পিয়ন হান্নানের মাধ্যমে ঘুষ নিতেন আতোয়ার
মাদকদ্রব্য
নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদ্য বিদায়ী সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আতোয়ার
রহমানের ঘুষ, দুর্নীতি ও বদলি বাণিজ্যের আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে।
কথিত ভাইরা ছাড়াও পিয়নের মাধ্যমে মোটা অংকের ঘুষ নিতেন তিনি। বুধবার সাবেক
এই ডিজির বদলি বাণিজ্যের সংবাদ যুগান্তরে প্রকাশ হওয়ার পর মাদকদ্রব্য
নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেন। দফতরজুড়ে
চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আতোয়ারের দোসররা বিব্রত ও আতংকিত হয়ে পড়েন। বিপরীতে
এতদিন যারা ভয়ে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারছিলেন না তারা ফুঁসে ওঠেন।
তাদের কয়েকজন যুগান্তর কার্যালয়ে এসে আতোয়ার রহমান ও তার রেখে যাওয়া চক্রের
সদস্যদের ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়ে বিস্মিত হওয়ার মতো অনেক তথ্য সরবরাহ করেন।
জানা গেছে, নিরাপদে ঘুষ, দুর্নীতি ও বদলি বাণিজ্যের গোপন মিশন সফল করতে
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন পিয়নের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন
সাবেক এই মহাপরিচালক। এক পর্যায়ে চতুর্থ শ্রেণীর এই বিশ্বস্ত কর্মচারীর
ওপর ভর করে তিনি ঘুষ লেনদেনের বড় কারবার শুরু করেন। অবশ্য রাতারাতি পিয়নেরও
ভাগ্য বদলে যায়। নুন আনতে পানতা ফুরানো পিয়ন এখন কোটিপতি! যার নাম আবদুল
হান্নান। তিনি অধিদফতরের আওতাধীন ঢাকা ওয়্যার হাউসে নিয়োজিত কেরু অ্যান্ড
কোম্পানির এজেন্ট (নিুমান সহকারী)। অভিযোগ রয়েছে, শুধু টাকার লোভে ডিজি
অধিদফতরের সবচেয়ে অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন
গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বদলি এবং পদায়ন করেন। আতোয়ারের এই অর্থলিপ্সার মাশুলও
এখন দিতে হচ্ছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানকে। মাঠ পর্যায়ে মাদক
নির্মূল অভিযান প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। আর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা
নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে যোগ দেয়ার পর ডিজি আতোয়ার রহমান ঘুষ লেনদেন বিষয়ে একজন বিশ্বস্ত কর্মচারীর সন্ধান করছিলেন। এক পর্যায়ে নিকট এক আত্মীয়ের মাধ্যমে হান্নানের খোঁজ পেয়ে যান। অতঃপর তার সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। এক মাসের মধ্যে এই সম্পর্ক ঘুষ লেনদেনের গোপন অলিখিত চুক্তিতে রূপ নেয়। এরপর শুরু হয় হান্নানের ঘুষ অভিযান। ‘লাভজনক জায়গায়’ বদলি হতে ইচ্ছুক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণে নেমে পড়েন এই কর্মচারী। এরপর কাউকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। জানা যায়, আতোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বদলি বা পদায়নের ব্যবস্থা করে দিতেন হান্নান। আতোয়ার রহমানের চাহিদামতো ঘুষের টাকা হান্নানের হাতে পৌঁছার পরদিনই বদলি আদেশ জারি হয়ে যেত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে আতোয়ারের ১১ মাসের কর্মকালীন হান্নানও কোটিপতি বনে গেছেন।
সূত্রমতে, হান্নানের মাধ্যমেই ঘুষ নিয়ে আতোয়ার রহমান অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি ও পদায়ন করেন। এই কর্মচারীর মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে বদলি হয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক নাসিরুল্লাহ ভুঁইয়া ও সুবোধ কুমার বিশ্বাস। ১২ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে অধিদফতরে মধুর হাঁড়ি হিসেবে পরিচিত ঢাকা ওয়্যার হাউসে পোস্টিং পেয়েছেন নাসিরুল্লাহ ভূঁইয়া। আর ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে আরেক লাভজনক জায়গা চট্টগ্রাম ওয়্যার হাউসে পোস্টিং নিয়েছেন সুবোধ কুমার বিশ্বাস। সূত্র জানায়, সুবোধ কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছিল আতোয়ারের। কিন্তু দেয়ার সময় ১ লাখ টাকা কম দেন। এতে আতোয়ার ক্ষুব্ধ হয়ে হান্নানকে গালিগালাজ করেন। পরে আরও ৫০ হাজার টাকা দেয়ার পরই সুবোধ কুমারের বদলি আদেশ জারি করেন আতোয়ার। অধিদফতরের অন্যতম লাভজনক জায়গা শ্রীমঙ্গল ওয়্যার হাউসে পোস্টিং পান যশোর উপাঞ্চলে কর্মরত প্রসিকিউটর আবদুল মজিদ। মাত্র ১১ মাসের মাথায় বদলি নীতিমালা ভঙ্গ করে সেখানে কর্মরত রুহুল আমিনকে প্রত্যাহার করা হয়। আর তার স্থলে আবদুল মজিদকে পোস্টিং দেয়া হয়।
