নাশকতায় আবারও তৎপর জঙ্গিরা
আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে বিভিন্ন জঙ্গি
সংগঠন। দেশে নাশকতা সৃষ্টি করতে তারা নিয়েছে মহাপরিকল্পনা। গোপনে শুরু
করেছে নানা তৎপরতা। এরই অংশ হিসেবে আবার সংগঠিত হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি
সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। এ সংগঠনকে সক্রিয় করতে
নেপথ্যে কাজ করছেন বিভিন্ন পেশার ৩৩ ব্যক্তি। পাশাপাশি জেএমবির সঙ্গে
পাল্লা দিয়ে শক্তি সঞ্চয় করছে উগ্রপন্থী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবং
জামায়াতুল মুসলেমিনও। আর মাঠে নেমেছে ‘কালেমার দাওয়াত’ নামে নতুন আরেকটি
মৌলবাদী সংগঠন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
জেএমবিসংশ্লিষ্ট ৩৩ ব্যক্তিকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নবগঠিত ‘কালেমার দাওয়াত’ নামের সংগঠনটির সার্বিক কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করারও নির্দেশ দেয়া হয়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ সংগঠনটির কয়েকজন শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। দেখা দেয় নেতৃত্ব ও অর্থ সংকট। কিন্তু গোপনে নেতাকর্মীরা একাধিক উপদলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখে। বর্তমানে সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাওলানা সোহেল মাহফুজ ওরফে ভাগ্নে সোহেল। পাশাপাশি জেএমবির সাবেক আমীর সাইদুর রহমানের ছেলে শামীম রহমান কারাগারে বসেই বাইরের সহযোগীদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। ছয়টি সাংগঠনিক অঞ্চলে ভাগ করে সারা দেশে জেএমবির কর্মকাণ্ড চলছে। আর সদস্য বাড়াতে তারা দাওয়াতি কাজের পাশাপাশি বোমা তৈরির প্রশিক্ষণও অব্যাহত রেখেছে। সাধারণত কোনো স্থানে নাশকতা ঘটানোর আগে এসব কাজ করার মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার তথ্য সংগ্রহ এবং রেকিও করে জঙ্গিরা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সম্প্রতি ময়মনসিংহ ও রাজশাহী জেলার কয়েকটি উপজেলায় আগের সক্রিয় জেএমবি সদস্যদেরকে অপরিচিত লোকজনের সঙ্গে চলাফেরা করতে দেখা যায়। ময়মনসিংহে ২০ জন ও রাজশাহীর ১৩ জন ব্যক্তির সহযোগিতায় জেএমবির জঙ্গি সদস্যরা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
ময়মনসিংহের ২০ জন হলেন- মুক্তাগাছা উপজেলার বিন্নাকুড়ির বাজার জামে মসজিদের ইমাম গরিবুল্লাহ মুন্সী, মলাজানী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রশিদ মাস্টার, বটগাছিয়ার কাজীমুদ্দিন, শুকুরকড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক সাহেব আলী মাস্টার, খোলাবাড়ী মাদ্রাসা শিক্ষক শহীদুল্লাহ মাস্টার, অপর মাদ্রাসা শিক্ষক আবদুল্লাহ, নটাকড়ীর আবদুস সামাদ দর্জি, গজিয়া গ্রামের আরমান মুন্সী, আলাল, জালাল, শাহজাহান, বটগাছিয়া গ্রামের মামুদ আলী ও হানিফ মিয়া। ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই বাজারের তরকারি বিক্রেতা মো. টুয়েল, রাধাকানাই গ্রামের মো. আবু, ঢাকার এআইইউবির বিবিএর শিক্ষার্থী ডলার, পলাশতলী গ্রামের হাবিবুল্লাহ, পলাশতলী বাজার হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ তোফাজ্জল হোসেন, জুরবাড়িয়া গ্রামের বারেক মুন্সী এবং ইচাইল ফরাজীবাড়ির আবদুল হান্নান।
