নিউ জার্সিতে আটকের পর মুক্ত কল্পনা আক্তার
রানা
প্লাজা দুর্গতদের সহায়তায় তহবিল গঠনে প্রচারণা চালাতে যুক্তরাষ্ট্র
গিয়েছিলেন সুপরিচিত শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তার। শীর্ষ দুই ক্রেতা
প্রতিষ্ঠান চিলড্রেনস প্লেস ও বেনেটনকে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির শিকারদের
জন্য অনুদান দিতে চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র যান তিনি। তবে
বৃহস্পতিবার নিউজার্সির সিককাসে চিলড্রেনস প্লেস সদর দপ্তরের সামনে
কল্পনাসহ ২৭ প্রতিবাদকারী গ্রেপ্তার হন। প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ নির্বাহীর
কাছে একটি চিঠি দিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন তারা। রানা প্লাজা ধসে পায়ের
আঙুল হারানো শ্রমিক মাহিনুর রহমান কল্পনার সঙ্গে ছিলেন। চিঠিটা হস্তান্তর
করার কথা ছিল মাহিনুরের। কল্পনা জানান, পুলিশ আমাদেরকে ভবন ছেড়ে চলে যেতে
বলে। আমরা যাওয়ার জন্য লিফটের দিকে এগুচ্ছিলাম। এসময় চিলড্রেনস প্লেসের
একজন পুলিশকে বলে যে তারা অভিযোগ দায়ের করতে চায়। এরপর আমাদের গ্রেপ্তার
করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে। আটকের দু’ঘণ্টা
পর ছেড়ে দেয়া হয় কল্পনাকে। ২৪শে মার্চ নিউ জার্সির আদালতে মামলার তারিখ
নির্ধারিত হয়েছে। বৃটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ
সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার
যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসে অপ্রত্যাশিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। তিনি
গ্রেপ্তার নিয়ে বিমর্ষ। তবে এর থেকেও বেশি মর্মাহত বাংলাদেশী মিডিয়ায় তাকে
নিয়ে নেতিবাচক রিপোর্ট নিয়ে। বাংলাদেশের তৈরী পোশাক বর্জন করতে তিনি
মার্কিনিদের অনুরোধ করছেন বলে রিপোর্ট এসেছে। এসব রিপোর্ট নিয়ে উদ্বেগ
জানিয়েছেন কল্পনা। বাংলাদেশের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রতিবেদনের বরাত
দিয়ে বলা হয়, গার্মেন্ট শিল্পের শীর্ষ একজন নির্বাহী বলেছেন, কল্পনা
গার্মেন্ট খাতকে ধ্বংস করে দিচ্ছে আর সে বিদেশীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে এ
শিল্পের বিরুদ্ধে তা ব্যবহার করছে। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কল্পনা বলেন,
এগুলো স্রেফ মিথ্যা। তিনি আরও বলেন এসব চাকরিগুলো জরুরি। আমার স্পষ্ট
বার্তা হলো: আমরা এসব চাকরি চাই কিন্তু আমরা এগুলো চাই সম্মানের সঙ্গে।
বর্জনের কথা বলার কোন যুক্তি নেই। যুক্তরাষ্ট্রে কল্পনা আক্তারের এ সফরের
অর্থায়ন ও আয়োজন করে অলাভজনক অ্যাডভোকেসি গ্রুপ- ইন্টারন্যাশনাল লেবার
রাইটস ফোরাম এবং ইউনাইটেড স্টুডেন্টস এগেইনস্ট সুয়েটশপস যাদের ১৫০টির বেশি
কলেজ ক্যাম্পাসে শাখা রয়েছে। রানা প্লাজা ধসের আগে ওই ভবনের একটি কারখানার
বড় ক্রেতা ছিল চিলড্রেনস প্লেস। এ বিষয়টি উল্লেখ করে কল্পনা ও ওই দুই গ্রুপ
প্রতিষ্ঠানটিকে রানা প্লাজা ডোনার’স ট্রাস্ট ফান্ডে ৮০ লাখ ডলার অনুদানের
আহ্বান জানায়। এ পর্যন্ত চিলড্রেনস প্লেস ৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার অনুদান
দিয়েছে। বিভিন্ন নথিপত্রে দেখা গেছে, রানা প্লাজা ভবনে অবস্থিত নিউ ওয়েভ
কারখানা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার পাউন্ডেরও বেশি পোশাকের শিপমেন্ট নিয়েছে
চিলড্রেনস প্লেস। ভবন ধসের ১৯ দিন আগে বড় একটি শিপমেন্ট পৌঁছায় জর্জিয়াতে।
চিলড্রেনস প্লেস বলছে, ভবন ধসের সময় তাদের কোন কাজ ওই ভবনে চলছিল না।
শনিবার চিলড্রেনস প্লেসের কাছ থেকে মন্তব্য চেয়ে জবাব পাওয়া যায়নি বলে
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়। মামলার প্রসঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল লেবার
রাইটস ফোরামের মুখপাত্র লিয়ানা ফক্সভগ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ২৭ জনের
প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনা হয়েছে। কারো বিরুদ্ধেই অভিযোগ বাতিল করা
হয়নি। অভিযোগ খারিজ করতে চিলড্রেনস প্লেসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ওয়ার্কার
অ্যাডভোকেটদের অনুরোধ জানিয়েছেন লিয়ানা ফক্সভগ।
No comments