সূত্র জানিয়েছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের আওতাধীন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গল ওয়্যার হাউস সবচেয়ে বড়। এ তিনটি ওয়্যার হাউসে অবৈধ আয়ের রমরমা সুযোগ। তাই এসব স্থানে পোস্টিং পেতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা সারা বছর ঘুষের টেন্ডার ডাকার মতো আচরণ করেন। সূত্র জানায়, ওয়্যার হাউসগুলোতে গুদামজাতকৃত মাদক জাতীয় পানীয়তে প্রচুর পানি মিশিয়ে বিক্রি করা হয়। পানি মিশিয়ে বিক্রির সঙ্গে যুক্ত থাকেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পানি মিশ্রিত মদ বিক্রি থেকে বাড়তি কাড়ি কাড়ি টাকা আয় হয়। বিষয়টি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে অনেকটাই ওপেন সিক্রেট।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মেট্রো উপাঞ্চলে ৩ বছর চাকরি করে ঢাকায় বদলি হন উপপরিচালক আলী আসলাম হোসেন। কিন্তু ইয়াবাসহ গ্রেফতারকৃত এক সেনা কর্মকর্তার মামলা তদন্তে চরম অদক্ষতার পরিচয় দেয়ায় আলী আসলামকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাজশাহীতে বদলি করা হয়। কিন্তু মাত্র চার মাসের মধ্যে আলী আসলামের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তাকে সুবিধাজনক জায়গা চট্টগ্রাম মেট্রোতে পোস্টিং দেন আতোয়ার রহমান। অন্যদিকে অধিদফতরের অন্যতম দক্ষ ও চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত হলেও উপপরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমাকে রাজশাহী গোয়েন্দা অঞ্চলে বদলি করা হয়। আতোয়ার রহমানের স্বাক্ষরে চলতি বছরের ৬ আগস্ট এ সংক্রান্ত বদলি আদেশ জারি করা হয়।
এখানেই শেষ নয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে সামারি (জোর করে ঘুষ আদায়) ইন্সপেক্টর হিসেবে পরিচিত ফজলুল হক খানকে ডেমরা সার্কেলে বদলি করেন আতোয়ার। ডেমরা সার্কেলে বেশকিছু বাংলা মদের দোকান ও অবৈধ মাদক আখড়া থাকায় এ সার্কেলকে লাভজনক সার্কেল হিসেবে ধরা হয়। অভিযোগ রয়েছে, ফজলুল হক খানের বদলিতে মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে। কারণ, বদলি নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ইন্সপেক্টর ঢাকায় ৩ বছরের কর্মকাল পার করলে তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করতে হয়। কিন্তু ঘুষ বাণিজ্যের কারণে ফজলুল হক খানসহ বহু কর্মকর্তার ক্ষেত্রে এই নীতিমালা আমলে নেয়া হয়নি। তাদেরকে বছরের পর বছর ঢাকায় থাকার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। একইভাবে অধিদফতরে অদক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত সহকারী পরিচালক মাঞ্জুরুল ইসলামকে বগুড়া উপাঞ্চল থেকে এনে ঢাকা মেট্রো উপাঞ্চলের উত্তর রেঞ্জে পোস্টিং দেয়া হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, মাঞ্জারুলের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে এই পোস্টিং দেন আতোয়ার। আতোয়ারকে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণে পোস্টিং নিয়েছেন ইন্সপেক্টর আহসান হাবিব, ময়মনসিংহ সদর রেঞ্জে তত্ত্বাবধায়ক শহিদুল্লাহসহ আরও অনেকে এই ফাঁদে ধরা দেন। এভাবে অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং দেয়ায় মাদক নির্মূল অভিযান স্থবির হয়ে পড়েছে। আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মাদক উদ্ধারের হারও উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। এ সুযোগে দেশব্যাপী মাদক আগ্রাসনের ভয়াবহতা আরও অধিক হারে বেড়েছে। প্রসঙ্গত, উপরে উল্লিখিত ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে যুগান্তরের কাছে প্রমাণ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডকুমেন্ট রয়েছে।