রাজশাহীর ১৩ জনের মধ্যে রয়েছেন- বাঘমারার মাহাতাব খামারু, পলাশীর মামুনুর রশীদ ওরফে মহুরী মামুন, উদপাড়ার জিল্লুর রহমান ওরফে মাহিন, বাড়ইপাড়ার তারেক আজিজ, কনোপাড়ার আবদুল মান্নান, বামনকয়ার মতিউর রহমান ওরফে বাচ্চু, ক্ষুদ্রঝিনার এনামুল হক, কাঠালবাড়ির শামসুর রহমান, দুর্গাপুর জয়নগরের ড. মিন্টু, পুটিয়া ভালুকাগাছীর মজনু মিয়া, চারঘাট মারিয়ার মো. জিহাদ আলী, ইউসুফপুরের মঞ্জুরুল হক এবং বাঘা ফতেহপুরের সিরাজ উদ্দিন।
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর এলাকায় কিছু নেতাকর্মী সংগঠিত হয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগদান করেছে। রহনপুরের গ্রাম্য ডাক্তার মো. ইব্রাহিমের নেতৃত্বে বাংলা টিমের প্রচারণা চলছে। সংগঠনের তাত্ত্বিক নেতা মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানী ২০১৩ সালের মে মাসে রহনপুরে এটিবির কর্মী সমাবেশে যোগ দেন। ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর ডা. ইব্রাহিমসহ ফারুক হোসেন ও সাদিকুল ইসলাম পুলিশের হাতে আটক হলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গোমস্তাপুর থানায় মামলা হয়। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে বর্তমানে গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলার বড় বড় মসজিদের ইমামদের টার্গেট করে দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলা টিম গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তাদের মতে, কথিত নাস্তিকদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই, বেনামাজিরা হত্যাযোগ্য। বর্তমান সরকার নাস্তিক। এ সরকার পতনের যে কোনো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা নৈতিক দায়িত্ব। তারা সৌদি আরবে রমজানের চাঁদ দেখলে রোজা রাখে এবং তাদের সঙ্গে মিলে ঈদ উদযাপন করে।
জামায়াতুল মুসলিমিন প্রসঙ্গে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭ সালের পরে জেএমবির কিছু শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ মাঠপর্যায়ের কর্মীরা এ সংগঠনের নামে জঙ্গি তৎপরতা শুরু করে। সংগঠনটির নেতৃত্বে রয়েছেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল রাজ্জাক। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। আগে সংগঠনটি ছিল ধানমণ্ডির রিসার্চ সেন্টার ফর ইউনিটি ডেভেলপমেন্ট (আরসিইউডি) নামক সংস্থার সহযোগী সংগঠন। তারা এটিকে ধর্মবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করতেন। ২০১০ সালের মাঝামাঝিতে জেএমবির মাঝারি ধরনের নেতাকর্মীরা এ সংগঠনে যোগ দিতে থাকেন। তাদের মধ্যে ছিলেন- জেএমবির সামরিক কমান্ডার মো. হানিফ, বগুড়ার আঞ্চলিক কমান্ডার শাহিদ বিন হাফিজ ও জেএমবির সাবেক আমীর সাইদুর রহমান প্রমুখ। ঢাকায় মিরপুর-১১তে অবস্থিত আহলে হাদিস মসজিদকেন্দ্রিক তৎপরতা ছিল উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয় পরে বাড্ডা, ধানমণ্ডি, বনানী, আজিমপুর ও মিরপুর-২ এ সংগঠনের কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইউনিটে ভাগ হয়ে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।
