এ কোন পথে সরকার! by গোলাপ মুনীর
সম্প্রতি কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে এর চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন আমাদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এর সপ্তাহ সময় ব্যবধানে ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী। এ দু’টি নির্বাচনে এ দু’জনের সাফল্যের জন্য তারা ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন; কিন্তু এ সাফল্য তুলে ধরার জন্য বিলবোর্ড টানিয়ে এবং সভা-সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বীকৃতিস্বরূপ আমাদের দেশের থলেতে এ সাফল্য জমা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে, ৫ জানুয়ারি সম্পর্কে বিদেশীরা আর কোনো প্রশ্ন তুলছেন নাÑ এমনটি প্রচার এ সাফল্যের গুরুত্বকে অনেকটা ম্লান করে দিচ্ছে বলেই মনে হয়। আসলে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনে বাংলাদেশের কেউ চেয়ারপারসন নির্বাচিত হলে কিংবা ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশের কেউ নির্বাচিত হলেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে কিংবা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মহলে বৈধতা সনদ পেয়ে গেছে, তা ভাবার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এর একটি উদাহরণ, যে দিন সাবের হোসেন চৌধুরী ইন্টারপার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন, সে দিনটিতে যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়ে বলেছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল হতাশাজনক। গত ১৬ অক্টোবর যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে আনুষ্ঠানিকভাবে সে দেশের সরকারের এ অবস্থানের কথা জানানো হয়। এর আগে গত ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন একইভাবে এ হতাশার কথা জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ : কান্ট্রি কেস স্টাডি আপডেটেড’ শীর্ষক এ রিপোর্টে যুক্তরাজ্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি ছাড়াও বলা হয়Ñ বাংলাদেশের মিডিয়া বা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিধিনিষেধের আওতায় আনা হয়েছে। সরকারের সমালোচনাকারী বা ভিন্নমতাবলম্বীদের আটক করা হচ্ছে। এ বছরই তৈরি করা হয়েছে নতুন কিছু নীতি ও আইন। এতে সুশীলসমাজ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সীমিত করা হয়েছে, যা উদ্বেগজনক। এমনই নানা অভিযোগ রয়েছে এ রিপোর্টে।
সরকার যতই বলুক, এ সরকার বিদেশী মহলে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে গেছে, এ সরকার ও ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিদেশে কোনো প্রশ্ন নেই; বাস্তবে কিন্তু এর কোনো প্রমাণ মিলছে না। বরং বাস্তবে আমরা এমন সব ঘটনা ঘটতে দেখতে পাচ্ছি, যা সরকারপক্ষের দাবিকে মিথ্যা প্রমাণিত করার জন্য যথেষ্ট। সাম্প্রতিক খবর হচ্ছে, সংসদ সদস্যদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশী দাতারা। বর্তমান সংসদের পেছনে টাকা খরচ করাকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়েই প্রকল্প গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন দাতারা। বর্তমান সংসদে অর্ধেকেরও বেশি সদস্য অনির্বাচিত হওয়ার প্রসঙ্গটি সামনে এনেই তাদের এ অনাগ্রহের বিষয়টি দাতারা মৌখিকভাবে সংসদ সচিবালয়কে জানিয়ে দিয়েছেন বলে খবরে প্রকাশ। এরই মধ্যে ইউএনডিপি ও নেদারল্যান্ডসের অর্থায়নে পরিচালিত আইপিডি প্রকল্প বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি মাঝপথেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটি অব্যাহত রাখার জন্য সংসদ সচিবালয়ের অনুরোধে দাতারা কোনো সাড়া দেননি। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ আরো কয়েকটি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আগ্রহ নেই দাতাদের। উপরন্তু চলমান প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে; কিন্তু সম্প্রতি কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হওয়ার পর দেশে ফিরে আমাদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী যখন বলেন, বর্তমান সংসদ নিয়ে দেশের বাইরে কারো কোনো প্রশ্ন নেই, তখন সংসদের প্রতি দাতাদের এই মুখ ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কী জবাব দেবেন তিনি।
