ধর্মীয় উৎসব ও জাতির পরিচয় প্রসঙ্গ by হারুন আর রশিদ
‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার।’ এ বাক্যটি সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও মিডিয়ায় অনেকে উচ্চারণ করে থাকেন। আমরা মনে করি, এ কথাটা যথার্থ। এর পাশাপাশি আরেকটি কথা মাঝে মাঝে উচ্চারিত হয়, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’ এটা কতটা বাস্তব ও যৌক্তিক সে ব্যাপারে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। তারা বলেছেন, ধর্ম যার যার, উৎসবও তার তার। কারণ একেকজনের একেক রকম ধর্ম। তাদের সংখ্যা শতাংশে তা ৯০, ১০, কিংবা পাঁচ হতে পারে জনসংখ্যার মাপকাঠিতে। দেশের সব মানুষ এক ধর্মে বিশ্বাসী নয়। বিশ্বাসে পার্থক্য থাকবেই। ধর্মের মূল ভিত্তি ও বিশ্বাসের বিষয় যখন ভিন্ন, তখন উৎসবটাও ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে হয়। সে ক্ষেত্রে একটি ধর্মীয় উৎসবে অন্য ধর্মের মানুষও যদি একইভাবে মেতে ওঠেন তাহলে তার নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের আদর্শ ও নীতি থেকে কি বিচ্যুতি ঘটবে না? তবে বিষয়টি যদি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান না হয়ে জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান হয়Ñ (যেমন, বাংলা নববর্ষ, একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, জাতীয় নেতার মৃত্যু ও জন্ম দিবস), তাহলে সেই ক্ষেত্রে উৎসব নিঃসন্দেহে সবার। রাষ্ট্রের ভিত্তি আরো মজবুত হয় সবাই মিলে সে দিবসগুলো উদযাপন করলে।
বিশ্বের কয়েক শ’ কোটি মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পার্থক্য বিদ্যমান। তাই একজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর পক্ষে অপর কোনো ধর্মীয় উৎসবে অংশ নেয়া মূলত সম্ভব নয়। ধর্মীয় দিক থেকে সে উৎসবে অংশ নিলে নিজ ধর্মের প্রতি আনুগত্যশীল নয় বলে ধারণা করা অন্যায় হবে না। উদাহরণস্বরূপ ইসলাম ধর্মের মূল আকিদা বা বিশ্বাস হলো একেশ্বরবাদ। স্রষ্টার বহুত্বে তারা বিশ্বাসী নয়। সৃষ্টিকর্তা বলতে তারা নিরাকার একজনকেই বোঝেÑ তিনি হলেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। মূর্তিপূজা ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ। শুধু মূর্তি নয়Ñ গাছ, পাথর, মাজার বা ব্যক্তিকে পূজাও নিষিদ্ধ। আল্লাহর সৃষ্টি জগতের কোনো জীবকে পূজা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এসব ব্যাপারে কড়াকড়ি নির্দেশ রয়েছে। এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করা যাবে না।
ইসলাম ধর্মবিশ্বাসী এমন কোনো ব্যক্তি রাসূল সা:-কে শেষ নবী বা পয়গম্বর হিসেবে যদি মনেপ্রাণে বিশ্বাস না করেÑ সেই ব্যক্তিও মুসলমান বলে নিজেকে দাবি করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভÑ ঈমান, রোজা, নামাজ, হজ ও জাকাতে যদি পুরোপুরি বিশ্বাসী না হয়ে থাকে তাহলে তাকে মুসলমান হিসেবে গণ্য করা যায় না। মুমিন মুসলমান হতে হলে আল্লাহ এবং রাসূল সা:-এর বিধান কুরআন-হাদিসের বাণী তাকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করতে হবে এবং সেভাবে নিজের ও অন্যদের পরিচালিত করতে হবে। ধর্মকর্মের উৎসব সবার এক রকম হবে এবং তাতে একটি দেশের সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণ থাকতে হবে, এটা কোনো বিধানে নেই। উৎসবের ভিন্নতাই ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’ মূর্ত করে তোলে এবং নিজ নিজ ধর্মের বন্ধনকে আরো মজবুত করে। জগাখিচুড়ি বানিয়ে ফেললে ধর্ম আর তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। ধর্মকে তার স্বাভাবিক নিজস্ব পথে চলতে দিতে হবে। এতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