কালেমার দাওয়াত নামের নতুন সংগঠনের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩০ বছর তাবলিগ জামায়াতের সঙ্গে থাকার পর ১৯৯৬ সালে মতপার্থক্য হওয়ায় ভোলার চরফ্যাশন কলেজের সাবেক প্রভাষক আবদুল মজিদ ১৯৯৭ সালের ১৬ জুলাই কালেমার দাওয়াত প্রতিষ্ঠা করেন। চরফ্যাশনের কুসুমবাগ গ্রাম থেকে তিনি সংগঠন পরিচালনা করেন। সেখানে প্রায় ৩০/৩৫টি টিনের ঘর ও ৭/৮টি দোতলা ভবন নির্মাণ করে ‘মজিদ পল্লী’ গঠন করেছেন তিনি। সংগঠনের অনুসারী ও নিজের যৌথ নামে এসব ঘর কেনা হয়েছে। দূর থেকে আসা অনুসারীরা সপরিবারে ওই ঘরগুলোতে বাস করে। তাদের কাজের ধরন অনেকটাই তাবলিগ জামায়াতের মতোই। অনুসারীদের দ্বীনি দাওয়াতের পাশাপাশি বেশি করে দান করার উপদেশ দেন তিনি। তার কথায় উদ্বুব্ধ হয়ে ১০০টি পরিবারের প্রায় সাড়ে ৪০০ সদস্য নিজস্ব ভিটামাটি বিক্রি করে সব টাকা মজিদের হাতে তুলে দিয়ে মজিদ পল্লীতে বসবাস করছে। ২৭ আগস্ট এ সংগঠনের ৬ নারী সদস্য (৪ শিশুসহ) আটক হলেও কোনো অপরাধ না পাওয়ায় ২০ অক্টোবর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেফতার হয় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের মো. আসিফ আদনান (২৬) এবং ফজলে এলাহি তানজিলসহ (২৪) ৫ সদস্য। এদের মধ্যে আসিফ আদনানের পিতা সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতি আবদুস সালাম। তিনি বর্তমানে অবসরে রয়েছেন। আদনান দীর্ঘদিন ধরে হুজির হয়ে কাজ করছেন। ফজলে এলাহি তানজিলের মা ওএসডি যুগ্ম-সচিব উম্মে ফাতেমা। তিনি সর্বশেষ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সর্বশেষ ২২ নভেম্বর জেএমবির নারী শাখার প্রধান মোছা. ফাতেমাসহ ৪ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ফাতেমার স্বামী জেএমবির রাজনৈতিক শাখার প্রধান সাজিদ ৮ অক্টোবর কলকাতা বিমানবন্দরে গ্রেফতার করে এনআইএর একটি দল। সূত্রমতে, গত এক মাসে জেএমবিসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠনের ৩৫/৪০ জন সদস্য পুলিশের হাতে আটক হয়েছে।
জেএমবিসংশ্লিষ্ট ৩৩ ব্যক্তিকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নবগঠিত ‘কালেমার দাওয়াত’ নামের সংগঠনটির সার্বিক কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করারও নির্দেশ দেয়া হয়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ সংগঠনটির কয়েকজন শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। দেখা দেয় নেতৃত্ব ও অর্থ সংকট। কিন্তু গোপনে নেতাকর্মীরা একাধিক উপদলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখে। বর্তমানে সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাওলানা সোহেল মাহফুজ ওরফে ভাগ্নে সোহেল। পাশাপাশি জেএমবির সাবেক আমীর সাইদুর রহমানের ছেলে শামীম রহমান কারাগারে বসেই বাইরের সহযোগীদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। ছয়টি সাংগঠনিক অঞ্চলে ভাগ করে সারা দেশে জেএমবির কর্মকাণ্ড চলছে। আর সদস্য বাড়াতে তারা দাওয়াতি কাজের পাশাপাশি বোমা তৈরির প্রশিক্ষণও অব্যাহত রেখেছে। সাধারণত কোনো স্থানে নাশকতা ঘটানোর আগে এসব কাজ করার মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার তথ্য সংগ্রহ এবং রেকিও করে জঙ্গিরা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সম্প্রতি ময়মনসিংহ ও রাজশাহী জেলার কয়েকটি উপজেলায় আগের সক্রিয় জেএমবি সদস্যদেরকে অপরিচিত লোকজনের সঙ্গে চলাফেরা করতে দেখা যায়। ময়মনসিংহে ২০ জন ও রাজশাহীর ১৩ জন ব্যক্তির সহযোগিতায় জেএমবির জঙ্গি সদস্যরা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
