দেশ চলছে ফ্রি স্টাইলে : গণপূর্তমন্ত্রী

রাজধানীর কয়েকটি আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ক্ষুব্ধ গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, এখন ফ্রি স্টাইলে দেশ চলছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না। রাজউক বাধা দিচ্ছে না, রাজউকের জনবল আছে, সবই আছে। বেতনও নিচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি কর্তব্য পালন করতে না পারেন, যারা দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেননি, তাদের রেখে কোনো লাভ নেই।
মন্ত্রী বলেন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাজউক স্বাধীন বডি। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় বোর্ডে। আমি নিজেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। তবে অমি চেষ্টা করছি, যাতে এর সুরাহা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও তাতে বাধা না দেওয়ায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পূর্বাচল আবাসিক এলাকায় ইউনিভার্সিটি, হোটেল নয়। সব আলাদা থাকতে হবে। তিনি বলেন, পূর্বাচলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ২০ একর জমি দিয়েছি, চীনের অর্থায়নে সেখানে পণ্য প্রদর্শনের জন্য।
গুলশান-বনানী-বারিধারা বাণিজ্যিক এলাকা নয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকার বিভিন্ন সময়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। যাদের থাকার জন্য জায়গা দিয়েছি, তারা ব্যাংক ভাড়া দিয়েছেন, রেস্টুরেন্ট করে দিয়েছেন বা হোটেল করে দিয়েছেন। এ জিনিসটা কোনোদিন অনুমোদন দেয়া ঠিক হয়নি। বিভিন্ন সরকার গেছে আসছে, এ জিনিসটা বাধ্যতামূলক করতে পারেনি। আমরাও সবাই সাধু-সন্যাসী নই। রোববার সচিবালয় গণমাধ্যম কেন্দ্রে সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মন্ত্রী বলেন, গুলশানে গলিতে গলিতে বেকারি শপ, এই দোকান, ওই দোকান- এগুলোর জন্য রাজউকের সঙ্গে বসেছি। লেকশো’র হোটেল কত বছর হয়ে গেল, এটি অবৈধ। এগুলোর বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পদপে নিতে হবে। আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবনের বিষয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে না কেন-সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যখন ভাঙতে যাবেন, তখন মালিকরা আদালতের আশ্রয় নেবেন। অনেক মামলা আছে। আমরা সবার সহায়তা চাই। আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নকশা অনুযায়ী না হলে সুন্দর আবাসিক এলাকা হবে না।
আগামী ১ জুলাই থেকে পূর্বাচল প্রকল্পে নকশা অনুমোদন দেয়া শুরু হবে - এ তথ্য জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, পূর্বাচল গ্রীন সিটি, স্মার্ট সিটি হবে। সেখানে পৃথক স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে মানবমল চলে যাবে। এখানে এসটিপি-ইটিপি হবে। আর সে পানি গ্রীন করার কাজে লাগাবো। তিনি জানান, এ এলাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও পৃথক পাওয়ার স্টেশন রাখা হবে। অতীতে যারা নগর পরিকল্পনা করেছেন, তাদের ভিশন ন্যারো ছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তারা মনে করেননি, ঢাকা এতো বড় হবে। ঢাকা এখন তুরাগ নদী, কেরাণীগঞ্জ সীমানা পার হয়ে গেছে।
মন্ত্রী বলেন, ঢাকা, চট্রগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, কক্সবাজার বা অন্যান্য শহরে স্যুয়ারেজ সিস্টেমের জন্য পৃথক লাইন নাই। যার জন্য ঢাকা শহরের বুড়িগঙ্গা দূষিত হয়ে গেছে। এভাবে অন্যান্য নদীও দূষিত হয়ে যাচ্ছে। এজন্য রাজউককে নির্দেশ দিয়েছি, নকশা অনুমোদনের আগে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) করতে হবে। তিনি বলেন, বেসরকারি ডেভেলপাররা যারা বিনিয়োগ করছেন, পৃথক স্যুয়ারেজ লাইন, এসটিপি, ইটিপি অবশ্যই করতে হবে। না হলে কোনো প্ল্যান আমাদের কাছে পাবে না।
আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে সচিবালয় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে এর কাজ শুরু হবে। মন্ত্রী বলেন, সেখানে গ্রীন বিল্ডিং হবে। প্রত্যেক জায়গায় এয়ারকন্ডিশন হবে না। গ্রীন বিল্ডিং কনসেপ্টে বিল্ডিং করতে যাচ্ছি। সেটা ভালো ভবন হবে বলে মনে করি। এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, উত্তরায় কাজ চলছে। এছাড়া মালয়েশিয়ার অর্থায়নে ৮ হাজার ৪০০ অ্যাপার্টমেন্ট হবে। আমরা সহনীয় মূল্যে জনগণকে অ্যাপার্টমেন্ট দেওয়ার চিন্তা করছি। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, হাউজিংয়ের পেছনে ইন্ডাস্ট্রি জড়িত আছে। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি যে, গরিব মানুষ ঠিকই ইনস্টলমেন্ট দেবেন। হলমার্ক ডেসটিনির মতো কেলেঙ্কারি হবে না। গরিব ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং মধ্যবিত্ত পরিবার ব্যাংকের টাকা মারে না। আমি মনে করি, সরকারের এদিকে এগিয়ে আসা উচিত। মন্ত্রী হিসেবে আমি গ্যারান্টি দিতে পারি, এই টাকা কোনো দিন মার যাবে না।
নতুন সিটি যেগুলো হচ্ছে সেগুলো সুন্দর করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন,চট্রগ্রাম শহরে সাগরের পাড়ে, পাহাড় ও কর্ণফুলি নদীর পাশে ছোট শহর গড়ে উঠবে বলেও জানান মন্ত্রী।
ড্যাপের একটা অংশ শেষ করেছি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নতুন ড্যাপ শুরু হবে। মন্ত্রিপরিষদের একটা কমিটি আছে। এতে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, হাতিরঝিল ঢাকা শহরের আইকন হলেও এখনও দূষিত। বিএসআরএফ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি তালুকদার হারুনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.