জনপ্রতিনিধিদের ওপর মামলার খড়গ by শামছুল ইসলাম
তৃণমূলের
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন দমনে সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভার বিপুল
ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক মাসে বিরোধী
জোট সমর্থিত অর্ধশত মেয়র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানদের
সাময়িক বরখাস্ত, গ্রেফতার এবং কারো কারো বিরুদ্ধে মামলার চার্জশিট দেওয়া
হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই গ্রেফতারের ভয়ে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন অনেক
জনপ্রতিনিধি। এ কারণে স্থবিরতা নেমে এসেছে তৃণমূলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে।
স্থানীয় সরকারের অধীনে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নাগরিকেরা। এ অবস্থা
চলতে থাকলে আরো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশিষ্টজনরা।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, যদি কেউ সুনির্দিষ্ট মামলায় অভিযুক্ত হয় সে ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বরখস্ত করা অত্যন্ত নিন্দনীয়। মন্ত্রণালয় এককভাবে এটি করতে পারে না। এটি গণতন্ত্র বিকাশের অন্তরায়। জনপ্রতিনিধিদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া উচিত।
২০১৩ সালের জুনে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন ও গত বছরে ৬ ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সরকারবিরোধী জোট বিপুল সাফল্য লাভ করে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত পৌরসভার বেশ ক’টিতে তারা বিজয়ী হন। বিশেষ করে সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে বিরোধীজোটের বিপুল বিজয় ঘটে। বর্তমানে দুই ডিসিসি ও রংপুর ছাড়া দেশের সব ক’টি সিটি করপোরেশনেই বিএনপি-জামায়াতের নেতারা নির্বাচিত হন। বেশ ক’টি পৌরসভায় মেয়র পদেও রয়েছেন তারা। অন্য দিকে সাড়ে চার শতাধিক উপজেলার মধ্যে ২০ দলীয় জোট সমর্থিত চেয়ারম্যানের সংখ্যা প্রায় ২০০ এবং ভাইস চেয়ারম্যান তার দ্বিগুণ।
সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়রদের একের পর এক বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। গত রোববার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিপুল ভোটে নির্বাচিত মেয়র এম এ মান্নানের স্থলে দায়িত্ব দেয়া হয় আওয়ামী লীগ নেতা প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে। এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি মেয়র মান্নানকে ঢাকার বাসা থেকে গ্রেফতার করে গাজীপুর জেলা পুলিশ। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লাধিক ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। ৪ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলার ঘটনায় তাকে প্রধান আসামি করে মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে গাড়ি ভাঙচুর ও ৯ নভেম্বর সরকারি কাজে বাধা দান, পুলিশ সদস্যদের লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল দিয়ে আহত করার অভিযোগে মামলা করা হয়।
গত ৭ জানুয়ারি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করে বিএনপি নেতা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার স্থলে কাজ করছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হক।
নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি করে রাজশাহীর সিটি করপোরেশেনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে বরখাস্তের করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা, বিস্ফোরক আইনে, রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে মদদ ও নির্দেশনা দেয়ার অভিযোগে রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় ১৬টি মামলা হয়েছে। এ জন্য তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। রাজশাহী মহানগর পুলিশ মামলার তদন্তে প্রভাব পড়তে পারে বলে তার সাময়িক বরখাস্তের আবেদন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। অসুস্থতার কারণে ঢাকায় চিকিৎসাধীন খুলনার মেয়র মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে রয়েছে দুইটি মামলা। সেসব মামলায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে।
গত বছরের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে দিনাজপুরের দ্ইুজন উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১১ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ২১টি মামলায় পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করায় তাদের বরখাস্ত করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। এসব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি জামায়াত ও বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা। তাদের সবার বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র পেশ করেছেন।
মামলার অভিযোগের সূত্র ধরে গ্রেফতার ও সাময়িক বরখাস্তের শিকার হচ্ছে জনপ্রতিনিধিরা। গত বছরের ১৮ নভেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান আবু সোলায়মান সরকার সাজুকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
