নিষ্ফল সার্ক শীর্ষ সম্মেলন
ভারত ও পাকিস্তানের মতবিরোধের কারণে
নিষ্ফলই হল এবারের সার্ক শীর্ষ সম্মেলন। মোটরযান, রেল ও বিদ্যুৎবিষয়ক তিনটি
আঞ্চলিক চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পাকিস্তানের আপত্তির কারণে কোনোটিই সই
হয়নি। তিনটি চুক্তিরই প্রস্তাব করেছিল ভারত। মোটরযান ও রেল চুক্তির
প্রস্তাব শীর্ষ নেতারা সম্মেলনে বসার আগেই নাকচ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ চুক্তিটি
সই করার বিষয়ে ক্ষীণ আশার সঞ্চার হলেও শেষ পর্যন্ত সেটিও হয়নি।
অপরদিকে পাকিস্তানের প্রস্তাবিত কিছু কিছু বিষয়েও ভারত আপত্তি জানিয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করে দক্ষিণ এশিয়ার ১৭০ কোটি মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের স্বপ্ন পূরণে সার্ক নেতারা আরেকবার ব্যর্থ হলেন।
সার্কের পরবর্তী ১৯তম সম্মেলন পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কাঠমান্ডু সম্মেলনে ভারত ও পাকিস্তানসহ আট জাতির শীর্ষ নেতারা পারস্পরিক দোষারোপ ও অবিশ্বাস থেকে বেরিয়ে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। দু’দিনের শীর্ষ সম্মেলন আজ কাঠমান্ডু ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হচ্ছে।
বুধবার নেপালের স্থানীয় সময় সাড়ে ৯টায় কাঠমান্ডুর এক্সিকিউটিভ রোডের ভ্রীকুটি মণ্ডপে অবস্থিত রাষ্ট্রীয় সভাগৃহের নগর মিলনায়তনে নেপালের জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর সার্কের আট দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের উপস্থিতিতে সংস্থার বিদায়ী চেয়ারম্যান মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন আবদুল গাইয়ুম সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। রীতি অনুযায়ী তিনি স্বাগতিক দেশ নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এর আগে সব নেতা আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনেও যোগ দেন।
পরে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালান নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা। এরপর তিনি উদ্বোধনী ভাষণ দেন। এবারের সার্কের আলোচ্যসূচি অনুমোদনের পর একে একে ভাষণ দেন অন্য শীর্ষনেতারাও। বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্য দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিন তোবগে, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজা পাকসে এবং আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। তারা ছাড়াও উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য দিয়েছেন সার্কের মহাসচিব অর্জুন বাহাদুর থাপা এবং যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জাপানসহ নয়টি পর্যবেক্ষক সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা। পররাষ্ট্র সচিব ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিন চুক্তির বিষয়ে প্রত্যাশিত অগ্রগতি না হওয়ায় শীর্ষ সম্মেলনে চুক্তির বিষয়টি তোলাই হয়নি। মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে মূলত পাকিস্তানের বিরোধিতার কারণে এসব বিষয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি। শেষ পর্যন্ত চুক্তির বিষয়টি নিষ্ফলাই থাকে। তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পরবর্তী সার্ক শীর্ষ সম্মেলন তার দেশে আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন। আজ সম্মেলনের সমাপনী দিনে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে। এর আগে চতুর্থ ও দ্বাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
নিজ নিজ বক্তব্য দেয়ার সময় পরস্পরকে দোষারোপ করে বক্তব্য দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। নরেন্দ্র মোদি সম্মেলনে দেয়া ভাষণে পাকিস্তানকে ইঙ্গিত করে বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের কারণে সার্কের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। রাষ্ট্র ছোট হোক বা বড় সবাই একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
সার্কের এগিয়ে যাওয়ার গতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সার্ক যে গতিতে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে না। ফলে আমরা অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য তার দেশের পক্ষে ৩-৫ বছরের ব্যবসায়িক ভিসা দেয়ার কথা জানান। একই সঙ্গে ভারতে চিকিৎসা ভিসা সহজ করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, এখন থেকেই এই ব্যবসায়িক ভিসা দেয়া হবে। পাশাপাশি ভারতে চিকিৎসার জন্য আসা রোগী ও তার একজন সঙ্গী তাৎক্ষণিক চিকিৎসা ভিসাও পাবেন। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, এর মাধ্যমে সার্ক দেশগুলো একে অপরের গ্রাম ও শহরকে উন্নত করতে সক্ষম হবে। এ অঞ্চলের জন্য উজ্জ্বল আগামী নির্মাণ করতে পারবে। সার্ক দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের বিশাল বাণিজ্য থাকলেও তা টেকসই নয়।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমরা আমাদের ক্রেতা ও পরিবেশের জন্য কী করছি, সে বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। সরাসরি বাণিজ্য রুট তৈরির মাধ্যমে ক্রেতা ও উৎপাদকের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে চাই। ভারত এই কাজটি করবে।
সার্কের অন্য দেশগুলোর নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন, আমরা এক হয়ে কাজ শুরু করি। আমাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করি। নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাই। নৈরাজ্যকে আশাবাদে পরিণত করতে একযোগে কাজ করি।
