ইউরেশিয়া- ইউক্রেনের ভোট ও রাশিয়ার ভাগ্য by কার্ল বিল্ডট
ইউক্রেনের ভোটাররা গতকাল (২৬ অক্টোবর)
ভোটে অংশ নিয়েছেন, এতে শুধু তাঁদের নিজেদের দেশেরই নয়, ইউরোপেরই একটি
গুরুত্বপূর্ণ অংশের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে। সহজভাবে বললে,
ইউক্রেনের ভবিষ্যৎই রাশিয়ার ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেবে, আর রাশিয়ার ভবিষ্যৎ
ইউরোপের ভবিষ্যতে বেশ বড়সড় প্রভাব ফেলবে। সেই দুই দশক আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন
ভেঙে গেলে ইউক্রেন স্বাধীনতার পথ বেছে নেয়। তখন অনেকেই আশা করেছিলেন, তারা
রাশিয়ার চেয়ে ভালো করবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন দিকে মোড় নিল।
নতুন শতকের প্রথম দশকে রাশিয়া সেই সোভিয়েত যুগের হাইড্রোকার্বন শিল্পের কারণে লাভবান হয়। ব্যক্তি খাতে ছেড়ে দেওয়ার কারণে এই শিল্প আরও কার্যকর হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যও বাড়ে। অর্থনীতিতে যে বহুমুখীকরণ প্রত্যাশিত ছিল, তা না হওয়া ও ‘আধুনিকায়ন’ একটি স্লোগানে পরিণত হওয়ার প্রভাব প্রাথমিকভাবে তেমন একটা অনুভূত হয়নি।
উল্টোদিকে, ইউক্রেন সোভিয়েত-উত্তর যুগের সবচেয়ে বাজে দেশে পরিণত হয়, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি দেশটির উৎপাদনশীলতা একদম ধসিয়ে দেয়। ফলে দেশটি ক্রমেই অন্যান্য কমিউনিজম-উত্তর দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে পড়ে। পোল্যান্ডের সঙ্গে ইউক্রেনের তুলনা করলে ব্যাপারটা বোঝা যায় দেশটি কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতার সময় দেশ দুটির মাথাপিছু গড় জিডিপি ছিল প্রায় সমান, আর আজ পোল্যান্ডের জিডিপি ইউক্রেনের চেয়ে তিন গুণ বড়। ২০০৪ সালের কমলা বিপ্লব ইউক্রেনের অধিকাংশ নাগরিকের জন্য ছিল ব্যর্থতার শামিল। অতীতের সঙ্গে সেই বহুপ্রত্যাশিত বিচ্ছেদ আর ঘটেনি, দেশটির নতুন নেতাদের মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ২০০৪ সালটি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্যও ব্যর্থতার বছর। সে বছর তিনি ইউক্রেনে তাঁর পছন্দের মানুষ ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে ভোট জালিয়াতিতে সহায়তা করে তাঁকে দেশটির প্রেসিডেন্ট বানাতে চেয়েছিলেন। সেটা করতে ব্যর্থ হয়ে ক্রেমলিন বেজায় চটেছিল, তারা সেটা কোনো দিন ভুলতেও পারেনি, আবার যাদের কারণে তারা ব্যর্থ হয়েছিল, তাদের ক্ষমাও করতে পারেনি। এরপর ২০১০ সালে কমলা বিপ্লবের ব্যর্থতায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতায় আসেন। আর ২০১২ সালে পুতিন তৃতীয়বারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হন। নতুন একটি ইউরেশিয়া ইউনিয়ন গঠন করা ছিল তাঁর প্ল্যাটফর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর মধ্যে ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য ও অ্যাসোসিয়েশন অ্যাগ্রিমেন্ট করার জন্য দেনদরবার শুরু করে সেই ২০০৭ সাল থেকেই। এসব আলোচনা শেষ হয় ২০১২ সালের প্রথম দিকে। চুক্তিটি রাশিয়া-ইউক্রেনের বিদ্যমান মুক্তবাণিজ্য চুক্তির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলেও সেটা পুতিনের ইউরেশিয়া প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