ময়মনসিংহের ২০ জন হলেন- মুক্তাগাছা উপজেলার বিন্নাকুড়ির বাজার জামে মসজিদের ইমাম গরিবুল্লাহ মুন্সী, মলাজানী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রশিদ মাস্টার, বটগাছিয়ার কাজীমুদ্দিন, শুকুরকড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক সাহেব আলী মাস্টার, খোলাবাড়ী মাদ্রাসা শিক্ষক শহীদুল্লাহ মাস্টার, অপর মাদ্রাসা শিক্ষক আবদুল্লাহ, নটাকড়ীর আবদুস সামাদ দর্জি, গজিয়া গ্রামের আরমান মুন্সী, আলাল, জালাল, শাহজাহান, বটগাছিয়া গ্রামের মামুদ আলী ও হানিফ মিয়া। ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই বাজারের তরকারি বিক্রেতা মো. টুয়েল, রাধাকানাই গ্রামের মো. আবু, ঢাকার এআইইউবির বিবিএর শিক্ষার্থী ডলার, পলাশতলী গ্রামের হাবিবুল্লাহ, পলাশতলী বাজার হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ তোফাজ্জল হোসেন, জুরবাড়িয়া গ্রামের বারেক মুন্সী এবং ইচাইল ফরাজীবাড়ির আবদুল হান্নান।
রাজশাহীর ১৩ জনের মধ্যে রয়েছেন- বাঘমারার মাহাতাব খামারু, পলাশীর মামুনুর রশীদ ওরফে মহুরী মামুন, উদপাড়ার জিল্লুর রহমান ওরফে মাহিন, বাড়ইপাড়ার তারেক আজিজ, কনোপাড়ার আবদুল মান্নান, বামনকয়ার মতিউর রহমান ওরফে বাচ্চু, ক্ষুদ্রঝিনার এনামুল হক, কাঠালবাড়ির শামসুর রহমান, দুর্গাপুর জয়নগরের ড. মিন্টু, পুটিয়া ভালুকাগাছীর মজনু মিয়া, চারঘাট মারিয়ার মো. জিহাদ আলী, ইউসুফপুরের মঞ্জুরুল হক এবং বাঘা ফতেহপুরের সিরাজ উদ্দিন।
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর এলাকায় কিছু নেতাকর্মী সংগঠিত হয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগদান করেছে। রহনপুরের গ্রাম্য ডাক্তার মো. ইব্রাহিমের নেতৃত্বে বাংলা টিমের প্রচারণা চলছে। সংগঠনের তাত্ত্বিক নেতা মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানী ২০১৩ সালের মে মাসে রহনপুরে এটিবির কর্মী সমাবেশে যোগ দেন। ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর ডা. ইব্রাহিমসহ ফারুক হোসেন ও সাদিকুল ইসলাম পুলিশের হাতে আটক হলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গোমস্তাপুর থানায় মামলা হয়। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে বর্তমানে গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলার বড় বড় মসজিদের ইমামদের টার্গেট করে দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলা টিম গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তাদের মতে, কথিত নাস্তিকদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই, বেনামাজিরা হত্যাযোগ্য। বর্তমান সরকার নাস্তিক। এ সরকার পতনের যে কোনো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা নৈতিক দায়িত্ব। তারা সৌদি আরবে রমজানের চাঁদ দেখলে রোজা রাখে এবং তাদের সঙ্গে মিলে ঈদ উদযাপন করে।
