সামাজিক অগ্রগতি না বদলের ডাক জিতবে?
একদিকে ১২ বছরের সামাজিক অগ্রগতির ধারাবাহিকতা রক্ষা, অন্যদিকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও পরিবর্তনের ডাক। ব্রাজিলের ১৪ কোটি ২৮ লাখ ভোটার এ দুটোর কোন পথে যান তার ওপরই নির্ভর করছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় বিজয়ী কে হবেন তা। অর্থাৎ অর্থনৈতিক অবস্থার হালই সবকিছু ছাপিয়ে নির্ধারকের ভূমিকায়। বর্তমান প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফই শেষ পর্যন্ত অল্প ব্যবধানে হলেও জয়ের মুকুট পরবেন বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। তবে গতকালের ভোটের আগেই ব্রাজিলের বিনিয়োগকারীরা রায় দিয়ে ফেলেছেন আসিও নেভিসের পক্ষে। বিনিয়োগকারীদের রায়ে, তিনি ‘ভূমিধস জয়’ পেয়েছেন। নেভিসকে কেন পছন্দ করেন ব্যবসায়ীরা? মনে করা হয়, তাঁর মতো প্রবৃদ্ধি ও বাজারবান্ধব প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আগে কখনোই পায়নি ব্রাজিল। ডানপন্থী সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নেভিস ৫ অক্টোবরের ভোটে দ্বিতীয় স্থান পাওয়ার পরপরই ঘোষণা দেন, তিনি দ্বিতীয় দফায় জিতে প্রেসিডেন্ট হলে অর্থমন্ত্রী করবেন বাজার অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধিবান্ধব নীতির সমর্থক আরমিনিও ফারগাকে।
তবে ফারগার মতো পয়সাওয়ালা মানুষকে নির্বাচনের সময় সামনে নিয়ে আসা ব্রাজিলের মতো আমজনতা খুশি করার রাজনীতির দেশে ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্যই রুসেফের সঙ্গে পাল্লায় নেভিসের জনসমর্থন কমেছে বলে মনে করছেন অনেকে। সাবেক বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মন্ত্রী মারিও ম্যারকোনিনি বলেন, ‘নির্বাচনের মাঠে আরমিনিও কোনোমতেই একটি সম্পদ নন। তাঁর নাম ঘোষণার পরপরই নেভিসের সমর্থন পড়তে শুরু করেছে।’ নেভিসের সঙ্গে সর্বশেষ টেলিভিশন বিতর্কে ফারগার নীতি ও আদর্শের ব্যাপারটিকেই অস্ত্র হিসেবে বেশি ব্যবহার করেছেন রুসেফ। তবে ফারগা বলছেন, এবারের নির্বাচনকে অর্থনৈতিক মতাদর্শের ওপরে ভোটারদের রায় হিসেবে দেখার চেয়ে বরং পরিবর্তনের জন্য ভোটারদের তীব্র আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে দেখা উচিত। তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ মানুষই অর্থনীতির গুরুগম্ভীর তত্ত্বকথায় তাড়িত হয় না। কিন্তু এটা জানে যে, উন্নতির জন্য ব্রাজিলে পরিবর্তন আসা দরকার।’ বর্তমান প্রেসিডেন্ট রুসেফ হচ্ছেন সাবেক মার্ক্সবাদী গেরিলা।
প্রায়ই হুগো চাভেজের প্রশস্তি গান তাঁকে ‘লাতিন আমেরিকার মহান নেতা’ আখ্যায়িত করে। রুসেফের দল ওয়ার্কার্স পার্টি ১২ বছর ধরে ক্ষমতায়। এই সময়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অনেক জনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। আবার রুসেফ ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর চার বছরে ব্রাজিলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। সম্ভবত ব্রাজিল ইতিমধ্যে মন্দায় পড়ে গেছে। বাসভাড়া বৃদ্ধি ও সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদে গত বছর লাখ লাখ লোক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। লাতিন আমেরিকায় কোনো প্রেসিডেন্ট পুনর্নির্বাচিত হওয়ার চেষ্টা করে হেরে গেছেন, এমন নজির নেই বললেই চলে। এমনকি চরম সংকটের মধ্যেও তাঁরা উতরে গেছেন। এমন ইতিহাসকে উল্টে দিয়ে নেভিস-ফারগারা কি সত্যিই নতুন এক ইতিহাস রচনা করতে পারবেন? তার উত্তর দিয়ে দিয়েছেন ব্রাজিলীয় ভোটররা। এখন কেবল ফল বেরোনোর অপেক্ষা।
No comments