সুন্দরবনে নৌপথ বন্ধে দুই মন্ত্রণালয় মুখোমুখি
সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে স্থায়ীভাবে নৌচলাচল
বন্ধে পরিবেশ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। জাহাজের তেল
ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনের ক্ষতির আশংকায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় রুটটি
স্থায়ীভাবে বন্ধের সুপারিশ করে। কিন্তু নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় স্থায়ীভাবে
নৌপথ বন্ধের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান
বলেছেন- বন নয়, মানুষের প্রয়োজনীয়তাকেই গুরুত্ব দিতে হবে। এ কারণে
স্থায়ীভাবে সুন্দরবনে নৌচলাচল বন্ধ করা সম্ভব নয়। অপরদিকে পরিবেশ উপমন্ত্রী
আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেছেন, এই রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমোদন বাতিলের
জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে অনেকবার চিঠি দিয়েছি।
নৌদুর্ঘটনার ৫ দিন পর ঘটনাস্থল মৃগমারীতেই ট্যাংকারের নিখোঁজ চালক মোকলেসুর রহমানের লাশ ভেসে উঠেছে। দুর্ঘটনার পর থেকে চালকের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে ট্যাংকারের অন্য কর্মচারীরা প্রথম দিনই সাঁতরে তীরে ওঠেন। ট্যাংকার দুর্ঘটনার সার্বিক বিষয় তদারকির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে সার্বক্ষণিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে বিষয়টি মনিটরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শ্যালা নদীতে তেলবাহী জাহাজডুবির ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস এবং পুনর্বাসনে সহায়তায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। তবে সাধারণভাবে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি আগ্রহের কথা জানালেও এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব এখনও দেয়নি।
ফার্নেস অয়েলের কারণে সুন্দরবনের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি রোধে পানি ও মাটির বিশেষ ট্রিটমেন্ট দেয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। কমিটির খসড়া রিপোর্টে বিদেশী বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে এই ট্রিটমেন্ট দেয়ার কথা বলা হয়। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুল করিমকে আহ্বায়ক করে গঠিত ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি রোববার তাদের রিপোর্টের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আগামী বৃহস্পতিবারের আগেই এই কমিটি তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করতে পারবে বলে জানা গেছে।
সুন্দরবনে তেলবাহী ট্যাংকার দুর্ঘটনার পর রোববার পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে আলাদা বৈঠক হয়। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান তার মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বলেছেন- বন নয়, মানুষের প্রয়োজনীয়তাকেই গুরুত্ব দিতে হবে। এ কারণে স্থায়ীভাবে সুন্দরবনে নৌচলাচল বন্ধ করা সম্ভব নয়। অপরদিকে পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব তার মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বলেছেন, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে এই রুটটিতে জাহাজ চলাচলের অনুমোদন দেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। আমরা বহুবার নৌমন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। রুটটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে আমরা অনুরোধ করেছি। শুধু পরিবেশ মন্ত্রণালয়ই নয়, এই রুটটি বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ বেশ কটি আন্তর্জাতিক সংগঠন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু নৌমন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো গতকালের বৈঠকে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে আরও তিন রুট চালুর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ তিনটি রুটের প্রস্তাব দেয়। রুটগুলো হচ্ছে- মংলা-পশুর নদী-তিনকোনা আইল্যান্ড, কোকিলমনি-টিয়ারচর-শেলারচর-কটকাবাহির-বলেশ্বর-বগী-আন্ধারমানিক। এ নৌপথের দূরত্ব ১৫৩ কিলোমিটার। দ্বিতীয় রুটটি হচ্ছে-মংলা-পশুর নদী-তিনকোনা আইল্যান্ড-কোকিলমনি-শ্যালা নদী-পাতাকাটা খাল-দুধমুখী-সুপতি-বলেশ্বর-বগী-আন্ধারমানিক। এ নৌপথের দূরত্ব ১৪৮ কিলোমিটার। তৃতীয় রুটটি হচ্ছে- মংলা-পশুর নদী-চরপুটিয়াখাল-আরাবাকী খাল-শ্যালা নদী-পাতাকাটা খাল-দুধমুখী-সুপতি-বলেশ্বর-বগা-আন্ধারমানিক। পাশাপাশি নদীতে ভাসমান তেলের দাম লিটারপ্রতি ৩০ থেকে বৃদ্ধি করে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক তেল ক্রয় কেন্দ্র খোলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকায় এক মাসব্যপী ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওই এলাকায় মেডিকেল টিম পাঠানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত হয় উভয় বৈঠকেই।
