ছয় ডুবোজাহাজ তৈরি করবে ভারত
ফক্সট্রট শ্রেণির একটি ডুবোজাহাজ। এগুলোর স্থলাভিষিক্ত হবে নতুন নৌবহর। ছবি: ভারতীয় নৌবাহিনীর ওয়েবসাইট |
নতুন অস্ত্র কেনা ও বিদ্যমান সমরসম্ভার আধুনিকায়নের মাধ্যমে সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে ভারত। এর জন্য দেশটি নিজেরা ৫৩ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে আরও ছয়টি ডুবোজাহাজ (সাবমেরিন) তৈরি করবে। পাশাপাশি ইসরায়েলের কাছ থেকে তিন হাজার ২০০ কোটি রুপির ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব নাকচ করে অন্যতম মিত্র দেশ ইসরায়েলের কাছ থেকে ওই অস্ত্র কিনছে ভারত। খবর এনডিটিভি ও এএফপির। ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা ক্রয় পরিষদ সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য গত শনিবার ৮০ হাজার কোটি রুপির প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর মধ্যে ছয়টি প্রচলিত ডুবোজাহাজ নির্মাণ এবং দুটি ছোট ডুবোজাহাজ কেনার জন্য ৫৩ হাজার কোটি রুপি ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘ভারতে তৈরি করুন’ প্রচারণার অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের কোন শিপইয়ার্ডে এসব ডুবোজাহাজ নির্মাণ করা হবে, তা দুই মাসের মধ্যে ঠিক করবে ভারতের নৌবাহিনী। এ জন্য বাইরের কোনো দেশ থেকে প্রযুক্তি নেওয়া হতে পারে।
ভারতে সাতটি শিপইয়ার্ড আছে। এর মধ্যে চারটি সরকারি। নির্মিতব্য প্রচলিত ধরনের ওই ডুবোজাহাজগুলোতে ‘এয়ার ইন্ডিপেনডেন্ট প্রপালশন সিস্টেম’ থাকবে। এর ফলে এগুলো ডুবন্ত অবস্থায় ডিজেল ইঞ্জিন চালু রেখে জাহাজের ব্যাটারি চার্জ করতে পারবে। এতে পানির নিচে বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব হবে। ডুবোজাহাজগুলো চলতে গিয়ে অপেক্ষাকৃত অনেক কম শব্দ করবে। ভারতের নৌবহরে যুক্ত হতে যাওয়া আরও দুটি ছোট ডুবোজাহাজের ওজন হবে ১৫০ টনের কম। এতে ৮ থেকে ২৪ জন অস্ত্রসজ্জিত সেনা থাকতে পারবে। ডুবোজাহাজগুলো কেনার প্রস্তাব অনুমোদনের পর ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তায় বর্তমান সরকার সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছে। এসব অস্ত্র-সরঞ্জাম কেনার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের কাছ থেকে তিন হাজার ২০০ কোটি রুপিতে আট হাজার ৩৫৬টি ‘স্পাইক’ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৩২১টি লঞ্চার কেনা হবে। অনুরূপ অস্ত্র বিক্রির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের ‘জ্যাভেলিন’ ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী গত বছর সফলভাবে স্পাইক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পেরেছে। পরমাণু অস্ত্রধারী প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীর সীমান্তে সাম্প্রতিক ব্যাপক গুলিবিনিময় এবং চীনের সঙ্গে অমীমাংসিত সীমান্ত নিয়ে অব্যাহত উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারত এই অস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নিল। গত মাসে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে এক বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিরক্ষা খাতে আরও বড় ধরনের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়ে সম্মত হয়েছিলেন। এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র জ্যাভেলিন ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির বিষয়ে তোড়জোড় শুরু করেছিল। ভারত এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক রাষ্ট্র। দেশটিতে এখন ১০ হাজার কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা আধুনিকায়নের কর্মসূচি চলছে। গত জুন মাসেই ভারত প্রতিরক্ষা ক্রয়ের জন্য ৩৫০ কোটি ডলার বরাদ্দ দিয়েছে।
No comments