চার মাস ধরে পলাতক সাংসদ আমানুর by তানভীর সোহেল ও কামনাশীষ শেখর
প্রায়
চার মাস ধরে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার মানুষের কাছে ‘নিখোঁজ’ স্থানীয়
সাংসদ আমানুর রহমান খান (রানা)। আর পুলিশের কাছে তিনি পলাতক। তিনি এলাকায়
না থাকায় সমস্যায় পড়েছে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের কয়েকটি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষ। আওয়ামী লীগের সাংসদ আমানুর রহমান সংসদের
চলতি অধিবেশনে অনুপস্থিত। সর্বশেষ গত ২০ নভেম্বর তাঁকে সংসদে দেখা গিয়েছিল।
তাঁর অবস্থান সম্পর্কে ঘনিষ্ঠজনেরাও বলতে পারছেন না। অবশ্য তাঁর পরিবারের
সদস্যরা এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলতে চান না বলে জানিয়েছেন। এদিকে
সংসদের একটি সূত্র জানিয়েছে, সাংসদ আমানুর টানা ৩৭ দিন ধরে সংসদে অনুপস্থিত
আছেন। তাঁর জন্য বরাদ্দ ন্যাম ভবনের ফ্ল্যাটে তিনি থাকছেন না। এ ছাড়া
ঘাটাইলের স মিল রোডের ৫৭৭ নম্বর বাড়ির ঠিকানায় সংসদ থেকে খোঁজ নেওয়া
হয়েছে। কিন্তু সেখানেও তিনি নেই। সাংসদ কোথায় অবস্থান করছেন, তা-ও সংসদকে
অবহিত করেননি। জানতে চাইলে জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান প্রথম আলোকে
বলেন, সাংসদ আমানুর রহমান খান সংসদে অনুপস্থিত আছেন। ব্যক্তিগত কিছু
সমস্যার কারণে তিনি সংসদে আসছেন না। তবে তাঁর অনুপস্থিতি ৯০ দিনের অনেক কম।
তাই তাঁর অবস্থান সম্পর্কে বা তাঁকে উপস্থিত হওয়ার জন্য সংসদের পক্ষ থেকে
বলার কোনো সময় আসেনি। সমস্যাটি তাঁর একান্তই নিজের। এ জন্য তাঁরা কোনো
হস্তক্ষেপ করবেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এলাকায় সাংসদ আমানুরের অনুপস্থিতিতে বেশি সমস্যায় পড়েছে তিনি যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেগুলো। এমন সমস্যায় পড়ার পর ঘাটাইল ব্রাহ্মণশাসন গণমহাবিদ্যালয়ের (জিবিজি কলেজ) পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে সরিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে আফসারী জহুরাকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন সাংসদ কমিটিতে না থাকলেও প্রশাসনিক কাজে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। সাংসদ আমানুর এখনো লোকের পাড়া সিনিয়র দাখিল মাদ্রাসা, হামিদপুর ফাজিল মাদ্রাসা ও প্যাচার আটা দাখিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি। মাদ্রাসাগুলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মাদ্রাসার শিক্ষক বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সাংসদকে বাদ দিতে পেরেছে। কিন্তু তাঁদের পক্ষে তা করা কঠিন। সাংসদের অনুমতি ছাড়া কমিটি বদলালে ভবিষ্যতে বিপদে পড়ার আশঙ্কা আছে। তিনি বলেন, সাংসদ অনুপস্থিত থাকায় প্রতিষ্ঠানের অনেক কাজই আটকে আছে। এই তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জানা গেছে, মামলাসংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কমিটি থেকে সাংসদকে বাদ দিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
হামিদপুর দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. ফয়জুল্লাহ বলেন, সাংসদ এলাকায় না থাকায় সভা করা যাচ্ছে না, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা তুলতে কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর লাগে বলে বেতন তুলতেও তাঁদের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। বিষয়টি প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
সাংসদ আমানুরের অনুপস্থিতির কারণে তাঁর এলাকার দরিদ্র লোকজন আবেদন করেও ‘ঐচ্ছিক তহবিল’-এর টাকা পাচ্ছেন না। ঘাটাইলে কর্মরত একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, এলাকার উন্নয়নকাজের জন্য সাংসদের পক্ষ থেকে কিছু অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজের প্রস্তাব করা হয়ে থাকে। উন্নয়ন তহবিল থেকে এ কাজগুলো সাধারণত আগে করা হয়। সাংসদ আরও কিছুদিন আড়ালে থাকলে এলাকাবাসী এ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হবেন।
ঘাটাইলের আওয়ামী লীগের নেতারা ও সাধারণ মানুষ আলাপকালে বলেন, অনেক কাজের সুপারিশের জন্য সাংসদকে লাগে। কিন্তু তাঁকে এখন পাওয়া যাচ্ছে না। উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বলেন, সাংসদের অনুপস্থিতিতে দলীয় কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে তিনি পলাতক থাকায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তাঁর উচিত আইনগতভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করা।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ফারুক আহমেদ ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি খুন হন। এ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামি আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সাংসদ ও তাঁর তিন ভাইয়ের নাম বলেন। সাংসদের ওই তিন ভাই হলেন টাঙ্গাইল পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান (মুক্তি), ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান (কাঁকন) ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সানিয়াত খান (বাপ্পা)। তাঁরাও পলাতক। বিভিন্ন সময়ে সাংসদ আমানুরের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন থানায় চারটি হত্যা মামলাসহ ৪৬টি মামলা হয়েছিল। এর কোনো কোনোটিতে তাঁদের চার ভাইকেও আসামি করা হয়।
টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মাহফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ফারুক হত্যা মামলার সন্দেহভাজন হিসেবে সাংসদ আমানুরকে আটকের জন্য একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তিনি পলাতক। তাঁকে আটকের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এলাকায় সাংসদ আমানুরের অনুপস্থিতিতে বেশি সমস্যায় পড়েছে তিনি যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেগুলো। এমন সমস্যায় পড়ার পর ঘাটাইল ব্রাহ্মণশাসন গণমহাবিদ্যালয়ের (জিবিজি কলেজ) পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে সরিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে আফসারী জহুরাকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন সাংসদ কমিটিতে না থাকলেও প্রশাসনিক কাজে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। সাংসদ আমানুর এখনো লোকের পাড়া সিনিয়র দাখিল মাদ্রাসা, হামিদপুর ফাজিল মাদ্রাসা ও প্যাচার আটা দাখিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি। মাদ্রাসাগুলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মাদ্রাসার শিক্ষক বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সাংসদকে বাদ দিতে পেরেছে। কিন্তু তাঁদের পক্ষে তা করা কঠিন। সাংসদের অনুমতি ছাড়া কমিটি বদলালে ভবিষ্যতে বিপদে পড়ার আশঙ্কা আছে। তিনি বলেন, সাংসদ অনুপস্থিত থাকায় প্রতিষ্ঠানের অনেক কাজই আটকে আছে। এই তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জানা গেছে, মামলাসংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কমিটি থেকে সাংসদকে বাদ দিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
হামিদপুর দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. ফয়জুল্লাহ বলেন, সাংসদ এলাকায় না থাকায় সভা করা যাচ্ছে না, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা তুলতে কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর লাগে বলে বেতন তুলতেও তাঁদের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। বিষয়টি প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
সাংসদ আমানুরের অনুপস্থিতির কারণে তাঁর এলাকার দরিদ্র লোকজন আবেদন করেও ‘ঐচ্ছিক তহবিল’-এর টাকা পাচ্ছেন না। ঘাটাইলে কর্মরত একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, এলাকার উন্নয়নকাজের জন্য সাংসদের পক্ষ থেকে কিছু অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজের প্রস্তাব করা হয়ে থাকে। উন্নয়ন তহবিল থেকে এ কাজগুলো সাধারণত আগে করা হয়। সাংসদ আরও কিছুদিন আড়ালে থাকলে এলাকাবাসী এ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হবেন।
ঘাটাইলের আওয়ামী লীগের নেতারা ও সাধারণ মানুষ আলাপকালে বলেন, অনেক কাজের সুপারিশের জন্য সাংসদকে লাগে। কিন্তু তাঁকে এখন পাওয়া যাচ্ছে না। উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বলেন, সাংসদের অনুপস্থিতিতে দলীয় কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে তিনি পলাতক থাকায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তাঁর উচিত আইনগতভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করা।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ফারুক আহমেদ ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি খুন হন। এ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামি আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সাংসদ ও তাঁর তিন ভাইয়ের নাম বলেন। সাংসদের ওই তিন ভাই হলেন টাঙ্গাইল পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান (মুক্তি), ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান (কাঁকন) ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সানিয়াত খান (বাপ্পা)। তাঁরাও পলাতক। বিভিন্ন সময়ে সাংসদ আমানুরের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন থানায় চারটি হত্যা মামলাসহ ৪৬টি মামলা হয়েছিল। এর কোনো কোনোটিতে তাঁদের চার ভাইকেও আসামি করা হয়।
টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মাহফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ফারুক হত্যা মামলার সন্দেহভাজন হিসেবে সাংসদ আমানুরকে আটকের জন্য একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তিনি পলাতক। তাঁকে আটকের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
No comments