বক্তব্য : তবে ঘুষ ও বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক আতোয়ার রহমান। বুধবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি যেসব বদলি করেছি তা প্রশাসনিক প্রয়োজনে এবং জনস্বার্থে। এর বাইরে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যসহ যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আমীর হোসেন বলেন, এসব প্রতিবেদন আমলে নিয়ে যথাযথভাবে তদন্ত করে দেখা হবে। অপরদিকে অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) প্রণব কুমার নিয়োগী যুগান্তরকে বলেন, ‘মহাপরিচালক মহোদয় ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি ঢাকায় ফিরলেই এসব বিষয়ে আলোচনা করে ঘুষ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির এজেন্ট কাম পিয়ন আবদুল হান্নান বলেন, ডিজি আতোয়ারের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। তিনি বদলি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে যোগ দেয়ার পর ডিজি আতোয়ার রহমান ঘুষ লেনদেন বিষয়ে একজন বিশ্বস্ত কর্মচারীর সন্ধান করছিলেন। এক পর্যায়ে নিকট এক আত্মীয়ের মাধ্যমে হান্নানের খোঁজ পেয়ে যান। অতঃপর তার সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। এক মাসের মধ্যে এই সম্পর্ক ঘুষ লেনদেনের গোপন অলিখিত চুক্তিতে রূপ নেয়। এরপর শুরু হয় হান্নানের ঘুষ অভিযান। ‘লাভজনক জায়গায়’ বদলি হতে ইচ্ছুক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণে নেমে পড়েন এই কর্মচারী। এরপর কাউকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। জানা যায়, আতোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বদলি বা পদায়নের ব্যবস্থা করে দিতেন হান্নান। আতোয়ার রহমানের চাহিদামতো ঘুষের টাকা হান্নানের হাতে পৌঁছার পরদিনই বদলি আদেশ জারি হয়ে যেত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে আতোয়ারের ১১ মাসের কর্মকালীন হান্নানও কোটিপতি বনে গেছেন।
সূত্রমতে, হান্নানের মাধ্যমেই ঘুষ নিয়ে আতোয়ার রহমান অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি ও পদায়ন করেন। এই কর্মচারীর মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে বদলি হয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক নাসিরুল্লাহ ভুঁইয়া ও সুবোধ কুমার বিশ্বাস। ১২ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে অধিদফতরে মধুর হাঁড়ি হিসেবে পরিচিত ঢাকা ওয়্যার হাউসে পোস্টিং পেয়েছেন নাসিরুল্লাহ ভূঁইয়া। আর ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে আরেক লাভজনক জায়গা চট্টগ্রাম ওয়্যার হাউসে পোস্টিং নিয়েছেন সুবোধ কুমার বিশ্বাস। সূত্র জানায়, সুবোধ কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছিল আতোয়ারের। কিন্তু দেয়ার সময় ১ লাখ টাকা কম দেন। এতে আতোয়ার ক্ষুব্ধ হয়ে হান্নানকে গালিগালাজ করেন। পরে আরও ৫০ হাজার টাকা দেয়ার পরই সুবোধ কুমারের বদলি আদেশ জারি করেন আতোয়ার। অধিদফতরের অন্যতম লাভজনক জায়গা শ্রীমঙ্গল ওয়্যার হাউসে পোস্টিং পান যশোর উপাঞ্চলে কর্মরত প্রসিকিউটর আবদুল মজিদ। মাত্র ১১ মাসের মাথায় বদলি নীতিমালা ভঙ্গ করে সেখানে কর্মরত রুহুল আমিনকে প্রত্যাহার করা হয়। আর তার স্থলে আবদুল মজিদকে পোস্টিং দেয়া হয়।
সূত্র জানিয়েছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের আওতাধীন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গল ওয়্যার হাউস সবচেয়ে বড়। এ তিনটি ওয়্যার হাউসে অবৈধ আয়ের রমরমা সুযোগ। তাই এসব স্থানে পোস্টিং পেতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা সারা বছর ঘুষের টেন্ডার ডাকার মতো আচরণ করেন। সূত্র জানায়, ওয়্যার হাউসগুলোতে গুদামজাতকৃত মাদক জাতীয় পানীয়তে প্রচুর পানি মিশিয়ে বিক্রি করা হয়। পানি মিশিয়ে বিক্রির সঙ্গে যুক্ত থাকেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পানি মিশ্রিত মদ বিক্রি থেকে বাড়তি কাড়ি কাড়ি টাকা আয় হয়। বিষয়টি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে অনেকটাই ওপেন সিক্রেট।