমি তার স্ত্রী বলে পরিচয় দেয়। গত ১৭ তারিখ পুলিশ গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে। আমার বাবার বাড়ি চলে যেতে চাই।
No comments