সিলেটে তাহের-পিংকির প্রেম-অভিসার by ওয়েছ খছরু ও জয়নাল আবেদীন
পিতা
লন্ডন প্রবাসী। বাড়ি তদারকির জন্য রাখা হয়েছিল যুবক তাহেরকে। মাসে-মাসে
বেতনও দেয়া হতো তাকে। লন্ডনপ্রবাসী শিহাব মিয়া অগাদ বিশ্বাস করতেন তাকে।
কিন্তু সেই বিশ্বাস শেষ মুহূর্তে আর টিকলো না। লন্ডনপ্রবাসী শিহাবের তরুণী
মেয়ে পিংকিকে নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছে তাহের। এক সপ্তাহ আগের
ঘটনা এটি। পহেলা রমজানের আগের রাতে। কাউকে না জানিয়ে পিংকি প্রেমিক তাহেরের
সঙ্গে ঘর ছাড়ে। লোকমুখে ছড়াতে ছড়াতে এখন ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়েছে গোটা
ওসমানীনগরে। পুরো নাম নাজিয়া আক্তার পিংকি। সিলেটের ওসমানীনগর থানার
মোল্লাপাড়া গ্রামে বাড়ি। বয়স ১৮ কিংবা ১৯ বছর। সবেমাত্র যৌবনে পা দিয়েছে।
এলাকার স্কুলে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করার পর আর এগোয়নি শিক্ষাজীবন।
এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, একাধিক প্রেম। বিষয়টি নজরে আসে সবার। জানাজানি
হয় এলাকায়। এর ফলে এক সময় পড়ালেখা ইতি ঘটায় শিক্ষাজীবনে। আর তাহের মিয়া।
বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পিয়ারগাঁওয়ে। তার পিতার নাম মৃত আবদুল
জলিল। এলাকার লোকজন জানান, প্রবাসী শিহাব মিয়া ৫-৬ বছর আগে ‘ভিজিট ভিসা’য়
লন্ডনে যান। এরপর তিনি আর দেশে ফিরে আসেননি। এই সময়ে বাড়িতে তার সংসার
অনেকটা একা। এই সংসারের দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তাহেরকে। তাহের ছিল
তাদের পরিবারের বিশ্বস্ত। এ কারণে তার উপর সংসারের দায়িত্ব ন্যস্ত করার পর
সে নিজ বাড়ি জগন্নাথপুরের পিয়ারগাঁও থেকে এসে দেখভাল করতো। বাজার খরচ করে
দিতো। বাড়ি যাওয়া- আসার সুবাদে তাহের ও পিংকির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে
ওঠে। এই সম্পর্ক ধীরে-ধীরে গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে। লুকিয়ে প্রেম করা,
অভিসারে যাওয়া এসব বিষয় পরিবারের অন্য সদস্যদের চোখ এড়ায়নি। এভাবে টানা এক
বছর তাদের মধ্যে চলে সম্পর্ক। এই এক বছর ধরে তাহের নিয়মিত বসবাস করছে
প্রবাসী শিহাবের বাড়িতে। ফলে তারা দুইজন আরও কাছাকাছি চলে আসে। এদিকে,
তাদের দুই জনের প্রেমের সম্পর্ক গভীর হলে বাদসাধে পরিবার। পরিবার তাদের
সম্পর্কের বিষয়টি মেনে নেয়নি। প্রবাসে থাকা শিহাবও এ ঘটনায় রাগান্বিত হন।
পরিবারের সম্মতি না মেলায় অবশেষে পহেলা রমজানের আগের রাতে তাহের ও পিংকি পা
বাড়ায় অজানার উদ্দেশ্যে। এদিকে, তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর টনক নড়ে
পরিবারের। ইতিমধ্যে তাদের ফিরিয়ে আনতে পরিবারের পক্ষ থেকে আপ্রাণ চেষ্টা
করা হচ্ছে। জানা গেছে, পালিয়ে যাওয়ার পর বিয়ে করেছে একে অপরকে। এদিকে
পিংকির পালিয়ে যাওয়ার পর দিন থেকে নিজের বাড়ি ছেড়ে পিত্রালয়ে অবস্থান করছেন
পিংকির মা ফরিদা বেগম। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। পারিবারিক সূত্র জানা গেছে,
পিংকি পালিয়ে যাওয়ার পর পারিবারিকভাবে অশান্তি নেমে এসেছে। পুরো ঘটনার জন্য
দায়ী করা হচ্ছে ফরিদা বেগমকে। এর আগেও এলাকার মানুষ পিংকিকে বন্দি রাখতে
বারবার সাবধান করা হয়েছিল। কিন্তু কোনোটিই করেননি মা ফরিদা বেগম। এদিকে,
গতকাল বিকালে স্থানীয় উমরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুক মিয়া
মানবজমিনকে জানিয়েছেন, মোল্লাপাড়া গ্রামের শিহাবের মেয়ে পালিয়ে যাওয়ার
বিষয়টি তিনি শুনেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের ফিরিয়ে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা
চালানো হচ্ছে বলেও তিনি শুনেছেন। এদিকে, স্থানীয় মেম্বার সোনাফর আলীও একই
কথা জানিয়েছেন। তবে, ওসমানীনগর থানার ওসি মোরছালিন জানান, এ বিষয়ে এখনো কোন
অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পারিবারিক সূত্র
জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে এতো সহজেই মামলা মোকদ্দমায় যেতে চাচ্ছে না পরিবার।
বিষয়টিকে তারা সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ওসমানীনগর থানার
রাজনৈতিক নেতারাও সেটিকে ঘরোয়াভাবে সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু
গতকাল রাত পর্যন্ত তাদের সেই আহবানে সাড়া দেয়নি তাহের ও পিংকি।
No comments