রাজনীতির সপ্তাহ-হায় গণতন্ত্র হায় জনগণ! by চৌধুরী আফতাবুল ইসলাম
গণতন্ত্রের শেষ কথা- জনগণ, জনগণের সরকার,
জনগণের শাসন। অবশ্য এ ক্ষেত্রে শর্ত প্রযোজ্য। রাজনৈতিক নেতা, রাজনৈতিক
দলগুলোর যদি এই আদর্শ-দর্শনের প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা, সমর্পণ থাকে শুধু
তাহলেই।
১৮৬৩ সালের ১৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, গণতন্ত্রের
সর্বজনীন একটি সংজ্ঞা প্রতিষ্ঠিত, বলা ভালো সৃষ্টি হয় বিশ্বসভায়।
গেটিসবার্গে দেওয়া ভাষণে আব্রাহাম লিংকনের কালজয়ী ঘোষণা- গভর্নমেন্ট অব দ্য
পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল। আর তাহলেই গণতন্ত্র কার্যকর, সফল।
রাজনীতিবিদরা যা-ই করেন, যা-ই বলেন, শেষ কথা জনগণের। প্রথম পক্ষের ১০ দিন,
তো দ্বিতীয় পক্ষের এক দিন- বিচারের দিন, ভোটের দিন।
এসব লেখার একটা উপলক্ষ আছে। সম্প্রতি চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল এক বিরাট গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছে। এই চারে চার শূন্যতে হোয়াইটওয়াশ সরকারি দল। কারণ কী? বিরোধী দল অভাবনীয় জনকল্যাণকর ভালো কোনো কাজ কি করেছে, যা দেখে জনগণ স্বপ্রণোদিতভাবে তাদের ভোটবাক্স ভরে দিয়েছে? মনে হয় না এমন নজির খুব একটা আছে। বরং আন্দোলনের নামে বিরোধী দল এমন অনেক কিছুই করেছে, যা মন্দ কাজ বলে জনমনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তাদের জন্য বুমেরাং হয়েছে। আবার সরকারও যে সবই খারাপ কাজ করেছে, তাও তো নয়। শিক্ষা, কৃষি, যুদ্ধাপরাধের বিচার, মানবসম্পদ ও অবকাঠামো উন্নয়নে ভালো নজির গড়েছে সরকার। তাহলে? দেশবাসীর চোখে মন্দ কাজের পাল্লাটাও কম ভারী ঠেকেনি। সাড়ে চার বছর ধরে জনগণ দেখেছে ক্ষমতার দাপটে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের গুণ্ডামি, টেন্ডারবাজি, সাংগঠনিক রেষারেষি নিয়ে খুনোখুনি। আর সরকার দিনের পর দিন এসব ঘটনায় চোখ বুজে থেকে ছাড় দিয়ে গেছে। দিনের বেলা শত শত মানুষের সামনে নিরপরাধ বিশ্বজিৎকে ছাত্রলীগের পান্ডারা কুপিয়ে মেরে ফেলল- কী সীমাহীন স্পর্ধা! কিছু সংখ্যক মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতি, মাস্তানি, স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে জনগণ দেখেছে সরকার কী ভীষণ প্রতিকারহীন-নির্বিকার! শেয়ারবাজার থেকে জনগণের কষ্টের পয়সা মেরে দিল কয়েকজন অসৎ লোক, ধান্দাবাজদের কারণে পদ্মা সেতু ঝুলে গেল, মতলবিদের সহায়তায় হলমার্ক-বিসমিল্লাহ গ্রুপ ব্যাংক থেকে জনগণের টাকা লোপাট করল। দেশবাসী অপেক্ষায় ছিল এসব অপরাধ, অপকর্মের প্রতিকার দেখার। অথচ সরকার জনগণকে উপহার দিল সচেতন উপেক্ষা। এই সাধারণের আর শক্তি কী। ওই একটি দিনই আছে তাদের রাজদণ্ড হাতে নেওয়ার। দিনের পর দিন সয়ে সয়ে ভোটের দিন মোক্ষম জবাব। আর তাই স্থানীয় নির্বাচন হওয়া সত্ত্বেও চার সিটির ভোটারদের কাছে জাতীয় ইস্যুগুলোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। আবার সরকারের প্রতি ক্রোধে ক্ষুব্ধ মানুষের রায়ে যাঁরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেন তাঁরা যে হারুদের চেয়ে উচ্চমার্গীয়, সৎ মানুষ- এটাও তো জোর গলায় বলা যাচ্ছে না। আসলে আমাদের দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা এমন এক অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে যে এখন বিরোধী দলের জন্য সবচেয়ে ভালো হলো কিছু না করে হাত গুটিয়ে চুপচাপ বসে থাকা। সরকার তার মেয়াদে নানা অপকর্মের পাঁকে ডুবতে থাকবে আর জনগণ নির্ধারিত একটি দিনে তার বিচার করবে। পরম্পরা জানাচ্ছে, এ দেশে বিরোধী দল জেতে যতটা না তাদের জনপ্রিয়তার কারণে, ততটাই সরকারবিরোধী নেতিবাচক ভোটে। গত চারটি নির্বাচনে একই ট্র্যাডিশন। এই প্রেক্ষাপটে আজ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। দুই পক্ষই মরিয়া আজকের ভোটে জিততে। বিরোধী দল চায় জয়ের ধারা ধরে রেখে সরকারের কফিনে আরেকটি শক্ত পেরেক ঠুকে দিতে। আর সরকার চায় জন-অনাস্থার আবহ থেকে বেরিয়ে স্বস্তির জমিনে পা রাখতে।