বর্তমান সরকার ও এর কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্নের এখানেই শেষ নয়, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্নের শেষ এখানেই থেমে নেই। বাংলাদেশে বিরোধী দলমত ও ভিন্নমতাবলম্বী মানুষের ওপর সরকার চরম দমনপীড়ন চালিয়ে দেশবাসীর মতামতকে উপেক্ষা করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জোরজবরদস্তি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে। বিষয়টি এখন আর কোনো রাখঢাক করে বলা হচ্ছে না। বরং সরকারি দলের নেতারা বলছেন, যারা এর আগে নির্বাচনের কথা বলে তারা মূর্খ। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী রীতিমতো বিরোধী জোটের নেত্রীর প্রতি নানা ধরনের বাক্যবাণ ছুড়ে সরকারবিরোধীদের দমনে চরম কঠোরতার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন এবং বলছেন, ‘আর একজনের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক, তার পরিণতি কী হয় দেখবে।’ সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে বর্তমান সরকার যে মরিয়া এবং এ কাজে দলীয়ভাবে র্যাব-পুলিশের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে, তা এখন দেশী-বিদেশী সব মহলের কাছে স্পষ্ট। সম্প্রতি ছাত্রদলের নতুন কমিটির ২২ জন নেতাকর্মী গ্রেফতারের পর গত পরশু আবার যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ ৬৩ জনের গ্রেফতার সরকারের সেই দমনপীড়ন পরিকল্পনারই অংশ বলে দেশবাসী মনে করে। বলা হচ্ছে, পুলিশের কাছে সন্দেহ হয়েছে, এরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে। এভাবে সন্দেহের বশে এর আগে কত আটক-গ্রেফতার, মামলা-হামলা হয়েছে, অমানবিক পুলিশি নির্যাতন চলেছে; তার ইয়ত্তা নেই। বিদেশী মহল এ ব্যাপারে বারবার সরকারকে হুঁশিয়ার করে র্যাব-পুলিশকে দায়মুক্তি না দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে; কিন্তু সরকার ড্যামকেয়ার। বিদেশী বিভিন্ন মহলের উপরোধ-অনুরোধ আমলে নেয়নি, বরং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে সরকার পুলিশ-র্যাবের ব্যবহার আরো জোরাল করে তুলছে সময়ের সাথে। এ ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে এবার বিভিন্ন দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাংলাদেশের পুলিশের কাছে আর কোনো অস্ত্র বিক্রি করবে না। গত ২০ অক্টোবর পত্রিকান্তরে খবরে প্রকাশ, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পুলিশের ব্যবহারের অস্ত্র বিক্রি করতে রাজি নয়। সম্প্রতি মানবাধিকার প্রশ্নে বাংলাদেশের পুলিশের জন্য গোলাবারুদ রফতানিতে যুক্তরাজ্য এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশও জারি করেছে একই ধরনের অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। তবে এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের পর ইতালিও এই নিষেধাজ্ঞা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর। বাধ্য হয়ে গোলাবারুদের বিকল্প বাজারের সন্ধানে নেমেছে সরকার। তবে ওইসব দেশের মতো মানসম্পন্ন গোলাবারুদ সরবরাহকারী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশে যে এখন গণতন্ত্রের আকাল, তা সরকারের বাইরে থাকা সব মহলই বলছে। মাঝে মধ্যে বর্তমান সরকারে থাকা শরিক দলের নেতাদের মুখ থেকে মুখ ফসকে তা বেরিয়ে আসছে। গত ১৬ অক্টোবর বর্তমান সরকারের শরিক দল, আবার একই সাথে অদ্ভুত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেনÑ ‘দেশে এখন একদলের গণতন্ত্র, প্রতিহিংসা ও জিঘাংসার গণতন্ত্র চলছে। দেশের কোথাও সুশাসন নেই। সর্বত্র দলীয়করণ, দুঃশাসন ও দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। যে গণতন্ত্রে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই, মানুষ নিরাপদে ঘুমাতে পারে না, তা জনগণের গণতন্ত্র নয়; এক পার্টির গণতন্ত্র। সেই গণতন্ত্র আমরা চাই না।’ কিন্তু সরকারে থেকে ও একই সাথে বিরোধী দলে থেকে গাছেও খেয়ে তলায়ও কুড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে এ ধরনের সমালোচনা করার মতো অবস্থান ধরে রাখা অন্তত এ সরকারের আমলে সম্ভব হতে পারে না। ফলে এর মাত্র পাঁচ দিন পর এরশাদের মুখে শোনা গেল সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ উচ্চারণ। এবার তিনি শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সাবের হোসেন চৌধুরীর উল্লিখিত নির্বাচনী বিজয় উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক অভিনন্দন বার্তায় বলেছেন, ‘...বঙ্গবন্ধুর কারণে বাংলাদেশের পরিচয়, তেমনি শেখ হাসিনার জন্য বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পরিচয়...।’ আসলে আওয়ামী লীগের বাইরে সরকারি জোটে যারা আছেন, তাদেরকে এভাবেই তোতাপাখির বোল নিয়ে প্রতিদিন সরকারের গুডবুকে থাকার প্রয়াস চালাতে হয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এই বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে বলা যায়, তার ৯ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ কি পরিচয়হীন ছিল? আর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে কি সে পরিচয় উদ্ধার করেছেন?