গত ১ অক্টোবর সুন্দরগঞ্জ পৌর মেয়র জামায়াত নেতা নুরুন্নবী প্রামাণিক সাজুকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তাকে ১১টি নাশকতার ঘটনার মামলার আসামি করা হয়। তিনি জামিনের জন্য আদালতে হাজির হলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতেও পাঠান। গত ২ অক্টোবর গাইবান্ধা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল করিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর বগুড়ার শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান দব্বির রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তিনি উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে করা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ চৌধুরীকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
১১ জুন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবু সাঈদ চাঁদকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
সাময়িক বরখাস্ত ও নিত্যনতুন মামলার পাশাপাশি এসব জনপ্রতিনিধিকে একের পর এক গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়াও অব্যাহত আছে। এসব মেয়র ও চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান দীর্ঘ দিন কারাগারে কাটিয়ে কেউ কেউ উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভে সমর্থ হন।
গত ২০ অক্টোবর সাতীরার কালীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের সহসভাপতি আব্দুর রউফকে শহরের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী কার্যকলাপ ও সহিংসতার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ অন্তত পাঁচটি মামলা করে। এ ছাড়া লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ মাস্টার আদালতে একটি মামলার হাজিরা দিতে গিয়ে আটক হন। তার বিরুদ্ধে দোকানপাট ভাঙচুরের অভিযোগে একটি মামলা করে আওয়ামী লীগ ও কালীগঞ্জ থানা পুলিশ। গত ২৭ মার্চ রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কাছে শপথ নিতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারি থানার উপজেলা চেয়্যারম্যান আবদুর রহমান আবদার, ভাইস চেয়ারম্যান মো: শাহজাহান, বোদা উপজেলা চেয়ারম্যান শফিউল আলম শফি, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানি ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর বাসেত সাজ্জান।
গত ২৪ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান মোরাদ আলী নাশকতার একটি মামলায় আদালতে জামিন আবেদন করতে গেলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে তিনি এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন নেন। মেয়াদ শেষে তিনি মেহেরপুর নি¤œ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে।
২২ এপ্রিল ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আব্দুল হাই ঝিনাইদহের আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তার বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পাঁচটি মামলা করে পুলিশ।
এভাবে দেশের বেশির ভাগ বিজয়ী বিরোধীজোট সমর্থিত মেয়র ও চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা অসংখ্য মামলা করেছে। এসব মামলায় তাদের আইনি লড়াই করতে থানা-আদালত-কারাগারের দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, যদি কেউ সুনির্দিষ্ট মামলায় অভিযুক্ত হয় সে ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বরখস্ত করা অত্যন্ত নিন্দনীয়। মন্ত্রণালয় এককভাবে এটি করতে পারে না। এটি গণতন্ত্র বিকাশের অন্তরায়। জনপ্রতিনিধিদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া উচিত।
২০১৩ সালের জুনে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন ও গত বছরে ৬ ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সরকারবিরোধী জোট বিপুল সাফল্য লাভ করে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত পৌরসভার বেশ ক’টিতে তারা বিজয়ী হন। বিশেষ করে সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে বিরোধীজোটের বিপুল বিজয় ঘটে। বর্তমানে দুই ডিসিসি ও রংপুর ছাড়া দেশের সব ক’টি সিটি করপোরেশনেই বিএনপি-জামায়াতের নেতারা নির্বাচিত হন। বেশ ক’টি পৌরসভায় মেয়র পদেও রয়েছেন তারা। অন্য দিকে সাড়ে চার শতাধিক উপজেলার মধ্যে ২০ দলীয় জোট সমর্থিত চেয়ারম্যানের সংখ্যা প্রায় ২০০ এবং ভাইস চেয়ারম্যান তার দ্বিগুণ।
সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়রদের একের পর এক বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। গত রোববার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিপুল ভোটে নির্বাচিত মেয়র এম এ মান্নানের স্থলে দায়িত্ব দেয়া হয় আওয়ামী লীগ নেতা প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে। এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি মেয়র মান্নানকে ঢাকার বাসা থেকে গ্রেফতার করে গাজীপুর জেলা পুলিশ। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লাধিক ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। ৪ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলার ঘটনায় তাকে প্রধান আসামি করে মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে গাড়ি ভাঙচুর ও ৯ নভেম্বর সরকারি কাজে বাধা দান, পুলিশ সদস্যদের লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল দিয়ে আহত করার অভিযোগে মামলা করা হয়।
