রহস্যের বেড়াজালে বন্দি বালাগঞ্জের জোড়া খুন
‘অনৈতিক’ সম্পর্কের কারণে মাওলানা আবদুল হামিদ শুকুর ও গাড়িচালক আরশ আলী খুন হয়েছেন-এ অভিযোগ মানতে রাজি নন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। তারা বলছেন, টাকার জন্যই মাওলানা শুকুর ও গাড়িচালককে খুন করা হয়েছে। আর খুনের ঘটনার পর অনৈতিকতার অভিযোগ তুলে খুনের ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ দাবি করেছেন নিহত মাওলানা শুকুরের মা সালেহা খাতুন ও স্ত্রী আফিয়া বেগম। আফিয়া বেগম সাংবাদিকদের কাছে জানান, খুনের ঘটনার পরদিনও ঘাতক শিমুল তাদের বাড়িতে এসেছে। ছোট বোন সুফিয়া বেগমও এসে খবর নিয়েছে। মোবাইল ফোনে খোঁজখবর নিতো। আর ধরা পড়ার পর স্বামীর চরিত্রে দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বালাগঞ্জ পূর্ব বাজার মসজিদের ইমাম মাওলানা শুকুর ও গাড়িচালক আরশ আলী গুম হন ১৮ই অক্টোবর রাতে। ওই দিন মাওলানা শুকুর গাড়িচালক আরশকে নিয়ে তাজপুর আসার পথে গুম হন। ঘটনার ৫ দিন পর পুলিশ ইলাশপুরে মাওলানার শ্যালিকার বাসার বাথরুম থেকে উদ্ধার করে দুই জনের লাশ। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত মাওলানার শ্যালিকা সুফিয়া ও তার ছেলে মারজানুল আলম শিমুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তারা দুই জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে জানায়, মাওলানা শুকুর ও গাড়িচালককে তারাই কুপিয়ে খুন করে বাথরুমে লাশ পুঁতে রাখে। অনৈতিক সম্পর্কের কারণে তাদের খুন করা হয় বলে জানায় তারা। এদিকে, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর ঘাতক মা ও ছেলেকে জেলে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ শুরু করেছে ঘটনার তদন্ত। তবে, গতকাল পর্যন্ত পুলিশ ঘাতকদের স্বীকারোক্তির বাইরে থাকা কোন তথ্যই পায়নি। বালাগঞ্জ থানার ওসি অকিল উদ্দিন জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে। শেষ হওয়ার পর জানা যাবে-এ ঘটনার পেছনে রহস্য আছে কিনা। ওদিকে পুত্রশোকে কাতর ইমামের মা উপজেলার খারমাপুর গ্রামের সালেহা খাতুন বলেন, ‘ছেলের শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও শ্যালিকারা মিলে আমার ছেলের অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ এবং শ্যালিকার বিয়ের বিরোধের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পরিকল্পিত ভাবে খুন করেছে। বড় মেয়ে আম্বিয়া বেগম বলেন, আমার আব্বা খুব ভাল মানুষ ছিলেন। এখন তারা মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। একই ভাবে আরশ আলীর পরিবারও এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চায়। লোমহর্ষক জোড়া খুনের মোটিভ নিয়ে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। আটক দুই আসামি আত্মপক্ষ সমর্থন করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অনৈতিক সম্পর্ক খুনের প্রকৃত কারণ বলে উল্লেখ করলেও তা মেনে নিতে নারাজ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। মা-ছেলে মিলে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটানো-রাতারাতি বাথরুমের মধ্যে ঢালাই করে লাশ গুম করা এবং ঘটনা আড়াল করতে অটোরিকশা দূরবর্তী স্থানে রেখে আসার বিষয়টি জনমনে ব্যাপক প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। সিএনজি চালকের খাসিপুর গ্রামে পরিবারেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এনজিও থেকে লোন নিয়ে সিএনজি কিনে সংসার চলছিল আরশ আলীর। তার মা ময়জান বিবির কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ। যাকে দেখেন তাকে বলেন তার ছেলেকে এনে দেয়ার জন্য। ২ সন্তান নিয়ে শোকে নির্বাক হয়ে গেছেন স্ত্রী রায়না বেগম। এলাকাবাসী তার পরিবারকে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য তার স্ত্রীকে দিয়ে একটি যৌথ একাউন্ট করিয়েছেন। হত্যা মামলার বাদী নিহত ইমামের ছোট ভাই আবদুল খালিক ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পারিবারিক কলহ ও টাকার জন্য আমার ভাইকে খুন করা হলো। খুনি আফিয়া ও তার ছেলে শিমুল এখন আমার ভাইয়ের চরিত্রে কলঙ্ক দিচ্ছে। তিনি আরও জানান, টাকা পয়সার লেনদেন নিয়ে আমার ভাবী সুফিয়া বেগম ও তার বোন আফিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব ছিল। এমনকি ভাবী সুফিয়া সব সময়ই তার বোন আফিয়া ও ছেলে শিমুলকে অর্থনৈতিক লেনদেনের বিষয়ে অবিশ্বাস করতেন। মানবাধিকার কর্মী সামছুল ইসলাম শামিম ও সাদিকুর রহমান সাদেক বলেন, কোন লোকের চরিত্র সম্পর্কে না জেনে মন্তব্য করা কোন ভাল লোকের কাজ নয়। এ জোড়া খুনের ঘটনাটি বালাগঞ্জের সকল ঘটনাকে হার মানিয়েছে।
No comments