দুর্ঘটনার ৫ দিন পর রোববার ওটি সাউদার্ন স্টার-সেভেনকে আঘাতকারী জাহাজ এমটি টোটালের মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে নৌ আদালতে মামলা করেছে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর। তবে জাহাজ এবং এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে এখন পর্যন্ত আটক করা হয়নি। ওটি সাউদার্ন স্টার-সেভেনের বিরুদ্ধে বন বিভাগ একশ’ কোটি টাকার ক্ষতির উল্লেখ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে। ঘটনার ৫ দিন পরও তারা ওটি মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেনি বা সাধারণ ডায়েরিও মামলায় রূপান্তর হয়নি বলে জানা গেছে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট : তদন্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টে তারা বলেছেন, ডুবে যাওয়া ট্যাংকার ফেটে বের হয়ে যাওয়া ফার্নেস অয়েলে ক্ষতিকর টক্সিনের মাত্রা ছিল খুবই কম। এতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের বড় ধরনের ক্ষতি হবে না। অল্প কিছুদিনের মধ্যে পানিতে ভেসে থাকা তেল সরিয়ে ফেলা সম্ভব হবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় সাময়িক ক্ষতি হবে। এতে ছোট পোকামাকড়, তৃণমূল, ঘাষ, তেলের মধ্যে ভেসে থাকা কিছু পাখি ও বনের পাড়ের মাটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি বড় কোনো বিপর্যয় হবে কিনা সেটা কমিটি নির্ধারণ করতে পারেনি। সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি রোধে বিদেশী এক্সপার্টদের পরামর্শ অনুযায়ী তেলযুক্ত পানি ও মাটির ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থার সুপারিশ করেছেন। কমিটি তাদের রিপোর্টে বনের পানিতে কেমিক্যাল ছিটানোর পুরোপুরি বিরোধিতা করে বলেছে, এই ঘটনায় উল্টো নতুন বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাছাড়া যে জাহাজের মাধ্যমে এই কেমিক্যাল স্প্রে করার কথা বলা হচ্ছে ওই জাহাজ চালানোর জন্য ১৫ ফুট পানির প্রয়োজন। বনের খালগুলোতে এই পরিমাণ পানি নেই। পাখি, টিকটিকি, ডলফিন, কুমিরের মৃত্যু সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য সঠিক নয় বলে কমিটি তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। ডলফিন বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে ডলফিন দেখতে পেয়েছে বলে তাদের জানিয়েছে। নদীর অধিকাংশ পানিতে এখন অক্সিজেন ঢুকতে পারছে। যার কারণে মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাওয়ার সম্ভবনা নেই। কিছু কিছু খালের পানিতে যেখানে বেশি পরিমাণ ফার্নেস অয়েল জমা আছে সেখানে আক্সিজেনের মাত্রা কিছুটা কমে গেছে। তবে ২-১ দিনে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়বে। কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য দিয়েছেন।
এদিকে বন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে তারা ফার্নেস অয়েল আক্রান্ত পানি ও মাটির ট্রিটমেন্টের বিষয়ে বিদেশী এক্সপার্টদের পরামর্শ নিয়েছে। শিগগিরই তারা এ বিষয়ে প্রকল্প তৈরির জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবে। তাদের ধারণা, এই টিটমেন্ট করা গেলে তেল আক্রান্ত মাটি আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। এতে ওই মাটিতে নতুন গাছপালা ও তৃণমূল গজাবে এবং সেসব গাছপালা শক্তিশালী হবে।
তদন্ত কমিটির কার্যক্রম : দুর্ঘটনার ৩ দিন পর শুক্রবার থেকে সরেজমিন কাজ শুরু করেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং নৌ মন্ত্রণালয় গঠিত দুটি কমিটির সদস্যরা। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে কমিটি শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা, শনিবার পুরো দিন এবং রোববার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সুন্দরবন এলাকায় ঘুরে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা চালান। কমিটির সদস্যদের মতে, সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি টাকায় নিরূপণ করা সম্ভব নয়। এতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তবে প্রকৃতিগত ভাবেই কিছু ক্ষতি কেটে যাবে বলে একমত হয়েছেন সদস্যরা। গত কয়েকদিনে ওই এলাকায় মাছ মারা যেতে দেখেননি। বরং ডলফিন ও শুশুক একাধিকবার দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে নৌ মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি শুক্রবার দুর্ঘটনা স্থল ও দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজ পরিদর্শন শেষে শনিবার ঢাকায় ফেরেন। রোববার নারায়ণগঞ্জে গিয়ে আঘাতকারী জাহাজ এমটি টোটাল পরিদর্শন করেন কমিটির সদস্যরা। দুর্ঘটনার জন্য এমটি টোটালকে দায়ী করেছেন।