শ নি বা রে র বিশেষ প্রতিবেদন তাক লাগালেন আবুল মিয়া by উজ্জ্বল মেহেদী
চাষির হাতে লাঙল, বলদের কাঁধে জোয়াল।
কোথাও আবার বলদ না পেলে চাষিকেই টানতে হয় জোয়াল। ফসল ফলাতে এভাবে
মানুষে-বলদে হাড়খাটুনিই চলে আসছে যুগযুগান্তর ধরে। তবে কৃষিতে আধুনিক
যন্ত্রের ব্যবহারও তো নতুন নয়।
যন্ত্রের ব্যবহার কৃষিতে
এনেছে গতি। নিমেষেই চাষের উপযোগী হচ্ছে খেতের পর খেত। এ দেশে আমদানি করা
কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারই বেশি। তবে বেশি মূল্য এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে
যাওয়ায় দেশীয় কলাকৌশল রপ্ত করে নানা ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরির চেষ্টা
লক্ষণীয়। এ প্রচেষ্টায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা মো. আবুল মিয়ার
নাম আলাদাভাবে উল্লেখ করতেই হয়।
আবুল মিয়া যে যন্ত্রটি তৈরি করেছেন, তার নাম ‘পাওয়ার টিলার’। যন্ত্রটি দিয়ে জমি চাষ করা হয়। এই যন্ত্রটি বাজারজাত করা হয় ২০১০ সালে বোরো মৌসুমের শুরুতে। সহজে ব্যবহারের উপযোগী এবং দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় সিলেট অঞ্চলের কৃষকদের কাছে যন্ত্রটি পরিচিতি পেয়েছে ‘আবুল মেশিন’ নামে। এরই মধ্যে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও জুটেছে আবুলের। পেয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’। ২০১২ সালের ২৯ এপ্রিল ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আবুল মিয়ার হাতে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় এ পুরস্কার তুলে দেন।
গল্পের শুরু: দক্ষিণ সুরমার চরমোহাম্মদপুর গ্রামে আবুল মিয়ার বাড়ি। তিন ভাই ও দুই বোন। ভাইদের মধ্যে বড় তিনি। পরিবারে বাবা নেই, তাই সংসারের হাল ধরতে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে কাজ নেন। কিন্তু তাতে রোজগার ভালো হচ্ছিল না। পাড়ি দেন সৌদি আরব। সেখানে গিয়ে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানায় এক বছর ১৮ মাস কাজ করে রপ্ত করেন কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরির নানা কৌশল। দেশে ফিরে বাড়ির সামনে ‘আবুল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস’ নামে একটি কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরি ও বিক্রির ব্যবসা খোলেন। আবুল বলেন, ‘মানুষ বিদেশ থেকে টাকা নিয়ে ফেরে। আমি ফিরেছি কাজ শিখে। বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় ওই কারিগরি শিক্ষাটাই ছিল আমার পুঁজি, আর হাতে ছিল ৩০০ টাকা। এই দিয়েই শুরু।’
আবুল শুরুতে বিদেশি কৃষিযন্ত্র দেশীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি করে তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামে বিক্রি করেন। তাঁর তৈরি যন্ত্র ব্যবহারে কৃষকদের সাড়া দেখে মন দেন নতুন যন্ত্র তৈরির কাজে। ১৯৯৯ সালে বোরো মৌসুমে আবুল তৈরি করেন ধান মাড়াইয়ের কল। বাজারে যেটি ২৯ হাজার টাকায় মেলে, আবুল সেটির দাম রাখেন ২৮ হাজার টাকা। এরপর আরও চিন্তা করে প্রান্তিক কৃষকদের জন্য ধান মাড়াইয়ের কলকে ছোট আকৃতি দিয়ে তৈরি করেন। ২০০২ সালে বাজারে আসা এই যন্ত্রটির দাম পড়ে ১৮ হাজার টাকা।