একটি জাতীয় দৈনিক ৫ অক্টোবর অমুসলিমদের পূজা অর্চনা ও ধর্মীয় উৎসব প্রসঙ্গে দেশের মুফতিগণের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। ২০১৪ সালে সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩০ হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ তৈরি হয়েছে, যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেশি বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। এ বছর প্রধানমন্ত্রী পূজামণ্ডপগুলোর জন্য এক কোটি ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। ৩০ হাজার পূজামণ্ডপের প্রতিটিতে গড়ে ১৩ হাজার টাকা মূল্যের চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ দিকে, ফতোয়া বোর্ড ও দ্বীনি পরামর্শকেন্দ্র জানায়, ‘ধর্ম যার যার, ধর্মীয় উৎসবও যার যার।’ ধর্মীয় ও সম্প্রদায়গত উৎসবের ভিন্নতা থাকাই স্বাভাবিক। বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ধর্মীয় উৎসব নিষ্ঠার সাথে উদযাপন বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল।
যা হোক, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সংখ্যালঘুদের সাথে উত্তম ব্যবহার ও সামাজিকতা বজায় রাখতে হবে। তাদের সাথে কোনো অন্যায় আচরণ করা যাবে না। তাদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান এবং ধর্ম পালন ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের পরিবেশ বজায় রাখা সংখ্যাগুরু ও সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। এ দিকে, হজের সময়ে একমাত্র বিটিভি ছাড়া প্রাইভেট চ্যানেলগুলো পক্ষপাতদুষ্ট কাজ করেছে। এবারের হজ শুক্রবারে হওয়ায় একে আকবরি হজ হিসেবে দেখেছে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে পনেরো কোটি মুসলমান। টিভি চ্যানেলগুলো ৯০ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হজকে প্রাধান্য দেয়নি। একই সময়ে একের অধিক যদি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়Ñ সে ক্ষেত্রে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারকে প্রাধান্য দেয়া মিডিয়ার নৈতিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে কিছু মিডিয়া অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যর্থ। এটা নিঃসন্দেহে দৃষ্টিকটু ও একপেশে আচরণ। একটি পত্রিকায় লিখেছেÑ ওই দিন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেক হিন্দু ভাই বাংলাদেশে এসে দুর্গাপূজা উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন। তারা বলেছেন, গোটা ভারতবর্ষে এত জাঁকজমকভাবে দুর্গাপূজা উৎসব পালন হয় না। ভারতের মিডিয়াও বাংলাদেশের মতো এত ব্যাপকভাবে প্রচার করে না পূজার খবর। উপমহাদেশে ভারত ও নেপাল হলো হিন্দু রাষ্ট্র। অন্য দিকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ হলো মুসলিম রাষ্ট্র। মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে দুর্গাপূজা উৎসব পালনে বাংলাদেশ ভারতকেও পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অধিকার করতে চায় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। দেশের ২৬টি চ্যানেলে হজ পালনকে প্রাধান্য দেয়া নীতিগতভাবে উচিত ছিল। মিডিয়ার একাংশের প্ক্ষপাতদুষ্ট আচরণে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারে। কাউকে বেশি উৎসাহ দেয়া, আবার কাউকে নিরুৎসাহ করা বা এড়িয়ে চলা যথার্থ হয়েছে বলে আমরা মনে করি না। একটি দেশের সব ধর্মের মধ্যে আনুপাতিক ভারসাম্য যাতে বজায় থাকে সেই জন্য যেমন সরকারের ভূমিকা রয়েছে, তেমনি প্রচারমাধ্যমগুলোরও এগিয়ে আসতে হবে।