তিনি বলেন, সার্কে এটিই তার প্রথম অংশগ্রহণ হলেও উপস্থিত অনেকের সঙ্গে দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। দক্ষিণ এশিয়ার মতো বিশ্বের আর কোথাও এত সম্মিলিত প্রচেষ্টা নেই। ভালো প্রতিবেশী সব সময় আশা জাগায়। ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বাইরের দেশে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। অথচ এখানে বিনিয়োগ হচ্ছে তার এক শতাংশেরও কম। ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করছে।
অন্যদিকে ভারতকে ইঙ্গিত করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেন, পারস্পরিক লড়াই নয়, বিদ্যমান সমস্যার সমাধানকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। সার্ক অঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও শান্তি প্রতিষ্ঠাকে পাকিস্তান সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।
তিনি বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে পাকিস্তান সব সময়ই সার্কের পাশে থাকবে। ১৮তম সম্মেলনের প্রতিপাদ্যটিতে সব রাষ্ট্রের মানুষের মনের আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। আমাদের উচিত সবার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার।
‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াই চালান’ : উদ্বোধনী ভাষণে নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াই চালানোর জন্য সার্ক শীর্ষ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ আমাদের অভিন্ন শত্র“। দক্ষিণ এশিয়া এর ভয়াবহ শিকার। সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা এবং ধর্মীয় মৌলবাদ এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করছে। তাই সন্ত্রাসবাদ দমনে আমাদের সম্মিলিত ও দ্ব্যর্থহীন পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে সব প্রতিষ্ঠান ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যেও স্বচ্ছ ও কার্যকর সহযোগিতাসহ সার্কের আওতায় একটি প্রাতিষ্ঠানিক ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন।
আজকের কর্মসূচি : সম্মেলনের সমাপনী দিন আজ দিনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আট সদস্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা এবং পর্যবেক্ষক দেশগুলোর প্রতিনিধিরা অবকাশের জন্য হেলিকপ্টারযোগে কাঠমান্ডু থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে পর্যটন কেন্দ্র ‘দাওয়ারিকা রিসোর্ট’ যাবেন। সেখানে নেতারা একে অপরের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেবেন। সেখান থেকে ফিরে শীর্ষ নেতারা সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এই সমাপনী অনুষ্ঠানেই কাঠমান্ডু ঘোষণা দেয়া হবে।
সমাপনী অনুষ্ঠানের পর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা নেপালের রাষ্ট্রপতি ড. রামবরন যাদবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তারা নেপালের রাষ্ট্রপতির দেয়া ভোজসভায়ও যোগ দেবেন।
অপরদিকে পাকিস্তানের প্রস্তাবিত কিছু কিছু বিষয়েও ভারত আপত্তি জানিয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করে দক্ষিণ এশিয়ার ১৭০ কোটি মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের স্বপ্ন পূরণে সার্ক নেতারা আরেকবার ব্যর্থ হলেন।
সার্কের পরবর্তী ১৯তম সম্মেলন পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কাঠমান্ডু সম্মেলনে ভারত ও পাকিস্তানসহ আট জাতির শীর্ষ নেতারা পারস্পরিক দোষারোপ ও অবিশ্বাস থেকে বেরিয়ে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। দু’দিনের শীর্ষ সম্মেলন আজ কাঠমান্ডু ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হচ্ছে।
বুধবার নেপালের স্থানীয় সময় সাড়ে ৯টায় কাঠমান্ডুর এক্সিকিউটিভ রোডের ভ্রীকুটি মণ্ডপে অবস্থিত রাষ্ট্রীয় সভাগৃহের নগর মিলনায়তনে নেপালের জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর সার্কের আট দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের উপস্থিতিতে সংস্থার বিদায়ী চেয়ারম্যান মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন আবদুল গাইয়ুম সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। রীতি অনুযায়ী তিনি স্বাগতিক দেশ নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এর আগে সব নেতা আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনেও যোগ দেন।
পরে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালান নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা। এরপর তিনি উদ্বোধনী ভাষণ দেন। এবারের সার্কের আলোচ্যসূচি অনুমোদনের পর একে একে ভাষণ দেন অন্য শীর্ষনেতারাও। বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্য দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিন তোবগে, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজা পাকসে এবং আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। তারা ছাড়াও উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য দিয়েছেন সার্কের মহাসচিব অর্জুন বাহাদুর থাপা এবং যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জাপানসহ নয়টি পর্যবেক্ষক সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা। পররাষ্ট্র সচিব ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিন চুক্তির বিষয়ে প্রত্যাশিত অগ্রগতি না হওয়ায় শীর্ষ সম্মেলনে চুক্তির বিষয়টি তোলাই হয়নি। মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে মূলত পাকিস্তানের বিরোধিতার কারণে এসব বিষয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি। শেষ পর্যন্ত চুক্তির বিষয়টি নিষ্ফলাই থাকে। তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পরবর্তী সার্ক শীর্ষ সম্মেলন তার দেশে আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন। আজ সম্মেলনের সমাপনী দিনে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে। এর আগে চতুর্থ ও দ্বাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