এই এক বছরের কিছু বেশি সময় আগে ক্রেমলিন ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চুক্তি থেকে সরিয়ে আনতে আক্রমণ শুরু করে, যদিও ইয়ানুকোভিচ ও তাঁর পার্টি অব রিজিয়ন্স এ চুক্তিতে সায় দিয়েছিল। আর এর পরের অধ্যায় ইতিহাসের অংশে পরিণত হয়েছে: ইয়ানুকোভিচের চুক্তি বাতিল করা, এর বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলনে তাঁর পতন, রাশিয়ার দুই দফা আক্রমণ ও দেশটির পূর্বাঞ্চল ডনবাসে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু।
ক্রেমলিন শুধু ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ ও ডনবাসে নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে চায় না। সে আরও চায়, ইউক্রেন যেন পশ্চিমের দিকে না যায়। দরকার হলে, রাশিয়া জোর করে তাকে পূর্ব দিকে মোড় নেওয়াবে, আর তার পক্ষপুটে যে আন্দোলনের মাধ্যমে ইয়ানুকোভিচের পতন হয়েছিল, ভবিষ্যতে সে রকম আন্দোলনের সম্ভাবনা একদম অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিতে চায় রাশিয়া। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নানা রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পুতিন যে ইউরোপের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন, তার জবাবে পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর নানা রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু একটি দুর্বল রাশিয়াও তার নিকট প্রতিবেশীদের কাছে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবেই দেখা দেবে। তবে দিনের শেষে বলতে হয়, ইউক্রেনের শক্তি ও সংকল্পই রাশিয়ার উচ্চাভিলাষের রাশ টেনে ধরতে পারে।
ইউক্রেন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে ক্ষয়ে গেছে, আবার রাশিয়ার আগ্রাসনেও সে পর্যুদস্ত। ফলে দেশটির ঘুরে দাঁড়াতে হলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। গতকাল রোববারের নির্বাচনের মাধ্যমে এমন একটি সরকার গঠন হওয়া জরুরি, যারা সে দেশে মৌলিক সংস্কার আনবে। সে সরকারের উচিত হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় করা। প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে গেলে সংশোধিত ও কার্যকর আইএমএফ সহায়তা প্যাকেজ দরকার হবে। দেশটির জ্বালানি নীতি অযৌক্তিক, সেখানে গ্রাহক পর্যায়ে অতিরিক্ত ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে—এটা একধরনের অপচয়। এটা বদলাতে হবে। আর এই সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কৃত চুক্তিটি ব্যবহার করতে হবে।
এই এজেন্ডা সফল হলে ক্রেমলিনের সংশোধনবাদী আকাঙ্ক্ষার অপমৃত্যু ঘটবে। এটা হলে রাশিয়াতেও সংস্কার জরুরি হয়ে উঠবে। কিন্তু এই সংস্কার ব্যর্থ হলে ক্রেমলিন তার নীতিতে অটল থাকবে, যতক্ষণ না তারা কিয়েভে তাদের অভীষ্টে পৌঁছায়। পুতিনের কোনো তাড়াহুড়ো নেই, কিন্তু তিনি ভালোভাবেই জানেন, তিনি কী চান।
আর পশ্চিমের ক্রমাগত হুমকির মুখে রাশিয়া আবার শেষমেশ ঘেরাওয়ের নীতিতে চলে যেতে পারে। অর্থনৈতিক ব্যর্থতা পুষিয়ে নিতে রাশিয়া তার সংশোধনবাদী কার্যক্রম আরও জোরদার করবে, এমন ঝুঁকিও অগ্রাহ্য করার নয়। যাঁরা রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমগুলোর আগ্রাসী জাতীয়তাবাদী অবস্থান সম্পর্কে অবগত, তাঁরা নিশ্চয়ই এর বিপদ টের পাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপ প্রকৃত বিপদের মুখে পড়তে পারে। ক্রেমলিন তার অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ঢাকতে দেশের বাইরে শক্তির মহড়া দিতে পারে, ফলে সংশোধনবাদের চাকা ঘুরে তা হারানো ভূমি পুনরুদ্ধারের পথে চালিত হতে পারে।