বড় পরিসরে: ২০০৪ সালে ‘আবুল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস’ পরিণত হয় ‘আবুল ইন্ডাস্ট্রিজে’। ছোট দুই ভাইকে সঙ্গে নিয়ে নতুন কৃষিযন্ত্র তৈরিতে পুরোদমে কাজে লেগে যান। নিয়মিত ১১ জন ও অনিয়মিত ১৯ জন শ্রমিক নিয়ে শুরু করেন। বানানো হয় খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ মিকচার মেশিন, ব্লেন্ডার মেশিন। ২০০৫ সালে তৈরি করেন পাওয়ার টিলার। ওই বছরই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রাংশ প্রদর্শনী মেলায় আবুল তাঁর পাওয়ার টিলার প্রদর্শন করে পরবর্তী বছর থেকে বাজারজাত শুরু করেন। তখন চাহিদা অনুযায়ী প্রতিবছর একটি-দুটি করে বানাতেন। এভাবে চলে ২০১০ সালের বোরো মৌসুম পর্যন্ত। তাঁর তৈরি যন্ত্র কৃষকদের কাছে জনপ্রিয়তা পেলে উপজেলা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পাঠানো হয় পরের বছর। এক বছর পর আবুল পুরস্কৃত হন।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু নাসের প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে আমদানি করা পাওয়ার টিলারের দাম ৩৯ হাজার টাকা। আবুলের পাওয়ার টিলারের দাম ২৭ হাজার ৫০০ টাকা। দেশীয় প্রযুক্তি ও দামের দিক দিয়ে সাশ্রয়ী হওয়ায় আবুলের যন্ত্র পুরস্কৃত হয়।
আবুল যেন ‘জীবন্ত ইঞ্জিন’: এলাকার কৃষকেরা বলেন, আবুল ‘মানুষটাই একটা মেশিন’। এ কথার সত্যতা দেখা গেল সম্প্রতি একদিন আবুলের কারখানায় গিয়ে। সকালবেলা নাশতা করে কারখানার কাজে মনোযোগী হয়েছিলেন; কাজের ফাঁকে খেয়েছেন দুপুরের খাবার। সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল, আবুল কখনো ঝালাই করছেন, আবার শ্রমিকের হাত থেকে হাতুড়ি নিয়ে নিজেই নেমে পড়েছেন লোহালক্কড়কে যন্ত্রে পরিণত করার কাজে।
মাথায় অনেক পরিকল্পনা আর হাতে অনেক কাজ তাঁর। চল্লিশোর্ধ্ব আবুল রসিকতা করে জানান, বিয়ে করার সময়ও পাচ্ছেন না। তিনি বললেন, ‘আমার এই খাটাখাটি দেখে মানুষ আমারে মেশিন কয়। আমি আসলে মেশিনের মতোই খাটি। আগের দিন ভোরে বাড়ি গেছি, সকাল সকাল আবার কারখানায় ফিরছি। বাড়ি ফিরমু কোনসমে, কইতে পারতাম নায়।’
আবুলের সঙ্গে কারখানায় সকাল-দুপুর কাটিয়ে খেতে তাঁর যন্ত্র কেমন চলছে, তা দেখতে গত বোরো মৌসুমের শুরুতে একদিন বিকেলে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বোরো ফসলি কিছু এলাকায় যাওয়া। সেখানে গিয়ে দেখা গেল আরেক চিত্র। আবুলকে তাঁর মেশিনের মতোই সমাদর করছেন মাঠের কৃষকেরা। জালালপুর এলাকার বোরো জমির কাদাজলের খেতে নেমে পাওয়ার টিলার চালানোর হাতেখড়ি দেন আবুল।
যন্ত্র তৈরির উপকরণ: ‘আবুল মেশিন’ নামে পরিচিত পাওয়ার টিলার যন্ত্র তৈরিতে একেকটিতে মোট ১৫৫ কেজি লোহার দেশীয় কাঁচামালের প্রয়োজন পড়ে। পাইপ, অ্যাঙ্গেল, শিট ও পাত—এই চার রকমের উপকরণ লাগে। এসব কাঁচামাল ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কেনা হয়। একেকটি যন্ত্র একজন কারিগরের তত্ত্বাবধানে তিনজন কর্মী মিলে ছয় দিনে তৈরি করতে সক্ষম। প্রতিটি যন্ত্রের ওজন প্রায় ১৬৫ কেজি। এই যন্ত্র মাটির নয় সেন্টিমিটার গভীর পর্যন্ত খুঁড়তে সক্ষম।
সাশ্রয়ী মূল্য আর সহজে ব্যবহারের জন্য চাষিরা ‘আবুল মেশিন’ পছন্দ করেন—এ কথা জানিয়ে দক্ষিণ সুরমার দুবাগ হাওরের প্রবীণ চাষি মিজানুর আলী বলেন, ‘তার মেশিনরে চিননের লাগি (পরিচিতির জন্য) আমরা আবুল মেশিন কইয়া ডাকি। খেতে চলতে কোনো অসুবিধা অইলে খবর দিলে আবুল নিজেই ছুটে আয়।’
পুঁজির অভাব: গত বোরো মৌসুমে অন্তত ১৩০টি যন্ত্র তৈরি করে বিক্রি করেছেন আবুল। তাঁর তৈরি যন্ত্র নিরবচ্ছিন্নভাবে আট বছর সচল থাকবে বলে জানান আবুল। তিনি বলেন, ‘আমি আমার কাজ দিয়ে পুরস্কার পাইছি। এটা সম্মানের। এই পুরস্কারের সঙ্গে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুব্যবস্থা সরকার করে দিলে আমি কৃষকের উপকারী নতুন অনেক যন্ত্র বানাতে পারতাম।’