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে কমিটির সদস্যরা শনিবার রাতে মংলার বন বিভাগের গেস্ট হাউসে বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, করণীয় বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে অংশ নেয়া একজন সদস্য যুগান্তরকে বলেন, বৈঠকে সুন্দরবনের নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ায় পানির অক্সিজেন কমে যাওয়া প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বৈঠকে পরিবেশ অধিদফতরের খুলনা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক পয়েন্টের পানি সংগ্রহ করে দ্রবীভূত অক্সিজনের মাত্রা পরিমাপ করে দেখা গেছে প্রতি লিটারে সাড়ে ৪ থেকে ৫ দশমিক ৭ মিলিলিটার অক্সিজেন রয়েছে। সাধারণত পানিতে সাড়ে ৬ থেকে ৭ মাত্রার অক্সিজেন থাকে। এ অবস্থায় অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে তেল অপসারণে কেমিক্যাল ডিসপারসেন্ট ব্যবহারের ওপর আপত্তি জানায় কমিটির সদস্যরা। তারা বলেন, পানিতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের চেয়ে কম পরিমাণে রয়েছে। এ অবস্থায় কেমিক্যাল ছিটানো হলে অক্সিজেনের চাহিদা আরও বাড়বে। এই কেমিক্যাল ছড়ানো হলে তেলের সঙ্গে প্রাকৃতিক জীব ও প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সদস্যরা বলেন, জোয়ার-ভাটায় নদী তীরবর্তী যেসব ঘাস, গোলপাতা, কেওড়া গাছে তেল লেগে গেছে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। এ বিষয়গুলো ক্ষয়ক্ষতি হিসেবে ধরে নিয়ে রিপোর্টে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধের সুপারিশ করা হচ্ছে। এ ছাড়া আগামী দেড় মাস শ্যালা নদীতে অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপের জন্য পরিবেশ অধিদফতরকে সুপারিশ করেছে কমিটি।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বৈঠক : বৈঠক শেষে দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ১০০ কোটি টাকা ক্ষতির বিষয় উল্লেখ করে কার্গো মালিকের বিরুদ্ধে জিডি করেছি। এ সংক্রান্ত বিষয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে মূলত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। এটা ১০০ কোটির কমও হতে পারে আবার অনেক বেশিও হতে পারে।
গত ৯ ডিসেম্বর শ্যালা নদীতে ডুবে যাওয়া জাহাজের ছড়িয়ে পড়া তেল সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না বলে মন্তব্য করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। শনিবার দুপুরে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ পরিদর্শনকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, এতে খুব বেশি ক্ষতি হবে না।’ রোববার পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চান পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী জ্যাকবের কাছে। নৌপরিবহনমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে জবাব দিতে পরিবেশ উপমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার রাকিবুর রহমানের দিকে মাইক্রোফোন এগিয়ে দেন। ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, নৌপরিবহনমন্ত্রীর বক্তব্য তার নিজস্ব, আর আমাদের বক্তব্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের। এ ঘটনায় সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি হবে, তবে কতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে। এর আগে তিনি বলেন, তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব অনেক অনেক বেশি। কতটুকু বেশি তা আমরা এখনও আন্দাজ করতে পারছি না।
পরিবেশ উপমন্ত্রী বলেন, এ রুটটির অনুমোদন দেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। আমরা বহুবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি, অনুরোধ করেছি সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হলে এ রুট বন্ধ করতে হবে। গত ১০ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সুন্দরবনের শ্যালা নদীর রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
উপমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনের যে এলাকায় জাহাজ ডুবেছে সেখানকার অধিবাসীদের চর্মরোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ জন্য সেখানে মেডিকেল টিম পাঠানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। হোয়াইট ফিস রক্ষার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে সংগৃহীত তেল সংগ্রহের জন্য আরও ক্রয় কেন্দ্র খুলতে বলেছি আমরা। সভায় তেলের দাম বাড়ানোরও সুপারিশ করা হয়েছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অধিবাসীর সহায়তা দিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কেমিক্যাল ছিটিয়ে তেল দূর করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে উপমন্ত্রী বলেন, হুট করে কেমিক্যাল ছিটানো ঠিক হবে না। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