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মেট্রো উপাঞ্চলে ৩ বছর চাকরি করে ঢাকায় বদলি হন উপপরিচালক আলী আসলাম হোসেন। কিন্তু ইয়াবাসহ গ্রেফতারকৃত এক সেনা কর্মকর্তার মামলা তদন্তে চরম অদক্ষতার পরিচয় দেয়ায় আলী আসলামকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাজশাহীতে বদলি করা হয়। কিন্তু মাত্র চার মাসের মধ্যে আলী আসলামের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তাকে সুবিধাজনক জায়গা চট্টগ্রাম মেট্রোতে পোস্টিং দেন আতোয়ার রহমান। অন্যদিকে অধিদফতরের অন্যতম দক্ষ ও চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত হলেও উপপরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমাকে রাজশাহী গোয়েন্দা অঞ্চলে বদলি করা হয়। আতোয়ার রহমানের স্বাক্ষরে চলতি বছরের ৬ আগস্ট এ সংক্রান্ত বদলি আদেশ জারি করা হয়।
এখানেই শেষ নয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে সামারি (জোর করে ঘুষ আদায়) ইন্সপেক্টর হিসেবে পরিচিত ফজলুল হক খানকে ডেমরা সার্কেলে বদলি করেন আতোয়ার। ডেমরা সার্কেলে বেশকিছু বাংলা মদের দোকান ও অবৈধ মাদক আখড়া থাকায় এ সার্কেলকে লাভজনক সার্কেল হিসেবে ধরা হয়। অভিযোগ রয়েছে, ফজলুল হক খানের বদলিতে মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে। কারণ, বদলি নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ইন্সপেক্টর ঢাকায় ৩ বছরের কর্মকাল পার করলে তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করতে হয়। কিন্তু ঘুষ বাণিজ্যের কারণে ফজলুল হক খানসহ বহু কর্মকর্তার ক্ষেত্রে এই নীতিমালা আমলে নেয়া হয়নি। তাদেরকে বছরের পর বছর ঢাকায় থাকার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। একইভাবে অধিদফতরে অদক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত সহকারী পরিচালক মাঞ্জুরুল ইসলামকে বগুড়া উপাঞ্চল থেকে এনে ঢাকা মেট্রো উপাঞ্চলের উত্তর রেঞ্জে পোস্টিং দেয়া হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, মাঞ্জারুলের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে এই পোস্টিং দেন আতোয়ার। আতোয়ারকে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণে পোস্টিং নিয়েছেন ইন্সপেক্টর আহসান হাবিব, ময়মনসিংহ সদর রেঞ্জে তত্ত্বাবধায়ক শহিদুল্লাহসহ আরও অনেকে এই ফাঁদে ধরা দেন। এভাবে অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং দেয়ায় মাদক নির্মূল অভিযান স্থবির হয়ে পড়েছে। আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মাদক উদ্ধারের হারও উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। এ সুযোগে দেশব্যাপী মাদক আগ্রাসনের ভয়াবহতা আরও অধিক হারে বেড়েছে। প্রসঙ্গত, উপরে উল্লিখিত ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে যুগান্তরের কাছে প্রমাণ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডকুমেন্ট রয়েছে।
বক্তব্য : তবে ঘুষ ও বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক আতোয়ার রহমান। বুধবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি যেসব বদলি করেছি তা প্রশাসনিক প্রয়োজনে এবং জনস্বার্থে। এর বাইরে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যসহ যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আমীর হোসেন বলেন, এসব প্রতিবেদন আমলে নিয়ে যথাযথভাবে তদন্ত করে দেখা হবে। অপরদিকে অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) প্রণব কুমার নিয়োগী যুগান্তরকে বলেন, ‘মহাপরিচালক মহোদয় ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি ঢাকায় ফিরলেই এসব বিষয়ে আলোচনা করে ঘুষ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির এজেন্ট কাম পিয়ন আবদুল হান্নান বলেন, ডিজি আতোয়ারের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। তিনি বদলি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নন।
No comments