গাছের নিচে পাঠদান

ঝিনাইদহের জাড়গ্রাম-রাউতাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের গাছের
নিচে পড়ানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
বিদ্যালয়ের মাঠের আমগাছের নিচে ক্লাস চলছে তৃতীয় শ্রেণির। পাশেই জামগাছের নিচে বসেছে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করছে। যেকোনো একটি ক্লাস শেষ হলেই সেখানে বসবে তারা। এভাবেই প্রায় দুই বছর ধরে ক্লাস চলছে ঝিনাইদহের জাড়গ্রাম-রাউতাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়টির ছয়টি কক্ষের মধ্যে চারটিকে প্রশাসন পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। বাকি দুটিও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবু শিক্ষকেরা ঝুঁকি নিয়ে একটি কক্ষে দাপ্তরিক কাজ চালাচ্ছেন। আরেকটি কক্ষে মাঝেমধ্যে ক্লাস নেওয়া হয়। এভাবে কোনোমতে প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে সচল থাকলেও সামনের বর্ষা মৌসুমে সেটি চালু রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন শিক্ষকেরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাড়গ্রাম-রাউতাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এলাকার শিক্ষানুরাগীদের উদ্যোগে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১০২ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে সে সময় পার্শ্ববর্তী সাত-আট গ্রামের শিশুরা পড়ালেখা করত। বর্তমানে জাড়গ্রাম, রাউতাইল, মথুরাপুর ও গোয়ালবাড়িয়া গ্রামের শিশুরা এখানে পড়ালেখা করে।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সাগর হোসেন বলে, গাছের নিচে মাদুর বিছিয়ে এভাবে ক্লাস করতে ভালো লাগে না। তার পরও অনেক সময় ছায়াঘেরা জায়গার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এক ক্লাস শেষ হলে আরেক ক্লাসের শিক্ষার্থীরা বসছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকিরুল ইসলাম বলেন, তিনি এই বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন ২০১৩ সালের ২ মার্চ। এখানে এসেই দেখেন বিদ্যালয়ের ভবনগুলো বেহাল। ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়েছে ৩০-৪০ বছর আগে। এরপর আর সেগুলোর কোনো সংস্কার হয়নি। তিনি আরও বলেন, টিনশেড ভবনটি ও পূর্ব পাশের পাকা ভবনটি ২০১৩ সালের ২ জুন জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সিলগালা করা হয়। বাকি থাকে দুই কক্ষের একটি ভবন, যে ভবনটির ছাদের অনেক স্থানে ফাটল ধরেছে। ইট-বালু খুলে খুলে পড়ছে। সেটিও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
জাকিরুল ইসলাম বলেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে তিন শতাধিক শিশু পড়ালেখা করছে। দুই পালায় বিদ্যালয় পরিচালনা করলেও তাঁদের তিনটি ক্লাসরুম প্রয়োজন। সেখানে একটিও নেই। তাই গাছের নিচে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। তবে আগামী বর্ষা মৌসুমে কীভাবে ক্লাস চালাবেন, তা নিয়ে এখন তাঁরা চিন্তায় আছেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে তাঁদের বিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে ঢাকার প্রধান কার্যালয়কে জানানো হয়েছে। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের প্রয়োজন বলে ঢাকায় জানানো হয়েছিল। তবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিবপদ দে বলেন, বিদ্যালয়ের অবস্থা খারাপ দেখে তাঁরা নতুন ভবন নির্মাণের জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। আশা করছেন, দ্রুত এখানে নতুন ভবন হবে।

No comments

Powered by Blogger.