রাষ্ট্র যদি ব্যর্থ হয় by মেজর জেনারেল (অবঃ) মো. মনিরুজ্জামান

রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব নাগরিকের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদান করা। এ ব্যাপারে রাষ্ট্র যদি ব্যর্থ হয় তাহলে নাগরিকের পক্ষ থেকে অন্য কারও কাছে যাওয়ার আর কোন স্থান থাকে না। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হওয়ার পর তাকে উদ্ধারের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে এর একটা আশু সমাধান বের করতে হবে। এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য যদি জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেয়া যায় তাহলে এ সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে জনমনে হয়তো স্বস্তি ফিরে আসতে পারবে। গতকাল বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন ইন্সটিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. মনিরুজ্জামান। বিবিসি তার কাছে জানতে চায়- নিখোঁজ সালাহউদ্দিন আহমেদের পরিবার দাবি করছে, গোয়েন্দা পুলিশের পরিচয় দিয়ে কিছু লোক তাকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। আর পুলিশের চারটি বিভাগ আদালতে বলেছে, তারা তাকে গ্রেপ্তার বা আটক করে নি। তাহলে একজন মানুষ স্রেফ হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে? মানে সালাহউদ্দিন আহমেদের পরিবারকে এটা ঠিক কি বার্তা দেবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুজ্জামান বলেন, নিশ্চয়ই এটা সকলের জন্য উদ্বেগের বিষয়। সঠিক উত্তর এখন পর্যন্ত তার পরিবারের কাছে বা জনসমক্ষে উপস্থিত হয় নি। যেহেতু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতের কাছে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে সেটাকে আপাতত সত্যি বলে ধরে নিতে হবে। আদালতের কাছে যে তথ্য পেশ করা হয় সেটা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। তবে এখানে যে কথাটা বলা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে, যেহেতু শহর থেকে একজন পরিচিত ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, কাজেই এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ তথ্য জনসমক্ষে উপস্থাপন করাটাও যথেষ্ট জরুরি বিষয়। কারণ, জনমনে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জনমন থেকে এ ধরনের প্রশ্ন যাতে খুব শিগগিরই দূর করা যায় এবং জনমনে একটা স্বস্তি ফিরে আসে সেজন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে একটা বিশেষ উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখা দিচ্ছে এ কারণে যে, তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, যারা তাকে ধরে নিয়ে গেছেন বলে দাবি করছেন তারা ডিবির পরিচয়ে ধরে নিয়ে গেছেন। তবে ডিবি বা অন্যান্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তাদের কাছে এ ধরনের কোন তথ্য নাই। যদি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাকে কোন ভুল পরিচয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে এখানে বিশেষ উদ্বেগের কারণ হচ্ছে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে যদি অন্য কোন গোষ্ঠী বা কোন দল বা কোন ব্যক্তি এ ধরনের কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত হয়ে যায় তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে আরও অবনতি হবে সেটা বলার কোন সন্দেহ থাকে না। এখানে বিশেষ করে আমি বলতে চাই যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বিশেষ দায়িত্ব আছে যে, তাদের পরিচয়ে যেন অন্য কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেন কাজ করতে না পারে সে ধরনের একটা পরিবেশ নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে বলতে হবে, রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকের নিরাপত্তা প্রদান করা। যে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি এ ধরনের কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত হয়ে যায় যেটা বেআইনি বলে সম্পূর্ণভাবে প্রমাণিত আছে। সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে এ ধরনের ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে খুঁজে বের করা। যাতে এ ধরনের কোন বেআইনি কার্যকলাপের সঙ্গে কেউ জড়িত হতে না পারে। এবং সর্বোপরি আবারও বলতে হবে যে, রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে তার নাগরিকের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদান করা এবং এ ব্যাপারে রাষ্ট্র যদি ব্যর্থ হয় তাহলে নাগরিকের পক্ষ থেকে অন্য কারও কাছে যাওয়ার আর কোন স্থান থাকে না। মনিরুজ্জামান বলেন, এটার ব্যাপারে বলার কোন অবকাশ নাই যে, এ ধরনের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যারা নিয়োজিত আছেন, তাদেরই প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে, এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ তথ্য উদঘাটন করে একটা সুরাহা করা। যদি কোন ব্যক্তি যে কানভাবে নিখোঁজ হয়ে যান না কেন তাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সম্পূর্ণভাবে বর্তায়। এখানে আরও দেখতে হবে যে, এর আগেও আমরা দেখেছি এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে যেখানে তাদের পোশাক পরে বা তাদের পরিচয় দিয়ে এ ধরনের বেআইনি কার্যকলাপের সঙ্গে কেউ কেউ জড়িত হয়েছেন। এ ধরনের কার্যকলাপ যদি হয়ে থাকে সেখানেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজন হবে এ ধরনের ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে খুঁজে বের করে তাদের আইনের মুখোমুখি করা। বিবিসি তার কাছে জানতে চায়- অনেকেরই হয়তো এ ঘটনার কারণে মাহমুদুর রহমান মান্নার ক্ষেত্রে যা হয়েছিল সেটার কথা মনে পড়ে যাবে। তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অবশ্য হাজির করা হয়েছিল আদালতে। কিন্তু তখন বলা হয়েছিল যে, মাঝখানে ২০ ঘণ্টার একটা হিসেবের গরমিল ছিল। কিন্তু সালাহউদ্দিন আহমেদের ক্ষেত্রে চারদিন পার হয়ে গেছে। আপনার কাছে এটা কোন বিশেষ অর্থ বা উদ্বেগের কারণ বলে মনে হচ্ছে কিনা? জবাবে মনিরুজ্জামান বলেন, সন্দেহের দৃষ্টিটা বারবার এ ধরনের ক্ষেত্রে পড়ছে এ কারণে যে, আপনি যে কথাটা উল্লেখ করলেন, সেখানে ১৮ ঘণ্টা বা ২০ ঘণ্টার হিসাব কেউ কোন সময় পরিষ্কারভাবে দিতে পারেনি। অর্থাৎ দেখা গেছে যে, ২০ ঘণ্টার জন্য মান্না সাহেব যেখানে ছিলেন, কার কাছে ছিলেন, কি পরিস্থিতিতে ছিলেন, সে ব্যাপারে কোন ব্যাখ্যা জনসমক্ষে এখনও কেউ পষ্কিারভাবে দিতে পারে নাই। এ কারণে জনমনে নানা ধরনের প্রশ্ন বা সন্দেহ দেখা দেয়। একইভাবে এই ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, সময়টা যে কালক্ষেপণ হয়ে গেছে সেটা বেশ দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে অনেকের মনে সন্দেহ দেখা দিচ্ছে যে আদৌ তার যে নিরাপত্তা থাকার দরকার সে নিরাপত্তা  বর্তমানে রয়েছে কিনা? এজন্য আমি মনে করছি যে, তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে জনমনেও নানা ধরনের সন্দেহ দেখা দিচ্ছে বা উদ্বেগের কারণ হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রেই বলতে হবে যত শিগগির সম্ভব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এর একটা আশু সমাধান করা উচিত, সুরাহা করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.