মুখপাত্রের বিড়ম্বনা by কাফি কামাল

৬ই জানুয়ারি থেকে ১৪ই মার্চ। ৬৮ দিনে পাল্টেছে একে একে চারটি নাম। নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের অবরোধসহ দফায় দফায় হরতালের মধ্য দিয়ে চলছে ২০ দলের আন্দোলন। আর আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন বিরোধী জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনকারী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ, চার দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন-যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। তার পরিবারের সদস্যরা জানান, গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা মঙ্গলবার রাতে তাকে আটক করেছেন। এবার ৪র্থতম মুখপাত্রের দায়িত্ব পেয়েছেন বিএনপির আরেক যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু। ২০ দলের তরফে গতকাল গণমাধ্যমে বিবৃতিটি এসেছে তার স্বাক্ষরে। অবশ্য সালাহউদ্দিন আহমেদ আটক হওয়ার পর ১১ ও ১২ই মার্চ দুইদিনের জন্য মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থানকারী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। দলীয় সূত্র জানায়, নজরুল ইসলাম খান মুখপাত্র হিসেবে নয়, সিনিয়র নেতা হিসেবে জরুরি মুহূর্তে বিবৃতিত্বে স্বাক্ষর দিয়েছেন। এদিকে মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনকারী নেতারা একের পর এক আটক হলেও এ নিয়ে সঙ্কট দেখছেন না বিএনপিসহ জোটের নেতারা। তারা বলছেন, বৃহত্তর আন্দোলনে যাবার আগে বিএনপি ও জোটের তরফে নানামুখী কৌশল চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেখানে জোটের নেতারা একমত হয়েছেন বিশেষ পরিস্থিতিতে শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া যাকে দায়িত্ব দেবেন তিনিই হবেন মুখপাত্র। আর জোট ও দলের একাধিক বৈঠক এবং সংবাদ সম্মেলনে খোদ খালেদা জিয়াই বলেছেন, এ আন্দোলনে একজন জেলে গেলে আরেকজন তার হাল ধরবে। নেতৃত্বের সঙ্কট হবে না। ২০ দল সূত্র জানায়, মুখপাত্র হিসেবে ধারাবাহিকভাবে বিবেচনায় রাখা হয়েছে অন্তত ১০ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে।
বিএনপি ও ২০ দল নেতারা জানান, রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মহাসচিবই সাধারণত মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্য কোন নেতাকেও সে দায়িত্ব দেয়ার নজিরও রয়েছে বহু। এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দলটির নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের মুখপাত্র ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জোটের বৈঠক শেষে ব্রিফিং কিংবা সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিতেন তিনি। এছাড়া, দলের বা জোটের তরফে তার হয়ে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতেন বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। জোটের তরফে শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া ৫ই জানুয়ারি অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার সময় জাতীয় প্রেস ক্লাবেই আটকা পড়েছিলেন মির্জা আলমগীর। পরদিন প্রেস ক্লাবের মূল ফটক থেকে তাকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওদিকে ৩রা জানুয়ারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসুস্থ অবস্থায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তুলে নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করায় রিজভী আহমেদকে। মির্জা আলমগীরকে গ্রেপ্তারের পর হাসপাতাল থেকে সরে পড়েন রিজভী আহমেদ। নিরাপদ অবস্থান থেকে দল ও জোটের পক্ষে বিবৃতি ও কর্মসূচি ঘোষণার দায়িত্ব পালন করেন। কিছু গণমাধ্যমকে ডেকে নিরাপদ অবস্থান থেকে সাক্ষাৎকারও দেন তিনি। ৩১শে জানুয়ারি ভোররাতে বারিধারার একটি বাসা থেকে তাকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গ্রেপ্তারের পর থেকে টানা এক মাসের বেশি সময় নানা মামলায় রিমান্ডে কাটান তিনি। ওদিকে পরদিন থেকে মুখপাত্রের দায়িত্ব পান যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। তবে দায়িত্ব পাবার পর থেকে তিনি কেবল বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। নিরাপদ অবস্থান থেকে ৩৯ দিন তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। সালাহউদ্দিন আহমেদের সন্ধান করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার গাড়িচালকসহ তিনজনকে আটক করে। শেষে মঙ্গলবার রাত সোয়া ১০টার দিকে উত্তরার একটি বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সালাউদ্দিন আহমদকে আটক করে বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানান। এ সময় তার সঙ্গে তুলে নেয়া হয় দুইজন গৃহকর্মীকেও। এদিকে সালাহউদ্দিনকে তুলে নেয়ার পর ১১ ও ১২ই মার্চ জোটের তরফে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের স্বাক্ষরে বিবৃতি দেয়া হলে ও গতকাল মুখপাত্র হিসেবে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বরকত উল্লাহ বুলু। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং থেকে মুখপাত্র হিসেবে তার দায়িত্ব পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তিনিও নিরাপদ স্থানে অবস্থান করে এ দায়িত্ব পালন করছেন। উল্লেখ্য, নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের একই ইস্যুতে ২০১৩ সালে আন্দোলন শুরু করেছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল। সে সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রিজভী আহমেদকে গ্রেপ্তারের পর মে মাসে মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ও যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান। তবে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে চলমান আন্দোলনের প্রথম সপ্তাহেই ১১ই জানুয়ারি মিরপুর থেকে শামসুজ্জামান দুদু ও ১২ই জানুয়ারি গুলশান থেকে মোহাম্মদ শাহজাহানকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

No comments

Powered by Blogger.