ট্রাফিক আইন মানেন না যাঁরা by মোর্শেদ নোমান
(ছবি:১-পুলিশ সদস্যরাও সড়কের উল্টোদিক দিয়ে গাড়ি চালান। ছবিটি ফার্মগেট থেকে তোলা। ছবি:১-উল্টোপথে গাড়ি চালিয়ে প্রভাবশালীরা দ্রুত সড়ক পাড়ি দেন। ছবিটি আবদুল গণি রোড থেকে তোলা। ছবি:১-পুলিশ সদস্যরাও সড়কের উল্টোদিক দিয়ে গাড়ি চালান। ছবিটি আবদুল গণি রোড থেকে তোলা। ছবি:১-ট্রাফিক আইন না মেনে অনেক প্রভাবশালী সড়কের উল্টোদিক দিয়ে গাড়ি চালান। ছবিটি ফার্মগেট পুলিশ বক্সের সামনে থেকে তোলা হয়েছে। ছবি: জাহিদুল করিম ও মনিরুল আলম) ২৪ নভেম্বর সোমবার, বেলা সাড়ে ১১টা। ফার্মগেট এলাকার খামারবাড়ির সামনে পুলিশ বক্সের মোড়। সেখান থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের মোড় পর্যন্ত গাড়ির লম্বা সারি। অনেক গাড়ি আধা ঘণ্টারও বেশি সময় সিগন্যালে আটকে আছে রাস্তা পার হওয়ার অপেক্ষায়। হঠাৎ করেই ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-০৯৬০ নম্বরের একটি গাড়ি পাশের সড়ক দিয়ে এসে রাস্তা পার হওয়ার জন্য এগিয়ে এল। ট্রাফিক সদস্যরা উল্টোপাশের সিগন্যালের গাড়ি আটকে ওই গাড়িটিকে পার করে দিলেন। একই দিন বেলা দুইটা। রাজধানীর আবদুল গণি রোড। সচিবালয় এলাকার এ সড়কে হঠাৎ করেই দেখা গেল উল্টো দিক থেকে একটি গাড়ি আসছে। ঢাকা মেট্রো-ঘ-সিরিজের ওই গাড়িটি ট্রাফিক সদস্যদের সামনে দিয়ে উল্টো দিক থেকে বেরিয়ে গেল। রাজধানীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। প্রতিদিনই রাজধানীর প্রতিটি সড়কেই ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করার দৃশ্য দেখা যায়। আইন ভাঙার এ দলে মন্ত্রী, সাংসদ, আমলা, রাজনীতিবিদ, পুলিশ কর্মকর্তা ও সংবাদমাধ্যমের কর্মীসহ অনেকেই রয়েছেন।
জানতে চাইলে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা আইন মানার কথা, তাঁরাই যদি আইন ভঙ্গ করেন, তাহলে সাধারণ নাগরিকদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মোসলেহ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাফিক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে আইন অমান্য করার এ প্রবণতাটি বন্ধে ইতিমধ্যেই ট্রাফিক সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা মানা হচ্ছে কি না, সেটা তদারক করবেন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তারা।
উল্টোপথে যাওয়া, হেলমেট ছাড়া রাস্তায় চলাচলসহ আইন অমান্য করার কারণে অনেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
যানজটের মহানগর ঢাকায় প্রতিদিনই নগরবাসীকে একটি বড় সময় রাজপথেই কাটাতে হয়। ঢাকার কয়েকজন ট্রাফিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যেদিন রাস্তায় বের হন, সেদিন যানজটের পরিমাণ যেন অনেকটাই বেড়ে যায়। তাঁদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অবশ্য বেশির ভাগ মানুষ এ দুর্ভোগ মেনে নেন। সমালোচনাও কম হয় না।
অনেক প্রভাবশালী মানুষই রাস্তায় যানজট এড়িয়ে নির্বিঘ্নে যাওয়ার চেষ্টায় থাকেন। তা করতে গিয়ে সড়কের অন্য অংশগুলোতে যান চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে হয়। তখনই ওই অংশে যানজটের পরিমাণ বেড়ে যায়।
একই সঙ্গে সাইরেন বাজিয়ে সাংসদদের গাড়িগুলো যখন উল্টোপথে আসে, তখন ট্রাফিক সদস্যদের কিছুই করার থাকে না; বরং অন্য গাড়িগুলোকে থামিয়ে এসব গাড়ি পার করে দেন তাঁরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, এসব গাড়ি এক মিনিট দেরি করালে নিজেদের চাকরির ঝুঁকি তৈরি হয়। অনেক ট্রাফিক সদস্যকে এ ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে বলে জানান তিনি।
