কলকাতার চিঠি পঞ্চায়েত নির্বাচন ও মমতার স্বপ্নভঙ্গ by অমর সাহা
পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় সরকার কাঠামোর মূল
ভিত্তিই হলো পঞ্চায়েত রাজ। এই পঞ্চায়েত রাজের আওতায় একেবারে গ্রাম পর্যায়
থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত গড়া হয় স্থানীয় সরকার। রাজ্যের প্রতিটি গ্রামে
গড়া হয় গ্রাম পঞ্চায়েত।
ব্লক বা থানা পর্যায়ে গড়া হয়
পঞ্চায়েত সমিতি। আর জেলা পর্যায়ে গড়া হয় জেলা পরিষদ। ত্রিস্তর এই
পঞ্চায়েতের সদস্য নির্বাচিত হন পৌর এলাকা বাদে প্রতিটি গ্রামের ভোটারের
ভোটের মাধ্যমে। নির্বাচিত ব্যক্তিরাই নির্বাচন করেন গ্রাম পঞ্চায়েতপ্রধান,
পঞ্চায়েত সমিতির প্রধান এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে। এই নির্বাচনও হয়
রাজনৈতিক ব্যানারে। প্রতীকও বরাদ্দ হয় রাজনৈতিক দলের।
পশ্চিমবঙ্গে রয়েছেন তিন হাজার ৩৫৪টি গ্রামের ৪১ হাজার ৫০৪ জন পঞ্চায়েত সদস্য। ৩৪১টি ব্লক বা থানায় রয়েছেন আট হাজার ৮৬৪ জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য আর ১৭টি জেলা পরিষদে রয়েছেন ৭৫৫ জন সদস্য।
সর্বশেষ এই পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০৮ সালের ১১, ১৪ ও ১৮ মে। সেই নির্বাচনে বেশির ভাগ আসনেই জয়ী হয়েছিল বামফ্রন্ট। গ্রাম পঞ্চায়েতে বামফ্রন্ট পেয়েছিল ২১ হাজার ৬৯১টি আসন। তৃণমূল পেয়েছিল নয় হাজার ৩৭৫ এবং কংগ্রেস পেয়েছিল ছয় হাজার ৮৩৭টি আসন। পঞ্চায়েত সমিতিতে বামফ্রন্ট পেয়েছিল চার হাজার ৮৮২টি, তৃণমূল দুই হাজার ১৮ এবং কংগ্রেস পেয়েছিল এক হাজার ৪৪৬টি আসন। আর জেলা পরিষদে বামফ্রন্ট পেয়েছিল ৫১৪টি আসন। তৃণমূল পেয়েছিল ১২০টি এবং কংগ্রেস পেয়েছিল ৯৯টি আসন।
এবার ২০১৩ সালে আবার এসেছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। এবার ক্ষমতায় তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয়ে মমতা চেয়েছিলেন পঞ্চায়েত নির্বাচন এগিয়ে আনতে। কারণ, বর্তমানে অধিকাংশ পঞ্চায়েত রয়েছে বামফ্রন্টের দখলে। ফলে রাজ্য সরকারের উন্নয়নকাজ ব্যাহত হবে—এই ভেবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন রাজ্য সরকারের মতো স্থানীয় সরকারকেও তাঁর কবজায় আনতে। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতা না পাওয়ায় মমতা আর এগিয়ে আনতে পারেননি পঞ্চায়েত নির্বাচন। পঞ্চায়েত নির্বাচন এ বছরের এপ্রিল-মে মাসে নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এই নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে এবং পাঁচ দফায় সম্পন্ন করার প্রস্তাব পাঠায় রাজ্য সরকারকে। কিন্তু সেই প্রস্তাব মানতে রাজি হয়নি রাজ্য সরকার।
রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, তাঁরা চান এই নির্বাচন হবে এক দফায়, অর্থাত্ একটি তারিখে এবং তা হবে রাজ্যের পুলিশের সহায়তায়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন নেই। এই নিয়ে শুরু হয় রাজ্য সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংঘাত। এর পরই রাজ্য সরকার দুই দফায় নির্বাচন করতে সম্মত হয়। তবে তারা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগে তাদের আপত্তি যথারীতি বহাল রাখে। এর পরই নির্বাচন কমিশন দ্বারস্থ হয় কলকাতা হাইকোর্টের। সেখান থেকে তিন পর্যায়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হলেও কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করার ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
ইতিমধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয় ২, ৬ ও ৯ জুলাই। প্রার্থীরাও যথারীতি মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু এই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ঘটে হিংসাত্মক ঘটনা। বহু জায়গায় বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেননি সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা। শুধু তা-ই নয়, মনোনয়নপত্র দাখিলের পর বহু জায়গায় ভয়ভীতি দেখিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতেও বাধ্য করেন সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা। এরই জের ধরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ত্রিস্তরে নির্বাচিত হয়ে যান ছয় হাজার ২৫০ জন প্রার্থী। এর প্রায় সবই শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের।
এসব ঘটনার পর রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এবং পঞ্চায়েত নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের ব্যাপারে অনড় থাকে। কিন্তু রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ না নিলে নির্বাচন কমিশন গত ২৬ জুন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়।
