খালি পকেটে বিশ্বভ্রমণ!
এক জার্মান এবং এক তুর্কি যুবক
বিশ্বপরিক্রমার পরিকল্পনা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে পথে, কিন্তু তাদের পকেটে
কানাকড়িটিও নেই৷ তা সত্ত্বেও গত দেড় মাসে ৯টি দেশ ওদের ঘোরা শেষ! জুল
ভার্নের বিখ্যাত কাল্পনিক ভ্রমণ কাহিনী ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়র্ল্ড ইন এইটি
ডেজ’-এর কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। সেই কাহিনীর নায়ক, বিত্তবান বৈজ্ঞানিক
ফিলিয়াস ফগ মাত্র ৮০ দিনে গোটা পৃথিবী পরিভ্রমণের এক উচ্চাকাক্সী সফরে রওনা
হয়েছিলেন। এবার এই একুশ শতকের দুই বিশ্ব পরিব্রাজকের সঙ্গে আলাপ করুন।
মিলান বিলমান এবং মুয়াম্মার ইলমাজ। ২৭ বছরের মিলান মিউনিখ শহরে থাকেন। আর
জন্মসূত্রে তুর্কি ৩৯ বছর বয়সি মুয়াম্মরের নিবাস ফ্রান্স।
পর্যটকদের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলার একটি ওয়েব-আড্ডায় তাদের আলাপ। যার পর মুয়াম্মার কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে আসেন জার্মানি, থাকেন মিউনিখে মিলানের বাড়িতে। তখনই ওরা বোঝেন, তাদের দুজনের মধ্যে নানা বিষয়ে পছন্দের মিল আছে। ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং একদিন তারা ঠিক করেন, জুল ভার্নের উপন্যাসের নায়কের মতোই তারাও ৮০ দিনে বিশ্বভ্রমণের একটা চেষ্টা করবেন। তবে ওই কল্পকাহিনীর নায়কের সঙ্গে তাদের একটা জায়গাতেই অমিল। ফিলিয়াস ফগ বিশাল বড়লোক ছিলেন, আর তাদের পকেটে ফুটো পয়সাটিও নেই!
ঠিকই পড়লেন। মিলান বিলমান এবং মুয়াম্মার ইলমাজ এটাই ঠিক করে পথে বেরিয়েছেন যে স্রেফ লোকের দয়া-দাক্ষিণ্যের ওপর ভরসা করে, স্থানীয় মানুষের বদান্যতায় ট্রেন, বাস বা বিমানের টিকিট জোগাড় করে তারা বিশ্বভ্রমণ করবেন। অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে বুঝি! তা হলে শুনুন, কপর্দকহীন অবস্থায় বেনারস থেকে, ট্রেনের অসংরক্ষিত সাধারণ কামরার মেঝেতে বসে ১৫ ঘণ্টা সফর করে কলকাতা এসেছিলেন দুজনে। তার পর তারা যখন ভাবছেন, তাদের পরের গন্তব্য থাইল্যান্ডে কী করে পৌঁছবেন, তখন দীপাবলি উৎসবের উপহারের মতোই তাদের হাতে এসেছে ব্যাংককের দুটি বিমান টিকিট। সৌজন্যে শহরের এক শিল্পপতি অমিত সারাওগি।
শ্রী সারাওগি তাদের কথা প্রথমে পড়েন খবরের কাগজে, তার পর কৌতূহলী হয়ে তাদের ফেসবুক পাতায় গিয়ে জানতে পারেন অর্থের অভাবে কলকাতায় তাদের যাত্রা থমকে যাওয়ার কথা। ‘স্টাক ইন ক্যালকাটা’- মিলান আর মুয়াম্মার নিজেদের ওয়েবসাইটে আর ফেসবুকে লিখেছিলেন। অমিত সারাওগি নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে প্রথমে তাদের ডিনার খাওয়ান, তার পর সেই রাতে ব্যাংককের প্লেন ধরাতে রওনা করিয়ে দেন নিজের গাড়িতে।