আবুলের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পুঁজির অভাব একধরনের প্রতিবন্ধকতা—এ কথা জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁর পুঁজির বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সহায়তা চাইব।’
আবুল মিয়া যে যন্ত্রটি তৈরি করেছেন, তার নাম ‘পাওয়ার টিলার’। যন্ত্রটি দিয়ে জমি চাষ করা হয়। এই যন্ত্রটি বাজারজাত করা হয় ২০১০ সালে বোরো মৌসুমের শুরুতে। সহজে ব্যবহারের উপযোগী এবং দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় সিলেট অঞ্চলের কৃষকদের কাছে যন্ত্রটি পরিচিতি পেয়েছে ‘আবুল মেশিন’ নামে। এরই মধ্যে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও জুটেছে আবুলের। পেয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’। ২০১২ সালের ২৯ এপ্রিল ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আবুল মিয়ার হাতে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় এ পুরস্কার তুলে দেন।
গল্পের শুরু: দক্ষিণ সুরমার চরমোহাম্মদপুর গ্রামে আবুল মিয়ার বাড়ি। তিন ভাই ও দুই বোন। ভাইদের মধ্যে বড় তিনি। পরিবারে বাবা নেই, তাই সংসারের হাল ধরতে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে কাজ নেন। কিন্তু তাতে রোজগার ভালো হচ্ছিল না। পাড়ি দেন সৌদি আরব। সেখানে গিয়ে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানায় এক বছর ১৮ মাস কাজ করে রপ্ত করেন কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরির নানা কৌশল। দেশে ফিরে বাড়ির সামনে ‘আবুল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস’ নামে একটি কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরি ও বিক্রির ব্যবসা খোলেন। আবুল বলেন, ‘মানুষ বিদেশ থেকে টাকা নিয়ে ফেরে। আমি ফিরেছি কাজ শিখে। বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় ওই কারিগরি শিক্ষাটাই ছিল আমার পুঁজি, আর হাতে ছিল ৩০০ টাকা। এই দিয়েই শুরু।’
আবুল শুরুতে বিদেশি কৃষিযন্ত্র দেশীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি করে তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামে বিক্রি করেন। তাঁর তৈরি যন্ত্র ব্যবহারে কৃষকদের সাড়া দেখে মন দেন নতুন যন্ত্র তৈরির কাজে। ১৯৯৯ সালে বোরো মৌসুমে আবুল তৈরি করেন ধান মাড়াইয়ের কল। বাজারে যেটি ২৯ হাজার টাকায় মেলে, আবুল সেটির দাম রাখেন ২৮ হাজার টাকা। এরপর আরও চিন্তা করে প্রান্তিক কৃষকদের জন্য ধান মাড়াইয়ের কলকে ছোট আকৃতি দিয়ে তৈরি করেন। ২০০২ সালে বাজারে আসা এই যন্ত্রটির দাম পড়ে ১৮ হাজার টাকা।
বড় পরিসরে: ২০০৪ সালে ‘আবুল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস’ পরিণত হয় ‘আবুল ইন্ডাস্ট্রিজে’। ছোট দুই ভাইকে সঙ্গে নিয়ে নতুন কৃষিযন্ত্র তৈরিতে পুরোদমে কাজে লেগে যান। নিয়মিত ১১ জন ও অনিয়মিত ১৯ জন শ্রমিক নিয়ে শুরু করেন। বানানো হয় খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ মিকচার মেশিন, ব্লেন্ডার মেশিন। ২০০৫ সালে তৈরি করেন পাওয়ার টিলার। ওই বছরই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রাংশ প্রদর্শনী মেলায় আবুল তাঁর পাওয়ার টিলার প্রদর্শন করে পরবর্তী বছর থেকে বাজারজাত শুরু করেন। তখন চাহিদা অনুযায়ী প্রতিবছর একটি-দুটি করে বানাতেন। এভাবে চলে ২০১০ সালের বোরো মৌসুম পর্যন্ত। তাঁর তৈরি যন্ত্র কৃষকদের কাছে জনপ্রিয়তা পেলে উপজেলা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পাঠানো হয় পরের বছর। এক বছর পর আবুল পুরস্কৃত হন।