যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রতিবাদের ঝড়
যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের ফার্গুসন থেকে কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে অন্যান্য নগরে। নিউইয়র্ক, বোস্টন, ওয়াশিংটন ডিসি, লস অ্যাঞ্জেলেসসহ অন্তত ১৭০টি নগরে মঙ্গলবার রাজপথে নেমেছে মানুষ। তবে সহিংসতার মাত্রা ও গ্রেপ্তারের সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কম ছিল। ফার্গুসনে গত ৯ আগস্ট শ্বেতাঙ্গ এক পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে নিহত হন নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ মাইকেল ব্রাউন। এ ঘটনায় গঠিত গ্র্যান্ড জুরি গত সোমবার সিদ্ধান্ত দেয়, পুলিশ কর্মকর্তা ড্যারেন উইলসন আত্মরক্ষার জন্যই গুলি করার ফলে ব্রাউনের মৃত্যু ঘটেছে। এ কারণে তাঁকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়নি। এই সিদ্ধান্ত প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে ফার্গুসনের মানুষ। বিক্ষোভের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি ছাড়াও হিউস্টন, ফ্লোরিডা, ফিলাডেলফিয়া, শিকাগো, ডেট্রয়েটসহ বড় বড় নগরে রাজপথে নেমে আসে বিক্ষোভকারীরা। তবে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে শান্ত ছিল। কৃষ্ণাঙ্গরা ছাড়াও নাগরিক ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা এসব বিক্ষোভে যোগ দেন। তাঁদের হাতে ছিল পুলিশের নির্যাতন এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান লেখা ব্যানার-ফেস্টুন। বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু ফার্গুসনে মঙ্গলবারও পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে লুটপাট ও সহিংসতার মাত্রা সোমবারের চেয়ে কিছুটা কম ছিল। গ্রেপ্তারের সংখ্যাও ছিল কম। কোথাও পুলিশকে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা যায়নি। স্থানীয় সেন্ট লুইস কাউন্টির পুলিশ প্রধান জন ব্লেমার বলেন, ‘আমরা খুব আশাবাদী হচ্ছি না। তার পরও বলব, সোমবারের রাতের তুলনায় মঙ্গলবারের রাতে তুলনামূলক ভালো পরিস্থিতি থাকবে।’ ফার্গুসনে মঙ্গলবার ৪৪ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জর্জিয়ার আটলান্টায় একজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘তারা আমাদের ন্যায়বিচার দিতে পারেনি। আমরাও তাদের শান্তিতে থাকতে দেব না।’ ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের একজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা উইলসনকে বিচারের আওতায় না আনার মানে হলো বিচারব্যবস্থায় কৃষ্ণাঙ্গ জীবনের কোনো দাম নেই।’ বিভিন্ন নগরে বিক্ষোভ থেকে নাগরিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে শতাধিক লোককে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে। সোমবার রাতেই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। মঙ্গলবার শিকাগোতে একটি অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দেন।
সেখানে ওবামা বলেন, বিক্ষোভের নামে যারা লুটপাট, ভাঙচুর করছে তাদের প্রতি কোনো সমবেদনা নেই। তিনি বলেন, গাড়ি পুড়িয়ে কোনো নাগরিক অধিকার আইন, অভিবাসন আইন বা স্বাস্থ্যসেবা আইন আসেনি। এসব অর্জিত হয়েছে জনগণের ঐক্যবদ্ধ জাগরণের মাধ্যমে। নিহত ব্রাউনের পরিবার বলেছে, গ্র্যান্ড জুরির সিদ্ধান্ত দুঃখজনক। তবে তারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য বিক্ষোভকারীদের আহ্বান জানায়। গ্র্যান্ড জুরি নিয়ে বিতর্ক: বিভিন্ন দেশের বিচার-প্রক্রিয়ায় গ্র্যান্ড জুরির ব্যবস্থা আছে। গ্র্যান্ড জুরি হলো বিশিষ্ট কিছুসংখ্যক নাগরিকের সমন্বয়ে গঠিত আইনি সংস্থা, যারা অপরাধের ঘটনা বিশদ খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত দেয় কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে কি না। তবে গ্র্যান্ড জুরি কাউকে বিচারের আওতায় না আনার সিদ্ধান্ত দিলেও কৌঁসুলিরা যদি মনে করেন, বিচারের আওতায় আনার পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, তাহলে বিচার করা যায়। গ্র্যান্ড জুরির শুনানিকে কেন্দ্র করে রাখঢাক করায় প্রশ্ন তুলেছে মাইকেল ব্রাউনের পরিবার ও তাদের প্রতি সমব্যথীরা। এ ছাড়া তারা এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রবার্ট ম্যাককুলোচকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছে। তারা বলেছে, ম্যাককুলোচের পুলিশ কর্মকর্তা বাবা ১৯৬৪ সালে একজন কৃষ্ণাঙ্গের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। তাই এ মামলায় তিনি নিরপেক্ষ থাকতে পারেন না। অন্যভাবেও বিচার সম্ভব: গ্র্যান্ড জুরি নেতিবাচক সিদ্ধান্ত দিলেও ব্রাউনের পরিবার ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারে ব্রাউনের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করার মামলায়। এতে জিতলে পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে লাখো ডলার পেতে পারে তারা। সাম্প্রতিক অতীতে নিউইয়র্ক সিটি, শিকাগো, ক্যালিফোর্নিয়ায় এ ধরনের মামলার পর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মার্কিন বিচার বিভাগ ব্রাউন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইতিমধ্যে নিজস্ব তদন্ত শুরু করেছে। ব্রাউনের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে কি না বা ফার্গুসন পুলিশ বর্ণবৈষম্য করেছে কি না, তা এই তদন্তে খতিয়ে দেখা হবে।
No comments