জয়পুরহাট চিনিকলের বর্জ্যের প্রভাব- মারা যাচ্ছে মাছসহ জলজ প্রাণী

জয়পুরহাট চিনিকলের বর্জ্য এসে পড়ায় নওগাঁ জেলার
ছোট যমুনা নদীর পানি কালো হয়ে গেছে। প্রথম আলো
দূষিত পানিতে মরে যাচ্ছে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীl প্রথম আলো
নওগাঁয় ছোট যমুনা নদীর মাছসহ সব ধরনের জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি, জয়পুরহাট চিনিকলের বর্জ্য নদীতে গিয়ে পড়ায় এ ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ উঠেছে, কয়েক বছর ধরে চিনি উৎপাদন মৌসুমে জয়পুরহাট চিনিকল কর্তৃপক্ষ বর্জ্য নওগাঁর ছোট যমুনা নদীতে ছেড়ে দেওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। সমস্যা সমাধানে নওগাঁর নানা সংগঠন আন্দোলন করেছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নওগাঁ শহরের বাসিন্দারা জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিক থেকে চিনিকলের রাসায়নিক বর্জ্য নদীতে ভেসে আসতে থাকে। এতে নদীর ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার এলাকার পানি কালো হয়ে যায়। একই সঙ্গে এর প্রভাবে নদীতে ভেসে উঠতে থাকে মরা মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী। নদীপাড়ে বসবাসরত কয়েক হাজার মানুষের পানির ব্যবহারও বন্ধ হয়ে যায়। নওগাঁ শহরের পার নওগাঁ এলাকার আবদুস সোবহান জানান, পানি নষ্ট হওয়ার পর থেকে ছোট যমুনার পানির ওপর নির্ভরশীল মানুষ খাওয়ার পানির সংকটে পড়েছে। গোসল করা, কাপড় ধোয়া এমনকি সেচকাজেও এ পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও প্রাণীবিদ শরিফুল ইসলাম খান বলেন, বর্জ্যের কারণে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে। এতে ধীরে ধীরে ছোট যমুনা নদীতে শৈবাল, শামুক, কুঁচে, মাছ ও জলজ জীব টিকে থাকার সামগ্রিক পরিবেশ হারাবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নওগাঁর সাধারণ সম্পাদক মহসিন রেজা বলেন, দূষণের কারণে এলাকাজুড়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।  এদিকে এভাবে বর্জ্য ফেলে নদীদূষণের প্রতিবাদে নওগাঁর সচেতন মহল কয়েকবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। গত বছর জেলা প্রশাসন চিনিকল কর্তৃপক্ষকে আইনগত নোটিশ জারি করে। নওগাঁ একুশে উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক আইনজীবী ডি এম আবদুল বারী বলেন, গত বছর চিনিকল কর্তৃপক্ষ বিষাক্ত বর্জ্য শোধন করে পানিতে ফেলবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু সরকার কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ওই বর্জ্য শোধন না করে নদীর পানিতে ফেলা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম বলেন, চিনিকলের বর্জ্য নিজস্ব খালে রেখে শুধু পানি নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফেলে দেওয়া পানি বিষাক্ত নয়। এতে করে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক এনামুল হক জানান, ছোট যমুনার পানিদূষণ ও জলজ প্রাণী মারা যাওয়ার ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে জয়পুরহাট চিনিকলের বর্জ্যের কারণে এ ঘটনা ঘটছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসন ও চিনিকল কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। তবে পানিদূষণের মাত্রা নিরূপণের জন্য ইতিমধ্যে জেলা মৎস্য বিভাগ নদীর তিনটি স্থান থেকে পানি সংগ্রহ করেছে।

No comments

Powered by Blogger.