গত ৭ জানুয়ারি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করে বিএনপি নেতা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার স্থলে কাজ করছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হক।
নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি করে রাজশাহীর সিটি করপোরেশেনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে বরখাস্তের করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা, বিস্ফোরক আইনে, রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে মদদ ও নির্দেশনা দেয়ার অভিযোগে রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় ১৬টি মামলা হয়েছে। এ জন্য তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। রাজশাহী মহানগর পুলিশ মামলার তদন্তে প্রভাব পড়তে পারে বলে তার সাময়িক বরখাস্তের আবেদন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। অসুস্থতার কারণে ঢাকায় চিকিৎসাধীন খুলনার মেয়র মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে রয়েছে দুইটি মামলা। সেসব মামলায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে।
গত বছরের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে দিনাজপুরের দ্ইুজন উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১১ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ২১টি মামলায় পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করায় তাদের বরখাস্ত করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। এসব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি জামায়াত ও বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা। তাদের সবার বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র পেশ করেছেন।
মামলার অভিযোগের সূত্র ধরে গ্রেফতার ও সাময়িক বরখাস্তের শিকার হচ্ছে জনপ্রতিনিধিরা। গত বছরের ১৮ নভেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান আবু সোলায়মান সরকার সাজুকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
গত ১ অক্টোবর সুন্দরগঞ্জ পৌর মেয়র জামায়াত নেতা নুরুন্নবী প্রামাণিক সাজুকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তাকে ১১টি নাশকতার ঘটনার মামলার আসামি করা হয়। তিনি জামিনের জন্য আদালতে হাজির হলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতেও পাঠান। গত ২ অক্টোবর গাইবান্ধা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল করিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর বগুড়ার শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান দব্বির রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তিনি উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে করা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ চৌধুরীকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
১১ জুন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবু সাঈদ চাঁদকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
সাময়িক বরখাস্ত ও নিত্যনতুন মামলার পাশাপাশি এসব জনপ্রতিনিধিকে একের পর এক গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়াও অব্যাহত আছে। এসব মেয়র ও চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান দীর্ঘ দিন কারাগারে কাটিয়ে কেউ কেউ উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভে সমর্থ হন।
গত ২০ অক্টোবর সাতীরার কালীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের সহসভাপতি আব্দুর রউফকে শহরের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী কার্যকলাপ ও সহিংসতার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ অন্তত পাঁচটি মামলা করে। এ ছাড়া লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ মাস্টার আদালতে একটি মামলার হাজিরা দিতে গিয়ে আটক হন। তার বিরুদ্ধে দোকানপাট ভাঙচুরের অভিযোগে একটি মামলা করে আওয়ামী লীগ ও কালীগঞ্জ থানা পুলিশ। গত ২৭ মার্চ রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কাছে শপথ নিতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারি থানার উপজেলা চেয়্যারম্যান আবদুর রহমান আবদার, ভাইস চেয়ারম্যান মো: শাহজাহান, বোদা উপজেলা চেয়ারম্যান শফিউল আলম শফি, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানি ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর বাসেত সাজ্জান।
গত ২৪ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান মোরাদ আলী নাশকতার একটি মামলায় আদালতে জামিন আবেদন করতে গেলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে তিনি এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন নেন। মেয়াদ শেষে তিনি মেহেরপুর নি¤œ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে।
২২ এপ্রিল ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আব্দুল হাই ঝিনাইদহের আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তার বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পাঁচটি মামলা করে পুলিশ।
এভাবে দেশের বেশির ভাগ বিজয়ী বিরোধীজোট সমর্থিত মেয়র ও চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা অসংখ্য মামলা করেছে। এসব মামলায় তাদের আইনি লড়াই করতে থানা-আদালত-কারাগারের দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে।
No comments