সব রাষ্ট্রের মানুষ নিজের দেশের নামে জাতির পরিচয় দেয়। এখানে ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, গোত্র, উপজাতি এসব প্রশ্ন গৌণ। একটি দেশের শিকড় শক্ত করতে হলে দেশগত পরিচয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে হয়। মালয়েশিয়ার উন্নতির মূল কারণ দেশগত পরিচয়। বিভিন্ন ধর্মের লোক থাকলেও সেই দেশে আজ পর্যন্ত সমস্যার সৃষ্টি হয়নি; কিন্তু বাংলাদেশে হয়েছে। উপজাতিরা নিজেদের বাঙালি বলতে নারাজ। বাংলাদেশী বলতে আবার তাদের আপত্তি নেই। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা নিজেদের ভারতীয় বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আসলে দেশের নাম অনুসারে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি হলে ‘আমরা বাংলাদেশী’Ñ এ কথায় দেশে সাম্প্রদায়িক চেতনার বিনাশ ঘটবে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে উঠবে, দেশও উন্নতি লাভ করবে। এ ক্ষেত্রে ভাষা ধর্ম যার যার, দেশ সবার এবং ধর্ম যার যার বিশ্বাস তার তারÑ এভাবে আমরা সবাই চিন্তা করলে ধর্মবিশ্বাস নিয়ে কলহ বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে না। জাতীয়তা নিয়েও বিভ্রান্তি দেখা দেবে না।
লেখক : গ্রন্থকার, গবেষক
email:harunrashid1952@yahoo.com
বিশ্বের কয়েক শ’ কোটি মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পার্থক্য বিদ্যমান। তাই একজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর পক্ষে অপর কোনো ধর্মীয় উৎসবে অংশ নেয়া মূলত সম্ভব নয়। ধর্মীয় দিক থেকে সে উৎসবে অংশ নিলে নিজ ধর্মের প্রতি আনুগত্যশীল নয় বলে ধারণা করা অন্যায় হবে না। উদাহরণস্বরূপ ইসলাম ধর্মের মূল আকিদা বা বিশ্বাস হলো একেশ্বরবাদ। স্রষ্টার বহুত্বে তারা বিশ্বাসী নয়। সৃষ্টিকর্তা বলতে তারা নিরাকার একজনকেই বোঝেÑ তিনি হলেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। মূর্তিপূজা ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ। শুধু মূর্তি নয়Ñ গাছ, পাথর, মাজার বা ব্যক্তিকে পূজাও নিষিদ্ধ। আল্লাহর সৃষ্টি জগতের কোনো জীবকে পূজা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এসব ব্যাপারে কড়াকড়ি নির্দেশ রয়েছে। এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করা যাবে না।
ইসলাম ধর্মবিশ্বাসী এমন কোনো ব্যক্তি রাসূল সা:-কে শেষ নবী বা পয়গম্বর হিসেবে যদি মনেপ্রাণে বিশ্বাস না করেÑ সেই ব্যক্তিও মুসলমান বলে নিজেকে দাবি করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভÑ ঈমান, রোজা, নামাজ, হজ ও জাকাতে যদি পুরোপুরি বিশ্বাসী না হয়ে থাকে তাহলে তাকে মুসলমান হিসেবে গণ্য করা যায় না। মুমিন মুসলমান হতে হলে আল্লাহ এবং রাসূল সা:-এর বিধান কুরআন-হাদিসের বাণী তাকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করতে হবে এবং সেভাবে নিজের ও অন্যদের পরিচালিত করতে হবে। ধর্মকর্মের উৎসব সবার এক রকম হবে এবং তাতে একটি দেশের সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণ থাকতে হবে, এটা কোনো বিধানে নেই। উৎসবের ভিন্নতাই ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’ মূর্ত করে তোলে এবং নিজ নিজ ধর্মের বন্ধনকে আরো মজবুত করে। জগাখিচুড়ি বানিয়ে ফেললে ধর্ম আর তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। ধর্মকে তার স্বাভাবিক নিজস্ব পথে চলতে দিতে হবে। এতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
একটি জাতীয় দৈনিক ৫ অক্টোবর অমুসলিমদের পূজা অর্চনা ও ধর্মীয় উৎসব প্রসঙ্গে দেশের মুফতিগণের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। ২০১৪ সালে সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩০ হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ তৈরি হয়েছে, যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেশি বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। এ বছর প্রধানমন্ত্রী পূজামণ্ডপগুলোর জন্য এক কোটি ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। ৩০ হাজার পূজামণ্ডপের প্রতিটিতে গড়ে ১৩ হাজার টাকা মূল্যের চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ দিকে, ফতোয়া বোর্ড ও দ্বীনি পরামর্শকেন্দ্র জানায়, ‘ধর্ম যার যার, ধর্মীয় উৎসবও যার যার।’ ধর্মীয় ও সম্প্রদায়গত উৎসবের ভিন্নতা থাকাই স্বাভাবিক। বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ধর্মীয় উৎসব নিষ্ঠার সাথে উদযাপন বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল।