গেল সপ্তাহে রাজনীতির জগতে আরেকটি আলোচিত ঘটনা ছিল সংসদে দুই নেত্রীর মুখোমুখি বিতর্ক। জনপ্রত্যাশা পূরণের এ এক সুন্দর দিন। দেশবাসীর প্রাণের প্রত্যাশা- দেশের সব ইস্যুতে দুই নেত্রী সামনাসামনি এভাবে আলোচনা করবেন, পরস্পরের কথা শুনবেন, সমাধানে এগিয়ে আসবেন। কিন্তু তা তো আর হওয়ার নয়। তবে বাজেট নিয়ে তাঁদের এই মুখোমুখি আলোচনায় বেশ খুশি স্বপ্নসন্ধানী মানুষ। সেদিনের বিতর্কে বিএনপি চেয়ারপারসন সার্বিক বিষয়ে বেশ গুছিয়ে গঠনমূলক বক্তব্য দিয়েছেন এবং বলাবাহুল্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে তিনি বেশি স্কোর করেছেন। তবে ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন তিনি এবং তাঁর দল। সেদিনের বক্তব্যে খালেদা জিয়া দাবি করেন, বাংলাদেশের জিএসপি বাতিলের আহ্বান জানিয়ে ওয়াশিংটন টাইমসে ছাপানো লেখাটি তাঁর নয়। এই বক্তব্য তিনি যখন দিচ্ছিলেন তখন সংসদে উপস্থিত শেখ হাসিনা লেখাটির পেপার কাটিং উঁচিয়ে দেখাচ্ছিলেন। এরপর এ নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। কারণ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করেছে। সরকার ও তাদের সমর্থকরা বলছে, খালেদা জিয়া আগ বাড়িয়ে ওয়াশিংটন টাইমসে নিবন্ধ ছাপিয়ে বাংলাদেশের জিএসপি বাতিলের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সুতরাং এর দায় বিএনপির নেত্রীকে নিতে হবে। অন্যদিকে বিএনপি থেকে দাবি করা হচ্ছে, লেখাটি খালেদা জিয়ার নয়। এটা সরকারের ষড়যন্ত্র। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের একটি অনলাইন বার্তা সংস্থা ও একটি টিভি চ্যানেল যোগাযোগ করে ওয়াশিংটন টাইমসের সঙ্গে। জবাবে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক ডেভিড এস জ্যাকসন জানান, একজন এজেন্টের মাধ্যমে লেখাটি তাঁদের কাছে আসে। এরপর তাঁরা খোঁজখবর করে যখন নিশ্চিত হন লেখাটি খালেদা জিয়ার, তখনই সেটা ছাপানো হয়। লন্ডনভিত্তিক ওই এজেন্টের নাম মার্ক পার্সি। তিনি খালেদা জিয়ার হয়ে কাজ করেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিত হওয়ার পর বিএনপি ওই নিবন্ধটি খালেদার নয় বলে দাবি করতে শুরু করলেও গত পাঁচ মাস দলটির নেতারা বরং উল্টো কথাই বলেছেন। ৩১ জানুয়ারি নিবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার পর ১ ফেব্রুয়ারি নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক সভায় মওদুদ আহমদ বলেন, 'সরকার আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এসব বিষয়ে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসে নিবন্ধ লিখেছেন। গণতন্ত্রকে সুরক্ষা করার জন্যই এ নিবন্ধ লেখা হয়েছে।' মওদুদ আহমদ আরো বলেন, সরকারের আঁতে ঘা লেগেছে বলেই বিরোধীদলীয় নেতার নিবন্ধ নিয়ে গতকাল (৩১ জানুয়ারি) সংসদে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় সমালোচনা করা হয়েছে। তাদের সমালোচনাই প্রমাণ করে, বিরোধীদলীয় নেতা নিবন্ধে সত্য কথা বলেছেন।' এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামও এক অনুষ্ঠানে বলেন, 'দেশের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরতে বিরোধীদলীয় নেতা এই নিবন্ধ লিখেছেন। দেশের নাগরিক হিসেবে তিনি তা লিখতেই পারেন।'
জিএসপি স্থগিত হতেই খালেদা জিয়া এই নিবন্ধের দায়দায়িত্ব অস্বীকার করার পর মওদুদ সাহেব ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে এখন বলছেন, নিবন্ধটি যে খালেদা জিয়ার তা তিনি বলেননি। এভাবেই তাহলে চলতে থাকবে?
