বিদ্যুৎ বিপর্যয়- ক্ষতি হাজার কোটি টাকা
শনিবার সারা দেশ ব্ল্যাকআউটে থাকায় জনজীবনের পাশাপাশি ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে শিল্প ও বাণিজ্য খাতে। এতে সারা দেশে লাখ লাখ শিল্প-কারখানার চাকা বন্ধ হয়ে যায়। অনেক কারখানা জেনারেটর দিয়ে সচল রাখতে হয়েছে। যাতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৩০ শতাংশ। এর পুরোটাই লোকসান হিসেবে যোগ হবে উদ্যোক্তাদের ঘাড়ে। ফলে সারা দেশে একদিনের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। চাঁদাবাজি, হরতাল, দুর্নীতি, আন্তর্জাতিক বাজারে নানা ধরনের বিধিনিষেধের কারণে এমনিতেই উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। তার ওপর আবার টানা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার কারণে আরও ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। শনিবার দুপুর থেকে সারা দেশে একযোগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পরে মধ্যরাতে সারা দেশে এলাকা ভাগ ভাগ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কি কারণে এমন হয়েছে তা এখন পর্যন্ত সরকার নিশ্চিত করতে পারেনি।
বিজিএমইএ সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, ফার্নেস অয়েলের মাধ্যমে উৎপাদন চালিয়ে নিতে হয়। এতে মাঝারি মানের একটি কারখানার প্রতি ঘণ্টার উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ৯ হাজার টাকার মতো। দেশে ছোট-বড় মিলে সারা দেশে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পোশাক শিল্প রয়েছে। এ শিল্পে প্রায় ৩৫ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। এসব কারখানা বিদ্যুৎবিহীন স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু শনিবার বিদ্যুৎ না থাকায় বেশির ভাগ কারখানা ছিল বন্ধ। টানা জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন সচল রাখতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। এক পর্যায়ে উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে ক্ষয়তির পরিমাণ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি হবে বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. হেলাল উদ্দিন মানবজমিনকে জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ক্ষমতা বাড়লেও এর ব্যবহার কিংবা সঞ্চালনের ক্ষমতা খুবই কম। এ কারণে বিদ্যুতের এমন বিপর্যয় ঘটে। এমন বিপর্যয় আরও হলে দেশের অর্থনীতি বড় ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, শনিবার বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন কল-কারখানায় ব্যাপক হারে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু গার্মেন্ট শিল্পেই প্রায় ১৮০ কোটি টাকার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের ৬৭টি আটা ও ময়দা মিলে প্রায় ২৫০০ টন উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আদমজী ইপিজেডেও উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। একটি ফ্যাক্টরির মালিক জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় দৈনিক শতভাগ উৎপাদনের মধ্যে তার ফ্যাক্টরিতে মাত্র ৩৫ শতাংশ উৎপাদন হয়েছে। আমানা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, বিদুৎ না থাকায় তার প্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
বিকেএমইএ সহসভাপতি জিএম ফারুক জানান, শনিবার বিকেএমইএ’র খসড়া হিসেবে নারায়ণগঞ্জের নিট খাতে প্রায় ১৮০ কোটি টাকার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এটা বড় ধরনের একটা ক্ষতি। আদমজী ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার মেহবুব আলী জানান, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে কি পরিমাণ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, নির্দিষ্ট করে হিসাব করিনি। তবে উৎপাদনে ব্যাপক ব্যাহত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে আটা ও ময়দার ৬৭টি মিলেও ব্যাপক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ওই সব মিলে প্রায় ২৫০০ টন উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে বলে মিলের একটি সূত্র জানায়।
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে জানান, চট্টগ্রামে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হওয়া ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। শনিবার সারা দেশের মতো ঘোর অন্ধকারে ডুবে ছিল বন্দর নগরী চট্টগ্রামও। দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো শহর ছিল বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে বিছিন্ন। এ সময় স্থবিরতা নেমে আসে জনজীবনে। পোশাক কারখানাগুলোর শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খান। হাসপাতালগুলোতে জরুরি অপারেশন করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে যান চিকিৎসকরা। সন্ধ্যার পর নগরীতে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমরা দ্রুত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছি। বেশ কয়েক দিন তো সময় লাগবেই। এদিকে বিভ্রাটের কারণে অনেক এলাকায় মোটর চালু করতে না পারায় নগরীতে দেখা দেয় পানি সঙ্কট।
