দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা সীমান্ত চুক্তির আওতায় আনার দাবি বিজেপি’র
ভারত-বাংলাদেশ
স্থল সীমান্ত চুক্তিতে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা নামের দু’টি বাংলাদেশী
ছিটমহলকেও বিনিময়ের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি’র
পশ্চিমবঙ্গ শাখা। বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বিবিসি’কে বলেছেন,
যতক্ষণ না ছিটমহল দুটি পুরোপুরি ভারতের দিকে আসছে, ততদিন সীমান্ত সমস্যার
স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। তবে ছিটমহলবাসীদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, চুক্তির
অনুমোদন বিলম্বিত করতেই বিজেপি’র এটা নতুন কৌশল। আঙ্গরপোতা, দহগ্রামের
কারোন দেখিয়ে ছিটমহল বিনিময়ের প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেয়া মোটেই সমীচীন হবে না।
বিবিসি’র দিল্লী প্রতিবেদক বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার স্থলসীমান্ত
চুক্তি নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে যখন অবশেষে ভারতে অনুমোদনের দোড়গোড়ায় এসে
পৌঁছেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, ঠিক তখনই এ চুক্তি নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলল
বিজেপি’র পশ্চিমবঙ্গ শাখা। তাদের বক্তব্য, দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা নামের যে
দুটি বাংলাদেশী ছিটমহল ভারতীয় ভূখ-ে রয়েছে এবং তিনবিঘা করিডোর ব্যবহার করতে
দেয়ার মধ্য দিয়ে ভারত যেখানে বাংলাদেশকে প্রবেশাধিকার দিয়েছে সে দুটিও
ভারতের প্রাপ্য হওয়া উচিত। বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বিবিসি;কে
বলেন, দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা যে দুটি বাংলাদেশী ছিটমহল ভারতের সাথে আছে, তার
চলে আসার কথা। কিন্তু ওটা ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় চুক্তির মধ্যে নেই।
যদি ওই ছিটমহল দুটো চলে আসে, তাহলে তিনবিঘার আর কোনো দরকার লাগে না।
তিনবিঘার এখানে সমাপ্তি হয়ে যায়। এবং আর কোনো ছিটমহল নিয়ে সমস্যা থাকে না।
কিন্তু দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা বাদ দিয়ে যদি বাকী ছিটমহলের বিনিময় হয়, তাহলে
ছিটমহলের দুটো সমস্যা কিন্তু থেকেই গেল। এটার ব্যাপারে বাংলাদেশ ভাবুক।
হয়তো এ ছিটমহল বিনিময়ের মধ্যে না হলেও, পরবর্তীকালে ভাবুক। দু’ দেশের যে
ছিটমহলবাসীরা অধীর আগ্রহে এ চুক্তি বাস্তবায়নের দিকে তাকিয়ে আছেন, তারা
কিন্তু বিজেপি’র এ নতুন শর্তে আশঙ্কিত। ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমিতির
ভারতের দিকে মূখ্য সমন্বয়কারী দিপ্তীমান সেনগুপ্ত সরাসরি বলছেন,
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি’র উচিত তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির
ফয়সালা করা। কিন্তু চুক্তিটি আরও পিছিয়ে দেয়ার অধিকার তাদের নেই। তিনি
বলেন, রাহুল বাবু একটি দায়িত্বশীল দলের একটি রাজ্যের দায়িত্বে আছেন। এবং
ওনার দল যেহেতু ক্ষমতাতে আছেন, দেশের মানসম্মানের প্রশ্ন, আন্তর্জাতিক
ক্ষেত্রে দেশের মানসম্মানের প্রশ্ন, ওনার উচিত সরাসরিভাবে দেশের
প্রধানমন্ত্রীকে জানানো। এবং ওনার দলের যিনি প্রধান আছেন তাকে বিষয়টা
জানানো। কারণ, পার্লামেন্টে তাহলে সেভাবেই এটার আলাপ আলোচনা হতে পারে। উনি
বাদবাকী যেটা করছেন, রাস্তাঘাটে মিডিয়াকে এসব না বলে, সরাসরি উনি একটা চিঠি
লিখুক এবং সে অনুযায়ী রাস্তায় নেমে আন্দোলন করুক। তিনি সেটা করলেই বরংচ
পরিষ্কার হবে বিষয়টা। বিজেপি অভিযোগ করছে, তিনবিঘা করিডোর বহুদিন ধরেই
চোরাচালান, অস্ত্রপাচার ও অনুপ্রবেশের একটা রুট হয়ে উঠেছে। এবং দহগ্রাম ও
আঙ্গরপোতা কে বাইরে রেখে ছিটমহল বিনিময় করা হলে, সে সমস্যা রয়েই যাবে।
রাহুল সিনহার বক্তব্য, সমাধান তো নজরদারির মধ্যে না। এতবড় বর্ডার, কে এত
নজরদারি করবে? ওটা একটা সমস্যা আরকি। সমস্যা যদি পাকাপাকিভাবে সমাধান করতে
হয়, তাহলে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা কে ছিটমহল বিনিময়ের মধ্যে আনতে হবে। তিনবিঘা
কোনো সমস্যাই নয়। সমস্যা হচ্ছে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা । ছিটমহল বিনিময়ের
মধ্যে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ভারতের অংশে চলে আসবে। তাহলে তো তিনবিঘার আর
দরকারই লাগবে না। তার এ বক্তব্যের জবাবে দিপ্তীমান সেনগুপ্ত বলছেন,
চোরাচোলান বন্ধের কথা বলে চুক্তির অনুমোদনে নতুন সমস্যা সৃষ্টি করতে চাইছেন
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি নেতারা। তিনি বলেন, আজকের তারিখে যেখানে কাটাতার হচ্ছে,
সেখানেও স্মাগলিং হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধান এভাবে কোনোদিন সম্ভব নয়। কারণ
আরেকটা সমস্যার সৃষ্টী করে যেটা, সমাধিত সমস্যা সেই সমস্যাকে নতুন করে
সৃষ্টি করে কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। বরংচ সমস্যা আরও বাড়ে। সপ্তাহ দুয়েক
আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে ঘোষণা করেছেন, স্থলসীমান্ত চুক্তির
অনুমোদন হচ্ছেই। বিজেপি’র পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম শাখাকে নিজেদের আপত্তি
প্রত্যাহার করে তার কথা মেনেও নিতে হচ্ছে। কিন্তু নিজেদের মুখরক্ষার খাতিরে
শেষমূহুর্তে নতুন নতুন শর্ত তুলেই চলেছেন তারা। দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা র
দাবি এতে সবশেষ সংযোজন।
No comments