জামায়াতুল মুসলিমিন প্রসঙ্গে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭ সালের পরে জেএমবির কিছু শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ মাঠপর্যায়ের কর্মীরা এ সংগঠনের নামে জঙ্গি তৎপরতা শুরু করে। সংগঠনটির নেতৃত্বে রয়েছেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল রাজ্জাক। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। আগে সংগঠনটি ছিল ধানমণ্ডির রিসার্চ সেন্টার ফর ইউনিটি ডেভেলপমেন্ট (আরসিইউডি) নামক সংস্থার সহযোগী সংগঠন। তারা এটিকে ধর্মবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করতেন। ২০১০ সালের মাঝামাঝিতে জেএমবির মাঝারি ধরনের নেতাকর্মীরা এ সংগঠনে যোগ দিতে থাকেন। তাদের মধ্যে ছিলেন- জেএমবির সামরিক কমান্ডার মো. হানিফ, বগুড়ার আঞ্চলিক কমান্ডার শাহিদ বিন হাফিজ ও জেএমবির সাবেক আমীর সাইদুর রহমান প্রমুখ। ঢাকায় মিরপুর-১১তে অবস্থিত আহলে হাদিস মসজিদকেন্দ্রিক তৎপরতা ছিল উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয় পরে বাড্ডা, ধানমণ্ডি, বনানী, আজিমপুর ও মিরপুর-২ এ সংগঠনের কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইউনিটে ভাগ হয়ে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।
কালেমার দাওয়াত নামের নতুন সংগঠনের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩০ বছর তাবলিগ জামায়াতের সঙ্গে থাকার পর ১৯৯৬ সালে মতপার্থক্য হওয়ায় ভোলার চরফ্যাশন কলেজের সাবেক প্রভাষক আবদুল মজিদ ১৯৯৭ সালের ১৬ জুলাই কালেমার দাওয়াত প্রতিষ্ঠা করেন। চরফ্যাশনের কুসুমবাগ গ্রাম থেকে তিনি সংগঠন পরিচালনা করেন। সেখানে প্রায় ৩০/৩৫টি টিনের ঘর ও ৭/৮টি দোতলা ভবন নির্মাণ করে ‘মজিদ পল্লী’ গঠন করেছেন তিনি। সংগঠনের অনুসারী ও নিজের যৌথ নামে এসব ঘর কেনা হয়েছে। দূর থেকে আসা অনুসারীরা সপরিবারে ওই ঘরগুলোতে বাস করে। তাদের কাজের ধরন অনেকটাই তাবলিগ জামায়াতের মতোই। অনুসারীদের দ্বীনি দাওয়াতের পাশাপাশি বেশি করে দান করার উপদেশ দেন তিনি। তার কথায় উদ্বুব্ধ হয়ে ১০০টি পরিবারের প্রায় সাড়ে ৪০০ সদস্য নিজস্ব ভিটামাটি বিক্রি করে সব টাকা মজিদের হাতে তুলে দিয়ে মজিদ পল্লীতে বসবাস করছে। ২৭ আগস্ট এ সংগঠনের ৬ নারী সদস্য (৪ শিশুসহ) আটক হলেও কোনো অপরাধ না পাওয়ায় ২০ অক্টোবর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেফতার হয় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের মো. আসিফ আদনান (২৬) এবং ফজলে এলাহি তানজিলসহ (২৪) ৫ সদস্য। এদের মধ্যে আসিফ আদনানের পিতা সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতি আবদুস সালাম। তিনি বর্তমানে অবসরে রয়েছেন। আদনান দীর্ঘদিন ধরে হুজির হয়ে কাজ করছেন। ফজলে এলাহি তানজিলের মা ওএসডি যুগ্ম-সচিব উম্মে ফাতেমা। তিনি সর্বশেষ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সর্বশেষ ২২ নভেম্বর জেএমবির নারী শাখার প্রধান মোছা. ফাতেমাসহ ৪ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ফাতেমার স্বামী জেএমবির রাজনৈতিক শাখার প্রধান সাজিদ ৮ অক্টোবর কলকাতা বিমানবন্দরে গ্রেফতার করে এনআইএর একটি দল। সূত্রমতে, গত এক মাসে জেএমবিসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠনের ৩৫/৪০ জন সদস্য পুলিশের হাতে আটক হয়েছে।
No comments