একজন জয়গুনের কথা by পান্না বালা

নিজ বাড়ির উঠানে সহকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছেন জয়গুন বেগম
২৯ বছর আগে বাল্যবিবাহের শিকার হন। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর অত্যাচার সইতে হয়। একমাত্র ছেলে আত্মহত্যা করে। রাজনীতির কারণে প্রতিপক্ষ পুড়িয়ে দেয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তবু হার মানেননি ফরিদপুরের জয়গুন বেগম (৪৩)।
জয়গুন বেগম ২০১২ সালে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯, ১০ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। শিক্ষার্জনের জন্য ভর্তি হয়েছেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রশিক্ষণ নিয়ে মাইক্রোবাস চালানো শিখেছেন। নারী ঠিকাদার হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জয়গুন বাল্যবিবাহ রোধে এলাকায় কাজ করছেন। জয়গুন অম্বিকাপুর ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের বাসিন্দা। ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয় সুলতানপুর গ্রামের লোকমান প্রামাণিকের সঙ্গে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংসারের বিষয়টা বুঝে আসে জয়গুনের। তিনি বুঝতে পারেন স্বামী সচ্চরিত্রের নন। বিষয়টি বুঝে ওঠার পর জয়গুনের ওপর শুরু হয় অত্যাচার। স্বামীর নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন জয়গুন বেগম। বলেন, ‘নির্যাতনের কথা গ্রামের সবাই জানে। কিন্তু আমি স্বামীকে ছেড়ে যাইনি। আমাদের সমাজ স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন নারীকে সুনজরে দেখে না।’
১৯৯৬ সালে জয়গুন ক্ষুদ্র উদ্যোগ উন্নয়ন প্রকল্প (এসইডিপি) থেকে ৭৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ির পাশে রুমা পোলট্রি ফার্ম নামের একটি মুরগির খামার দেন। সাড়ে চার হাজার মুরগির বাচ্চা দিয়ে তিনি শুরু করেন। তারপর আর তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
জয়গুনের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে রুমার বিয়ে হয়ে গেছে। আরেক মেয়ে ঝুমা পড়াশোনা করছে স্থানীয় একটি কলেজে। ছেলে রুহুল আমিন ওরফে আপন ২০০৮ সালে বড় বোন শাসন করায় অভিমান করে আত্মহত্যা করে। এ শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ২০০৯ সালের শুরুর দিকে কোমরপুরে তাঁর মুরগির খামারটি পুড়িয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা।
জয়গুন বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ইউপি চেয়ারম্যান হওয়া। সমাজ ও মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। আমি বুঝতে পেরেছি, শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এ কারণেই আমি পড়াশোনা শুরু করেছি।’
রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলেও বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের কর্মকাণ্ড জয়গুনকে পীড়িত করে। ‘আজকালকার রাজনীতিবিদেরা শিক্ষার দিকে নজর দেন না। তাঁরা মনে করেন, ধান্দাবাজি করতে পারলে এবং টিআর, কাবিখা লুট করে খেতে পারলে ধনী হওয়া যায়। এ ভবনা আমাকে কষ্ট দেয়।’ বলেন জয়গুন।
অম্বিকাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, এলাকার যেকোনো সামাজিক কাজে জয়গুনকে সবার আগে পাওয়া যায়। মনের কষ্ট মনে লুকিয়ে রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন জয়গুন।

No comments

Powered by Blogger.