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু নাসের প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে আমদানি করা পাওয়ার টিলারের দাম ৩৯ হাজার টাকা। আবুলের পাওয়ার টিলারের দাম ২৭ হাজার ৫০০ টাকা। দেশীয় প্রযুক্তি ও দামের দিক দিয়ে সাশ্রয়ী হওয়ায় আবুলের যন্ত্র পুরস্কৃত হয়।
আবুল যেন ‘জীবন্ত ইঞ্জিন’: এলাকার কৃষকেরা বলেন, আবুল ‘মানুষটাই একটা মেশিন’। এ কথার সত্যতা দেখা গেল সম্প্রতি একদিন আবুলের কারখানায় গিয়ে। সকালবেলা নাশতা করে কারখানার কাজে মনোযোগী হয়েছিলেন; কাজের ফাঁকে খেয়েছেন দুপুরের খাবার। সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল, আবুল কখনো ঝালাই করছেন, আবার শ্রমিকের হাত থেকে হাতুড়ি নিয়ে নিজেই নেমে পড়েছেন লোহালক্কড়কে যন্ত্রে পরিণত করার কাজে।
মাথায় অনেক পরিকল্পনা আর হাতে অনেক কাজ তাঁর। চল্লিশোর্ধ্ব আবুল রসিকতা করে জানান, বিয়ে করার সময়ও পাচ্ছেন না। তিনি বললেন, ‘আমার এই খাটাখাটি দেখে মানুষ আমারে মেশিন কয়। আমি আসলে মেশিনের মতোই খাটি। আগের দিন ভোরে বাড়ি গেছি, সকাল সকাল আবার কারখানায় ফিরছি। বাড়ি ফিরমু কোনসমে, কইতে পারতাম নায়।’
আবুলের সঙ্গে কারখানায় সকাল-দুপুর কাটিয়ে খেতে তাঁর যন্ত্র কেমন চলছে, তা দেখতে গত বোরো মৌসুমের শুরুতে একদিন বিকেলে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বোরো ফসলি কিছু এলাকায় যাওয়া। সেখানে গিয়ে দেখা গেল আরেক চিত্র। আবুলকে তাঁর মেশিনের মতোই সমাদর করছেন মাঠের কৃষকেরা। জালালপুর এলাকার বোরো জমির কাদাজলের খেতে নেমে পাওয়ার টিলার চালানোর হাতেখড়ি দেন আবুল।
যন্ত্র তৈরির উপকরণ: ‘আবুল মেশিন’ নামে পরিচিত পাওয়ার টিলার যন্ত্র তৈরিতে একেকটিতে মোট ১৫৫ কেজি লোহার দেশীয় কাঁচামালের প্রয়োজন পড়ে। পাইপ, অ্যাঙ্গেল, শিট ও পাত—এই চার রকমের উপকরণ লাগে। এসব কাঁচামাল ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কেনা হয়। একেকটি যন্ত্র একজন কারিগরের তত্ত্বাবধানে তিনজন কর্মী মিলে ছয় দিনে তৈরি করতে সক্ষম। প্রতিটি যন্ত্রের ওজন প্রায় ১৬৫ কেজি। এই যন্ত্র মাটির নয় সেন্টিমিটার গভীর পর্যন্ত খুঁড়তে সক্ষম।
সাশ্রয়ী মূল্য আর সহজে ব্যবহারের জন্য চাষিরা ‘আবুল মেশিন’ পছন্দ করেন—এ কথা জানিয়ে দক্ষিণ সুরমার দুবাগ হাওরের প্রবীণ চাষি মিজানুর আলী বলেন, ‘তার মেশিনরে চিননের লাগি (পরিচিতির জন্য) আমরা আবুল মেশিন কইয়া ডাকি। খেতে চলতে কোনো অসুবিধা অইলে খবর দিলে আবুল নিজেই ছুটে আয়।’
পুঁজির অভাব: গত বোরো মৌসুমে অন্তত ১৩০টি যন্ত্র তৈরি করে বিক্রি করেছেন আবুল। তাঁর তৈরি যন্ত্র নিরবচ্ছিন্নভাবে আট বছর সচল থাকবে বলে জানান আবুল। তিনি বলেন, ‘আমি আমার কাজ দিয়ে পুরস্কার পাইছি। এটা সম্মানের। এই পুরস্কারের সঙ্গে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুব্যবস্থা সরকার করে দিলে আমি কৃষকের উপকারী নতুন অনেক যন্ত্র বানাতে পারতাম।’
আবুলের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পুঁজির অভাব একধরনের প্রতিবন্ধকতা—এ কথা জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁর পুঁজির বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সহায়তা চাইব।’
No comments