স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, শনিবার বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও ভোগান্তির মুখে পড়েন নগরবাসী। মহানগরীর বিক্রয়-বিপণি, শিল্প-কারখানা ও ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোগতাদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎনির্ভর নগরজীবনে এ অভিজ্ঞতা ব্যবসায়ীদের শঙ্কিত করে তুলেছে। টানা হরতালের চেয়েও ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের। ব্যবসায়ীরা জানান, সাহেববাজার এলাকায় ক্ষতি হয়েছে অর্ধকোটির ঊর্ধ্বে। নিউ মার্কেট এলাকার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ টাকা। হকার্স মার্কেট এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ ৫-৬ হাজার। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আবু বাক্কার আলী জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এ অঞ্চলে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় শনিবার ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে গাজীপুরের উৎপাদনমুখী শিল্প খাত বিশেষ করে পোশাক খাতে। বিদ্যুতের অভাবে হাজারো শিল্প-কারখানার চাকা বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুতের অভাবে পণ্য উৎপাদন বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন শিল্প মালিকরা। ছোটখাটো পোশাক ও অন্যান্য অধিকাংশ কারখানা দুপুরের পর ছুটি দেয়া হয়। গাজীপুরে এক হাজারের বেশি পোশাক কারখানাসহ ছোট-বড় মিলে বিভিন্ন কারখানা রয়েছে প্রায় ৬ হাজার। এ শিল্পে প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। সব মিলে বিপুল আর্থিক ক্ষতি গুনতে হয়েছে মালিকদের। এলিট গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মো. সহিদুজ্জামান জানান, ডিজেল জেনারেটর দিয়ে তাদের কারখানার উৎপাদন কাজ স্বাভাবিক রাখতে হয়েছে। ডিজেল দিয়ে কারখানা চালানোয় অতিরিক্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। এ ছাড়া এক ঘণ্টা উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রায় ৭৫০ পিস শার্ট উৎপাদন কম হওয়ায় কমপক্ষে ১১ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ১৩টি উপজেলার ৫৫০ রাইস মিল, ফিড মিল, চিঁড়া-মুড়ি মিল, মসলার মিল, অয়েল মিল, কার্পেট কারখানা, স্পিনিং মিল, টেক্সটাইল মিল, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বরফকল উৎপাদন বন্ধ থাকে। এতে জেলায় প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মুক্তাগাছা উপজেলার অটো রাইস মিলের মালিক শুকুর আলী জানান, ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ময়মনসিংহে প্রায় ৩০টি অটো রাইস মিল রয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, খুলনাঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বিশেষ করে খুলনা-যশোরাঞ্চলের পাটকলগুলোতে। এ অঞ্চলের সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ৩০টির মতো পাটকলের উৎপাদন বন্ধ ছিল। এতে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো প্রায় এক-দেড় কোটি টাকার উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি পাটকলগুলোতে প্রায় ৫০০ পাটজাত পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়। যার আনুমানিক মূল্য ৪ কোটি টাকা। মিলগুলোর উৎপাদন বন্ধ থাকার ফলে বড় ধরনের লোকসানে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে হিমায়িত চিংড়ির ৪৩টি ফ্যাক্টরি রয়েছে। আর ৪০টি ফ্যাক্টরির মধ্যে ১৫-২০টি ফ্যাক্টরি রপ্তানি-বাণিজ্যের শীর্ষে রয়েছে। খুলনা বিজেএমসি’র সূত্রে জানা যায়, খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে প্রতিদিন প্রায় ১৬০-১৭৫ পাটজাত পণ্যের উৎপাদন হয়। ফলে পাটকলগুলো প্রায় এক-দেড় কোটি টাকার উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বেসরকারি আফিল জুট মিলের এমডি আকরাম হুসাইন বলেন, এ অঞ্চলের বেসরকারি প্রায় ২০-২২টি পাটকলে প্রতিদিন আনুমানিক ৫০০ টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। এবং আনুমানিক মূল্য ৪ কোটি টাকা।