কলকাতায় দুই ভূপর্যটককে স্বেচ্ছায় অতিথি করেছিলেন ক্যালকাটা ওয়াক সংস্থার কর্ণধার ইফতিকার এহসান। তার সাথেও তাদের আলাপ হয়ে যায় নেহাত ঘটনাচক্রে এবং শহরে দুটি দিন তাদের থাকা-খাওয়া এবং কলকাতা ঘুরিয়ে দেখানোর দায়িত্ব ইফতিকারই নিয়েছিলেন। এমন ঘটনা মিলান এবং মুয়াম্মারের সঙ্গে বারবারই ঘটেছে। ইরান থেকে তারা যখন পাকিস্তানের দিকে যাচ্ছেন, বহু লোক সাবধান করেছিল যে, যেও না, মারা পড়বে। তবু তারা সাহস করে গিয়েছিলেন এবং সাধারণ লোকের থেকে অসাধারণ আতিথেয়তা পেয়েছেন। কেউ নিজের বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন, কেউ খেতে দিয়েছেন, আবার কেউ সঙ্গে নিয়ে কিছুটা রাস্তা এগিয়ে দিয়েছেন।
এভাবেই ফ্রান্স থেকে অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান এবং ভারত হয়ে দুই যুবক এখন থাইল্যান্ডে। শুরু করেছিলেন ৯ সেপ্টেম্বর সকাল নটা নয় মিনিটে, প্যারিস থেকে। পথে প্রতিবন্ধকতা প্রচুর এসেছে, থমকে যেতে হয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আবার যাত্রা শুরু হয়েছে। থাইল্যান্ডের পর সিঙ্গাপুর এবং সেখান থেকে আমেরিকা গিয়ে বিশ্বভ্রমণ শেষ করবেন দুজনে। পেশায় আলোকচিত্রী এবং তথ্যচিত্র নির্মাতা মুয়াম্মার ইলমাজ প্রচুর ছবি তুলছেন তাদের এই অভিনব বিশ্বভ্রমণের। মিলান বিলমান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কের ছাত্র, তার ভাণ্ডারে জমা পড়ছে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা।
আশা করাই যায়, জুল ভার্নের অমর উপন্যাসের মতোই আরো একটি বিশ্বপরিক্রমার আধুনিক উপাখ্যান লিখবেন দুজনে৷ তবে এবার এর কাল্পনিক ভ্রমণবৃত্তান্ত নয়, লেখা হবে বাস্তবের মহাকাব্য, স্পর্ধিত যৌবনের স্বপ্ন ছুঁতে পারার কাহিনী।
সূত্র : ডয়চে ভেল।
পর্যটকদের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলার একটি ওয়েব-আড্ডায় তাদের আলাপ। যার পর মুয়াম্মার কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে আসেন জার্মানি, থাকেন মিউনিখে মিলানের বাড়িতে। তখনই ওরা বোঝেন, তাদের দুজনের মধ্যে নানা বিষয়ে পছন্দের মিল আছে। ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং একদিন তারা ঠিক করেন, জুল ভার্নের উপন্যাসের নায়কের মতোই তারাও ৮০ দিনে বিশ্বভ্রমণের একটা চেষ্টা করবেন। তবে ওই কল্পকাহিনীর নায়কের সঙ্গে তাদের একটা জায়গাতেই অমিল। ফিলিয়াস ফগ বিশাল বড়লোক ছিলেন, আর তাদের পকেটে ফুটো পয়সাটিও নেই!
