ফেসবুকে বন্ধুত্ব বেলজিয়াম টু জুড়ী by ইমাদ-উদ-দীন
দুু’জন দু’দেশের বাসিন্দা। বয়সের তারতম্যও
অনেক। একজনের ২২, অন্যজনের ৬২। ধর্মও ভিন্ন। শুধু বন্ধুত্বটা অভিন্ন। একজন
মুসলিম নাম সোহেল আর অন্যজন খ্রিস্টান, আইএ্যান প্রিয়ার জেন্স। তারপরও ওরা
বন্ধু। একে অপরের আপনজন। এত দূরের বন্ধুর সঙ্গে দূরত্ব আর সময় সহজ করে
দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুক। এক-দুই করে মাস গড়ায় ৬-এ। এরই মধ্যে
পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে তাদের বন্ধুত্ব। ফেসবুকে কথা হলেও সরাসরি দেখা হয়নি
কারও। দেখা হয়নি কারও দেশও। আগ্রহটা বেশি জেন্সের। বাংলাদেশ দেখার আগ্রহ
বেড়েছে এদেশের মানুষের নিখাদ ভালবাসার সন্ধান পেয়ে। আর সেটা করেছে সোহেল।
একজন বন্ধুসুলভ ও মহৎপ্রাণ বাংলাদেশী হিসেবে আকৃষ্ট করতে পেরেছে জেন্সের।
ফলে তাকে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ছুটে আসতে হয়েছে বাংলাদেশে। বৃহত্তর সিলেটের
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলায়। এখন তিনি আছেন তার বন্ধুর বাড়িতেই। বন্ধুর
মাতৃভূমি, তার পরিবার আর প্রকৃতি- সবই তাকে খুব আপন করে নিয়েছে। বন্ধুর
ডাকে সাড়া দিয়ে বিদেশ থেকে বন্ধু এসেছেন- এমন খবর চাউর হলে কৌতূহলী লোকজনই
একনজর তাকে দেখতে ভিড় করছেন জুড়ীর সোহেলের বাড়িতে। সোহেল জানান, বেলজিয়ামের
লুক্সেমবার্গের আইএ্যান প্রিয়ার জেন্সের সঙ্গে মাত্র ৬ মাস আগে ফেসবুকের
মাধ্যমে বন্ধুত্ব হয় তার। দিন যায়, মাস যায়। বন্ধুত্ব গভীর থেকে আরো গভীর
হতে থাকে। সোহেল এক সময় ভদ্রতাবশত আইএ্যান প্রিয়ার জেন্সকে বাংলাদেশে আসার
আমন্ত্রণ জানায়। কে জানতো আইএ্যান প্রিয়ার জেন্স সেই আমন্ত্রণে দূর
বেলজিয়াম থেকে বাংলাদেশের অজপাড়াগাঁতে চলে আসবেন বন্ধুর আমন্ত্রণে। বাস্তবে
সেটাই ঘটেছে। গতকাল ২৬শে অক্টোবর বিকালে আইএ্যান প্রিয়ার জেন্স আসেন।
পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামের মৃত নাজিম উদ্দিন ও রুসনা
বেগম দম্পতির চতুর্থ সন্তান সোহেল আহমদ কলেজ রোডে নাছির পোল্ট্রি ফিড
অ্যান্ড মেডিসিনে ম্যানেজার পদে চাকরি করেন। সোহেল জানান, মাস ছয়েক আগে
আইএ্যান প্রিয়ার জেন্স-এর সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব হওয়ার পর মাঝে মধ্যে
দু’জনের মধ্যে চ্যাট হতো। কয়েকদিন আগে তাকে এমনি এমনি বাংলাদেশ দেখার
আমন্ত্রণ জানাই। আমি আসলে বুঝতে পারিনি তিনি সত্যি সত্যি চলে আসবেন। তিনি
চলে আসাতে আমি ও আমার পরিবার দারুণ খুশি হয়েছি। তিনি যতদিন থাকতে চান আমরা
তাকে সম্মানের সঙ্গে রাখবো। বাংলাদেশ দেখাবো। তিনি অল্প সময়েই আমাদের
আতিথেয়তায় মুগ্ধ।
আইএ্যান প্রিয়ার জেন্স-এর পিতা প্রেন্সস জেন্স, মাতা মালভিনা গিজন্সেস, তার দুই বোন- হিলোও গিজন্সেস ও ব্রিগেইট গিজন্সেস, ভাই গ্যাস্টন জেন্স। ভাইবোনদের মধ্যে বড় তিনি, আইএ্যান প্রিয়ার ১৯৮১ সাল থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একজন ট্রান্সলেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১০ সালে অবসর নিয়ে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছেন। তিনি জানান, সোহেলের আমন্ত্রণ পেয়ে প্রথমে ভারতের কলকাতায় আসেন গত ২রা অক্টোবর। সেখানে কয়েক দিন থেকে বাইসাইকেলে গত ১৮ই অক্টোবর রাজশাহীর নওগাঁ হয়ে ঢাকায় আসেন। সেখানে কয়েকদিন ঘুরে বেড়িয়ে বিরামপুর, গাইবান্ধা, শেরপুর, হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ, মোহনগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট হয়ে জাফলং আসেন। গত ২৫শে অক্টোবর শনিবার জাফলং থেকে গোলাপগঞ্জ, শেওলা, বিয়ানীবাজার, বড়লেখা হয়ে জুড়ীতে আসেন। জুড়ী জাঙ্গিরাই চত্বরে এলে সোহেল আহমদ তার সঙ্গে দেখা করে তার বাড়িতে নিয়ে যান। সোহেলের পরিবার, স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের আতিথেয়তায় জেন্স মুগ্ধ। তিনি অল্প সময়েই বাংলাদেশের মানুষ আর সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে বেশ মজে গেছেন। তার কথায়ই সেটা টের পাওয়া গেল। জানান, এবার চলে গেলেও আবার আসবো সবাইকে নিয়ে। এমন আন্তরিকতা আর প্রকৃতি উপভোগ করতে কে না আসতে চাইবে?
No comments