যা হোক, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সংখ্যালঘুদের সাথে উত্তম ব্যবহার ও সামাজিকতা বজায় রাখতে হবে। তাদের সাথে কোনো অন্যায় আচরণ করা যাবে না। তাদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান এবং ধর্ম পালন ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের পরিবেশ বজায় রাখা সংখ্যাগুরু ও সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। এ দিকে, হজের সময়ে একমাত্র বিটিভি ছাড়া প্রাইভেট চ্যানেলগুলো পক্ষপাতদুষ্ট কাজ করেছে। এবারের হজ শুক্রবারে হওয়ায় একে আকবরি হজ হিসেবে দেখেছে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে পনেরো কোটি মুসলমান। টিভি চ্যানেলগুলো ৯০ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হজকে প্রাধান্য দেয়নি। একই সময়ে একের অধিক যদি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়Ñ সে ক্ষেত্রে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারকে প্রাধান্য দেয়া মিডিয়ার নৈতিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে কিছু মিডিয়া অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যর্থ। এটা নিঃসন্দেহে দৃষ্টিকটু ও একপেশে আচরণ। একটি পত্রিকায় লিখেছেÑ ওই দিন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেক হিন্দু ভাই বাংলাদেশে এসে দুর্গাপূজা উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন। তারা বলেছেন, গোটা ভারতবর্ষে এত জাঁকজমকভাবে দুর্গাপূজা উৎসব পালন হয় না। ভারতের মিডিয়াও বাংলাদেশের মতো এত ব্যাপকভাবে প্রচার করে না পূজার খবর। উপমহাদেশে ভারত ও নেপাল হলো হিন্দু রাষ্ট্র। অন্য দিকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ হলো মুসলিম রাষ্ট্র। মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে দুর্গাপূজা উৎসব পালনে বাংলাদেশ ভারতকেও পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অধিকার করতে চায় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। দেশের ২৬টি চ্যানেলে হজ পালনকে প্রাধান্য দেয়া নীতিগতভাবে উচিত ছিল। মিডিয়ার একাংশের প্ক্ষপাতদুষ্ট আচরণে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারে। কাউকে বেশি উৎসাহ দেয়া, আবার কাউকে নিরুৎসাহ করা বা এড়িয়ে চলা যথার্থ হয়েছে বলে আমরা মনে করি না। একটি দেশের সব ধর্মের মধ্যে আনুপাতিক ভারসাম্য যাতে বজায় থাকে সেই জন্য যেমন সরকারের ভূমিকা রয়েছে, তেমনি প্রচারমাধ্যমগুলোরও এগিয়ে আসতে হবে।
সব রাষ্ট্রের মানুষ নিজের দেশের নামে জাতির পরিচয় দেয়। এখানে ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, গোত্র, উপজাতি এসব প্রশ্ন গৌণ। একটি দেশের শিকড় শক্ত করতে হলে দেশগত পরিচয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে হয়। মালয়েশিয়ার উন্নতির মূল কারণ দেশগত পরিচয়। বিভিন্ন ধর্মের লোক থাকলেও সেই দেশে আজ পর্যন্ত সমস্যার সৃষ্টি হয়নি; কিন্তু বাংলাদেশে হয়েছে। উপজাতিরা নিজেদের বাঙালি বলতে নারাজ। বাংলাদেশী বলতে আবার তাদের আপত্তি নেই। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা নিজেদের ভারতীয় বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আসলে দেশের নাম অনুসারে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি হলে ‘আমরা বাংলাদেশী’Ñ এ কথায় দেশে সাম্প্রদায়িক চেতনার বিনাশ ঘটবে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে উঠবে, দেশও উন্নতি লাভ করবে। এ ক্ষেত্রে ভাষা ধর্ম যার যার, দেশ সবার এবং ধর্ম যার যার বিশ্বাস তার তারÑ এভাবে আমরা সবাই চিন্তা করলে ধর্মবিশ্বাস নিয়ে কলহ বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে না। জাতীয়তা নিয়েও বিভ্রান্তি দেখা দেবে না।
লেখক : গ্রন্থকার, গবেষক
email:harunrashid1952@yahoo.com
No comments