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে অন্যান্য জায়গার মতো সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে পোশাক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। লোকশানের মুখ পড়েছে অনেক কারখানা মালিকরা। বিদ্যুৎ যাওয়ার পর নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে কিছু কারখানায় কাজ চললেও কয়েক ঘণ্টা পর তা আর অব্যাহত রাখা যায়নি। বেশির ভাগ কারখানায়ই কাজ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ যাওয়ার পর ২-১ ঘণ্টা কাজ চললেও তারপর পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয় বলে জানিয়েছেন সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের এইচ এম এ গার্মেন্টের মালিক মফিজুল ইসলাম।
বিজিএমইএ সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, ফার্নেস অয়েলের মাধ্যমে উৎপাদন চালিয়ে নিতে হয়। এতে মাঝারি মানের একটি কারখানার প্রতি ঘণ্টার উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ৯ হাজার টাকার মতো। দেশে ছোট-বড় মিলে সারা দেশে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পোশাক শিল্প রয়েছে। এ শিল্পে প্রায় ৩৫ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। এসব কারখানা বিদ্যুৎবিহীন স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু শনিবার বিদ্যুৎ না থাকায় বেশির ভাগ কারখানা ছিল বন্ধ। টানা জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন সচল রাখতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। এক পর্যায়ে উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে ক্ষয়তির পরিমাণ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি হবে বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. হেলাল উদ্দিন মানবজমিনকে জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ক্ষমতা বাড়লেও এর ব্যবহার কিংবা সঞ্চালনের ক্ষমতা খুবই কম। এ কারণে বিদ্যুতের এমন বিপর্যয় ঘটে। এমন বিপর্যয় আরও হলে দেশের অর্থনীতি বড় ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, শনিবার বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন কল-কারখানায় ব্যাপক হারে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু গার্মেন্ট শিল্পেই প্রায় ১৮০ কোটি টাকার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের ৬৭টি আটা ও ময়দা মিলে প্রায় ২৫০০ টন উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আদমজী ইপিজেডেও উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। একটি ফ্যাক্টরির মালিক জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় দৈনিক শতভাগ উৎপাদনের মধ্যে তার ফ্যাক্টরিতে মাত্র ৩৫ শতাংশ উৎপাদন হয়েছে। আমানা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, বিদুৎ না থাকায় তার প্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
বিকেএমইএ সহসভাপতি জিএম ফারুক জানান, শনিবার বিকেএমইএ’র খসড়া হিসেবে নারায়ণগঞ্জের নিট খাতে প্রায় ১৮০ কোটি টাকার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এটা বড় ধরনের একটা ক্ষতি। আদমজী ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার মেহবুব আলী জানান, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে কি পরিমাণ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, নির্দিষ্ট করে হিসাব করিনি। তবে উৎপাদনে ব্যাপক ব্যাহত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে আটা ও ময়দার ৬৭টি মিলেও ব্যাপক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ওই সব মিলে প্রায় ২৫০০ টন উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে বলে মিলের একটি সূত্র জানায়।
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে জানান, চট্টগ্রামে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হওয়া ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। শনিবার সারা দেশের মতো ঘোর অন্ধকারে ডুবে ছিল বন্দর নগরী চট্টগ্রামও। দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো শহর ছিল বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে বিছিন্ন। এ সময় স্থবিরতা নেমে আসে জনজীবনে। পোশাক কারখানাগুলোর শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খান। হাসপাতালগুলোতে জরুরি অপারেশন করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে যান চিকিৎসকরা। সন্ধ্যার পর নগরীতে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমরা দ্রুত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছি। বেশ কয়েক দিন তো সময় লাগবেই। এদিকে বিভ্রাটের কারণে অনেক এলাকায় মোটর চালু করতে না পারায় নগরীতে দেখা দেয় পানি সঙ্কট।