বিবেকবান সব মানুষের এক কথাÑ সব দলের অংশগ্রহণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকারের জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্যেই নিহিত আজকের বিদ্যমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার সমাধান। আর এ জন্য অপরিহার্য হচ্ছে রাজনৈতিক সংলাপে বসে সর্বমহলের কাছে সম্মত একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থা। সূত্রায়ন, সরকারবিরোধী ২০ দলীয় জোটসহ সরকারের বাইরে থাকা বাকি সব রাজনৈতিক দল-গোষ্ঠীর দাবি এটিই; কিন্তু সরকারপক্ষের এক কথাÑ কোনো সংলাপ নয়, কোনো নির্বাচন নয়। নির্বাচন হবে ২০১৯ সালে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই। কেউ নির্বাচনে এলে আসবে, না এলে ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন, দলীয় সরকারের অধীনে। কিন্তু বিবেকবান মানুষের কথাÑ মধ্যবর্তী নির্বাচনের কারণ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেশ-বিদেশে কারো কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। অর্ধেকেরও বেশি আসনের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়। জনগণ এ নির্বাচন বর্জন করেছে বলেই এমনটি ঘটেছে। সরকার নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের সর্বসম্মত পদ্ধতি বদলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু করে অবাধ নির্বাচনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
সরকার বলছে, বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিএনপি নেত্রীর পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে। বিএনপি দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাই যদি হয়, তবে সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে কেন? সরকার সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনপদ্ধতি প্রণয়নের জন্য সংলাপে যেতে চাচ্ছে না কেন? আসলে সরকার মুখে যাই বলুক, বাস্তবে জানে সরকার নানা অগণতান্ত্রিক ও অমানবিক কর্মকাণ্ডসহ দুর্নীতি-দুঃশাসনের সূত্রে নিজেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাই অবাধ ও নিরপেক্ষ মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে সরকারের এত ভীতি ও অনীহা; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারের এই অবস্থান থেকে বেরিয়ে জনসমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে গণতন্ত্রের পথেই হাঁটতেই হবে। নইলে জটিলতা আর জাতীয় দুর্ভোগ শুধু বেড়েই চলবে। আর সরকার নিজেই ডেকে আনবে নিজের জন্য বিপদের পর বিপদ। বিরোধী ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনপীড়নের মাধ্যমে এ জটিলতার কোনো সমাধান নেইÑ এটাই বাস্তবতা, এটাই শেষ কথা।
সরকার বুঝতে পারছে কি না জানি নাÑ জনগণ, এমনকি দেশের বাইরের মহলের মনেও প্রশ্ন উঠেছেÑ এ কোন পথে হাঁটছে সরকার? চার দিকে এত কথা, তবুও সরকার কিছুই আমলে নিচ্ছে না। সরকার যেন পণ করে বসেছে, বাইরের মানুষ যা বলবে, যে দিকে যেতে বলবে, যেতে হবে ঠিক এর উল্টো দিকে। এরই প্রতিফলন সরকারের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে, কথাবার্তায়। এর শেষ কোথায়, এর জবাব কারো জানা নেই। অতএব সময়ের অপেক্ষা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