হায় গণতন্ত্র! হায় জনগণ!
এসব লেখার একটা উপলক্ষ আছে। সম্প্রতি চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল এক বিরাট গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছে। এই চারে চার শূন্যতে হোয়াইটওয়াশ সরকারি দল। কারণ কী? বিরোধী দল অভাবনীয় জনকল্যাণকর ভালো কোনো কাজ কি করেছে, যা দেখে জনগণ স্বপ্রণোদিতভাবে তাদের ভোটবাক্স ভরে দিয়েছে? মনে হয় না এমন নজির খুব একটা আছে। বরং আন্দোলনের নামে বিরোধী দল এমন অনেক কিছুই করেছে, যা মন্দ কাজ বলে জনমনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তাদের জন্য বুমেরাং হয়েছে। আবার সরকারও যে সবই খারাপ কাজ করেছে, তাও তো নয়। শিক্ষা, কৃষি, যুদ্ধাপরাধের বিচার, মানবসম্পদ ও অবকাঠামো উন্নয়নে ভালো নজির গড়েছে সরকার। তাহলে? দেশবাসীর চোখে মন্দ কাজের পাল্লাটাও কম ভারী ঠেকেনি। সাড়ে চার বছর ধরে জনগণ দেখেছে ক্ষমতার দাপটে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের গুণ্ডামি, টেন্ডারবাজি, সাংগঠনিক রেষারেষি নিয়ে খুনোখুনি। আর সরকার দিনের পর দিন এসব ঘটনায় চোখ বুজে থেকে ছাড় দিয়ে গেছে। দিনের বেলা শত শত মানুষের সামনে নিরপরাধ বিশ্বজিৎকে ছাত্রলীগের পান্ডারা কুপিয়ে মেরে ফেলল- কী সীমাহীন স্পর্ধা! কিছু সংখ্যক মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতি, মাস্তানি, স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে জনগণ দেখেছে সরকার কী ভীষণ প্রতিকারহীন-নির্বিকার! শেয়ারবাজার থেকে জনগণের কষ্টের পয়সা মেরে দিল কয়েকজন অসৎ লোক, ধান্দাবাজদের কারণে পদ্মা সেতু ঝুলে গেল, মতলবিদের সহায়তায় হলমার্ক-বিসমিল্লাহ গ্রুপ ব্যাংক থেকে জনগণের টাকা লোপাট করল। দেশবাসী অপেক্ষায় ছিল এসব অপরাধ, অপকর্মের প্রতিকার দেখার। অথচ সরকার জনগণকে উপহার দিল সচেতন উপেক্ষা। এই সাধারণের আর শক্তি কী। ওই একটি দিনই আছে তাদের রাজদণ্ড হাতে নেওয়ার। দিনের পর দিন সয়ে সয়ে ভোটের দিন মোক্ষম জবাব। আর তাই স্থানীয় নির্বাচন হওয়া সত্ত্বেও চার সিটির ভোটারদের কাছে জাতীয় ইস্যুগুলোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। আবার সরকারের প্রতি ক্রোধে ক্ষুব্ধ মানুষের রায়ে যাঁরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেন তাঁরা যে হারুদের চেয়ে উচ্চমার্গীয়, সৎ মানুষ- এটাও তো জোর গলায় বলা যাচ্ছে না। আসলে আমাদের দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা এমন এক অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে যে এখন বিরোধী দলের জন্য সবচেয়ে ভালো হলো কিছু না করে হাত গুটিয়ে চুপচাপ বসে থাকা। সরকার তার মেয়াদে নানা অপকর্মের পাঁকে ডুবতে থাকবে আর জনগণ নির্ধারিত একটি দিনে তার বিচার করবে। পরম্পরা জানাচ্ছে, এ দেশে বিরোধী দল জেতে যতটা না তাদের জনপ্রিয়তার কারণে, ততটাই সরকারবিরোধী নেতিবাচক ভোটে। গত চারটি নির্বাচনে একই ট্র্যাডিশন। এই প্রেক্ষাপটে আজ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। দুই পক্ষই মরিয়া আজকের ভোটে জিততে। বিরোধী দল চায় জয়ের ধারা ধরে রেখে সরকারের কফিনে আরেকটি শক্ত পেরেক ঠুকে দিতে। আর সরকার চায় জন-অনাস্থার আবহ থেকে বেরিয়ে স্বস্তির জমিনে পা রাখতে।
