‘যুদ্ধাপরাধের সব রায় কার্যকর করব’ -প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,
যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় কার্যকর করে দেশের মাটিকে অভিশাপমুক্ত করা হবে।
বিচারে যার যা রায় হয়েছে তা কার্যকর করা হবে। বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী
উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ৩রা নভেম্বর
জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য
রাখেন। ৩রা নভেম্বরে হত্যাকান্ডের শিকার জাতীয় নেতাদের স্মরণ করে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫ সালের পর থেকে দেশে শুরু হয়েছিল হত্যা ক্যু ও
ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের অগণিত কর্মী
জীবন দিয়েছে। মা বোন নির্যাতিত হয়েছে। জাতির পিতার নেতৃত্বে এবং নির্দেশে
যারা বিজয় এনে দিয়েছিলেন তাদের নির্মমভাবে জেলখানায় হত্যা করা হয় ৩রা
নভেম্বর। পরাজিত শক্তি জাতির পিতাকে হত্যা করেই থেমে থাকেনি। জাতীয় চার
নেতাকে হত্যা করে হত্যা ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। এরপর ১৮ থেকে
১৯ বার ক্যু হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
বিকৃত করা হয়েছে। এই পরাজিত শক্তিকে জিয়া দেশের গণতন্ত্রের কবর রচনা
করেছিল। পরাজিত শক্তির হাতে তুলে দিয়েছিল। যে দেশের স্বাধীনতাই চায়নি সেই
শাহ আজিজকে বানিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী। যারা হত্যা নির্যাতনে অংশ নিয়েছে
তাদের ক্ষমতা দিয়েছেন জিয়াউর রহমান। যারা জাতীয় নেতাকে হত্যা করেছে তাদের
বিদেশে চাকরি দিয়ে পূর্নবাসিত করেছিলেন। নিজে মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতা
বিরোধীদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। তিনি ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধী
গোলাম আযমকে ফিরিয়ে আনেন। যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। যা
সংবিধানে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেন। তার পথ ধরে
খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে নিজামী, মুজাহিদকে মন্ত্রী করেছিলেন। এরাই ছিল
খালেদা জিয়ার পছন্দের লোক। একটি দেশে স্বাধীনতার চেতনাকে এভাবে ভুলণ্ঠিত
করার এমন নজির হয়তো নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে উন্নয়ন করেছিলাম তাও তারা একে একে বন্ধ করে দিল। হাওয়া ভবন খোলে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেল। আর মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্র হল। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের উন্নয়ন বিএনপি নেত্রী চোখে দেখেন না। দেখার মতো দৃষ্টিওতো থাকতে হবে। আজকে তার হাতে ক্ষমতা নেই। সেই আফসোসে মরে যাচ্ছেন। নির্বাচন ঠেকাবার নামে যে অত্যাচার শুরু করেছিলেন। তাদের আন্দোলন মানে মানুষ হত্যা, মসজিদে আগুন দেয়া, ককটেল, আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা। এটাই উনার আন্দোলন। গাছ কেটে দেয়া, রাস্তা কেটে দেয়া এটা কোন ধরনের আন্দোলন। প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকার বিরোধী আন্দোলনের হুমকির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) বলছেন, আন্দোলন করে সরকার উৎখাত করবেন। আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই-২০০৯ সালে তিনি বলেছিলেন আমি প্রধানমন্ত্রীতো দুরে থাক বিরোধী দলের নেতাও হতো পারবো না। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস এখন তিনি নিজেই বিরোধী দলের নেতা না। তিনি যে অভিশাপ দেন তা আমার জন্য আশির্বাদ হয়ে ফিরে আসে। শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ২০০৯ সালের নির্বাচনে মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিলেন। মানুষ তাকে ভোট দেয়নি। আর তাই ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন করতেই ভয় পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি কথায় কথায় অবৈধ অবৈধ দেখেন। আয়নায় চেহারা দেখলে তাই মনে হবে তার। কারণ জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বিএনপির জন্ম দিয়েছিল। কাজেই তিনি কথায় কথায় অবৈধ দেখেন। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন যাতে না হয় এজন্য বাধা দিয়েছে তারা। তারপরও ৪০ভাগ ভোট দিয়েছে মানুষ। সম্প্রতি পত্রিকায় এসেছে আমেরিকায় কংগ্রেস নির্বাচনে ২৫ভাগ সিট বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। তাহলে বলা যাবে আমেরিকার কংগ্রেস অবৈধ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করেন ভাল কথা। তবে যুদ্ধাপরাধী, সন্ত্রাসীদের সঙ্গ ছাড়তে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এই অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। এদিকে জনসভাকে ঘিরে দুপুর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা জড়ো হন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বিকালে জনস্রোত ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের রাস্তায়। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।
No comments