তেল ছড়িয়ে পড়ার পর সুন্দরবনের পরিবেশের বর্ণনা দিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, শনিবারও ডলফিন দেখা গেছে, গায়ে তেল লাগেনি। বিশেষজ্ঞদের মনে হয়েছে, এ পর্যায়ে ডলফিনদের কোনো অসুস্থতা নেই, কোনো অস্বাভাবিক আচরণও তারা লক্ষ্য করেননি। একটি পত্রিকায় মৃত ডলফিনের ছবি ছাপা হয়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সচিব বলেন, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। উপমন্ত্রী বলেন, আমরা তেল অপসারণের দিকে নজর দিচ্ছি বেশি। এখন ১০০ নৌকায় ৩০০ জন তেল অপসারণের কাজ করছে। তেল সংগ্রহের নৌকা সংখ্যা ৫০০-তে উন্নীত করতে প্রধান বন সংরক্ষককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তেল নদীর ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে জানিয়ে উপমন্ত্রী বলেন, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তেল অপসারণ করা যায়।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বৈঠক : সুন্দরবনে স্থায়ীভাবে নৌ-চলাচল বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, সুন্দরবনের এই (চাঁদপাই রেঞ্জ) চ্যানেলটি বন্ধ করে দিলে অন্তত ১০০ কিলোমিটার ঘুরে নৌযান চলাচল করতে হবে। এর ফলে মংলা বন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তবে ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি ফের চালু হলে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যান চলাচল কমে যাবে।
আন্তর্জাতিক সহায়তা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তেলের জাহাজ ডুবির ঘটনায় একই উপায়ে তেল সংগ্রহ করা হয়। যা ইতিমধ্যে আমরা গ্রহণ করেছি। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দফতর বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। ইতিমধ্যে নৌ ও কোস্টগার্ড সদসরা তেল অপসারণ ও সুন্দরবন রক্ষার জন্য কাজ করছে। স্থানীয় লোকজন তেল সংগ্রহ করে সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসছে। দুর্ঘটনাকবলিত এলাকাবাসীর আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় এক মাস পর্যন্ত ওই এলাকাবাসীকে ত্রাণ দেয়ার জন্য দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে অনুরাধ করা হয়েছে বলে শাজাহান খান জানান।
সুন্দরবনের ক্ষতির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ক্ষতির আশংকা রয়েছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে সে বিষয়ে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। দুর্ঘটনার পর একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। ওই কমিটির সদস্যরা সুন্দরবন রক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর রাখছে। ইতিমধ্যে ওই কমিটির সুপারিশে সুন্দরবন এলাকায় নৌযান চলাচল স্থগিত রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সুন্দরবনের ভেতরে যান চলাচল করবে না।
সহায়তায় আগ্রহী জাতিসংঘ : সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী জাহাজডুবির ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস এবং পুনর্বাসনে সহায়তায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। তবে সাধারণভাবে জাতিসংঘের এ সংস্থাটি আগ্রহের কথা জানালেও এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব এখনও দেয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনডিপি ঢাকা অফিসের এক কর্মকর্তা রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস এবং পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকারি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগীদের নিয়ে সরকারকে সহায়তা করতে আগ্রহী’। তিনি এ ব্যাপারে আর বিস্তারিত কিছু বলেননি। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, শ্যালা নদী থেকে ফার্নেস ওয়েল অপসারণে সনাতনী পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া, জোয়ার-ভাটায় তেল অনেকখানি এমনিতেই সরে গেছে। এ ক্ষেত্রে কোনো বিদেশী সহায়তার প্রয়োজন হবে না। দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস ও পুনর্বাসনে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়ার পর বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে।
জাতিসংঘ আগেই বলেছে, তারা শ্যালা নদী দিয়ে বাণিজ্যিক নৌযান চলাচল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার পক্ষে। ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর পলিন ট্যামেসিস ইতিপূর্বে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ৯ ডিসেম্বর দুর্ঘটনাকবলিত একটি জাহাজ থেকে সুন্দরবনের ভেতরে তেল নিঃসরণের সাম্প্রতিক ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে ইউএনডিপি বাংলাদেশও উদ্বিগ্ন বোধ করছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি যে, সচরাচর পরিবেশের ওপর এ ধরনের দুর্ঘটনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে থাকে এবং সেই পরিবেশের পুনঃসংরক্ষণে বহু প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়। বনসংলগ্ন জলাভূমির ওপর নির্ভরশীল জনপদের ওপরেও এর প্রভাব পড়বে’।