ঠিকই পড়লেন। মিলান বিলমান এবং মুয়াম্মার ইলমাজ এটাই ঠিক করে পথে বেরিয়েছেন যে স্রেফ লোকের দয়া-দাক্ষিণ্যের ওপর ভরসা করে, স্থানীয় মানুষের বদান্যতায় ট্রেন, বাস বা বিমানের টিকিট জোগাড় করে তারা বিশ্বভ্রমণ করবেন। অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে বুঝি! তা হলে শুনুন, কপর্দকহীন অবস্থায় বেনারস থেকে, ট্রেনের অসংরক্ষিত সাধারণ কামরার মেঝেতে বসে ১৫ ঘণ্টা সফর করে কলকাতা এসেছিলেন দুজনে। তার পর তারা যখন ভাবছেন, তাদের পরের গন্তব্য থাইল্যান্ডে কী করে পৌঁছবেন, তখন দীপাবলি উৎসবের উপহারের মতোই তাদের হাতে এসেছে ব্যাংককের দুটি বিমান টিকিট। সৌজন্যে শহরের এক শিল্পপতি অমিত সারাওগি।
শ্রী সারাওগি তাদের কথা প্রথমে পড়েন খবরের কাগজে, তার পর কৌতূহলী হয়ে তাদের ফেসবুক পাতায় গিয়ে জানতে পারেন অর্থের অভাবে কলকাতায় তাদের যাত্রা থমকে যাওয়ার কথা। ‘স্টাক ইন ক্যালকাটা’- মিলান আর মুয়াম্মার নিজেদের ওয়েবসাইটে আর ফেসবুকে লিখেছিলেন। অমিত সারাওগি নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে প্রথমে তাদের ডিনার খাওয়ান, তার পর সেই রাতে ব্যাংককের প্লেন ধরাতে রওনা করিয়ে দেন নিজের গাড়িতে।
কলকাতায় দুই ভূপর্যটককে স্বেচ্ছায় অতিথি করেছিলেন ক্যালকাটা ওয়াক সংস্থার কর্ণধার ইফতিকার এহসান। তার সাথেও তাদের আলাপ হয়ে যায় নেহাত ঘটনাচক্রে এবং শহরে দুটি দিন তাদের থাকা-খাওয়া এবং কলকাতা ঘুরিয়ে দেখানোর দায়িত্ব ইফতিকারই নিয়েছিলেন। এমন ঘটনা মিলান এবং মুয়াম্মারের সঙ্গে বারবারই ঘটেছে। ইরান থেকে তারা যখন পাকিস্তানের দিকে যাচ্ছেন, বহু লোক সাবধান করেছিল যে, যেও না, মারা পড়বে। তবু তারা সাহস করে গিয়েছিলেন এবং সাধারণ লোকের থেকে অসাধারণ আতিথেয়তা পেয়েছেন। কেউ নিজের বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন, কেউ খেতে দিয়েছেন, আবার কেউ সঙ্গে নিয়ে কিছুটা রাস্তা এগিয়ে দিয়েছেন।
এভাবেই ফ্রান্স থেকে অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান এবং ভারত হয়ে দুই যুবক এখন থাইল্যান্ডে। শুরু করেছিলেন ৯ সেপ্টেম্বর সকাল নটা নয় মিনিটে, প্যারিস থেকে। পথে প্রতিবন্ধকতা প্রচুর এসেছে, থমকে যেতে হয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আবার যাত্রা শুরু হয়েছে। থাইল্যান্ডের পর সিঙ্গাপুর এবং সেখান থেকে আমেরিকা গিয়ে বিশ্বভ্রমণ শেষ করবেন দুজনে। পেশায় আলোকচিত্রী এবং তথ্যচিত্র নির্মাতা মুয়াম্মার ইলমাজ প্রচুর ছবি তুলছেন তাদের এই অভিনব বিশ্বভ্রমণের। মিলান বিলমান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কের ছাত্র, তার ভাণ্ডারে জমা পড়ছে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা।
আশা করাই যায়, জুল ভার্নের অমর উপন্যাসের মতোই আরো একটি বিশ্বপরিক্রমার আধুনিক উপাখ্যান লিখবেন দুজনে৷ তবে এবার এর কাল্পনিক ভ্রমণবৃত্তান্ত নয়, লেখা হবে বাস্তবের মহাকাব্য, স্পর্ধিত যৌবনের স্বপ্ন ছুঁতে পারার কাহিনী।
সূত্র : ডয়চে ভেল।
No comments