২৮ জুন সুপ্রিম কোর্টে ওই আবেদনের শুনানি হয় বিচারপতি এ কে পট্টনায়ক ও বিচারপতি রঞ্জন গগৈর সমন্বয়ে গঠিত গ্রীষ্ম অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চে। শুনানি শেষে ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেন, পঞ্চায়েত ভোট হবে পাঁচ দফায়। ভোট হবে ১১, ১৫, ১৯, ২২ ও ২৫ জুলাই। আর এই নির্বাচন হবে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে। এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে প্রতিদিন ১৫ হাজার, তৃতীয় ও চতুর্থ দফার নির্বাচনে ২৫ হাজার করে এবং শেষ দফার নির্বাচনে দুই হাজার নিরাপত্তা বাহিনী দেবে। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশে হতাশ হয়ে পড়েন মমতা। অন্যদিকে বেজায় খুশি হয়েছে রাজ্যের সব বিরোধী রাজনৈতিক দল। ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে প্রথম ধাক্কা খান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকার। এরপর যেহেতু রমজান মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সে কারণে রাজ্য সরকার নির্বাচনের তারিখ পুনর্বিবেচনার জন্য ফের আবেদন করে সুপ্রিম কোর্টে। ২ জুলাই সেই মামলার শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টেও সেই ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলেন, দেশের সংবিধানকে সম্মান জানিয়েই নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারিখ পরিবর্তনের সময় ও সুযোগ নেই। এর ফলে দ্বিতীয় ধাক্কা খান মমতা এবং তাঁর সরকার।
যদিও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন মমতা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে নির্বাচন করাতে চাইছেন না? কেনই বা মমতা এক দফা থেকে তিন দফায় নির্বাচন করতে চাইছেন? এর উত্তরও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে। মমতার মূল কথা, যেনতেন প্রকারে রাজ্যের সব পঞ্চায়েতের ক্ষমতা নিতে হবে তাঁদের। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে নির্বাচন কেন্দ্রে যেমন ভোটার ছাড়া কারও প্রবেশের অধিকার থাকবে না, তেমনি রাজ্য পুলিশ মোতায়েন থাকলে রাজ্য সরকারের নির্দেশে শাসক দল জয়ের জন্য যেকোনো ঘটনা ঘটাতে কার্পণ্য করবে না। এতে করে শাসক দলের নেতা-কর্মীরা জয়ের জন্য তাঁদের পথ প্রশস্ত করে নিতে পারবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টের ডাবল ধাক্কায় খানখান হয়ে গেল পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে পুষে রাখা তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের স্বপ্ন।
অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি।
পশ্চিমবঙ্গে রয়েছেন তিন হাজার ৩৫৪টি গ্রামের ৪১ হাজার ৫০৪ জন পঞ্চায়েত সদস্য। ৩৪১টি ব্লক বা থানায় রয়েছেন আট হাজার ৮৬৪ জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য আর ১৭টি জেলা পরিষদে রয়েছেন ৭৫৫ জন সদস্য।
সর্বশেষ এই পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০৮ সালের ১১, ১৪ ও ১৮ মে। সেই নির্বাচনে বেশির ভাগ আসনেই জয়ী হয়েছিল বামফ্রন্ট। গ্রাম পঞ্চায়েতে বামফ্রন্ট পেয়েছিল ২১ হাজার ৬৯১টি আসন। তৃণমূল পেয়েছিল নয় হাজার ৩৭৫ এবং কংগ্রেস পেয়েছিল ছয় হাজার ৮৩৭টি আসন। পঞ্চায়েত সমিতিতে বামফ্রন্ট পেয়েছিল চার হাজার ৮৮২টি, তৃণমূল দুই হাজার ১৮ এবং কংগ্রেস পেয়েছিল এক হাজার ৪৪৬টি আসন। আর জেলা পরিষদে বামফ্রন্ট পেয়েছিল ৫১৪টি আসন। তৃণমূল পেয়েছিল ১২০টি এবং কংগ্রেস পেয়েছিল ৯৯টি আসন।
এবার ২০১৩ সালে আবার এসেছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। এবার ক্ষমতায় তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয়ে মমতা চেয়েছিলেন পঞ্চায়েত নির্বাচন এগিয়ে আনতে। কারণ, বর্তমানে অধিকাংশ পঞ্চায়েত রয়েছে বামফ্রন্টের দখলে। ফলে রাজ্য সরকারের উন্নয়নকাজ ব্যাহত হবে—এই ভেবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন রাজ্য সরকারের মতো স্থানীয় সরকারকেও তাঁর কবজায় আনতে। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতা না পাওয়ায় মমতা আর এগিয়ে আনতে পারেননি পঞ্চায়েত নির্বাচন। পঞ্চায়েত নির্বাচন এ বছরের এপ্রিল-মে মাসে নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এই নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে এবং পাঁচ দফায় সম্পন্ন করার প্রস্তাব পাঠায় রাজ্য সরকারকে। কিন্তু সেই প্রস্তাব মানতে রাজি হয়নি রাজ্য সরকার।
রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, তাঁরা চান এই নির্বাচন হবে এক দফায়, অর্থাত্ একটি তারিখে এবং তা হবে রাজ্যের পুলিশের সহায়তায়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন নেই। এই নিয়ে শুরু হয় রাজ্য সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংঘাত। এর পরই রাজ্য সরকার দুই দফায় নির্বাচন করতে সম্মত হয়। তবে তারা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগে তাদের আপত্তি যথারীতি বহাল রাখে। এর পরই নির্বাচন কমিশন দ্বারস্থ হয় কলকাতা হাইকোর্টের। সেখান থেকে তিন পর্যায়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হলেও কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করার ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
ইতিমধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয় ২, ৬ ও ৯ জুলাই। প্রার্থীরাও যথারীতি মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু এই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ঘটে হিংসাত্মক ঘটনা। বহু জায়গায় বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেননি সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা। শুধু তা-ই নয়, মনোনয়নপত্র দাখিলের পর বহু জায়গায় ভয়ভীতি দেখিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতেও বাধ্য করেন সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা। এরই জের ধরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ত্রিস্তরে নির্বাচিত হয়ে যান ছয় হাজার ২৫০ জন প্রার্থী। এর প্রায় সবই শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের।
এসব ঘটনার পর রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এবং পঞ্চায়েত নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের ব্যাপারে অনড় থাকে। কিন্তু রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ না নিলে নির্বাচন কমিশন গত ২৬ জুন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়।
২৮ জুন সুপ্রিম কোর্টে ওই আবেদনের শুনানি হয় বিচারপতি এ কে পট্টনায়ক ও বিচারপতি রঞ্জন গগৈর সমন্বয়ে গঠিত গ্রীষ্ম অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চে। শুনানি শেষে ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেন, পঞ্চায়েত ভোট হবে পাঁচ দফায়। ভোট হবে ১১, ১৫, ১৯, ২২ ও ২৫ জুলাই। আর এই নির্বাচন হবে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে। এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে প্রতিদিন ১৫ হাজার, তৃতীয় ও চতুর্থ দফার নির্বাচনে ২৫ হাজার করে এবং শেষ দফার নির্বাচনে দুই হাজার নিরাপত্তা বাহিনী দেবে। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশে হতাশ হয়ে পড়েন মমতা। অন্যদিকে বেজায় খুশি হয়েছে রাজ্যের সব বিরোধী রাজনৈতিক দল। ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে প্রথম ধাক্কা খান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকার। এরপর যেহেতু রমজান মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সে কারণে রাজ্য সরকার নির্বাচনের তারিখ পুনর্বিবেচনার জন্য ফের আবেদন করে সুপ্রিম কোর্টে। ২ জুলাই সেই মামলার শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টেও সেই ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলেন, দেশের সংবিধানকে সম্মান জানিয়েই নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারিখ পরিবর্তনের সময় ও সুযোগ নেই। এর ফলে দ্বিতীয় ধাক্কা খান মমতা এবং তাঁর সরকার।
যদিও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন মমতা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে নির্বাচন করাতে চাইছেন না? কেনই বা মমতা এক দফা থেকে তিন দফায় নির্বাচন করতে চাইছেন? এর উত্তরও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে। মমতার মূল কথা, যেনতেন প্রকারে রাজ্যের সব পঞ্চায়েতের ক্ষমতা নিতে হবে তাঁদের। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে নির্বাচন কেন্দ্রে যেমন ভোটার ছাড়া কারও প্রবেশের অধিকার থাকবে না, তেমনি রাজ্য পুলিশ মোতায়েন থাকলে রাজ্য সরকারের নির্দেশে শাসক দল জয়ের জন্য যেকোনো ঘটনা ঘটাতে কার্পণ্য করবে না। এতে করে শাসক দলের নেতা-কর্মীরা জয়ের জন্য তাঁদের পথ প্রশস্ত করে নিতে পারবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টের ডাবল ধাক্কায় খানখান হয়ে গেল পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে পুষে রাখা তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের স্বপ্ন।
অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি।
No comments