উল্লেখ্য, তেল নিঃসরণের এলাকাটি চাঁদপাই অভয়ারণ্যসংলগ্ন যা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত সর্ববৃহৎ সংরক্ষিত জলাভূমি এবং গাঙ্গেয় ও ইরাবতি নামক দু’টি বিপদাপন্ন ডলফিন প্রজাতির বিচরণ ক্ষেত্র।
নৌদুর্ঘটনার ৫ দিন পর ঘটনাস্থল মৃগমারীতেই ট্যাংকারের নিখোঁজ চালক মোকলেসুর রহমানের লাশ ভেসে উঠেছে। দুর্ঘটনার পর থেকে চালকের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে ট্যাংকারের অন্য কর্মচারীরা প্রথম দিনই সাঁতরে তীরে ওঠেন। ট্যাংকার দুর্ঘটনার সার্বিক বিষয় তদারকির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে সার্বক্ষণিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে বিষয়টি মনিটরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শ্যালা নদীতে তেলবাহী জাহাজডুবির ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস এবং পুনর্বাসনে সহায়তায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। তবে সাধারণভাবে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি আগ্রহের কথা জানালেও এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব এখনও দেয়নি।
ফার্নেস অয়েলের কারণে সুন্দরবনের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি রোধে পানি ও মাটির বিশেষ ট্রিটমেন্ট দেয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। কমিটির খসড়া রিপোর্টে বিদেশী বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে এই ট্রিটমেন্ট দেয়ার কথা বলা হয়। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুল করিমকে আহ্বায়ক করে গঠিত ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি রোববার তাদের রিপোর্টের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আগামী বৃহস্পতিবারের আগেই এই কমিটি তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করতে পারবে বলে জানা গেছে।
সুন্দরবনে তেলবাহী ট্যাংকার দুর্ঘটনার পর রোববার পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে আলাদা বৈঠক হয়। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান তার মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বলেছেন- বন নয়, মানুষের প্রয়োজনীয়তাকেই গুরুত্ব দিতে হবে। এ কারণে স্থায়ীভাবে সুন্দরবনে নৌচলাচল বন্ধ করা সম্ভব নয়। অপরদিকে পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব তার মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বলেছেন, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে এই রুটটিতে জাহাজ চলাচলের অনুমোদন দেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। আমরা বহুবার নৌমন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। রুটটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে আমরা অনুরোধ করেছি। শুধু পরিবেশ মন্ত্রণালয়ই নয়, এই রুটটি বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ বেশ কটি আন্তর্জাতিক সংগঠন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু নৌমন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো গতকালের বৈঠকে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে আরও তিন রুট চালুর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ তিনটি রুটের প্রস্তাব দেয়। রুটগুলো হচ্ছে- মংলা-পশুর নদী-তিনকোনা আইল্যান্ড, কোকিলমনি-টিয়ারচর-শেলারচর-কটকাবাহির-বলেশ্বর-বগী-আন্ধারমানিক। এ নৌপথের দূরত্ব ১৫৩ কিলোমিটার। দ্বিতীয় রুটটি হচ্ছে-মংলা-পশুর নদী-তিনকোনা আইল্যান্ড-কোকিলমনি-শ্যালা নদী-পাতাকাটা খাল-দুধমুখী-সুপতি-বলেশ্বর-বগী-আন্ধারমানিক। এ নৌপথের দূরত্ব ১৪৮ কিলোমিটার। তৃতীয় রুটটি হচ্ছে- মংলা-পশুর নদী-চরপুটিয়াখাল-আরাবাকী খাল-শ্যালা নদী-পাতাকাটা খাল-দুধমুখী-সুপতি-বলেশ্বর-বগা-আন্ধারমানিক। পাশাপাশি নদীতে ভাসমান তেলের দাম লিটারপ্রতি ৩০ থেকে বৃদ্ধি করে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক তেল ক্রয় কেন্দ্র খোলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকায় এক মাসব্যপী ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওই এলাকায় মেডিকেল টিম পাঠানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত হয় উভয় বৈঠকেই।