সব শেষে আরেকটি কথাÑ এ পর্যন্ত বাংলাদেশের সব সরকারই দাবি করে আসছে বাংলাদেশ একটি উদার গণতন্ত্রের দেশ, এমনকি বর্তমান সরকারও তেমনটি দাবি করে থাকে। উদারবাদী গণতন্ত্রের ধারক-বাহক বলে আমরা যারা দাবি করি, তারা এই উদারবাদী গণতন্ত্র তথা লিবারেলিজমের সংজ্ঞা ও পরিধি সম্পর্কে কতটুকু সচেতন, সে প্রশ্ন অনায়াসেই তোলা যায়। আমরা মনে হয় ভুলে গেছি, লিবারেলিজম এখন একটি রাজনৈতিক দর্শন, যা গড়ে উঠেছে ‘লিবার্টি’ নামের অনুষঙ্গের ওপর। যে ‘লিবার্টি’ শব্দটিতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয় কাসিক্যাল লিবারেলিজমে। সাধারণত এই ‘লিবার্টি’ বলতে নাগরিকসাধারণের জন্য নিশ্চিত রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতা। ধর্মতত্ত্বে লিবার্টি হচ্ছে পাপের বন্ধন থেকে মুক্তি।
সাধারণ লিবারেলিজম (উদারবাদী) কিংবা কাসিক্যাল লিবারেলিজমই বলি, তা এমন একটি রাজনৈতিক দর্শন, যেখানে প্রাথমিক তাগিদ দেয়া হয় সরকারের ক্ষমতা সীমিত করার মাধ্যমে ব্যক্তিস্বাধীনতা বিকল্পহীনভাবে নিরাপদ করা। যুক্তরাষ্ট্রে বিংশ শতাব্দীর আগে কাসিক্যাল লিবারেলিজম নামের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দর্শনটি ছিল থমাস জেফারসন ও সে দেশের স্বাধীনতা ঘোষণায় স্বাক্ষরকারীদের রাজনৈতিক দর্শন। তখনকার দিনে সেখানকার মানুষ বিশ্বাস করত, নাগরিকসাধারণের অধিকারের উৎস সরকার। মানুষ ভাবত তারা সে অধিকারই পাবে, যা নির্বাচিত সরকার তাদের দেবে; কিন্তু ব্রিটিশ দার্শনিক জন লকিকে অনুসরণ করে জেফারসন অভিমত দেন, বিষয়টি তা নয়। সরকারের দেয়া অধিকারের বাইরেও জনগণের অধিকার আছে। জনগণ সরকার গঠন করতে পারে এবং সরকার বাতিলও করতে পারে। আর একটি বৈধ সরকারের একমাত্র উদ্দেশ্য, জনগণের এসব অধিকার নিরাপদ করা। ভুললে চলবে না, এর ব্যত্যয় গণতন্ত্রের ব্যত্যয়। বিবেকবানেরা বলছেন, বাংলাদেশে বারবার এর ব্যত্যয় ঘটছে, সেই সূত্রে সৃষ্টি হচ্ছে একের পর এক রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট; যার শিকার গোটা জাতি। এ থেকে উত্তরণের আন্তরিক প্রয়াসে প্রয়াসী ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেইÑ এ হুঁশিয়ারিটি বিবেকবান মানুষের।
সরকার যতই বলুক, এ সরকার বিদেশী মহলে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে গেছে, এ সরকার ও ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিদেশে কোনো প্রশ্ন নেই; বাস্তবে কিন্তু এর কোনো প্রমাণ মিলছে না। বরং বাস্তবে আমরা এমন সব ঘটনা ঘটতে দেখতে পাচ্ছি, যা সরকারপক্ষের দাবিকে মিথ্যা প্রমাণিত করার জন্য যথেষ্ট। সাম্প্রতিক খবর হচ্ছে, সংসদ সদস্যদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশী দাতারা। বর্তমান সংসদের পেছনে টাকা খরচ করাকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়েই প্রকল্প গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন দাতারা। বর্তমান সংসদে অর্ধেকেরও বেশি সদস্য অনির্বাচিত হওয়ার প্রসঙ্গটি সামনে এনেই তাদের এ অনাগ্রহের বিষয়টি দাতারা মৌখিকভাবে সংসদ সচিবালয়কে জানিয়ে দিয়েছেন বলে খবরে প্রকাশ। এরই মধ্যে ইউএনডিপি ও নেদারল্যান্ডসের অর্থায়নে পরিচালিত আইপিডি প্রকল্প বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি মাঝপথেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটি অব্যাহত রাখার জন্য সংসদ সচিবালয়ের অনুরোধে দাতারা কোনো সাড়া দেননি। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ আরো কয়েকটি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আগ্রহ নেই দাতাদের। উপরন্তু চলমান প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে; কিন্তু সম্প্রতি কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হওয়ার পর দেশে ফিরে আমাদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী যখন বলেন, বর্তমান সংসদ নিয়ে দেশের বাইরে কারো কোনো প্রশ্ন নেই, তখন সংসদের প্রতি দাতাদের এই মুখ ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কী জবাব দেবেন তিনি।