তখন হয়তো বড়সড় যুদ্ধ আর এড়ানো সম্ভব হবে না। সে কারণেই দুই দশকের ব্যর্থতার পর ইউক্রেনের ঘুরে দাঁড়ানো খুবই জরুরি। তাদের একটি শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া দারকার। রোববারের এই নির্বাচন তাই ইউক্রেনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এর মাধ্যমে রাশিয়াও বৃহত্তর ইউরোপ পরিবারের প্রকৃত সদস্যে পরিণত হতে পারে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
নতুন শতকের প্রথম দশকে রাশিয়া সেই সোভিয়েত যুগের হাইড্রোকার্বন শিল্পের কারণে লাভবান হয়। ব্যক্তি খাতে ছেড়ে দেওয়ার কারণে এই শিল্প আরও কার্যকর হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যও বাড়ে। অর্থনীতিতে যে বহুমুখীকরণ প্রত্যাশিত ছিল, তা না হওয়া ও ‘আধুনিকায়ন’ একটি স্লোগানে পরিণত হওয়ার প্রভাব প্রাথমিকভাবে তেমন একটা অনুভূত হয়নি।
উল্টোদিকে, ইউক্রেন সোভিয়েত-উত্তর যুগের সবচেয়ে বাজে দেশে পরিণত হয়, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি দেশটির উৎপাদনশীলতা একদম ধসিয়ে দেয়। ফলে দেশটি ক্রমেই অন্যান্য কমিউনিজম-উত্তর দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে পড়ে। পোল্যান্ডের সঙ্গে ইউক্রেনের তুলনা করলে ব্যাপারটা বোঝা যায় দেশটি কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতার সময় দেশ দুটির মাথাপিছু গড় জিডিপি ছিল প্রায় সমান, আর আজ পোল্যান্ডের জিডিপি ইউক্রেনের চেয়ে তিন গুণ বড়। ২০০৪ সালের কমলা বিপ্লব ইউক্রেনের অধিকাংশ নাগরিকের জন্য ছিল ব্যর্থতার শামিল। অতীতের সঙ্গে সেই বহুপ্রত্যাশিত বিচ্ছেদ আর ঘটেনি, দেশটির নতুন নেতাদের মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ২০০৪ সালটি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্যও ব্যর্থতার বছর। সে বছর তিনি ইউক্রেনে তাঁর পছন্দের মানুষ ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে ভোট জালিয়াতিতে সহায়তা করে তাঁকে দেশটির প্রেসিডেন্ট বানাতে চেয়েছিলেন। সেটা করতে ব্যর্থ হয়ে ক্রেমলিন বেজায় চটেছিল, তারা সেটা কোনো দিন ভুলতেও পারেনি, আবার যাদের কারণে তারা ব্যর্থ হয়েছিল, তাদের ক্ষমাও করতে পারেনি। এরপর ২০১০ সালে কমলা বিপ্লবের ব্যর্থতায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতায় আসেন। আর ২০১২ সালে পুতিন তৃতীয়বারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হন। নতুন একটি ইউরেশিয়া ইউনিয়ন গঠন করা ছিল তাঁর প্ল্যাটফর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর মধ্যে ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য ও অ্যাসোসিয়েশন অ্যাগ্রিমেন্ট করার জন্য দেনদরবার শুরু করে সেই ২০০৭ সাল থেকেই। এসব আলোচনা শেষ হয় ২০১২ সালের প্রথম দিকে। চুক্তিটি রাশিয়া-ইউক্রেনের বিদ্যমান মুক্তবাণিজ্য চুক্তির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলেও সেটা পুতিনের ইউরেশিয়া প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
এই এক বছরের কিছু বেশি সময় আগে ক্রেমলিন ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চুক্তি থেকে সরিয়ে আনতে আক্রমণ শুরু করে, যদিও ইয়ানুকোভিচ ও তাঁর পার্টি অব রিজিয়ন্স এ চুক্তিতে সায় দিয়েছিল। আর এর পরের অধ্যায় ইতিহাসের অংশে পরিণত হয়েছে: ইয়ানুকোভিচের চুক্তি বাতিল করা, এর বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলনে তাঁর পতন, রাশিয়ার দুই দফা আক্রমণ ও দেশটির পূর্বাঞ্চল ডনবাসে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু।