দুর্ঘটনার ৫ দিন পর রোববার ওটি সাউদার্ন স্টার-সেভেনকে আঘাতকারী জাহাজ এমটি টোটালের মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে নৌ আদালতে মামলা করেছে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর। তবে জাহাজ এবং এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে এখন পর্যন্ত আটক করা হয়নি। ওটি সাউদার্ন স্টার-সেভেনের বিরুদ্ধে বন বিভাগ একশ’ কোটি টাকার ক্ষতির উল্লেখ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে। ঘটনার ৫ দিন পরও তারা ওটি মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেনি বা সাধারণ ডায়েরিও মামলায় রূপান্তর হয়নি বলে জানা গেছে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট : তদন্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টে তারা বলেছেন, ডুবে যাওয়া ট্যাংকার ফেটে বের হয়ে যাওয়া ফার্নেস অয়েলে ক্ষতিকর টক্সিনের মাত্রা ছিল খুবই কম। এতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের বড় ধরনের ক্ষতি হবে না। অল্প কিছুদিনের মধ্যে পানিতে ভেসে থাকা তেল সরিয়ে ফেলা সম্ভব হবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় সাময়িক ক্ষতি হবে। এতে ছোট পোকামাকড়, তৃণমূল, ঘাষ, তেলের মধ্যে ভেসে থাকা কিছু পাখি ও বনের পাড়ের মাটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি বড় কোনো বিপর্যয় হবে কিনা সেটা কমিটি নির্ধারণ করতে পারেনি। সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি রোধে বিদেশী এক্সপার্টদের পরামর্শ অনুযায়ী তেলযুক্ত পানি ও মাটির ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থার সুপারিশ করেছেন। কমিটি তাদের রিপোর্টে বনের পানিতে কেমিক্যাল ছিটানোর পুরোপুরি বিরোধিতা করে বলেছে, এই ঘটনায় উল্টো নতুন বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাছাড়া যে জাহাজের মাধ্যমে এই কেমিক্যাল স্প্রে করার কথা বলা হচ্ছে ওই জাহাজ চালানোর জন্য ১৫ ফুট পানির প্রয়োজন। বনের খালগুলোতে এই পরিমাণ পানি নেই। পাখি, টিকটিকি, ডলফিন, কুমিরের মৃত্যু সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য সঠিক নয় বলে কমিটি তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। ডলফিন বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে ডলফিন দেখতে পেয়েছে বলে তাদের জানিয়েছে। নদীর অধিকাংশ পানিতে এখন অক্সিজেন ঢুকতে পারছে। যার কারণে মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাওয়ার সম্ভবনা নেই। কিছু কিছু খালের পানিতে যেখানে বেশি পরিমাণ ফার্নেস অয়েল জমা আছে সেখানে আক্সিজেনের মাত্রা কিছুটা কমে গেছে। তবে ২-১ দিনে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়বে। কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য দিয়েছেন।
এদিকে বন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে তারা ফার্নেস অয়েল আক্রান্ত পানি ও মাটির ট্রিটমেন্টের বিষয়ে বিদেশী এক্সপার্টদের পরামর্শ নিয়েছে। শিগগিরই তারা এ বিষয়ে প্রকল্প তৈরির জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবে। তাদের ধারণা, এই টিটমেন্ট করা গেলে তেল আক্রান্ত মাটি আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। এতে ওই মাটিতে নতুন গাছপালা ও তৃণমূল গজাবে এবং সেসব গাছপালা শক্তিশালী হবে।
তদন্ত কমিটির কার্যক্রম : দুর্ঘটনার ৩ দিন পর শুক্রবার থেকে সরেজমিন কাজ শুরু করেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং নৌ মন্ত্রণালয় গঠিত দুটি কমিটির সদস্যরা। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে কমিটি শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা, শনিবার পুরো দিন এবং রোববার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সুন্দরবন এলাকায় ঘুরে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা চালান। কমিটির সদস্যদের মতে, সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি টাকায় নিরূপণ করা সম্ভব নয়। এতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তবে প্রকৃতিগত ভাবেই কিছু ক্ষতি কেটে যাবে বলে একমত হয়েছেন সদস্যরা। গত কয়েকদিনে ওই এলাকায় মাছ মারা যেতে দেখেননি। বরং ডলফিন ও শুশুক একাধিকবার দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে নৌ মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি শুক্রবার দুর্ঘটনা স্থল ও দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজ পরিদর্শন শেষে শনিবার ঢাকায় ফেরেন। রোববার নারায়ণগঞ্জে গিয়ে আঘাতকারী জাহাজ এমটি টোটাল পরিদর্শন করেন কমিটির সদস্যরা। দুর্ঘটনার জন্য এমটি টোটালকে দায়ী করেছেন।