গেল সপ্তাহে রাজনীতির জগতে আরেকটি আলোচিত ঘটনা ছিল সংসদে দুই নেত্রীর মুখোমুখি বিতর্ক। জনপ্রত্যাশা পূরণের এ এক সুন্দর দিন। দেশবাসীর প্রাণের প্রত্যাশা- দেশের সব ইস্যুতে দুই নেত্রী সামনাসামনি এভাবে আলোচনা করবেন, পরস্পরের কথা শুনবেন, সমাধানে এগিয়ে আসবেন। কিন্তু তা তো আর হওয়ার নয়। তবে বাজেট নিয়ে তাঁদের এই মুখোমুখি আলোচনায় বেশ খুশি স্বপ্নসন্ধানী মানুষ। সেদিনের বিতর্কে বিএনপি চেয়ারপারসন সার্বিক বিষয়ে বেশ গুছিয়ে গঠনমূলক বক্তব্য দিয়েছেন এবং বলাবাহুল্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে তিনি বেশি স্কোর করেছেন। তবে ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন তিনি এবং তাঁর দল। সেদিনের বক্তব্যে খালেদা জিয়া দাবি করেন, বাংলাদেশের জিএসপি বাতিলের আহ্বান জানিয়ে ওয়াশিংটন টাইমসে ছাপানো লেখাটি তাঁর নয়। এই বক্তব্য তিনি যখন দিচ্ছিলেন তখন সংসদে উপস্থিত শেখ হাসিনা লেখাটির পেপার কাটিং উঁচিয়ে দেখাচ্ছিলেন। এরপর এ নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। কারণ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করেছে। সরকার ও তাদের সমর্থকরা বলছে, খালেদা জিয়া আগ বাড়িয়ে ওয়াশিংটন টাইমসে নিবন্ধ ছাপিয়ে বাংলাদেশের জিএসপি বাতিলের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সুতরাং এর দায় বিএনপির নেত্রীকে নিতে হবে। অন্যদিকে বিএনপি থেকে দাবি করা হচ্ছে, লেখাটি খালেদা জিয়ার নয়। এটা সরকারের ষড়যন্ত্র। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের একটি অনলাইন বার্তা সংস্থা ও একটি টিভি চ্যানেল যোগাযোগ করে ওয়াশিংটন টাইমসের সঙ্গে। জবাবে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক ডেভিড এস জ্যাকসন জানান, একজন এজেন্টের মাধ্যমে লেখাটি তাঁদের কাছে আসে। এরপর তাঁরা খোঁজখবর করে যখন নিশ্চিত হন লেখাটি খালেদা জিয়ার, তখনই সেটা ছাপানো হয়। লন্ডনভিত্তিক ওই এজেন্টের নাম মার্ক পার্সি। তিনি খালেদা জিয়ার হয়ে কাজ করেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিত হওয়ার পর বিএনপি ওই নিবন্ধটি খালেদার নয় বলে দাবি করতে শুরু করলেও গত পাঁচ মাস দলটির নেতারা বরং উল্টো কথাই বলেছেন। ৩১ জানুয়ারি নিবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার পর ১ ফেব্রুয়ারি নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক সভায় মওদুদ আহমদ বলেন, 'সরকার আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এসব বিষয়ে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসে নিবন্ধ লিখেছেন। গণতন্ত্রকে সুরক্ষা করার জন্যই এ নিবন্ধ লেখা হয়েছে।' মওদুদ আহমদ আরো বলেন, সরকারের আঁতে ঘা লেগেছে বলেই বিরোধীদলীয় নেতার নিবন্ধ নিয়ে গতকাল (৩১ জানুয়ারি) সংসদে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় সমালোচনা করা হয়েছে। তাদের সমালোচনাই প্রমাণ করে, বিরোধীদলীয় নেতা নিবন্ধে সত্য কথা বলেছেন।' এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামও এক অনুষ্ঠানে বলেন, 'দেশের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরতে বিরোধীদলীয় নেতা এই নিবন্ধ লিখেছেন। দেশের নাগরিক হিসেবে তিনি তা লিখতেই পারেন।'
জিএসপি স্থগিত হতেই খালেদা জিয়া এই নিবন্ধের দায়দায়িত্ব অস্বীকার করার পর মওদুদ সাহেব ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে এখন বলছেন, নিবন্ধটি যে খালেদা জিয়ার তা তিনি বলেননি। এভাবেই তাহলে চলতে থাকবে?
হায় গণতন্ত্র! হায় জনগণ!
No comments