ক্রেমলিন শুধু ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ ও ডনবাসে নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে চায় না। সে আরও চায়, ইউক্রেন যেন পশ্চিমের দিকে না যায়। দরকার হলে, রাশিয়া জোর করে তাকে পূর্ব দিকে মোড় নেওয়াবে, আর তার পক্ষপুটে যে আন্দোলনের মাধ্যমে ইয়ানুকোভিচের পতন হয়েছিল, ভবিষ্যতে সে রকম আন্দোলনের সম্ভাবনা একদম অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিতে চায় রাশিয়া। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নানা রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পুতিন যে ইউরোপের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন, তার জবাবে পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর নানা রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু একটি দুর্বল রাশিয়াও তার নিকট প্রতিবেশীদের কাছে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবেই দেখা দেবে। তবে দিনের শেষে বলতে হয়, ইউক্রেনের শক্তি ও সংকল্পই রাশিয়ার উচ্চাভিলাষের রাশ টেনে ধরতে পারে।
ইউক্রেন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে ক্ষয়ে গেছে, আবার রাশিয়ার আগ্রাসনেও সে পর্যুদস্ত। ফলে দেশটির ঘুরে দাঁড়াতে হলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। গতকাল রোববারের নির্বাচনের মাধ্যমে এমন একটি সরকার গঠন হওয়া জরুরি, যারা সে দেশে মৌলিক সংস্কার আনবে। সে সরকারের উচিত হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় করা। প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে গেলে সংশোধিত ও কার্যকর আইএমএফ সহায়তা প্যাকেজ দরকার হবে। দেশটির জ্বালানি নীতি অযৌক্তিক, সেখানে গ্রাহক পর্যায়ে অতিরিক্ত ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে—এটা একধরনের অপচয়। এটা বদলাতে হবে। আর এই সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কৃত চুক্তিটি ব্যবহার করতে হবে।
এই এজেন্ডা সফল হলে ক্রেমলিনের সংশোধনবাদী আকাঙ্ক্ষার অপমৃত্যু ঘটবে। এটা হলে রাশিয়াতেও সংস্কার জরুরি হয়ে উঠবে। কিন্তু এই সংস্কার ব্যর্থ হলে ক্রেমলিন তার নীতিতে অটল থাকবে, যতক্ষণ না তারা কিয়েভে তাদের অভীষ্টে পৌঁছায়। পুতিনের কোনো তাড়াহুড়ো নেই, কিন্তু তিনি ভালোভাবেই জানেন, তিনি কী চান।
আর পশ্চিমের ক্রমাগত হুমকির মুখে রাশিয়া আবার শেষমেশ ঘেরাওয়ের নীতিতে চলে যেতে পারে। অর্থনৈতিক ব্যর্থতা পুষিয়ে নিতে রাশিয়া তার সংশোধনবাদী কার্যক্রম আরও জোরদার করবে, এমন ঝুঁকিও অগ্রাহ্য করার নয়। যাঁরা রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমগুলোর আগ্রাসী জাতীয়তাবাদী অবস্থান সম্পর্কে অবগত, তাঁরা নিশ্চয়ই এর বিপদ টের পাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপ প্রকৃত বিপদের মুখে পড়তে পারে। ক্রেমলিন তার অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ঢাকতে দেশের বাইরে শক্তির মহড়া দিতে পারে, ফলে সংশোধনবাদের চাকা ঘুরে তা হারানো ভূমি পুনরুদ্ধারের পথে চালিত হতে পারে।
তখন হয়তো বড়সড় যুদ্ধ আর এড়ানো সম্ভব হবে না। সে কারণেই দুই দশকের ব্যর্থতার পর ইউক্রেনের ঘুরে দাঁড়ানো খুবই জরুরি। তাদের একটি শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া দারকার। রোববারের এই নির্বাচন তাই ইউক্রেনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এর মাধ্যমে রাশিয়াও বৃহত্তর ইউরোপ পরিবারের প্রকৃত সদস্যে পরিণত হতে পারে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
কার্ল বিল্ডট: সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
No comments