বর্তমান সরকার ও এর কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্নের এখানেই শেষ নয়, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্নের শেষ এখানেই থেমে নেই। বাংলাদেশে বিরোধী দলমত ও ভিন্নমতাবলম্বী মানুষের ওপর সরকার চরম দমনপীড়ন চালিয়ে দেশবাসীর মতামতকে উপেক্ষা করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জোরজবরদস্তি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে। বিষয়টি এখন আর কোনো রাখঢাক করে বলা হচ্ছে না। বরং সরকারি দলের নেতারা বলছেন, যারা এর আগে নির্বাচনের কথা বলে তারা মূর্খ। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী রীতিমতো বিরোধী জোটের নেত্রীর প্রতি নানা ধরনের বাক্যবাণ ছুড়ে সরকারবিরোধীদের দমনে চরম কঠোরতার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন এবং বলছেন, ‘আর একজনের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক, তার পরিণতি কী হয় দেখবে।’ সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে বর্তমান সরকার যে মরিয়া এবং এ কাজে দলীয়ভাবে র্যাব-পুলিশের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে, তা এখন দেশী-বিদেশী সব মহলের কাছে স্পষ্ট। সম্প্রতি ছাত্রদলের নতুন কমিটির ২২ জন নেতাকর্মী গ্রেফতারের পর গত পরশু আবার যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ ৬৩ জনের গ্রেফতার সরকারের সেই দমনপীড়ন পরিকল্পনারই অংশ বলে দেশবাসী মনে করে। বলা হচ্ছে, পুলিশের কাছে সন্দেহ হয়েছে, এরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে। এভাবে সন্দেহের বশে এর আগে কত আটক-গ্রেফতার, মামলা-হামলা হয়েছে, অমানবিক পুলিশি নির্যাতন চলেছে; তার ইয়ত্তা নেই। বিদেশী মহল এ ব্যাপারে বারবার সরকারকে হুঁশিয়ার করে র্যাব-পুলিশকে দায়মুক্তি না দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে; কিন্তু সরকার ড্যামকেয়ার। বিদেশী বিভিন্ন মহলের উপরোধ-অনুরোধ আমলে নেয়নি, বরং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে সরকার পুলিশ-র্যাবের ব্যবহার আরো জোরাল করে তুলছে সময়ের সাথে। এ ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে এবার বিভিন্ন দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাংলাদেশের পুলিশের কাছে আর কোনো অস্ত্র বিক্রি করবে না। গত ২০ অক্টোবর পত্রিকান্তরে খবরে প্রকাশ, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পুলিশের ব্যবহারের অস্ত্র বিক্রি করতে রাজি নয়। সম্প্রতি মানবাধিকার প্রশ্নে বাংলাদেশের পুলিশের জন্য গোলাবারুদ রফতানিতে যুক্তরাজ্য এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশও জারি করেছে একই ধরনের অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। তবে এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের পর ইতালিও এই নিষেধাজ্ঞা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর। বাধ্য হয়ে গোলাবারুদের বিকল্প বাজারের সন্ধানে নেমেছে সরকার। তবে ওইসব দেশের মতো মানসম্পন্ন গোলাবারুদ সরবরাহকারী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশে যে এখন গণতন্ত্রের আকাল, তা সরকারের বাইরে থাকা সব মহলই বলছে। মাঝে মধ্যে বর্তমান সরকারে থাকা শরিক দলের নেতাদের মুখ থেকে মুখ ফসকে তা বেরিয়ে আসছে। গত ১৬ অক্টোবর বর্তমান সরকারের শরিক দল, আবার একই সাথে অদ্ভুত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেনÑ ‘দেশে এখন একদলের গণতন্ত্র, প্রতিহিংসা ও জিঘাংসার গণতন্ত্র চলছে। দেশের কোথাও সুশাসন নেই। সর্বত্র দলীয়করণ, দুঃশাসন ও দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। যে গণতন্ত্রে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই, মানুষ নিরাপদে ঘুমাতে পারে না, তা জনগণের গণতন্ত্র নয়; এক পার্টির গণতন্ত্র। সেই গণতন্ত্র আমরা চাই না।’ কিন্তু সরকারে থেকে ও একই সাথে বিরোধী দলে থেকে গাছেও খেয়ে তলায়ও কুড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে এ ধরনের সমালোচনা করার মতো অবস্থান ধরে রাখা অন্তত এ সরকারের আমলে সম্ভব হতে পারে না। ফলে এর মাত্র পাঁচ দিন পর এরশাদের মুখে শোনা গেল সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ উচ্চারণ। এবার তিনি শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সাবের হোসেন চৌধুরীর উল্লিখিত নির্বাচনী বিজয় উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক অভিনন্দন বার্তায় বলেছেন, ‘...বঙ্গবন্ধুর কারণে বাংলাদেশের পরিচয়, তেমনি শেখ হাসিনার জন্য বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পরিচয়...।’ আসলে আওয়ামী লীগের বাইরে সরকারি জোটে যারা আছেন, তাদেরকে এভাবেই তোতাপাখির বোল নিয়ে প্রতিদিন সরকারের গুডবুকে থাকার প্রয়াস চালাতে হয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এই বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে বলা যায়, তার ৯ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ কি পরিচয়হীন ছিল? আর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে কি সে পরিচয় উদ্ধার করেছেন?
বিবেকবান সব মানুষের এক কথাÑ সব দলের অংশগ্রহণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকারের জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্যেই নিহিত আজকের বিদ্যমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার সমাধান। আর এ জন্য অপরিহার্য হচ্ছে রাজনৈতিক সংলাপে বসে সর্বমহলের কাছে সম্মত একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থা। সূত্রায়ন, সরকারবিরোধী ২০ দলীয় জোটসহ সরকারের বাইরে থাকা বাকি সব রাজনৈতিক দল-গোষ্ঠীর দাবি এটিই; কিন্তু সরকারপক্ষের এক কথাÑ কোনো সংলাপ নয়, কোনো নির্বাচন নয়। নির্বাচন হবে ২০১৯ সালে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই। কেউ নির্বাচনে এলে আসবে, না এলে ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন, দলীয় সরকারের অধীনে। কিন্তু বিবেকবান মানুষের কথাÑ মধ্যবর্তী নির্বাচনের কারণ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেশ-বিদেশে কারো কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। অর্ধেকেরও বেশি আসনের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়। জনগণ এ নির্বাচন বর্জন করেছে বলেই এমনটি ঘটেছে। সরকার নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের সর্বসম্মত পদ্ধতি বদলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু করে অবাধ নির্বাচনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