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে কমিটির সদস্যরা শনিবার রাতে মংলার বন বিভাগের গেস্ট হাউসে বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, করণীয় বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে অংশ নেয়া একজন সদস্য যুগান্তরকে বলেন, বৈঠকে সুন্দরবনের নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ায় পানির অক্সিজেন কমে যাওয়া প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বৈঠকে পরিবেশ অধিদফতরের খুলনা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক পয়েন্টের পানি সংগ্রহ করে দ্রবীভূত অক্সিজনের মাত্রা পরিমাপ করে দেখা গেছে প্রতি লিটারে সাড়ে ৪ থেকে ৫ দশমিক ৭ মিলিলিটার অক্সিজেন রয়েছে। সাধারণত পানিতে সাড়ে ৬ থেকে ৭ মাত্রার অক্সিজেন থাকে। এ অবস্থায় অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে তেল অপসারণে কেমিক্যাল ডিসপারসেন্ট ব্যবহারের ওপর আপত্তি জানায় কমিটির সদস্যরা। তারা বলেন, পানিতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের চেয়ে কম পরিমাণে রয়েছে। এ অবস্থায় কেমিক্যাল ছিটানো হলে অক্সিজেনের চাহিদা আরও বাড়বে। এই কেমিক্যাল ছড়ানো হলে তেলের সঙ্গে প্রাকৃতিক জীব ও প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সদস্যরা বলেন, জোয়ার-ভাটায় নদী তীরবর্তী যেসব ঘাস, গোলপাতা, কেওড়া গাছে তেল লেগে গেছে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। এ বিষয়গুলো ক্ষয়ক্ষতি হিসেবে ধরে নিয়ে রিপোর্টে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধের সুপারিশ করা হচ্ছে। এ ছাড়া আগামী দেড় মাস শ্যালা নদীতে অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপের জন্য পরিবেশ অধিদফতরকে সুপারিশ করেছে কমিটি।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বৈঠক : বৈঠক শেষে দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ১০০ কোটি টাকা ক্ষতির বিষয় উল্লেখ করে কার্গো মালিকের বিরুদ্ধে জিডি করেছি। এ সংক্রান্ত বিষয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে মূলত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। এটা ১০০ কোটির কমও হতে পারে আবার অনেক বেশিও হতে পারে।
গত ৯ ডিসেম্বর শ্যালা নদীতে ডুবে যাওয়া জাহাজের ছড়িয়ে পড়া তেল সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না বলে মন্তব্য করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। শনিবার দুপুরে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ পরিদর্শনকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, এতে খুব বেশি ক্ষতি হবে না।’ রোববার পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চান পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী জ্যাকবের কাছে। নৌপরিবহনমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে জবাব দিতে পরিবেশ উপমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার রাকিবুর রহমানের দিকে মাইক্রোফোন এগিয়ে দেন। ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, নৌপরিবহনমন্ত্রীর বক্তব্য তার নিজস্ব, আর আমাদের বক্তব্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের। এ ঘটনায় সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি হবে, তবে কতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে। এর আগে তিনি বলেন, তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব অনেক অনেক বেশি। কতটুকু বেশি তা আমরা এখনও আন্দাজ করতে পারছি না।
পরিবেশ উপমন্ত্রী বলেন, এ রুটটির অনুমোদন দেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। আমরা বহুবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি, অনুরোধ করেছি সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হলে এ রুট বন্ধ করতে হবে। গত ১০ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সুন্দরবনের শ্যালা নদীর রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
উপমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনের যে এলাকায় জাহাজ ডুবেছে সেখানকার অধিবাসীদের চর্মরোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ জন্য সেখানে মেডিকেল টিম পাঠানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। হোয়াইট ফিস রক্ষার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে সংগৃহীত তেল সংগ্রহের জন্য আরও ক্রয় কেন্দ্র খুলতে বলেছি আমরা। সভায় তেলের দাম বাড়ানোরও সুপারিশ করা হয়েছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অধিবাসীর সহায়তা দিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কেমিক্যাল ছিটিয়ে তেল দূর করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে উপমন্ত্রী বলেন, হুট করে কেমিক্যাল ছিটানো ঠিক হবে না। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