ফার্মগেট পুলিশ বক্সের সামনে কাজী আলমগীর হোসেন নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি অনেক বড়। তাই তাঁরা যখন চলাচল করেন, তখন খারাপ লাগে না। কিন্তু যখন এমপি-মন্ত্রী-আমলারা রাস্তায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি তৈরি করে নিজেরা আরামে চলতে চান, সেটা খুব খারাপ লাগে।’
ট্রাফিকের আরেক সদস্যের ভাষ্য, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, সাংসদ, আমলার পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তাদের গাড়ি চলাচলের সময়ও তাঁরা দ্রুত পার করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে এসব কর্মকর্তার এ সুবিধা পাওয়ার কথা না থাকলেও তাঁদের সেই সুবিধা দেওয়া হয়। ট্রাফিকের ওই সদস্য বলেন, ওই সময় সড়কের ওপর সাধারণ মানুষ যখন বিভিন্ন কটু মন্তব্য করেন, তখন খুব খারাপ লাগে।
সাজিয়া ইসলাম নামের একজন ব্যাংক কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘আমাদের নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে পৌঁছাতে হয়। হঠাৎ করে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে প্রভাবশালীদের পার করে দেওয়ার বিষয়টি খুব কষ্ট দেয়।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘তাঁদের সময়ের মূল্য আছে, আমাদের নেই?’
পল্টন, শেরাটন মোড়, কাকরাইল, শাহবাগ এলাকায় বেশ কয়েকজন ট্রাফিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের গাড়ির চালক ও সংবাদকর্মীরাও আইন ভাঙার তালিকায় বড় আকারে রয়েছেন। দ্রুত অফিস বা অ্যাসাইনমেন্টে যাওয়ার কথা বলে তাঁরাও অনেক ক্ষেত্রে উল্টোদিকের সড়ক ব্যবহার করে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেন। প্রভাবশালীদের গাড়ি আটকানোর ক্ষেত্রে যে ধরনের ভীতি থাকে, সংবাদকর্মীদের বেলায়ও একই অনুভূতি কাজ করে ট্রাফিক সদস্যদের মধ্যে। চাইলেও কিছু করতে পারেন না বলে জানান এসব ট্রাফিক সদস্য।
রাজধানীতে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সংকেত ব্যবস্থা থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণ করা হয় হাতে। এর মাধ্যমেই প্রভাবশালীদের নির্বিঘ্নে পারাপারের ব্যবস্থা করতে পারেন ট্রাফিক সদস্যরা। এক মিনিট পর যে সিগন্যাল চালু হওয়ার কথা, সেই সিগন্যাল চালু করা হয় কয়েক মিনিট পর। সাধারণ মানুষকে পড়তে হয় দীর্ঘ যানজটের বিড়ম্বনায়।
ইলিয়াস কাঞ্চন আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আইন ভঙ্গকারীর পরিচয় বিবেচনা না করে তাদের শাস্তি দিলে সাধারণ মানুষের কাছে ইতিবাচক বার্তা যাবে। আর তখনই সাধারণ মানুষ আইন মানার বিষয়ে সচেতন হবে।
জানতে চাইলে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা আইন মানার কথা, তাঁরাই যদি আইন ভঙ্গ করেন, তাহলে সাধারণ নাগরিকদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মোসলেহ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাফিক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে আইন অমান্য করার এ প্রবণতাটি বন্ধে ইতিমধ্যেই ট্রাফিক সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা মানা হচ্ছে কি না, সেটা তদারক করবেন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তারা।
উল্টোপথে যাওয়া, হেলমেট ছাড়া রাস্তায় চলাচলসহ আইন অমান্য করার কারণে অনেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