সরকার বলছে, বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিএনপি নেত্রীর পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে। বিএনপি দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাই যদি হয়, তবে সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে কেন? সরকার সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনপদ্ধতি প্রণয়নের জন্য সংলাপে যেতে চাচ্ছে না কেন? আসলে সরকার মুখে যাই বলুক, বাস্তবে জানে সরকার নানা অগণতান্ত্রিক ও অমানবিক কর্মকাণ্ডসহ দুর্নীতি-দুঃশাসনের সূত্রে নিজেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাই অবাধ ও নিরপেক্ষ মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে সরকারের এত ভীতি ও অনীহা; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারের এই অবস্থান থেকে বেরিয়ে জনসমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে গণতন্ত্রের পথেই হাঁটতেই হবে। নইলে জটিলতা আর জাতীয় দুর্ভোগ শুধু বেড়েই চলবে। আর সরকার নিজেই ডেকে আনবে নিজের জন্য বিপদের পর বিপদ। বিরোধী ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনপীড়নের মাধ্যমে এ জটিলতার কোনো সমাধান নেইÑ এটাই বাস্তবতা, এটাই শেষ কথা।
সরকার বুঝতে পারছে কি না জানি নাÑ জনগণ, এমনকি দেশের বাইরের মহলের মনেও প্রশ্ন উঠেছেÑ এ কোন পথে হাঁটছে সরকার? চার দিকে এত কথা, তবুও সরকার কিছুই আমলে নিচ্ছে না। সরকার যেন পণ করে বসেছে, বাইরের মানুষ যা বলবে, যে দিকে যেতে বলবে, যেতে হবে ঠিক এর উল্টো দিকে। এরই প্রতিফলন সরকারের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে, কথাবার্তায়। এর শেষ কোথায়, এর জবাব কারো জানা নেই। অতএব সময়ের অপেক্ষা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
সব শেষে আরেকটি কথাÑ এ পর্যন্ত বাংলাদেশের সব সরকারই দাবি করে আসছে বাংলাদেশ একটি উদার গণতন্ত্রের দেশ, এমনকি বর্তমান সরকারও তেমনটি দাবি করে থাকে। উদারবাদী গণতন্ত্রের ধারক-বাহক বলে আমরা যারা দাবি করি, তারা এই উদারবাদী গণতন্ত্র তথা লিবারেলিজমের সংজ্ঞা ও পরিধি সম্পর্কে কতটুকু সচেতন, সে প্রশ্ন অনায়াসেই তোলা যায়। আমরা মনে হয় ভুলে গেছি, লিবারেলিজম এখন একটি রাজনৈতিক দর্শন, যা গড়ে উঠেছে ‘লিবার্টি’ নামের অনুষঙ্গের ওপর। যে ‘লিবার্টি’ শব্দটিতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয় কাসিক্যাল লিবারেলিজমে। সাধারণত এই ‘লিবার্টি’ বলতে নাগরিকসাধারণের জন্য নিশ্চিত রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতা। ধর্মতত্ত্বে লিবার্টি হচ্ছে পাপের বন্ধন থেকে মুক্তি।
সাধারণ লিবারেলিজম (উদারবাদী) কিংবা কাসিক্যাল লিবারেলিজমই বলি, তা এমন একটি রাজনৈতিক দর্শন, যেখানে প্রাথমিক তাগিদ দেয়া হয় সরকারের ক্ষমতা সীমিত করার মাধ্যমে ব্যক্তিস্বাধীনতা বিকল্পহীনভাবে নিরাপদ করা। যুক্তরাষ্ট্রে বিংশ শতাব্দীর আগে কাসিক্যাল লিবারেলিজম নামের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দর্শনটি ছিল থমাস জেফারসন ও সে দেশের স্বাধীনতা ঘোষণায় স্বাক্ষরকারীদের রাজনৈতিক দর্শন। তখনকার দিনে সেখানকার মানুষ বিশ্বাস করত, নাগরিকসাধারণের অধিকারের উৎস সরকার। মানুষ ভাবত তারা সে অধিকারই পাবে, যা নির্বাচিত সরকার তাদের দেবে; কিন্তু ব্রিটিশ দার্শনিক জন লকিকে অনুসরণ করে জেফারসন অভিমত দেন, বিষয়টি তা নয়। সরকারের দেয়া অধিকারের বাইরেও জনগণের অধিকার আছে। জনগণ সরকার গঠন করতে পারে এবং সরকার বাতিলও করতে পারে। আর একটি বৈধ সরকারের একমাত্র উদ্দেশ্য, জনগণের এসব অধিকার নিরাপদ করা। ভুললে চলবে না, এর ব্যত্যয় গণতন্ত্রের ব্যত্যয়। বিবেকবানেরা বলছেন, বাংলাদেশে বারবার এর ব্যত্যয় ঘটছে, সেই সূত্রে সৃষ্টি হচ্ছে একের পর এক রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট; যার শিকার গোটা জাতি। এ থেকে উত্তরণের আন্তরিক প্রয়াসে প্রয়াসী ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেইÑ এ হুঁশিয়ারিটি বিবেকবান মানুষের।
No comments