তেল ছড়িয়ে পড়ার পর সুন্দরবনের পরিবেশের বর্ণনা দিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, শনিবারও ডলফিন দেখা গেছে, গায়ে তেল লাগেনি। বিশেষজ্ঞদের মনে হয়েছে, এ পর্যায়ে ডলফিনদের কোনো অসুস্থতা নেই, কোনো অস্বাভাবিক আচরণও তারা লক্ষ্য করেননি। একটি পত্রিকায় মৃত ডলফিনের ছবি ছাপা হয়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সচিব বলেন, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। উপমন্ত্রী বলেন, আমরা তেল অপসারণের দিকে নজর দিচ্ছি বেশি। এখন ১০০ নৌকায় ৩০০ জন তেল অপসারণের কাজ করছে। তেল সংগ্রহের নৌকা সংখ্যা ৫০০-তে উন্নীত করতে প্রধান বন সংরক্ষককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তেল নদীর ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে জানিয়ে উপমন্ত্রী বলেন, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তেল অপসারণ করা যায়।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বৈঠক : সুন্দরবনে স্থায়ীভাবে নৌ-চলাচল বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, সুন্দরবনের এই (চাঁদপাই রেঞ্জ) চ্যানেলটি বন্ধ করে দিলে অন্তত ১০০ কিলোমিটার ঘুরে নৌযান চলাচল করতে হবে। এর ফলে মংলা বন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তবে ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি ফের চালু হলে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যান চলাচল কমে যাবে।
আন্তর্জাতিক সহায়তা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তেলের জাহাজ ডুবির ঘটনায় একই উপায়ে তেল সংগ্রহ করা হয়। যা ইতিমধ্যে আমরা গ্রহণ করেছি। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দফতর বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। ইতিমধ্যে নৌ ও কোস্টগার্ড সদসরা তেল অপসারণ ও সুন্দরবন রক্ষার জন্য কাজ করছে। স্থানীয় লোকজন তেল সংগ্রহ করে সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসছে। দুর্ঘটনাকবলিত এলাকাবাসীর আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় এক মাস পর্যন্ত ওই এলাকাবাসীকে ত্রাণ দেয়ার জন্য দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে অনুরাধ করা হয়েছে বলে শাজাহান খান জানান।
সুন্দরবনের ক্ষতির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ক্ষতির আশংকা রয়েছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে সে বিষয়ে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। দুর্ঘটনার পর একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। ওই কমিটির সদস্যরা সুন্দরবন রক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর রাখছে। ইতিমধ্যে ওই কমিটির সুপারিশে সুন্দরবন এলাকায় নৌযান চলাচল স্থগিত রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সুন্দরবনের ভেতরে যান চলাচল করবে না।
সহায়তায় আগ্রহী জাতিসংঘ : সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী জাহাজডুবির ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস এবং পুনর্বাসনে সহায়তায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। তবে সাধারণভাবে জাতিসংঘের এ সংস্থাটি আগ্রহের কথা জানালেও এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব এখনও দেয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনডিপি ঢাকা অফিসের এক কর্মকর্তা রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস এবং পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকারি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগীদের নিয়ে সরকারকে সহায়তা করতে আগ্রহী’। তিনি এ ব্যাপারে আর বিস্তারিত কিছু বলেননি। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, শ্যালা নদী থেকে ফার্নেস ওয়েল অপসারণে সনাতনী পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া, জোয়ার-ভাটায় তেল অনেকখানি এমনিতেই সরে গেছে। এ ক্ষেত্রে কোনো বিদেশী সহায়তার প্রয়োজন হবে না। দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস ও পুনর্বাসনে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়ার পর বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে।
জাতিসংঘ আগেই বলেছে, তারা শ্যালা নদী দিয়ে বাণিজ্যিক নৌযান চলাচল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার পক্ষে। ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর পলিন ট্যামেসিস ইতিপূর্বে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ৯ ডিসেম্বর দুর্ঘটনাকবলিত একটি জাহাজ থেকে সুন্দরবনের ভেতরে তেল নিঃসরণের সাম্প্রতিক ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে ইউএনডিপি বাংলাদেশও উদ্বিগ্ন বোধ করছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি যে, সচরাচর পরিবেশের ওপর এ ধরনের দুর্ঘটনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে থাকে এবং সেই পরিবেশের পুনঃসংরক্ষণে বহু প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়। বনসংলগ্ন জলাভূমির ওপর নির্ভরশীল জনপদের ওপরেও এর প্রভাব পড়বে’।
উল্লেখ্য, তেল নিঃসরণের এলাকাটি চাঁদপাই অভয়ারণ্যসংলগ্ন যা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত সর্ববৃহৎ সংরক্ষিত জলাভূমি এবং গাঙ্গেয় ও ইরাবতি নামক দু’টি বিপদাপন্ন ডলফিন প্রজাতির বিচরণ ক্ষেত্র।
No comments