যানজটের মহানগর ঢাকায় প্রতিদিনই নগরবাসীকে একটি বড় সময় রাজপথেই কাটাতে হয়। ঢাকার কয়েকজন ট্রাফিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যেদিন রাস্তায় বের হন, সেদিন যানজটের পরিমাণ যেন অনেকটাই বেড়ে যায়। তাঁদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অবশ্য বেশির ভাগ মানুষ এ দুর্ভোগ মেনে নেন। সমালোচনাও কম হয় না।
অনেক প্রভাবশালী মানুষই রাস্তায় যানজট এড়িয়ে নির্বিঘ্নে যাওয়ার চেষ্টায় থাকেন। তা করতে গিয়ে সড়কের অন্য অংশগুলোতে যান চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে হয়। তখনই ওই অংশে যানজটের পরিমাণ বেড়ে যায়।
একই সঙ্গে সাইরেন বাজিয়ে সাংসদদের গাড়িগুলো যখন উল্টোপথে আসে, তখন ট্রাফিক সদস্যদের কিছুই করার থাকে না; বরং অন্য গাড়িগুলোকে থামিয়ে এসব গাড়ি পার করে দেন তাঁরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, এসব গাড়ি এক মিনিট দেরি করালে নিজেদের চাকরির ঝুঁকি তৈরি হয়। অনেক ট্রাফিক সদস্যকে এ ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে বলে জানান তিনি।
ফার্মগেট পুলিশ বক্সের সামনে কাজী আলমগীর হোসেন নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি অনেক বড়। তাই তাঁরা যখন চলাচল করেন, তখন খারাপ লাগে না। কিন্তু যখন এমপি-মন্ত্রী-আমলারা রাস্তায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি তৈরি করে নিজেরা আরামে চলতে চান, সেটা খুব খারাপ লাগে।’
ট্রাফিকের আরেক সদস্যের ভাষ্য, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, সাংসদ, আমলার পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তাদের গাড়ি চলাচলের সময়ও তাঁরা দ্রুত পার করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে এসব কর্মকর্তার এ সুবিধা পাওয়ার কথা না থাকলেও তাঁদের সেই সুবিধা দেওয়া হয়। ট্রাফিকের ওই সদস্য বলেন, ওই সময় সড়কের ওপর সাধারণ মানুষ যখন বিভিন্ন কটু মন্তব্য করেন, তখন খুব খারাপ লাগে।
সাজিয়া ইসলাম নামের একজন ব্যাংক কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘আমাদের নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে পৌঁছাতে হয়। হঠাৎ করে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে প্রভাবশালীদের পার করে দেওয়ার বিষয়টি খুব কষ্ট দেয়।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘তাঁদের সময়ের মূল্য আছে, আমাদের নেই?’
পল্টন, শেরাটন মোড়, কাকরাইল, শাহবাগ এলাকায় বেশ কয়েকজন ট্রাফিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের গাড়ির চালক ও সংবাদকর্মীরাও আইন ভাঙার তালিকায় বড় আকারে রয়েছেন। দ্রুত অফিস বা অ্যাসাইনমেন্টে যাওয়ার কথা বলে তাঁরাও অনেক ক্ষেত্রে উল্টোদিকের সড়ক ব্যবহার করে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেন। প্রভাবশালীদের গাড়ি আটকানোর ক্ষেত্রে যে ধরনের ভীতি থাকে, সংবাদকর্মীদের বেলায়ও একই অনুভূতি কাজ করে ট্রাফিক সদস্যদের মধ্যে। চাইলেও কিছু করতে পারেন না বলে জানান এসব ট্রাফিক সদস্য।
রাজধানীতে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সংকেত ব্যবস্থা থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণ করা হয় হাতে। এর মাধ্যমেই প্রভাবশালীদের নির্বিঘ্নে পারাপারের ব্যবস্থা করতে পারেন ট্রাফিক সদস্যরা। এক মিনিট পর যে সিগন্যাল চালু হওয়ার কথা, সেই সিগন্যাল চালু করা হয় কয়েক মিনিট পর। সাধারণ মানুষকে পড়তে হয় দীর্ঘ যানজটের বিড়ম্বনায়।
ইলিয়াস কাঞ্চন আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আইন ভঙ্গকারীর পরিচয় বিবেচনা না করে তাদের শাস্তি দিলে সাধারণ মানুষের কাছে ইতিবাচক বার্তা যাবে। আর তখনই সাধারণ মানুষ আইন মানার বিষয়ে সচেতন হবে।
No comments