নিজ নিজ বক্তব্য দেয়ার সময় পরস্পরকে দোষারোপ করে বক্তব্য দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। নরেন্দ্র মোদি সম্মেলনে দেয়া ভাষণে পাকিস্তানকে ইঙ্গিত করে বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের কারণে সার্কের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। রাষ্ট্র ছোট হোক বা বড় সবাই একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
সার্কের এগিয়ে যাওয়ার গতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সার্ক যে গতিতে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে না। ফলে আমরা অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য তার দেশের পক্ষে ৩-৫ বছরের ব্যবসায়িক ভিসা দেয়ার কথা জানান। একই সঙ্গে ভারতে চিকিৎসা ভিসা সহজ করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, এখন থেকেই এই ব্যবসায়িক ভিসা দেয়া হবে। পাশাপাশি ভারতে চিকিৎসার জন্য আসা রোগী ও তার একজন সঙ্গী তাৎক্ষণিক চিকিৎসা ভিসাও পাবেন। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, এর মাধ্যমে সার্ক দেশগুলো একে অপরের গ্রাম ও শহরকে উন্নত করতে সক্ষম হবে। এ অঞ্চলের জন্য উজ্জ্বল আগামী নির্মাণ করতে পারবে। সার্ক দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের বিশাল বাণিজ্য থাকলেও তা টেকসই নয়।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমরা আমাদের ক্রেতা ও পরিবেশের জন্য কী করছি, সে বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। সরাসরি বাণিজ্য রুট তৈরির মাধ্যমে ক্রেতা ও উৎপাদকের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে চাই। ভারত এই কাজটি করবে।
সার্কের অন্য দেশগুলোর নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন, আমরা এক হয়ে কাজ শুরু করি। আমাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করি। নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাই। নৈরাজ্যকে আশাবাদে পরিণত করতে একযোগে কাজ করি।
তিনি বলেন, সার্কে এটিই তার প্রথম অংশগ্রহণ হলেও উপস্থিত অনেকের সঙ্গে দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। দক্ষিণ এশিয়ার মতো বিশ্বের আর কোথাও এত সম্মিলিত প্রচেষ্টা নেই। ভালো প্রতিবেশী সব সময় আশা জাগায়। ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বাইরের দেশে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। অথচ এখানে বিনিয়োগ হচ্ছে তার এক শতাংশেরও কম। ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করছে।
অন্যদিকে ভারতকে ইঙ্গিত করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেন, পারস্পরিক লড়াই নয়, বিদ্যমান সমস্যার সমাধানকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। সার্ক অঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও শান্তি প্রতিষ্ঠাকে পাকিস্তান সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।
তিনি বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে পাকিস্তান সব সময়ই সার্কের পাশে থাকবে। ১৮তম সম্মেলনের প্রতিপাদ্যটিতে সব রাষ্ট্রের মানুষের মনের আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। আমাদের উচিত সবার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার।
‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াই চালান’ : উদ্বোধনী ভাষণে নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াই চালানোর জন্য সার্ক শীর্ষ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ আমাদের অভিন্ন শত্র“। দক্ষিণ এশিয়া এর ভয়াবহ শিকার। সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা এবং ধর্মীয় মৌলবাদ এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করছে। তাই সন্ত্রাসবাদ দমনে আমাদের সম্মিলিত ও দ্ব্যর্থহীন পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে সব প্রতিষ্ঠান ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যেও স্বচ্ছ ও কার্যকর সহযোগিতাসহ সার্কের আওতায় একটি প্রাতিষ্ঠানিক ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন।
আজকের কর্মসূচি : সম্মেলনের সমাপনী দিন আজ দিনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আট সদস্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা এবং পর্যবেক্ষক দেশগুলোর প্রতিনিধিরা অবকাশের জন্য হেলিকপ্টারযোগে কাঠমান্ডু থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে পর্যটন কেন্দ্র ‘দাওয়ারিকা রিসোর্ট’ যাবেন। সেখানে নেতারা একে অপরের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেবেন। সেখান থেকে ফিরে শীর্ষ নেতারা সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এই সমাপনী অনুষ্ঠানেই কাঠমান্ডু ঘোষণা দেয়া হবে।
সমাপনী অনুষ্ঠানের পর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা নেপালের রাষ্ট্রপতি ড. রামবরন যাদবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তারা নেপালের রাষ্ট্রপতির দেয়া ভোজসভায়ও যোগ দেবেন।
No comments