কূটনীতিতেও পিছিয়ে পড়েছে জামায়াত by আহমেদ জামাল
কূটনীতিতেও পিছিয়ে পড়েছে জামায়াত। মানবতাবিরোধী অপরাধসহ বিভিন্ন কারণে কোণঠাসা দলটি ইতিপূর্বে কূটনৈতিক অঙ্গনে খানিকটা অগ্রসর ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটেছে। এতে যুদ্ধাপরাধের বিচার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরব থাকা কূটনীতিকরা ধীরে ধীরে নীরব হয়ে পড়েছেন- এমন অভিমত পর্যবেক্ষক মহলের। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন বলেন, ওদের সমর্থনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের ভেতরে কিছু হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে এ টুকু বলতে পারি ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন যেমন কেউ সমর্থন করেনি, তেমনি আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারাও সমর্থনযোগ্য হয়নি। আন্তর্জাতিক মহল এসব কিছু হয়তো বা বিচার-বিশ্লেষণ করছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৩ সালের ১২ই ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। এই রায় কার্যকরের বিষয়ে জাতিসংঘ, এমেনেস্টি ইন্টান্যাশনাল, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক মহল বেশ সক্রিয় ছিল। কিন্তু দলটির সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বেলায় তেমনটি দেখা যায়নি। গত ১১ই এপ্রিল কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। অথচ জামায়াতের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দেখাশোনা করতেন কামারুজ্জামান। একই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রায়ের ক্ষেত্রেও। গত ১৬ই জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে। এই রায়ের বিষয়ে আন্তর্জাতিক কোন সংস্থা থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য জাতি সংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত স্টিফেন র্যাপ অন্তত চারবার বাংলাদেশ সফর করেন। বহু বিবৃতি দেয়া হয়েছে বিশ্ব সংস্থা পক্ষ থেকে। চলমান প্রেক্ষাপটে সেই সব তৎপরতা থেমে গেছে। রাজধানীর মগবাজারে অবস্থিত জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রায় চার বছর বন্ধ। ঢাকায় দায়িত্ব পালনকালে বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা কমপক্ষে দুইবার এই কার্যালয় পরিদর্শনে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমান রাষ্টদূতের বেলায় সে ধরনের কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। ওদিকে ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে জামায়াত এ মামলা পরিচালনার জন্য টবি ক্যাডম্যান নামে এক বৃটিশ আইনজীবীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। তবে শেষ পর্যন্ত বিদেশী এই আইনজীবী বাংলাদেশে আসতে পারেননি। এছাড়া এ ইস্যুতে পরামর্শ দেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একাধিক লবিস্ট নিয়োগের কথা শোনা গিয়েছিল। এসব বিষয়ে দেখভাল করার জন্য দলটির সিনিয়র নেতা এবং ডিফেন্স টিমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক এক বছরের বেশি সময় লন্ডনে অবস্থান করছেন। এতকিছুর পরও জামায়াতের আন্তর্জাতিক লবিং ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। দৃশ্যত সেই চিত্রই ফুঠে উঠেছে। গত সোমবার হোটেল ওয়েস্টিনে কূটনীতিকদের সম্মানে আয়োজিত ইফতারে। বিগত বছরগুলোর এই ইফতারে মার্কিন, বৃটিশসহ পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবশালী কূটনীতিকদের সরব উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। তবে সোমবারের ইফতারে তার ধারাবাহিকতা ছিল না। ওইদিনের ইফতার পার্টিতে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ও কূটনীতিকদের উপস্থিতির কথা বলা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষমতাধর দেশের কূটনীতিকরা ছিলেন না। ওইদিনের ইফতারে ইরাক দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বেইসান জে. আবদুল লতিফ, ওমান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ওমর মুহাম্মদ রামাদান আল-বুসাইরী, পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার সামিনা মেহতাব, অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার ড. লুসিনডা বেল, ফিলিস্তিন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব দ্য মিশন ইউসেফ এস. ওয়াই রামাদান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ডেপুটি চিফ অব মিশন ফিরিডেরিক মাদুরাউড, আইআরআই-এর রেসিডেন্ট কান্ট্রি ডিরেক্টর ডিসিধর স্টোজকভ, ইরান দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন বাহরাম সাঈদ জাদে, এনডিআই-এর কান্ট্রি পরিচালক সাইফুল করিম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভ্যাটিকান সিটি, বৃটিশ, জাপান, তুরস্ক, সুইডেন, চীন, সৌদি আরব প্রভৃতি দেশের কূটনৈতিক কোরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তবে পশ্চিমা বিশ্বের ক্ষমতাধর এবং প্রথম সারির কূটনীতিকদের শূন্যতা পরিষ্কার বোঝা গেছে এই ইফতারে।
No comments