স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, শনিবার বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও ভোগান্তির মুখে পড়েন নগরবাসী। মহানগরীর বিক্রয়-বিপণি, শিল্প-কারখানা ও ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোগতাদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎনির্ভর নগরজীবনে এ অভিজ্ঞতা ব্যবসায়ীদের শঙ্কিত করে তুলেছে। টানা হরতালের চেয়েও ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের। ব্যবসায়ীরা জানান, সাহেববাজার এলাকায় ক্ষতি হয়েছে অর্ধকোটির ঊর্ধ্বে। নিউ মার্কেট এলাকার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ টাকা। হকার্স মার্কেট এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ ৫-৬ হাজার। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আবু বাক্কার আলী জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এ অঞ্চলে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় শনিবার ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে গাজীপুরের উৎপাদনমুখী শিল্প খাত বিশেষ করে পোশাক খাতে। বিদ্যুতের অভাবে হাজারো শিল্প-কারখানার চাকা বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুতের অভাবে পণ্য উৎপাদন বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন শিল্প মালিকরা। ছোটখাটো পোশাক ও অন্যান্য অধিকাংশ কারখানা দুপুরের পর ছুটি দেয়া হয়। গাজীপুরে এক হাজারের বেশি পোশাক কারখানাসহ ছোট-বড় মিলে বিভিন্ন কারখানা রয়েছে প্রায় ৬ হাজার। এ শিল্পে প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। সব মিলে বিপুল আর্থিক ক্ষতি গুনতে হয়েছে মালিকদের। এলিট গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মো. সহিদুজ্জামান জানান, ডিজেল জেনারেটর দিয়ে তাদের কারখানার উৎপাদন কাজ স্বাভাবিক রাখতে হয়েছে। ডিজেল দিয়ে কারখানা চালানোয় অতিরিক্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। এ ছাড়া এক ঘণ্টা উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রায় ৭৫০ পিস শার্ট উৎপাদন কম হওয়ায় কমপক্ষে ১১ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ১৩টি উপজেলার ৫৫০ রাইস মিল, ফিড মিল, চিঁড়া-মুড়ি মিল, মসলার মিল, অয়েল মিল, কার্পেট কারখানা, স্পিনিং মিল, টেক্সটাইল মিল, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বরফকল উৎপাদন বন্ধ থাকে। এতে জেলায় প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মুক্তাগাছা উপজেলার অটো রাইস মিলের মালিক শুকুর আলী জানান, ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ময়মনসিংহে প্রায় ৩০টি অটো রাইস মিল রয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, খুলনাঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বিশেষ করে খুলনা-যশোরাঞ্চলের পাটকলগুলোতে। এ অঞ্চলের সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ৩০টির মতো পাটকলের উৎপাদন বন্ধ ছিল। এতে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো প্রায় এক-দেড় কোটি টাকার উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি পাটকলগুলোতে প্রায় ৫০০ পাটজাত পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়। যার আনুমানিক মূল্য ৪ কোটি টাকা। মিলগুলোর উৎপাদন বন্ধ থাকার ফলে বড় ধরনের লোকসানে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে হিমায়িত চিংড়ির ৪৩টি ফ্যাক্টরি রয়েছে। আর ৪০টি ফ্যাক্টরির মধ্যে ১৫-২০টি ফ্যাক্টরি রপ্তানি-বাণিজ্যের শীর্ষে রয়েছে। খুলনা বিজেএমসি’র সূত্রে জানা যায়, খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে প্রতিদিন প্রায় ১৬০-১৭৫ পাটজাত পণ্যের উৎপাদন হয়। ফলে পাটকলগুলো প্রায় এক-দেড় কোটি টাকার উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বেসরকারি আফিল জুট মিলের এমডি আকরাম হুসাইন বলেন, এ অঞ্চলের বেসরকারি প্রায় ২০-২২টি পাটকলে প্রতিদিন আনুমানিক ৫০০ টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। এবং আনুমানিক মূল্য ৪ কোটি টাকা।
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে অন্যান্য জায়গার মতো সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে পোশাক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। লোকশানের মুখ পড়েছে অনেক কারখানা মালিকরা। বিদ্যুৎ যাওয়ার পর নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে কিছু কারখানায় কাজ চললেও কয়েক ঘণ্টা পর তা আর অব্যাহত রাখা যায়নি। বেশির ভাগ কারখানায়ই কাজ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ যাওয়ার পর ২-১ ঘণ্টা কাজ চললেও তারপর পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয় বলে জানিয়েছেন সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের এইচ এম এ গার্মেন্টের মালিক মফিজুল ইসলাম।
No comments